X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্ষকের দেহরক্ষীরা

হারুন উর রশীদ
০৭ মে ২০১৭, ২৩:০৪আপডেট : ০৮ মে ২০১৭, ১১:৪৬

হারুন উর রশীদ বনানীতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনা এরইমধ্যে জানাজানি হয়ে গেছে। কিন্তু এটা কি শুধু জানাজানির পর্যায়েই থাকবে? এই ধর্ষকদের দেহরক্ষী আছে। দেহরক্ষীকে সঙ্গে নিয়েই তারা ধর্ষণ করেছে। কিন্তু আমার বিবেচনায় দৃশ্যমান এই দেহরক্ষীর পাশাপশি আরও অনেক দেহরক্ষী আছে এই ধর্ষকদের।
ঘটনাটি গত ২৮ মার্চের। মামলা হয়েছে ৬ মে। ঘটনার শিকার তরুণীরা প্রাণভয়ে মামলা দায়েরে দেরি করেন। কিন্তু যখন তারা ৪ মে মামলা করতে গেলেন, তখন পুলিশ মামলা নিলো না। তালবাহানা করে ৪৮ ঘণ্টা সময় কাটিয়ে দিলো। অভিযোগ আছে, ২৫ লাখ টাকার টাকার টোপে নাকি পুলিশ মামলা নিতে ৪৮ ঘণ্টা দেরি করে। ধর্ষকরা যে কৌশলে ও ভয় দেখিয়ে তরুণীদের মামলা থেকে বিরত রেখেছিল, তা স্পষ্ট। দুই শিক্ষার্থীকে চাপে রাখাসহ ব্ল্যাক মেইল করতেই ধর্ষণের ঘটনা ধর্ষকরা ভিডিও করেছিল।
দেহরক্ষী পোষার মতো ক্ষমতাধর ধর্ষকরা তো এরইমধ্যে ঘটনাটা প্রায় ধামাচাপা দিয়েই ফেলেছিল। দেরিতে মামলা করার কারণে ধর্ষণের প্রমাণ পেতে এখন মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। মেডিক্যাল টেস্ট এখনও নিশ্চিত কোনও ফল দেবে কিনা, তা বলা মুশকিল।
মামলার এজাহারটি আমার হাতে রয়েছে। আর এজাহার বিশ্লেষণ করে এটা স্পষ্ট যে, ওই দুই তরুণীকে পরিকল্পিতভাবে ধর্ষণ করে ধর্ষকরা। অপরাধ করে পার পেতে কী কী করতে হয়, তা ধর্ষকরা জানে। তাদের কৌশল ও অর্থবিত্তের ক্ষমতাই বলে দেয়, হয়তো আগেও তারা একই ধরনের আরও অপরাধ করে একই কৌশলে পার পেয়ে গেছে।
এজারহারটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়:
১. ধর্ষকদের মধ্যে একজন ছিল তাদের পূর্ব পরিচিত।

২. মূল হোতা দেহরক্ষী রাখা ধর্ষকের সঙ্গে তাদের পরিচয় অল্পদিনের এবং পূর্ব-পরিচিত যুবকই তাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়।

৩. জন্মদিনের পার্টির নামে তাদের বনানীর রেইনট্রি হোটেলে নেওয়া হয়। সেখানে তাদের ১৩ ঘণ্টা আটক রেখে ধর্ষণ করা হয়।

৪. ধর্ষণের ঘটনা ভিডিও করা হয়।

৫. এরপর দেহরক্ষী ধর্ষণের শিকার দুই তরুণীতে সব সময় অনুসরণ করে। তাদের ভয় দেখানো হয়।

ধর্ষণের শিকার হওয়া দুই তরুণীর ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে রবিবার । কিন্তু ফরেনসিক চিকিৎসকরা বলছেন, ঘটনাটি বেশ কিছুদিন আগের হওয়ায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া কঠিন হবে। ঢাকা মেডিক্যালে তাদের মাক্রোবায়োলজি, রেডিওলজিক্যাল ও ডিএনএ প্রোফাইলিং পরীক্ষার করা শুরু হয়েছে। পরীক্ষা শেষে প্রতিবেদন পেতে ১৫/২০ দিন সময় লাগবে।

ধর্ষকরা চেয়েছিল সময় পার করতে। তাদের জানা ছিল, ধর্ষণের দৈহিক আলামত একটি নির্দিষ্ট সময় পর পাওয়া কঠিন। তার সেই চেষ্টায় তারা আপাতত কিছুটা হলেও ‘সফল’।

তবে এই ঘটনা প্রমাণের জন্য ডাক্তারি পরীক্ষাই একমাত্র সাক্ষ্য, তা ভাবার কোনও কারণ নেই। ডাক্তারি পরীক্ষা ছাড়া আরও যেসব বিষয় ধর্ষণকে প্রমাণ করবে তা হলো:

১. আসামিদের গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদ

২. সাক্ষীদের জবানবন্দি (এজাহারে সাক্ষীদের নাম আছে)

৩. রেইনট্রি হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ ও গেস্ট রেজিস্ট্রার

৪. হোটেল কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ

৫. আসামি, ভিকটিম ও সাক্ষীদের ফোন কল রেকর্ড ও লিস্ট ।

৬. আসামিদের ধারণকৃত ধর্ষণের ভিডিও।

এর বাইরে হয়তো আরও অনেক ক্লু আছে, যা এজাহার দেখে বোঝা সম্ভব নয়। ধর্ষণের শিকার তরুণীদের জবানবন্দি নিলে তা স্পষ্ট হবে।

কিন্তু এই ধর্ষকদের অদৃশ্য দেহরক্ষীর যেভাবে শুরু থেকেই তৎপর তাতে সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচারের আশা, এরই মধ্যে দুরাশায় পরিণত হয়েছে।

১. পুলিশ অভিযোগ পাওয়ার পর মামলা রেকর্ড করতে দুই দিন (৪৮ ঘণ্টা) সময় নেয়। আর এই সময়ের মধ্যে পাঁচ আসামি আত্মগোপনে চলে গেছে। তাদের বাড়িতে তারা নেই।

২. অভিযোগ, পুলিশ বিষয়টি সমঝোতার চেষ্টা করেছিল। আর এই সমঝোতার প্রস্তাব তো ধর্ষকদের পক্ষেই যায়। ২৫ লাখ টাকার একটি টোপের বিষয়ও শোনা যায়।

৩. বনানীর রেইনট্রি হোটেল কর্তৃপক্ষের সহায়তা ছাড়া এই ধর্ষণের ঘটনা অসম্ভব। কারণ তারা হোটেলে ছাদে অবস্থান নেয় এবং তরুণীদের একটি রুমে আটক রাখে ১৩ ঘণ্টা।

৪. প্রমাণ মুছে ফেলতে রেইনট্রি রেস্টুরেন্ট এরইমধ্যে ওই দিনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সরিয়ে ফেলেছে। বলছে এক মাসের বেশি ফুটেজ রাখে না তারা।

৫. আর সময়ের ব্যবধানের কারণে মেডিক্যাল টেস্টের গুরুত্বও অনেকটা এখন কমে এসেছে।

এরইমধ্যে জানা  হয়ে গেছে, ধর্ষণ মামলার আসামিদের একজন সাফাত আহমেদ দেহরক্ষী নিয়ে চলাফেরা করে।  ধর্ষণের সময়ও ওই বডিগার্ড ছিল। পরে সে তরুণীদের ভয়ভীতি দেখাতেও তৎপর ছিল। কিন্তু এই সময়ে ধর্ষকদের রক্ষায় যে আরও কয়েক ধরনের দেহরক্ষী কাজ করেছে, তা এরইমধ্যে আশা করি স্পষ্ট হয়েছে। আর অদৃশ্য দেহরক্ষীদের পরিচালনা করেছে ধর্ষকদের টাকা। এরা ধনীর দুলাল। এরা বিত্তশালী। এরা টাকা দিয়ে সব বশ করে রাখে।

ধর্ষকসহ তাদের প্রকাশ্য দেহরক্ষীরা হয়তো আইনের আওতায় আসবে। কিন্তু এরসঙ্গে আরও যেসব অপ্রকাশ্য দেহরক্ষী আছে, তাদের কী হবে? তারা তো সব সময় ধর্ষকদের সেবায় নিয়োজিত।

লেখক: সাংবাদিক

ইমেইল: [email protected]



*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ভারত-পাকিস্তান টেস্ট হবে দারুণ: রোহিত
ভারত-পাকিস্তান টেস্ট হবে দারুণ: রোহিত
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ