X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভিশন ২০৫০: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাত

ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী
০৫ মে ২০১৭, ১৬:৩৫আপডেট : ০৫ মে ২০১৭, ১৬:৪২

ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী ২০২১ সালে আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী হতে যাচ্ছে। এই সময়কে সামনে রেখে বেশ কিছু কর্মপরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে সরকারি ও বেসরকারিভাবে। সরকারের পক্ষ থেকে ‘ভিশন ২০২১’ নামে একটি প্রস্তাবনার কথা জানা যায়। সেখানে দারিদ্র্যমুক্তি, বৈষম্য দূরীকরণ ও মানুষের অবস্থার উন্নতির স্বার্থে বেশ কিছু সমন্বিত পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। এসব লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য ষষ্ঠ (২০১১-১৫) ও সপ্তম (২০১৬-২০) পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ঢেলে সাজানোর কথা জানিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।
এই সময়কালের মধ্যে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ, মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ, খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের নিশ্চয়তা দেওয়া, চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিতকরণ সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়। বেসরকারিভাবে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ, বিশিষ্ট নাগরিক ও দেশব্যাপী পরিচালিত মত-বিনিময়ের মাধ্যমে ২০২১ সালের জন্য আটটি লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে যেগুলো অর্জন সাপেক্ষে বাংলাদেশ একটি মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে বিশ্বে সম্মানের জায়গা অর্জন করবে। এই রিপোর্টটি প্রকাশিত হয় ২০০৭ সালে প্রকাশিত হয়। তবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনও কর্মপরিকল্পনা বা রোডম্যাপ এইসব ভিশনে আমরা প্রত্যক্ষভাবে আমরা পাই না। পরোক্ষে অবশ্য কখনোই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গুরুত্ব অস্বীকার করা হয়নি। কিন্তু আমরা প্রত্যক্ষভাবে সুচিহ্নিত বা স্থিরীকৃত কোনও লক্ষ্যমাত্রা দেখি না।
তবে ২০১২ সালে গেজেট আকারে বাংলাদেশ সরকার জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনীতি-২০১১-এর আলোকে একটি বিশদ কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করে। এই গেজেটে ১৫টি উদ্দেশ্য, ১১টি কৌশলগত বিষয়বস্তু এবং ২৪৬টি করণীয় বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। এই সুবিশাল কর্মটি সম্পাদনের জন্য বর্তমান সরকার অবশ্যই ধন্যবাদ দাবি করতে পারে। তবু কথা থেকে যায়। প্রায় আড়াই শত করণীয় বিষয়ের মধ্যে অনেকগুলো স্বল্পমেয়াদি, বেশ কিছু দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা আছে। কিন্তু কোনও কোনও পরিকল্পনাকে গুরুত্বের দিক থেকে প্রাধান্য দেওয়া যায় সেটা স্পষ্ট নেই।
এদিকে বর্তমান সরকার আরেকটি 'ভিশন-২০৪১' তৈরি করতে যাচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। আমার কাছে মনে হয়েছে, এসব স্বপ্নযাত্রা ও লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতের কী কী বিষয় গুরুত্ব পাবে বা পাওয়া উচিত, তার একটা তালিকা থাকা প্রয়োজন। সব প্রকাশিত মিশন-ভিশন-রোডম্যাপে একথা প্রচ্ছন্ন থাকে যে, উল্লিখিত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাহায্য প্রয়োজন হবে। কিন্তু ঠিক কোন কোন খাতকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত, সেটার উল্লেখ দেখি না। একটি দেশের ভিশন বা লক্ষ্যমাত্রা তৈরি করতে হলে সবার আগে জানা প্রয়োজন, কী কী দেশীয় সম্পদ আছে, সেসব সম্পদের ভিত্তিতে আমরা কোন কোন লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে পারব, একুশ শতকে আমার প্রতিবেশীরা কী কী সক্ষমতা অর্জন করবে, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট কেমন হবে এবং সেই অনুযায়ী আমি নিজেকে কোন অবস্থানে দেখতে চাই। এতে অবশ্যই অনেক গবেষণার প্রয়োজন। ভারতের জন্য 'ভিশন ২০২০' তৈরি হয়েছিল প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ও বিজ্ঞানী এপিজে আবদুল কালামের নেতৃত্বে ৫০০ গবেষকের গবেষণায়।

সে যাই হোক, আমার মনে হয়েছে আগামী ২০৪১ কিংবা ২০৫০ সালকে সামনে রেখে আমাদের কয়েকটি বিষয়ে সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা থাকা উচিত। ২০৫০ নাগাদ এই শতকের অর্ধেক অতিক্রান্ত হবে, কাজেই একুশ শতকের মধ্যভাগে বাংলাদেশের সক্ষমতা ও অর্জন সম্পর্কে একটি সালতামামি থাকা দরকার। তখন এই তালিকাটি ফিরে দেখলে বোঝা যাবে আমরা কী ভেবেছিলাম,  কী পেয়েছি। স্বপ্ন ও বাস্তবতার ফারাক কতখানি সেটার একটা পরিমাপ থাকা প্রয়োজন। যাই হোক আগামী ২০৪১ বা ২০৫০ সাল নাগাদ মোটাদাগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নিচের বিষয়গুলোর প্রতি আমাদের নজর দেওয়া দরকার।

১. ২০১৭’র শেষে বাংলাদেশ মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট স্থাপন করবে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্পেস টেকনোলজিতে প্রবেশ করবে। একুশ শতকে গ্রহগত বিজ্ঞান বা প্লানেটারি সায়েন্স মহাকাশ গবেষণায় খুব বেশি গুরুত্ব পাবে। কাজেই ২০৫০ নাগাদ আমাদের একটা ইন্টারপ্লানেটারি মিশন বা ভিশন থাকা উচিত হবে। পাশের দেশ ভারত ইতোমধ্যে মঙ্গলগ্রহে নভোযান পাঠিয়ে ফেলেছে। চীন মহাকাশ বিষয়ে অনেক আগে থেকেই পারঙ্গমতা অর্জন করেছে। এই হলো আমাদের বড় প্রতিবেশীদের (বিগ নেইবার) অবস্থান। কাজেই ভারতীয় ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানিজেশন ( ISRO) বা ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (ESA) সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে আমাদের একটি নির্দিষ্ট স্পেস মিশন সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করার প্রয়োজনীয়তা আছে।

২. সামরিক ও বেসামরিক পার্টনারশিপের মাধ্যমে দেশীয় বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সংস্থাপন করা দরকার। প্রায় সব উন্নত দেশে এই ধরনের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান আছে। যেমন ভারতে আছে ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (DRDO)। আমাদের মেশিন টুলস ফ্যাকটরিকে ভিত্তি ধরে বেসামরিক গবেষকদের নিয়ে সামরিক স্থাপনায়, তত্ত্বাবধানে, অর্থ জোগানের মাধ্যমে আমাদের সামরিক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দেশেই নির্মাণ, মেরামত ও উন্নয়ন প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যে এখন থেকেই গবেষণার ফান্ড তৈরি দরকার।

৩. পরমাণু বিদ্যুৎ ও নবায়নযোগ্য শক্তি বিষয়ে শক্তিশালী গবেষণা থাকা দরকার। কাজেই পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন, নিরাপত্তা, জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ, কেন্দ্র নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার দরকার। যেহেতু পরমাণু বিদ্যুতের জন্য আলাদা প্রতিষ্ঠান হয়েছে, বর্তমান পরমাণু কমিশনের ভেতরেই আলাদা বিভাগে অথবা ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অধীনে নিউক্লিয়ার পাওয়া রিসার্চ সংক্রান্ত এই গবেষণাগুলো থাকা দরকার। শুধু পরমাণু শক্তি নয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, শক্তি ব্যবস্থাপনা, নবায়নযোগ্য শক্তি, সোলার মিনিগ্রিড ব্যবস্থাপনা, সোলার পাওয়ার ইত্যাদি বিষয়ে সমন্বিত পলিসি নির্ধারণ, নীতি প্রণয়ন, ব্যবস্থাপনা, গবেষণা পরিচালনা, অর্থনীতিক ও সামাজিক প্রভাব নির্ণয় ইত্যাদি বিষয়ে আমাদের জোরালো গবেষণা থাকা প্রয়োজন। এসব বিষয়ে অনেক ক্ষেত্রেই উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবু প্রয়োজন সমন্বয় ও লক্ষ্যমাত্রা ভিত্তিক সক্ষমতা অর্জন।

৪. জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা একুশ শতকে বেঁচে থাকার জন্য অতীব প্রয়োজন। ফলে বিল, হাওর, জলাশয়, অরণ্য, পার্বত্য অঞ্চল মিলিয়ে আমাদের বেশ কয়েকটি অভয়ারণ্য রাখতে হবে। ইকোট্যুরিজমের বিকাশের পাশাপাশি অভয়ারণ্যগুলোর স্বাস্থ্যরক্ষা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব। আমাদের জীববৈচিত্র্য আমাদের অহঙ্কার, আমাদের প্রাণিকূল আমাদের বেঁচে থাকার অন্যতম অঙ্গ। একুশ শতকের মধ্যভাগ নাগাদ একটি সুস্থ জীববৈচিত্র্য বিশ্বে আমাদের কার্বন ফুটপ্রিন্টকে কমাতে সাহায্য করবে।

৫. স্ট্যান্ডার্ড ও টেস্টিং ফ্যাসিলিটি ক্ষুদ্র এবং মধ্যম শিল্পের বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অধুনা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) এই কাজটি করছে। কিন্তু বেশ অনেক পণ্যের ক্ষেত্রে এই নীরিক্ষার কাজটি সুচারুভাবে কিংবা আইএসও(ISO) মান রেখে করা যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক মান বিষয়ক লাইসেন্স বা পণ্য নিরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় আমাদের উৎপাদিত অনেক পণ্য বিদেশি বাজারে ঢুকতে পারছে না।  ভারত, সিঙ্গাপুর কিংবা ইউরোপের প্রতিষ্ঠান থেকে মান পরীক্ষা করে নিয়ে আসতে হচ্ছে, যেটা অত্যধিক খরচবহুল। দেশীয় পণ্যের বিকাশ ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য এই ধরনের আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন টেস্টিং ফ্যাসিলিটি বা লাইসেন্সিং প্রতিষ্ঠান আমাদের খুবই দরকার।

৬. উচ্চশিক্ষায় বা টার্শিয়ারি পর্যায়ে সৃজনশীল গবেষণা এবং শিক্ষার বাতায়ন সৃষ্টি করতে হবে। এই সৃজনশীলতা শুধু লিবারাল আর্টস বা মানববিদ্যায় সীমাবদ্ধ নয় বরং প্রকৌশল, চিকিৎসা কিংবা জ্ঞানের সব মৌলিক শাখাতেই বিকশিত হতে হবে। আমাদের এখনকার পাঠক্রম জ্ঞানভিত্তিক ও ভারাক্রান্ত। সেখানে সৃজনশীলতা বিকাশের পথ রুদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন তথা বৈশ্বিক কারিকুলাম ইদানিং আউটকাম-বেইজড শিক্ষার দিকে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীদের নিজস্ব চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে। তাদের ঋত্বিক ঘটকের ভাষায় বলতে হবে ‘ভাবো, ভাবা প্র্যাকটিস করো’। স্বাধীনচিন্তার প্র্যাক্টিস থাকা জরুরি। একইসঙ্গে কলাকেন্দ্র বা এই জাতীয় লিবারাল পারফরমেন্স সেন্টার তৈরি করা দরকার যেগুলো জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সৃজনশীল কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও পৃষ্ঠপোষকতা করবে।

৭. যেসব দেশের শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডগুলোতে ভালো করে, সেসব অনেক দেশেই মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা স্কুলে আলাদা কারিকুলামের ব্যবস্থা থাকে। এসব বিশেষায়িত স্কুলে দেশের সব স্কুল থেকে বাছাই করা শিক্ষার্থীরা পড়ার সুযোগ থাকে। এই জাতীয় একটি ‘স্কুল ফর গিফটেড স্টুডেন্টস’ আমাদের দেশে অন্তত একটি থাকা প্রয়োজন। এ ধরনের বিশেষায়িত স্কুল থাকলে STEM (সায়েন্স, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যাথ) বিষয়ে দ্রুত পারঙ্গমতা অর্জন সম্ভব।

৮. একটি অত্যাধু্নিক ন্যাশনাল ডেটা সেন্টার কার্যকর করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে অবশ্য বর্তমান সরকারে পরিকল্পনা আছে ও অনেক অগ্রগতিও সাধিত হয়েছে। তবু ২০৫০ সাল নাগাদ একটি দৃশ্যমান ও কার্যকর ডেটা সেন্টার থাকতে হবে।

৯. সমুদ্র গবেষণার ও মহাকাশ গবেষণার জন্য আলাদা জাতীয় কেন্দ্র যথাক্রমে ন্যাশনাল সেন্টার ফর ওশানোগ্রাফি ও ন্যাশলান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রফিজিকস স্থাপন করা দরকার। বঙ্গোপসাগর ও এর তলদেশে থাকা খনিজ সম্পদ, এর সঙ্গে সম্পৃক্ত জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে আমাদের বিশদ ধারণা রাখা প্রয়োজন। এজন্য বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে সম্পৃক্ত রেখে সমুদ্রবিজ্ঞান কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন হবে। বিশেষ করে স্পেস মিশনে যোগদানের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যে অগ্রসর হতে হলে মহাকাশ গবেষণার বিকল্প নেই। এসব বিষয়ে এখনও আমরা ভাড়া-করা বিদেশি কনসাল্টেন্টের ওপর নির্ভরশীল। এই দুই বিষয়ে আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ণতা থাকা দরকার।

১০. প্রতিটি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বিজ্ঞানের দর্শন’ এবং ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ইতিহাস/অগ্রগতি’ জাতীয় কোর্স থাকতে হবে। এছাড়া সব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি কারিকুলাম প্রতি ৭ বছর পরপর পুনর্মূল্যায়ন করাতে হবে। একইসঙ্গে বড় ও উল্লেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ‘বিজ্ঞান জনবোধ্যকরণ’ কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে কিংবা এই বিষয়ে এক/একাধিক শিক্ষককে নিয়োগ দিতে হবে যারা ‘পাবলিক আন্ডারস্ট্যান্ডিং অব সায়েন্স’ বিষয়ে লেকচার, লেখালেখি, প্রচারণা, সচেতনতা ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

১১. বায়োলজিক্যাল সায়েন্স বিষয়ে আমাদের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করতে হবে। এই বিষয়ে অত্যাধুনিক গবেষণাগার স্থাপন, বিশ্ববিদালয় সমূহে এই সংক্রান্ত কারিকুলামের মানোন্নয়ন, স্নাতক ল্যাবরেটরি স্থাপন ইত্যাদি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

১২. জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিষয়ে আমাদের গবেষণা-স্বনির্ভরতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। ২০৫০ সালের আগেই আমরা পরিবেশের বৈরিতা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিজনিতসহ অন্যান্য পারিবেশিক সংকটের মুখোমুখি হব। একুশ শতকে জলবায়ু মোকাবিলা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হবে। এই লক্ষ্যে আমাদের সব জ্ঞান,সম্পদ, সামাজিক বেষ্টনী, অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-রাষ্ট্রনৈতিক-কূটনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সামর্থ্যকে পরিচালিত করার সামর্থ্য থাকতে হবে। একুশ শতকের মধ্যভাগে সরকার যন্ত্রের একটা বড় অংশকে নিয়োজিত থাকতে হবে, আমরা যেন এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারি।

আগামী দশ বছরে আমাদের উচিত হবে উল্লিখিত লক্ষ্যমাত্রাগুলোকে কিভাবে অর্জন করা যায়, সেই বিষয়ে সম্পদ ব্যবস্থাপনা, দাফতরিক কার্যকারিতা, সক্ষমতা, পরিকল্পনা ও বাজেট প্রণয়ন, মানবসম্পদ উন্নয়ন বৃদ্ধি করা অথবা এই সব বিষয়ে সক্ষমতা সৃষ্টি করা।

মনে রাখতে হবে, ভবিষ্যতে ন্যানোটেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি, বিগ ডেটা, আর্টিফিশাল ইন্টেলিজেন্স, মলিকুলার বায়োলজি ও জেনেটিক্স বিষয়গুলোতে আমাদের সক্ষমতা থাকতে হবে। সেই লক্ষ্যে ওপরের সক্ষমতাগুলো অর্জনের মাধ্যমে আমরা মধ্য-একুশ শতকে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে সক্ষম হব। অবশ্যই সে পরিচিতি হবে সত্তর-দশকের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ থেকে অনেক অনেক দূরবর্তী একটি সম্মানজনক আইডেন্টিটি।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
আধুনিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে আজ থেকে শুরু প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী
আধুনিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে আজ থেকে শুরু প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী
আমার কোনও অনুশোচনা নেই: গার্দিওলা
আমার কোনও অনুশোচনা নেই: গার্দিওলা
আত্মরক্ষার সিদ্ধান্ত আমরা নিজেরাই নেব: নেতানিয়াহু
আত্মরক্ষার সিদ্ধান্ত আমরা নিজেরাই নেব: নেতানিয়াহু
হেলমেটের মান নির্ধারণ হবে কবে?
হেলমেটের মান নির্ধারণ হবে কবে?
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ