X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

এগিয়ে যাওয়া সমাজে পিছিয়ে থাকার চেষ্টা কেন?

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
১৯ এপ্রিল ২০১৭, ১২:৪০আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০১৭, ১২:৪৪

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসরমান। প্রবৃদ্ধি, মানুষের ব্যয় সক্ষমতা, সবই বাড়ছে। শহর বা গ্রাম, সবখানেই এই চিত্র দেখা যায়। অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাওয়া সমাজ তাহলে পিছিয়ে থাকার চেষ্টা আবার করে কেন?
মাত্র নতুন বাংলা বছর শুরু হয়েছে। বছরের শেষ প্রান্তে এসে যেভাবে অন্ধকারে বা কন্টকে ঝাঁপ দেওয়া দেখছি আমরা, তাতে আগামীতে কি প্রখর নতুন অপেক্ষা করছে কে জানে? তবে মানুষের এই এগিয়ে যাওয়ার স্পৃহা, তার বিজ্ঞান মনস্ক থাকার চেষ্টা সবই বিনা চ্যালেঞ্জ হচ্ছে না। নারীর এগিয়ে যাওয়াকে যারা সইতে পারে না, যারা সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের পথে থাকাকে মেনে নিতে পারে না, কেবলই অন্ধকারের যুগ খোঁজে, তারা অসহিষ্ণুতা ছড়ায়। শুধু লেখক নয়, পুরোহিত নয়, নির্বিরোধী হোমিও বা পল্লী চিকিৎসককেও কুপিয়ে মারা হয় এমন অগ্রসরতার মাঝেই।
সব পক্ষ থেকেই এই কোপানো দলকে ছাড় দেওয়ার আয়োজন। ক্ষমতার ঔদ্ধত্য যেমন গণতন্ত্রের মৌল ভাবনাতেই কুঠারাঘাত করে, তেমনি কেবল ছাড় দিতে থাকে মৌলবাদকে। নীতি ও ন্যায্যতার মানসিকতা থেকে সরে গিয়ে প্রায় সকলেই ব্যস্ত আখের গোছাতে। তাই তাদের সামনে বা প্রশ্রয়ে জায়গা নিচ্ছে সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি। ঘোষিত, অঘোষিত ফতোয়াবাজদের তাণ্ডবে আজ শঙ্কিত সমাজ। কে কী লিখছে, বলছে, কী গান গাইছে, কোনটা গাইবে, কোনটা পালন করবে আর করবে না, এই ফতোয়ায় বিব্রত, বিতশ্রদ্ধ মানুষ।
রাজনৈতিক সমর্থন আছে এদের প্রতি। কিন্তু সামাজিক সমর্থনও কম নয়। সরকারের বিরুদ্ধে, মৌলবাদের বিরুদ্ধে কথা বলা যায়, বলা হচ্ছেও। বিরোধী দল আর মতকেও দায়ী করা যায়, হচ্ছেও। দোষ দেওয়া যায় বিশেষ কোনও গোষ্ঠীকেও। কিন্তু নাগরিকরা, এমনকি খুব শিক্ষিতরাও বাদ যান না। সময়টা এমন যে, প্রায় সবার মগজে এখন প্রতিক্রিয়াশীলতা ও অসহিষ্ণুতা বেড়ে উঠছে। ধর্মান্ধতার একটা আবহ শুধু মাদ্রাসা পড়ুয়াদের নয়, শিক্ষিতজনদেরও মাঝেও দানা বাঁধছে। খুব সন্তর্পনে প্রায় প্রত্যেকেই নিজ নিজ ধর্ম বা বিশ্বাস ভিন্ন অপর ধর্ম এবং অনুগামীদের প্রতি এক দূরত্ববোধ অনুভব করে। ধর্ম একেবারে পালন করে না, এমন ব্যক্তিও ধর্মীয় ফতোয়ার বন্যা বইয়ে দিচ্ছে। সঙ্গে জুটেছে কিছু সুবিধাভোগী, যারা সরকারের কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিটা জুগিয়েছে বা কোনও একটা পদ বাগিয়েছে, এখন আবার ব্যস্ত হয়েছে সরকারকে মৌলবাদী পরামর্শ দিয়ে বিভ্রান্ত করতে। 

সেক্যুলার বা উদারতার রাজনীতি বা রাজনৈতিক দর্শন যাদের ব্রত তারা নিজেদের মধ্যে কলহ আর বিবাদে ব্যস্ত। মৌলবাদ বিরোধী শক্তি বলে যাদের ভাবা হয়, তারা যদি নিজেরাই প্রতিক্রিয়াশীল হয়, তাদের ভেতর যদি এমন দুর্বলতা থাকে, তার সুযোগ নিয়ে সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথাচাড়া দেবে, এতে আর অবাক হওয়ার কী আছে? রাজনৈতিক দল আর ব্যক্তি যদি দিনভর শুধু ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির হিসেবে ব্যস্ত থাকে, তাহলে রাজনৈতিক মেরুকরণ মৌলবাদকেই স্বাস্থ্যবান করবে।

অর্থনীতিতে সুসংবাদ আসে পরিসংখ্যান দিয়ে। কিন্তু মানুষের জীবন আর সমাজতো শুধু পরিসংখ্যানের গতিতে চলে না। আর্থিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য চোখে পড়ার মতো। ক্ষমতায় থাকা মানুষের লাগামহীন দুর্নীতির কারণে খুব ছোট একটি গোষ্ঠীর কাছে অর্থবিত্তকে বন্দি হয়ে পড়ছে। এটি বাস্তবতা। তার পরিণতিই মানুষে মানুষে বড় ব্যবধান, বড় অসাম্য।

সর্বজনীন প্রবৃদ্ধির কথা মুখে বলা হলেও তা কেবলাত্র সুন্দর স্লোগান বই আর কিছু নয়। ক্ষমতার জন্য কতটা মরিয়া হওয়া যায় তার প্রমাণ আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোয় দেখেছি। দলীয় প্রতিক পাওয়া, না পাওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগের বিবাদ এখন তৃণমূলের ঘরে ঘরে। বলা যায় স্থানীয় পর্যায়ে এ বিরোধ এখন স্থায়ী রূপ নিয়েছে। এমন বিভক্ত দল কী করে প্রতিক্রিয়াশীলতা মোকাবিলা করবে?

দলের ভেতর অভ্যন্তরীণ কোন্দল, প্রশাসনের নীতি-পঙ্গুতা, লাগামহীন দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা শুধু আওয়ামী লীগকে নয়, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক শক্তিকেই যেন সংকটের চোরাবালিতে নিয়ে যাচ্ছে। এর বাইরে বিশ্ব পরিস্থিতিও আছেই। একদিকে আর্থিক মন্দা, অন্যদিকে জঙ্গিবাদের জয় জয়কারও দেশের একটি গোষ্ঠীকে মৌলবাদী রাজনীতির সমর্থক করে তুলছে। 

উদার বহুত্বধর্মী রাজনীতির মতো এখন বহুত্ববাদী উন্নয়ন ধারণার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।  প্রবল ইতিবাচক, প্রত্যয়ী ধর্মনিরপেক্ষতাই আনতে পারে গণতন্ত্রের নতুনতর আস্বাদন। আমাদের রাজনীতি আর আমাদের অর্থনীতি, দুইয়ের সাফল্যই নির্ভর করছে কেন্দ্র আর প্রান্তের সমভাবে গড়ে ওঠার মধ্যে। রাজধানী, বড় শহর আর এবং জেলা বা গ্রামের মধ্যে আর্থিক অসাম্যর শিকড় বহু যুগ ধরে বিস্তৃত। শক্তিশালী রাষ্ট্রগঠনের নামে এই আঞ্চলিক বৈষম্য যদি বাড়তে থাকে, তা হলে কিন্তু রাজনৈতিক সংঘাতও বাড়বে। মৌলবাদও জায়গা পাবে। 

ভরসা একটাই। এ দেশে ধর্মীয় গোড়ামির বিরুদ্ধে একটা নিজস্ব চাপ রয়েছে। সাধারণ মানুষ কোনও বাছ বিচার ছাড়াই সম্প্রীতির চাকাকে এগিয়ে রাখে যা এবার পহেলা বৈশাখে আবার আমরা দেখেছি। এই অন্তর্নিহিত শক্তিই বড় ভরসা। তবে রাজনীতি যদি মৌলবাদ বিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে কেবল বিভক্ত করে রাখে তাহলে বাড় বাড়ন্ত হবে কেবলই মৌলবাদী সংস্কৃতির।

লেখক: পরিচালক বার্তা, একাত্তর টেলিভিশন

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ