X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

জোট ও ভোট

আমীন আল রশীদ
১১ মে ২০১৭, ১৩:৫৫আপডেট : ১১ মে ২০১৭, ১৩:৫৭

আমীন আল রশীদ রাজনীতিতে ‘পল্টি’ বা ‘ডিগবাজি’ অথবা ‘ভেল্কিবাজির’ জন্য যারা বিখ্যাত, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নিঃসেন্দহে তাদের শীর্ষে; যার সবশেষ উদাহরণ  ৫৮টি দল নিয়ে সম্মিলিত জাতীয় জোট নামে একটি নতুন জোটের ঘোষণা। যদিও এই ৫৮টি দলের মধ্যে ৫৬টি দলেরই নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন নেই। আবার মহাজোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে এরশাদ এখনও বহাল। তিনি এই পদ ছাড়বেন কিনা, তা অবশ্য এখনও পরিষ্কার নয়। তবে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে তিনি যে বিশেষ দূতের পদ ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে আরেকটি ‘স্টান্টবাজি’ করবেন, সে বিষয়ে সন্দেহ কম।
৭ মে সকালে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে ঘোষিত নতুন এই জোটে জাতীয় পার্টি ছাড়া নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত অন্য দলটির নাম বাংলাদেশ ইসলামি ফ্রন্ট। এর বাইরে জাতীয় ইসলামি মহাজোট এবং বাংলাদেশ জাতীয় জোট (বিএনএ)-ভুক্ত দলগুলোও রয়েছে নতুন এই সম্মিলিত জাতীয় জোটে। জোটের মৌলিক আদর্শে বলা হয়েছে, ইসলামি মূল্যবোধ তথা সকল ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি সমান মর্যাদা প্রদর্শন। ২. স্বাধীনতার চেতনা। ৩. বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক জীবনবোধ নিশ্চিত করা।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে বাতিল হওয়া সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যোগ দিয়েছিলেন এরশাদ। বিএনপির বর্জনের মধ্যে ২০১৪ সালের নির্বাচনে আলাদাভাবে অংশ নিলেও পরে সরকারে যোগ দেয় জাতীয় পার্টি। নামে সংসদের বিরোধী দল হল এই দলের একাধিক ব্যক্তি রয়েছেন মন্ত্রিসভায় এবং এরশাদ নিজেও মন্ত্রিপদমর্যাদায় প্রধানন্ত্রীর বিশেষ দূত।

ধারণা করা হচ্ছে, ইসলাম নামধারী অনিবন্ধিত দলগুলোর বেশিরভাগ বিএনপির সঙ্গে থাকলেও সেই বলয় থেকে বেরিয়ে এর একটি অংশ আলাদাভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যে পরিকল্পনা করছে বা আরও পরিষ্কার করে বললে বিএনপির বাইরে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে তথাকথিত ইসলামিক দলগুলো নিয়ে একটা নতুন বলয় তৈরিই এরশাদের এই নতুন জোটের লক্ষ্য। কেননা আগামী জাতীয় নির্বাচনে শেষমেষ বিএনপি অংশ নিলেও তাদের জোটে আসলে কারা থাকবে তা এখনই বলা মুশকিল। আবার সরকারের একটা লক্ষ্য থাকবে বিএনপির ভোট কমানোর জন্য ডানপন্থী দলগুলোর মধ্যে বিভেদ তৈরি করা। সেই সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক কৌশলও এরশাদের নতুন এই জোটের পেছনে কতটুকু সক্রিয় তা বলা মুশকিল।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে, বিশেষ করে ভোটের মাঠে ইসলামি দলগুলোর খুব একটা খাওয়া না থাকলেও জনমতের ওপর ইসলাম, মুসলমান, চেতনা, অনুভূতি ইত্যাদি শব্দ যেহেতু বেশ প্রভাব বিস্তার করে, ফলে সব বড় দলেরই একটা টার্গেট থাকে ইসলাম নামধারী দলগুলোকে নিজেদের বলয়ে রাখা। অনেক দিন ধরেই হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সরকারের সখ্য বা সমঝোতা তার একটা বড় প্রমাণ। এরইমধ্যে কোনও কোনও ইসলামি দলের নেতা গণমাধ্যমে বলেছেন, বড় সব দল থেকেই তারা জোটে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব পাচ্ছেন। ইসলামি ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামীর ভাষ্যমতে, ভোটের রাজনীতিতে ইসলামি দলগুলো একটা বড় ফ্যাক্টর। কারণ ইসলামি দলগুলোর আলেম-ওলামাদের নিয়ে সারাদেশেই একটা ভোট ব্যাংক আছে। চরমোনাই পীরের ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ, আটরশি পীরের জাকের পার্টি এবং খেলাফত আন্দোলনের মতো ইসলামি দলগুলো এখনও কোনও জোটে না থাকলেও আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এই দলগুলোর তৎপরতা কী হবে-সেদিকে দেশবাসীর নজর থাকবে।

প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে বা ভোটের মাঠে এরশাদ নিজে এবং তার দল জাতীয় পার্টি আসলেই কতটা ফ্যাক্টর? ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে তার একের পর এক অবস্থান পাল্টানো থেকে শুরু করে গা ঢাকা দেওয়া এবং ভোটের পরে অনেকটা গোপনে শপথ নেওয়া এবং তারপর প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হয়ে যাওয়ার ঘটনাবলি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, এরশাদ আসলে চিন্তা করেন নিজেকে নিয়ে। অর্থাৎ তার বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো চলমান, তার একটি রাডার ক্রয়ে দুর্নীতি মামলায় তিনি খালাস পাওয়ায় তিনি এখন কিছুটা নির্ভার। যদিও মঞ্জুর হত্যা মামলার রায় এখনও হয়নি। ফলে এরশাদকে বাগে আনতে প্রধান দুই দলের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার এই মামলা। যে কারণে এরশাদের যেকোনও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আসলে নির্ভর করে এই মামলার ‍ওপর।

দ্বিতীয় প্রশ্ন, ইসলামিক নামধারী দলগুলোর ভোট আসলে কত শতাংশ? সবচেয়ে বড় ইসলামিক দল জামায়াতে ইসলামীও  (নিবন্ধন বাতিল) এককভাবে ভোটের রাজনীতিতে কোনও ফ্যাক্টর ছিল না। বরং বিএনপির সঙ্গে জোট বাঁধার ফলেই তারা কিছু আসনে জয় পেয়েছে। একইভাবে জাতীয় পার্টিও এককভাবে বড় কোনও দল নয়। আওয়ামী লীগ বা বিএনপির সঙ্গে জোট না করলে সরকারের গঠনের মতো আসন তারা পাবে না, তাতে যতগুলো দল নিয়েই তারা জোট মহাজোট করুক। 

এখন কথা হচ্ছে, আগামী নির্বাচনে কি তাহলে তিনটি জোট অংশ নেবে? অর্থাৎ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহজোট, বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দল অথবা অন্য কোনও জোট এবং এরশাদের নেতৃত্বে এই সম্মিলিত জাতীয় জোট? যদি তাই হয়, তাহলে এটি একটি অন্যরকম নির্বাচনি আবহ তৈরি করবে। যদিও এর সম্ভাবনা কম। কেননা ভোটের দরকষাকষিতে এরশাদ শেষমেষ কী সিদ্ধান্ত নেন, সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। হয়তো দরকষাকষিটা আরেকটু বাড়ানোর জন্যই এরশাদ এই জোট করলেন। অর্থাৎ বিএনপি জোট নির্বাচনে গেলে আওয়ামী লীগ চাইবে না এরশাদকে জোটের বাইরে রাখতে অথবা আওয়ামী লীগ চাইবে এরশাদ যাতে ভোটে কোনও ‘ডিস্টার্ব’ করতে না পারেন। সেক্ষেত্রে এরশাদ হয়তো আবারও আওয়ামী লীগ জোটে যোগ দেবেন এবং এখন যেই ফরম্যাটে তারা একইসঙ্গে  সরকারে ও বিরোধী দলে আছে, সেরকম সুযোগ চাইবে। আবার তিনি বিএনপি জোটে যোগ দিলেও বিস্ময়ের কিছু থাকবে না। তবে এইসব জোটের চেয়েও বড় প্রশ্ন ভোট সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কিনা। অর্থাৎ নির্বাচনের মাঠে যতগুলো দল বা জোট থাকুক না কেন, সেটি কোন তরিকায় হবে বা নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সবার জন্য সমান সুযোগ থাকবে কিনা, সেটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

লেখক: সাংবাদিক ও লেখক।

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
জেলেনস্কিকে হত্যার পরিকল্পনায় জড়িত অভিযোগে পোলিশ নাগরিক গ্রেফতার
জেলেনস্কিকে হত্যার পরিকল্পনায় জড়িত অভিযোগে পোলিশ নাগরিক গ্রেফতার
বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিলেন মিয়ানমারের আরও ১৩ সীমান্তরক্ষী
বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিলেন মিয়ানমারের আরও ১৩ সীমান্তরক্ষী
ভাসানটেকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ: ঝরে গেলো আরেকটি প্রাণ
ভাসানটেকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ: ঝরে গেলো আরেকটি প্রাণ
আজকের আবহাওয়া: ঢাকাসহ ৩ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস
আজকের আবহাওয়া: ঢাকাসহ ৩ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ