X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের শিল্পকলার মান আগাগোড়াই ভালো ছিল

শাহাবুদ্দিন আহমেদ
১৩ মে ২০১৭, ১৩:৩১আপডেট : ১৩ মে ২০১৭, ১৩:৩৫

শাহাবুদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ তো তুলনামূলক নতুন দেশ। আমাদের পাশের ভারত, মধ্যপ্রাচ্যের  দেশগুলো, থাইল্যান্ড, বার্মা, ভিয়েতনাম, লাওস- আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে চিন্তা করলে চীন-জাপান ছাড়া অন্যদের শিল্পকলা ততটা এগোয়নি। যেহেতু আমাদের ছোট দেশ, নতুন দেশ, সেই জায়গায় ছবি আঁকা, চিত্রকলা এমনভাবে এগিয়ে যাবে, কেউ কল্পনাও করেনি। বাংলাদেশের শিল্পকলার মান আগাগোড়াই ভালো ছিল। আগাগোড়া বলতে ভারতবর্ষ ভাগাভাগি হওয়ার আগে যখন ব্রিটিশরা ছিল, তখন থেকেই এই অঞ্চলে চিত্রকলার প্রসার ছিল।
বাংলাদেশের চিত্রকলার পথপ্রদর্শক শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। তিনি শিক্ষা গ্রহণ করেন তখনকার রাজধানী কলকাতায়। সেখান থেকে তিনি মাদ্রাজ, বোম্বে, পাঞ্জাব ও অন্যান্য এলাকার সভ্যতা ও শিল্পকলার যে মেলবন্ধন রয়েছে; যেমন ইলোরা সভ্যতা, মহেঞ্জোদারো সভ্যতা, সেসব নিজের অজান্তেই আয়ত্ত করেছিলেন। একটি শিশু যেমন নিজের অজান্তেই অনেক কিছু শিখে ফেলে। পাকিস্তান শাসনামলে সে দেশের সরকার কিন্তু কখনও ভাবেনি যে, আমাদের চিত্রকলার কোনও মূল্য থাকবে। জয়নুল আবেদিন আর্ট কলেজ করেছিলেন। তিনি বুঝেছিলেন আমাদের সভ্যতার জন্য শিল্পকলা খুব গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য শুধু অর্থ, খাদ্য, বাসস্থানই সবকিছু নয়। মানুষের হৃদয় ও মস্তিষ্কের জন্য আরও অনেক কিছু প্রয়োজন, যা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। ছোটবেলায় আমরা দেখেছি, এলাকায় যারা হিন্দু বা অন্য ধর্মাবলম্বীরা ছিল তারাই মূলত গানের চর্চা করতো। মুসলিমরা গানের চর্চা করতো না। ছবি আঁকার বেলাতেও তাই ছিল। কিন্তু বাঙালি হওয়ায় শিল্প-সাহিত্যের প্রতি তাদের একটা আকর্ষণ বরাবরই ছিল এবং এখনও আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামসহ অনেক বড় লেখকও ছবি আঁকতেন। তারা আমাদের বাঙালি সভ্যতা থেকে এসেছেন। পাকিস্তান আমলেও চিত্রকলা মানে বাঙালিরাই ছিলেন। স্বাধীনতার পরে তা পরিস্ফুটিত হয়। জন্ম হয় শিল্পকলার ও সেই পরিস্ফুটিত ফুলের সৌরভ আমরা পেয়েছি।

আমাদের দেশের সরকার কখনোই তেমন আন্তরিক ছিল না। বরং ১৯৭৫-পরবর্তী সরকারগুলো শিল্পকলার চর্চায় ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। ১৯৭৫-এর ঘটনা যদি না ঘটতো তবে আজ আমাদের শিল্পকলা থাকতো অনেক ওপরে। এতকিছুর পরেও আমরা একটি ভালো অবস্থানে আছি, যা অনেক দেশই পারেনি। আমি বাংলাদেশের চিত্রকলাকে নিয়ে গর্ববোধ করি। পৃথিবীতে সবসময়ই একজন, দুইজন বা একটি গুচ্ছদল একটি বিস্ময়কে এগিয়ে নিয়ে যায়। তা শিল্পকলাই হোক আর গান-বাজনা হোক। এরপর সরকার তার দায়িত্ব নেয় বা এগিয়ে নেয়। এটি না হলে কখনোই সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছানো যায় না।

আমাদের শিল্পকলায় যে চিত্রশালাটি রয়েছে, সেটি এখনও যথাযথভাবে গড়ে না ওঠার কারণ ব্যুরোক্র্যাসি। আমাদের দেশে প্রচুর দক্ষ লোক আছে। কিন্তু দক্ষ লোক সেখানে না বসিয়ে ব্যুরোক্র্যাট বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সহজভাবে বললে শিল্পকলা কিংবা জাদুঘরের দায়িত্বে একজন শিল্পজন থাকলেও সকল চাবিকাঠি থাকে ব্যুরোক্র্যাটদের হাতেই। এখন তাদের অদক্ষতা, অনীহা ও অবহেলাতেই চিত্রশালাটির আজ এই অবস্থা। এছাড়া অর্থের অপব্যবহার তো রয়েছেই। যার ফলে দূরদর্শী যে কাজ বা সিদ্ধান্তগুলো শিল্পকলার জন্য নেওয়া প্রয়োজন তা হচ্ছে না।

এই আধুনিক যুগে সাংবাদিকদের বাদ দিয়ে যত বড় আর্টিস্টই হোক আর যত বড় পলিটিশিয়ান- কারও পক্ষে কোনও কিছু করা সম্ভব নয়। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু কী বলেছেন, কী হচ্ছে- সেই সময় ইত্তেফাকের মানিক মিয়ার ভূমিকাটা যদি না থাকতো, তাহলে স্বাধীনতা হয়তো পিছিয়ে যেত। সেই সময় তিনি বারবার আমাদের দেশের বিভিন্ন ইস্যু তুলে ধরেছেন। বিভিন্ন লেখায় একটা জাতিকে অনুপ্রাণিত করা হয়েছে। তাই সাংবাদিকের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এখন অনলাইনের যুগ। একটি সংবাদ দ্রুত সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। অনলাইনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের মধ্যে যোগাযোগের মাত্রা বহুগুণ বেড়েছে। আবার এর মন্দ দিকও আছে। ভুল তথ্য দেওয়ার মাধ্যমে পুরো সমাজব্যবস্থাকে নষ্ট করে দেওয়ারও চেষ্টা হয়েছে।

লেখক: চিত্রশিল্পী

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
দিল্লিকে ভয় ধরিয়ে হারলো গুজরাট
দিল্লিকে ভয় ধরিয়ে হারলো গুজরাট
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ