X
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘মানুষ’ হতে আর কত অপেক্ষা করতে হবে?

প্রভাষ আমিন
০৮ মে ২০১৭, ১৩:৫৯আপডেট : ০৮ মে ২০১৭, ১৪:১৪

প্রভাষ আমিন নিঃসন্তান দম্পতি হযরত আলী ও হালিমা বেগম। মাত্র একদিন বয়সে আয়েশা আক্তার এসে ভরিয়ে দিয়েছিল তাদের বুক। তারপর আট বছর ধরে আয়েশাকে বুকে আগলেই রেখেছিলেন তারা। নিজেদের কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারেননি। মাত্র আট বছরের আয়েশাও ছাড় পায়নি পশুদের লালসা থেকে। আয়েশাকে প্রতিবেশী ফারুক সাইকেলে করে জঙ্গলে নিয়ে যায়। বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন হযরত আলী। বিচার তো পানইনি, উল্টো প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। তার গরু নিয়ে জবাই করে খেয়ে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। আট বছরের শিশুর সম্ভ্রমের বিনিময় মূল্য ধরেছে এক হাজার টাকা। সব বাবার কাছে তার মেয়ে রাজকন্যা। দরিদ্র হযরত আলী বিচার চেয়েছিলেন, বিনিময় চাননি। একজন পিতার কাছে কন্যার সম্ভ্রমহানীর বিচার না পাওয়ার চেয়ে বড় ব্যর্থতা আর কিছু নেই। অসহায় পিতা মেয়েকে নিয়ে ঝাঁপ দেন ট্রেনের নিচে। সব বিচারের ঊর্ধ্বে চলে গেলেন হযরত আলী আর আয়েশা। এখন সারাদেশে তোলপাড়। দরিদ্র হযরত আলীর বাড়িতে এখন সারাক্ষণ ভিড়। জীবন দিয়ে হয়তো এখন বিচার পাবেন আয়েশা।
বাবা-মেয়ের আত্মহত্যার ঘটনা ছুঁয়ে গেছে সবাইকে। এমনকি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমকেও। শুক্রবার ভোরে ঘুম ভেঙেই ফেসবুকে শাহরিয়ার আলমের স্ট্যাটাস দেখে চোখ ভিজে আসে। তিনি লিখেছেন, ‘গত কয়েকদিন থেকে প্রায়ই মনে করার চেষ্টা করছি আত্মাহুতি দেওয়া হযরত আলী এবং তার 'পালিত' মেয়ে আয়েশা যখন বাড়ি থেকে বের হয়ে রেললাইনের দিকে যাচ্ছিল তখন আমি কি করছিলাম? শান্তিতে ঘুমাচ্ছিলাম? বৈঠক করছিলাম? এলাকার মানুষের সমস্যার কথা শুনছিলাম? দেশ হিসেবে কতটা এগিয়েছি তার হিসেব করছিলাম? পুরোনো কোন বন্ধুর সাথে ফেসবুকে খোঁজ নিচ্ছিলাম? সামনে আরও ভালো ভালো কী করা যায় তার পরিকল্পনা করছিলাম? কী লাভ এতকিছু করে, যখন নিষ্পাপ আয়েশা এভাবে মারা যায়? কিসের জন্য এতকিছু করছি আমরা? হযরত আলী 'একজন’ মানুষও পেলেন না যিনি তাঁকে একটু আশস্ত করতে পারতেন অন্তত!? 'মানুষ' হতে আর কত অপেক্ষা করতে হবে আমাদের? কঠোর এবং সর্বোচ্চ শাস্তি হবে দায়িত্বে অবহেলাকারীদের।’
শাহরিয়ার ভাইকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। ভদ্র, বিনয়ী, আদর্শে অবিচল ভালো মানুষ। কিন্তু তার ভেতরে যে এতটা সংবেদনশীলতা লুকিয়ে আছে বুঝতে পারিনি। কিন্তু মন্ত্রিসভার একজন সদস্যের স্ট্যাটাসেও যখন অসহায়ত্বের ছায়া দেখি, নিজেদের আরও অসহায় লাগে। তবু আমরা আশ্বাস্ত হই, মন্ত্রিসভায় এমন মানবিক মানুষ থাকলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে আমরা বেরুতে পারবো।

শাহরিয়ার ভাইয়ের স্ট্যাটাস দেখে মন যতটুকু ভালো হয়েছিল, ততটাই তেতো হয়ে গেলো একটু পর পত্রিকা হাতে নিয়ে। জাতীয় একটি দৈনিকের প্রথম পাতার হেডলাইন ‘জুরাইনে বিদ্যালয়ে আটকে কিশোরীকে গণধর্ষণ’। আমাদের আশা বদলে যায় আশঙ্কায়। জানি না হতভাগা এই কিশোরীকেও বিচার পেতে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিতে হবে কিনা? জানি না ‘মানুষ’ হতে আর কত অপেক্ষা করতে হবে আমাদের?

হযরত আলী তার মেয়ের সম্ভ্রমহানীর বিচার চাইতে গিয়েছিলেন পুলিশের কাছে। কিন্তু পুলিশ কনস্টেবল হালিমা খাতুন কার কাছে যেতে পারতেন? তিনি ধর্ষিত হয়েছেন তার সহকর্মী সাব ইন্সপেক্টর মিজানুল হক দ্বারাই। তিনি ধর্ষিত হন ময়মনসিংহের গৌরিপুর থানার পুলিশ ব্যারাকেই। হালিমা ওসির কাছে বিচার চেয়ে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। কিন্তু ওসি তা আমলে নেননি, গ্রহণও করেননি। অভিযোগ পড়ে থাকে অভিযোগের মতো। লজ্জায়, ঘৃণায়, ক্ষোভে অসহায় হালিমা নিজের শরীরে আগুন দেন। হালিমা সম্ভ্রম হারান ১৭ মার্চ, আর বিচার না পেয়ে জীবন দেয় ২ এপ্রিল। পুরো ঘটনা হালিমা লিখে রেখে গেছেন তার ব্যক্তিগত ডায়েরিতে ‘আমার মরে যাওয়ার একমাত্র কারণ এসআই মোহাম্মদ মিজানুল ইসলাম আমাকে ধর্ষণ করেন। ১৭/৩/১৭ ইং রাত ২.০০ ঘটিকায়। আমার অভিযোগ অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গ্রহণ করে না।’
এখানে আয়েশা যতটা অসহায়, হালিমা খাতুনও ততটাই। এখানে ফারুক আর পুলিশের সাব ইনস্পেক্টর মিজানের কোনও ফারাক নেই। সব ধর্ষক পুরুষ। ধর্ষণ আসলে একটি পুরুষালি রোগ। সবসময় ধর্ষক পুরুষরা অপরাধ করে, আর দায় চাপায় নারীর ঘাড়ে।
নারী কেন রাতের বেলা ঘরের বাইরে গেলো, নারীর পরনে কেন ওড়না নেই, নারী কেন বোরখা পড়ে না, নারী কেন হিজাব পড়ে না, নারী কেন জিন্স পড়ে। নারীর হাজার অপরাধ। যেন নারীর পর্দা না করাটাই অপরাধ। পুরুষের ধর্ষণ করা যেন জায়েজ।  কিন্তু আট বছরের আয়েশা, হিজাব পড়া তনু কেন ধর্ষণের শিকার হয়? বিশ্বের অনেক দেশে তো মেয়েরা অল্প পোশাকেই চলাফেরা করেন, অনেকে বিচে তো বিকিনি পড়েই থাকেন। কই সেখানে তো কেউ তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে না। তাহলে ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশে ধর্ষণ কেন প্রায় মহামারী? ধর্মও কি আটকাতে পারে না ধর্ষকদের। বাংলাদেশের কোনও কোনও ‘মাওলানা’ দিনের পর দিন যেভাবে নারীদের পণ্য হিসেবে তুলে ধরেন, যেভাবে নারীদের দেখলে তাদের দিলে লালা ঝরে; তা ধর্ষকদের উৎসাহিত করে থাকতে পারে। অথচ ধর্ষণ প্রতিরোধে ইসলামি চিন্তাবিদরা বড় ভূমিকা রাখতে পারেন। তারা যদি ইসলামের সত্যিকারের চেতনা তুলে ধরেন; ধর্ষণ যে ইসলামের দৃষ্টিতে মহাপাপ, সেটা যদি ঠিকভাবে তুলে ধরেন, সবাইকে যদি নারীকে মর্যাদা দেওয়ার শিক্ষা দিতে পারেন; তাহলে নিশ্চিতভাবে ধর্ষণ কমে যাবে।

ধর্ষণের যে পরিসংখ্যান আছে, বাস্তবে ঘটে তারচেয়ে অনেক বেশি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারীর ভবিষ্যৎ চিন্তায়, সামাজিক হেনস্তার ভয়ে ধর্ষণের ঘটনা চেপে যাওয়া হয়। আপস হয়। বিচারে চাইতে গেলে থানায়, তদন্তে, আদালতে দফায় দফায় হেনস্তা হতে হয়। যে পুলিশ তার সহকর্মীকে ধর্ষণ করে, তার কাছে বিচার চাইতে গেলে ধর্ষিতা কী ধরনের আচরণের মুখোমুখি হতে পারে ভাবুন একবার।

তদন্তের নামে পুলিশ খুটিয়ে খুটিয়ে ধর্ষণের বিবরণ শুনে বিকৃত আনন্দ নেবে। নারী কেন অমন পোশাক পড়েছিল, কেন তখন সেখানে গিয়েছিল, তার জবাবদিহি চাইবে।

এতসব হেনস্তা ঠেলে বিচারের পর্যায়ে গেলে প্রকাশ্য আদালতে অনেক মানুষের সামনে আবার একই ঘটনা ঘটবে। তবুও বিচার মিলবে না। কারণ ধর্ষণের ঘটনার সাক্ষী থাকে না। কেউ দেখে না। কোনও পুরুষ দেখলে সেটা গণধর্ষণ হয়ে যায়। উদাহরণ দিলে আসলে আর কিছু লিখতে হবে না। গত শনিবার রাতে এটুকু লিখে বাসায় গেছি। সকালে পত্রিকা খুলেই দেখি, নারায়ণগঞ্জে স্বামীর জামিনের কথা বলে স্ত্রীকে ধর্ষণ। তবে দেশজুড়ে তোলপাড় বনানীর ঘটনায়। বনানীর এক চার তারকা হোটেলে বেসরকারি এক বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে পিস্তলের মুখে রাতভর দুই বন্ধু ধর্ষণ করেছে। ধর্ষকের ড্রাইভার এবং দেহরক্ষী আবার তা ভিডিও করেছে। বন্ধু বেশে ওই দুই শিক্ষার্থীকে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ডেকে নেওয়া হয়েছিল। রাতেই খুলে যায় বন্ধুর মুখোশ। ধর্ষক কখনও কারও বন্ধু হতে পারে না। এই মামলার ৫ আসামীর তিনজনই প্রভাবশালী ও ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান। মূল ধর্ষক সাফাত আহমেদ, যার জন্মদিনে পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল, আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে। অপর দুই ধর্ষক সাদমান সাকিফ গুলশান লিঙ্ক রোডের পিকাসো রেস্টুরেন্ট ভবনের মালিকের ছেলে, আর নাঈম আশরাফ একজন মিডিয়া কর্মী, ভারতীয় শিল্পীদের এনে অনুষ্ঠান আয়োজন করে সে। বাকি দুই আসামীর একজন সাফাতের ড্রাইভার বিল্লাল, অপরজন তার দেহরক্ষী, যার নাম জানা যায়নি। এরা আসলে মানুষ নয়, পশু। তবে পেছনে প্রচুর অর্থ আর প্রভাব থাকায় এই পশুদের বিচার নিয়ে সন্দিহান অনেকেই। ইতিমধ্যেই সাফাতের বাবা আপন জুয়েলার্সের মালিক ছেলের ধর্ষণের সাফাই গেয়ে বলেছেন, সেদিন যা হয়েছে, তা সম্মতির ভিত্তিতেই হয়েছে। তার মানে তিনি স্বীকার করে নিলেন, সেদিন কিছু একটা হয়েছিল। ইতিমধ্যে তিন ধর্ষকের ছবি ছাপা হয়েছে, সবার দায়িত্ব যেখানেই এদের দেখা যাবে, সেখান থেকেই ধরে পুলিশে দেওয়া। ৫ কুলাঙ্গারের প্রতি তীব্র ঘৃণা। আর এদের ঠিকমত মানুষ করতে না পারায় এবং এখনও পুলিশের হাতে সোপর্দ না করায়, এদের পরিবারের সদস্যদের জন্য সমান ঘৃণা। সাফাতের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান আপন জুয়েলার্সকে বর্জন করতে হবে। সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে ধর্ষকদের।

ডিজিটাল বাংলাদেশে ধর্ষকদের আরেক অস্ত্র হলো ভিডিও। ধর্ষকরা ধর্ষণের দৃশ্য ভিডিও করে রাখে। এই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ধর্ষিতাকে রক্ষিতা বানিয়ে ফেলে দিনের পর দিন ধর্ষণ করা হয় অথবা মুখ বন্ধ রাখা হয়। এই যেমন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের বিচার চাইতে থানায় যেতে এক মাস লেগেছে। ভিডিও ফাঁস করে দেওয়ার বারবার হুমকির মুখে তারা থানায় গেছে। ভাবুন গ্রামের কেউ হলে কী করতো? হয় বিচারই চাইতো না, নয় মরে যেতো। ধনাঢ্য ও প্রভাবশালী পরিবারের দুই সন্তানের বিরুদ্ধে মামলা করতে থানায় গিয়ে তাদের ৪৮ ঘণ্টা সময় লেগেছে। টাকার জোরে মুখ বন্ধ ছিল পুলিশেরও। উল্টো হয়রানি হতে হয় ধর্ষিতাদের। ধর্ষণের ঘটনার সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো এটাই। একমাস পর নিশ্চয়ই ভিকটিমদের শরীরে ধর্ষণের কোনও চিহ্ন থাকবে না। এমনিতেও প্রমাণ পাওয়া কঠিন। কারণ ধর্ষিতার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হলো, শরীর থেকে সব গ্লানির চিহ্ন মুছে ফেলা। তাই সে প্রথমে এসেই লম্বা সময় ধরে গোসল করে। তারপর ধাতস্ত হলে সাহসী কেউ কেউ মামলার কথা ভাবেন।
নারীদের ভদ্রতাকে পুরুষদের কেউ কেউ দুর্বলতা ভাবেন। ভদ্রতার হাসিকে মনে করেন আমন্ত্রণ। একসাথে চা খাওয়াকেই সবকিছুর নিশ্চয়তা মনে করেন। খোঁজা হয় নারীর দোষ। যেমন বনানীর ঘটনায় বলা হচ্ছে, মেয়ে দুটি হোটেলে গেলো কেন? আরে ভাই মেয়ে দুটি আপনার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গেছে, ধর্ষিত হতে নয়। আমাদের অনেকেই মনে মনে ডোনাল্ড ট্রাম্প। সুযোগ পেলেই নারীর স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে দেন। মেয়েদের 'না' কে অনেক পুরুষ হ্যাঁ বলে অনুবাদ করেন। প্লিজ ভাইয়েরা, না মানে না। মনে রাখবেন, নো মিনস নো। আপনি আগ বাড়িয়ে নারীর মনস্তত্ব বুঝে নিয়েন না। আপনি বুঝতে না পারলে সেটা আপনার সমস্যা। একজন ভদ্র, সভ্য মানুষ, তিনি নারী হোন আর পুরুষ; পরিচিত মানুষের সাথে হেসে কথা বলবে, আড্ডা মারবে, জন্মদিনের পার্টিতে যাবে। আপনি যদি আপনার উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারেন, তাহলে আপনি মানুষ নন পশু। আপনার পশুদের জন্য কি নারীরা পুরুষ দেখলেই রাগী রাগী চেহারা করে রাখবে, কারো সাথে হেসে কথা বলবে না?
তবে বাংলাদেশে ধর্ষণের ঘটনায় সবচেয়ে বড় অন্যায়টা হলো, ধর্ষকের সাথে ধর্ষিতার বিয়ে। গত মার্চে চট্টগ্রামে আদালতের মধ্যস্ততায় ধর্ষণ মামলার আসামীর সঙ্গে ধর্ষিতার বাল্যবিয়ে হয়। সবার এমন ভাব, ধর্ষণ মামলার সবচেয়ে ন্যায্য বিচার যেন এটাই। সবাই কেমন হাসিমুখে বিয়ের আসরে বসে যান। যার থাকার কথা কারাগারে, সে যায় বাসর ঘরে। কিন্তু মেয়েটার কথা একটু ভাবুন।

যাকে সে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে, যাকে দেখলে তার সম্ভ্রম হারানোর দুঃসহ স্মৃতি মনে পড়বে; তার সাথেই তাকে সারাজীবন সংসার করতে হবে! কেউ কেউ বলেন, নইলে এই ধর্ষিতাকে কে বিয়ে করবে? একজন ধর্ষকের সাথে সংসার করার চেয়ে সারাজীবন অবিবাহিত থেকে যাওয়াটাও অনেক ভালো। ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়ে গেছে, কেউ একজন কোনও একজন সুন্দরীকে টার্গেট করবে। পাত্তা না পেলে তাকে ধর্ষণ করবে এবং আরামসে বিয়ে করবে। এ অন্যায়, ভারি অন্যায়। একজন ধর্ষক অপরাধী।

বিয়ে নয় তার পাওনা সাজা। এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ জর্ডানে ধর্ষিতার সামাজিক সম্মান রক্ষায় ধর্ষকের সাথে তার বিয়ে দেওয়ার আইন ছিল। সম্প্রতি এ আইন সংশোধন করে বলা হয়েছে, বিয়ে করলে ধর্ষণের অপরাধ আর মাফ হবে না। জর্ডান যদি পারে, এই আইন আমরা করতে পারবো না কেন?

ধর্ষণ এমন একটি অপরাধ যেখানে অপরাধী বুক ফুলিয়ে চলে, অপরাধের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়; আর ভিকটিম নিজেকে আড়াল করে রাখে, পদে পদে হয়রানির শিকার হয়, বিচার পায় না; শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে গলায় দড়ি দেয়। তাই ধর্ষণের মতো অপরাধের বিচারের জন্য আলাদা আইন, আলাদা আদালত, সংবেদনশীল তদন্তকারী, সংবেদনশীল আইনজীবী দরকার। নইলে কখনোই ধর্ষিতারা ন্যায়বিচার পাবেন না।

একসময় এসিড সন্ত্রাস বেড়ে গিয়েছিল। আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমেই তা দমন করা গেছে। বর্তমানে জঙ্গি দমনে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে। ধর্ষণের বিচারের ক্ষেত্রেও জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে এগুতে হবে। ধর্ষকরা যেন কোনও ছাড় না পায়। অমানুষ ধর্ষকরা নারীদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। তাই শুভ আকাঙ্ক্ষার সব মানুষকে নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়াতে হবে। যাতে তারা আইনের আশ্রয় পায়, ন্যায্য বিচার পায়। অল্পসংখ্যক ধর্ষক থাকুক কারাগারে, ঝুলুক ফাঁসির দড়িতে। আর আমাদের বোনেরা, মেয়েরা ঘুরে বেড়াক মুক্ত পৃথিবীতে।
লেখক: বার্তা প্রধান, এটিএন নিউজ

[email protected]

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
সিজারে প্রসূতির মৃত্যু, মুচলেকা নিয়ে মরদেহ হস্তান্তর
সিজারে প্রসূতির মৃত্যু, মুচলেকা নিয়ে মরদেহ হস্তান্তর
পহেলা বৈশাখের নির্দেশনা উপেক্ষা উদীচীর: যা বলছে ডিএমপি
পহেলা বৈশাখের নির্দেশনা উপেক্ষা উদীচীর: যা বলছে ডিএমপি
সিডনির গির্জায় ছুরিকাঘাতকে সন্ত্রাসী হামলা ঘোষণা
সিডনির গির্জায় ছুরিকাঘাতকে সন্ত্রাসী হামলা ঘোষণা
প্রকৃতির লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের ভিড়
প্রকৃতির লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের ভিড়
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ