X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফেসবুক মন

তুষার আবদুল্লাহ
২৯ এপ্রিল ২০১৭, ১৬:১১আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০১৭, ১৬:১৮

তুষার আবদুল্লাহ পূর্বাচলে প্রকৃতি দেখতে গিয়েছিলাম শুক্রবার। বালু নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখছিলাম। হাতে চায়ের কাপ। আশেপাশে অনেক পরিবার ও তরুণদের ভিড়। ছুটির দিনে এখানে ভিড় বাড়ে। কেউ আসেন নিজের বরাদ্দ পাওয়া প্লট দেখতে। আসেন অনেকেই স্বাদ নিতে মুক্ত বাতাস আর পরিবেশের। শুক্রবার তেমন ভিড়ের মাঝে দাঁড়িয়েই চা উদযাপন করছিলাম যখন, ঠিক এই সময়েই আমার পাশ দিয়ে যাওয়া তরুণদের একটি দলের কাছ থেকে উড়ে এলো একটি বাক্য- ‘তোর মন দেখি ফেসবুকের মতো’। চমকে গেলাম বাক্যটি কানে এসে ঝাপটা খাওয়ার পর। ফেসবুকের সঙ্গে কেন মনের তুলনা দেওয়া হলো? আমি চায়ের কাপ হাতে নিয়েই তরুণদের পেছন নেই। জানার ইচ্ছে নিছক রসিকতার ছলেই কি বাক্যটির উদ্বোধন, নাকি ভাবনার গভীরতা থেকে আত্মপ্রকাশ।
তরুণদের দলটি পিচঢালা আনকোরা নতুন রাস্তা থেকে গিয়ে লালমাটির মেঠোপথের দিকে নেমে যায়। তারা একটি কাঁঠালগাছের নিচে গিয়ে সবুজ ঘাসের ওপর বসে পড়ে। তাদেরকে টপকে গিয়ে আকন্দের ঝোঁপের আড়ালে গিয়ে বসে পড়ি। কানপাতি কাঁঠাল গাছের দিকে। সেখানে তরুণদের কণ্ঠে শুনতে পাই একজন বলছে- আমার মন শুধু ফেসবুক মন, তোরটা না? অন্য কণ্ঠস্বর বলছে- ফেসবুককে একবার যে মন দিয়েছে, তার ফেসবুক মন হতে বাধ্য। তরুণদেরই আরেকজন বলল- একদম ঠিক। ফেসবুক কাউকে স্থির মন নিয়ে থাকতে দিচ্ছে না। সকালে আমাদের উসকে দিচ্ছে যে বিষয় নিয়ে তর্ক করতে, দুপুরের আগেই আবার বিষয় পাল্টে যাচ্ছে। মধ্যদুপুরের বিষয়টি বিকেলে টিকছে না। রাত গভীর হতে হতে তর্ক গন্তব্যহীন ভাবে বদলে যেতে থাকে। প্রথম কণ্ঠস্বর বললো- আমরা কোনও একটি বিষয়ে, কোন বিশ্বাসে বা কোন ব্যক্তিতে এক প্রকার ধারণা পুষে রাখি। এই ধারণাটি আমাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষার মাধ্যমে তৈরি হয়। এই ধারণাকে দ্বিধায়, প্রশ্নের মুখে প্রতিমুহূর্তে ফেলে দিচ্ছে ফেসবুক। আমরা কোনও বিষয়ে স্থির বিশ্বাস রাখতে পারছি না। অপর কণ্ঠস্বর থেকে ভেসে আসে- এটার মঙ্গল দিক রয়েছে। আমাদের ভুল জানা অনেক বিশ্বাস, ধারণাকে শুধরে দিচ্ছে ফেসবুক। আমি, আমরা হয়তো এক কৌণিক ভাবে দেখেছি কোনও বিষয়কে। ফেসবুক আমাদের ৩৬০ কৌণিক ভাবে ওই বিষয়টি দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে।
তরুণদের দিক থেকেই কোরাস কণ্ঠে প্রতিবাদ উঠলো। কয়েকটি কণ্ঠ মিলিয়ে একটি কণ্ঠ টিকে রইলো। সেই কণ্ঠ বলছে- ৩৬০ কৌণিক ভাবে আমাদের দেখার সুযোগ করে দেয় বটে, কিন্তু কোনও ঘটনা নিয়ে ভাবনায় স্থির হতে দিচ্ছে না। এবং সুযোগ দিচ্ছে না গভীরতা পৌঁছার। আমরা নতুন নতুন ইস্যুতে ডুবে যাচ্ছি, হারিয়ে যাচ্ছি। একটি কণ্ঠ বলছে- দেখো আমরা রামপাল নিয়ে কথা বলছিলাম যখন, তখন আমাদের সামনে নিয়ে আসা হলো জঙ্গিবাদ। মাঝপথে চলে আসে মিতু হত্যা। তার আগে হারিয়ে গেছে তনু হত্যা। এগুলো ভুলিয়ে দিতে এসেছিল হিরো আলম। হাওরের হাহাকার ভুলাতে আসে অপু-শাকিব খান। তাতেও যখন হচ্ছিল না তখন অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে আসলো কাসেম বিন আবুবাকর। আবার উঁকি দিলো হামিদ মীর। অন্য একজনের কণ্ঠ থেকে বলা হলো- হাইব্রিড, কাওয়া, ফার্মের মতো আরও কত ইস্যুতো সূর্যের তাপে বাস্প হয়ে গেছে।

তরুণদেরও বুঝি উঠে যাওয়ার তাড়া ছিল। তাই উপসংহার টানতে দেখা গেলো তাদের। তারা বলছে- মুক্তচিন্তার মঞ্চ হয়ে উঠেছে ফেসবুক এটা সত্য। মুক্তচিন্তার সুযোগ নিয়ে বিষয়কে গভীরতায় পৌঁছতে না দেওয়ার ‘ভাইরাস’ চিন্তা ফেসবুকের মঞ্চ দখলের চেষ্টা করছে, করবেই। চিন্তার হ্যাকাররা ফেসবুকে সদা সক্রিয়। কে কোন উদ্দেশ্যে কোন বিষয় ফেসবুকের মঞ্চে তুলে দিচ্ছে সাধারণ মানুষকে দ্বিধা-বিভক্ত করে দিতে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ভেসে যাওয়ার  অভ্যাস বদলে কেটে যেতে হবে সাঁতার। যদি সাঁতার না জানা থাকে, তবে স্রোতে তলে যে লুকিয়ে থাকে স্রোতের আরও স্তর তা পর্যবেক্ষণ করার ধৈর্য্য এবং কৌশল জানা থাকতে হবে। তাহলেই দেখবে মনটা ফেসবুক নয় নিজের মতো করে গড়ে উঠবে। তখন আর অন্তর্জালের পৃথিবী আমাদের মনের পৃথিবীকে শাসন করতে পারবে না। আমরাই শাসন করতে হবে ওই পৃথিবীকে।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ