X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষা নিয়ে দুষ্টুমি

তুষার আবদুল্লাহ
০৬ মে ২০১৭, ১৩:১৮আপডেট : ০৬ মে ২০১৭, ১৭:১১

তুষার আবদুল্লাহ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশিত হলো সম্প্রতি। আমার মেয়ে আগামী মাধ্যমিকের পরীক্ষার্থী। এবারের ফল কেমন হলো, আগামীতে কেমন হতে পারে, এসব নিয়ে আমরা বিশ্লেষণ করতে বসিনি এখনও। বসব বলেও মনে হচ্ছে না। বাবা-মেয়ের আলোচনার বিষয় সেই নবম শ্রেণি থেকেই প্রায় একই-ভবিষ্যতে বিজ্ঞান বিষয়ক কোনও লেখাপড়া এবং কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছে না থাকার পরও কেন বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে হবে। মানবিক বিষয়েও জ্ঞান ও কাজের অপার জায়গা আছে। বাণিজ্য নিয়েও পড়া এবং কাজের জায়গা বিস্তৃত। আজকাল বাজারে বাণিজ্যের কাটতি বেশি থাকায় স্কুলগুলোতে বিজ্ঞানের পাশাপাশি বাণিজ্য বিভাগসুলভ কিন্তু কোনও কোনও স্কুলে মানবিক বিভাগ নেই। তারকাখচিত স্কুলগুলোতেও মানবিক বিভাগ নিয়ে পড়ার সুযোগ থাকছে না। ফলে যে শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষায় অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল বা সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ার ইচ্ছে রাখে, তাকে মাধ্যমিকে সেই সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। তার ভিত দুর্বল রয়ে গেলো। তাকে উচ্চ মাধ্যমিকে গিয়ে মানবিকের পড়া শুরু করতে হচ্ছে। বিরাজমান এই অবস্থাকে বলতে হয়- শিক্ষার্থীকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা। একইসঙ্গে জিইয়ে রাখা শিক্ষার বৈষম্য।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা যেমন এই নকশা তৈরি করে রেখেছে, তেমনি অভিভাবকরাও সনাতনী ভাবনা মস্তিষ্কের সেলফে যত্ন করে রেখে দিয়েছেন। তাদের অধিকাংশই ছেলে-মেয়েকে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিবিএ-এমবিএ ডিগ্রিধারী হিসেবে তৈরি করতে চান। তাদের সন্তান অর্থনীতিবিদ হবে, আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক, সমাজ বিজ্ঞানী হবে, পরিবেশবিদ হবে, এমনটা ভাবেন না। তারা সন্তানকে মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বা বাণিজ্যতে রেখে একটা সুযোগ নিতে চান। যদি সন্তান ভালো ফল করে ফেলে, তবে তো বাজিমাত। আরেকদফা বিজ্ঞান পড়িয়ে নেওয়া যায়, পরের দানে চিকিৎসক-প্রকৌশলী-বিবিএ-এমবিএ ডিগ্রিধারী হিসেবে নির্মাণ করিয়ে যেতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় সন্তানের মন ও শরীরের সক্ষমতা বরাবরই উপেক্ষিত থাকে। ফলে নিরানন্দ পাঠ প্রক্রিয়ার বলি হচ্ছে আমাদের সন্তানেরা।
শিক্ষা ব্যবস্থার প্রধান মুরব্বি রাষ্ট্র। এই মুরব্বিই কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থাকে স্থির রাখতে দেয়নি কখনও। শিক্ষা ব্যবস্থাকে নিয়ে গেছে পরীক্ষাব্যবস্থায়। বছরজুড়ে স্কুলে পরীক্ষা। ধাপে ধাপে পরীক্ষার জাতীয় প্রতিযোগিতা। এখানে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানচর্চা মূল গন্তব্য নয়। এবার যে মাধ্যমিকের ফল প্রকাশিত হলো, সেখানে বলা হচ্ছে- নিকট অতীতের পাসের হারের চেয়ে এবার কমে আসার কারণ, উত্তরপত্র দেখার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা। বলা হচ্ছিল- উত্তরপত্র দেখা হতো অনেকটা ছাড় দিয়েই। পরীক্ষার্থীরা সঠিক লিখলো কিনা, সেটা বিবেচনায় আনার চেয়ে বিবেচনার বিষয় ছিল পাসের হার বাড়তির দিকে রাখা। অঙ্কটি শতকের দিকে ধাবিত হচ্ছিল। পরীক্ষার্থীরা ভুল বা সঠিক কী লিখলো, সেটা না দেখে সে লেখার চেষ্টা করেছে বা কিছু একটা লিখেছে তাতেই তাকে নম্বর দেওয়ার নির্দেশনা থাকতো। ফলে অবারিত পাস বা জিপিএ ৫-এর ফলন হতো।
এবার উত্তরপত্র দ্বিতীয় দফা দেখার নিয়ম করাতে পাসের হার কমেছে। কুমিল্লায় পাসের হারে যে ধস নেমেছে, তার জন্য বলা হচ্ছে গণিতের দুর্বদ্ধ সৃজনশীল প্রশ্ন। কন্যার সঙ্গে যেমন এই সৃজনশীল প্রশ্ন নিয়ে প্রতিদিন কথা বলে যাচ্ছি, তেমন অনেক শিক্ষার্থীর সঙ্গেও হচ্ছে। তারা শুরু থেকেই বলছে আগে ছয়টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দিতে হতো, এখন দিতে হচ্ছে সাতটি। ছয়টির উত্তর দিতেই তারা হিমশিম খেতো। সাতটি প্রশ্ন তাদের আরও চাপের মুখে ফেলে দিয়েছে। আর সবচেয়ে ঝামেলার দিকটি হচ্ছে, যেটা শিক্ষাবিদরাও মনে করছেন, আমাদের শিক্ষকরা এখনও ‘সৃজনশীল’ বলতে কী বোঝায়, তা বুঝে উঠতে পারেননি। যারা সৃজনশীলতাই বুঝতে পারেননি তারা কী করে সঠিক মান যাচাই উপযোগী সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরি করবেন? দুর্বোধ্যতা নিয়ে তারা দুর্বোধ্য প্রশ্নই তৈরি করছেন। যার দায় নিতে হচ্ছে আমাদের সন্তানদের।
শঙ্কার বিষয় হচ্ছে সন্তানদের নিয়ে আমাদের নিরীক্ষা শেষ হচ্ছে না। ঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্র নিত্য নতুন নতুন ফর্মুলা বের করছে তাদের শিক্ষিত করার দোহাই দিয়ে। বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, আমরা এখনও নিজেরাই শিখে উঠতে পারিনি প্রাথমিক শিক্ষা কাকে বলে? প্রাথমিক শিক্ষার বয়সসীমা কত? অতএব আমাদের মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা নিয়ে স্বপ্ন দেখারও সক্ষমতা তৈরি হয়নি। সেজন্য আমাদের চেষ্টা ও নিষ্ঠারও ইঙ্গিত নেই। উদ্বেগ আর বাড়াতে চাই না। এমনিতেই শঙ্কায় আছি আগামী মাধ্যমিকে আমার মেয়েকে না কোনও অদ্ভুত দুষ্টুমির শিকার হতে হয়!
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ওসির বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে কাজের অভিযোগ
ওসির বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে কাজের অভিযোগ
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ