X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

আমি যখন কলাম লেখক

আনিস আলমগীর
১৪ মে ২০১৭, ১২:১২আপডেট : ১৪ মে ২০১৭, ২২:২৬

আনিস আলমগীর ভদ্রলোক খুব সন্দিহান হয়ে প্রশ্ন করলেন, আপনি আনিস আলমগীর? বললাম, হ্যাঁ। আরও নিশ্চিত হতে প্রশ্ন করলেন, খবরের কাগজের কলামিস্ট আনিস আলমগীর? এবারও বললাম, হ্যাঁ। তিনি একটু হতাশ মনে হলো। বললেন, ‘ওহ! আমি ভেবেছিলাম আপনি একজন বয়স্ক লোক। আসেন ভেতরে আসেন।’ বলছিলাম প্রায় ২০ বছর আগের কাহিনী। বয়স তো তখন কমই ছিল। কলাম লেখক বলতে আরও কম। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চুল না পাকলে কলাম লেখক মনে হয় না। অথচ আমি ২৫ পার না হতেই লিখছি কলাম। শুরুতে ছোটখাটো কলাম। ‘সিঙ্গেল কলাম’ নাম দিয়ে। তারপর রীতিমত সাপ্তাহিক কলাম। প্রতি সপ্তাহে ছাপা হয় সাপ্তাহিক খবরের কাগজ-এ। নাম দিলাম ‘টোটালি বায়াস’। মানে পুরোটাই পক্ষপাতদুষ্ট কথাবার্তা। যারা মনে করেন আমি কারও পক্ষে লিখেছি, নামকরণটা আসলে তাদের জন্য। হ্যাঁ, তুমি যা মনে কর তাই। আমি তো আগেই বলে নিয়েছি, আমি টোটালি বায়াস।
এখন পড়ে গালি দেওয়ার কিছু নেই। আসলে আমি চেষ্টা করেছি ‘টোটালি বায়াস’-এর আড়ালে নিরপেক্ষ কলাম লিখতে। লিখতাম পাকা পাকা কথা, পাকা লোকদের সঙ্গে। কলামে তখন আজকের মতো লেখকের ছবি যেত না। লেখকের নাম আর তার কলামের একটা নির্দিষ্ট নাম। অ্যালফাবেট অনুসারে আমার কলাম ছাপা হতো আজিজ মিসির, আহমেদ শরীফ এমন আরও কয়েকজন বয়স্কের পাশাপাশি। তাই আমাকে না চিনলে চুল পাকা ভাবাটা তখন কারও দোষের ছিল না।
যার কথা বলছিলাম সে ভদ্রলোকের নাম আর মনে নেই এখন। ডিসি ছিলেন এক সময়। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের পিএস হিসেবে যোগ দেন, শেখ হাসিনার প্রথম দফা সরকার আমলের ঘটনা। নাসিম সাহেবের কাছে রিপোর্টিং-এর কাজে গিয়ে পিয়নকে কার্ড পাঠালে উল্লেখিত ওই কা- ঘটে। পিএস সাহেব বাড়তি সম্মান দিতে তার রুম থেকে বেরিয়ে আমাকে রিসিভ করতে আসেন এবং কাঁচা চুলের জিন্সপরা চ্যাংড়াকে দেখে হতাশ হন। তবে ভেতরে আলাপে বসে কপটতা না করেই তিনি আমার প্রশংসা করেন এবং আমার কলামের নিয়মিত পাঠক ও ভক্ত বলে জানান। সেই সময়ের জন্য এটি ছিল অনেক বড় পাওনা একজন কলাম লেখক হিসেবে।

কলাম লিখলেও এখনও যেমন রিপোর্ট লিখি আমি, তেমনি রিপোর্টার হয়ে তখনও কলাম লেখা ছাড়িনি। আজকের কাগজে লিখেছি মাঝে মাঝে। খবরের কাগজে নিয়মিত। তার পরে এখানে-সেখানে বিভিন্ন দৈনিকে। তবে কলাম এবং রিপোর্টিং দুটাকে মিক্স করেও লিখেছি অনেক। নাম  দিয়েছি ‘মন্তব্য প্রতিবেদন’। এই তথ্যটা হয়তো অনেককে অবাক করবে। হ্যাঁ, আজকের বহুল প্রচলিত শব্দ যুগল ‘মন্তব্য প্রতিবেদন’ আমারই সৃষ্ট। দৈনিক আজকের কাগজ-এ।

শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর ’৯৭ সালে বেগম খালেদা জিয়া যেদিন প্রথম হরতাল ডেকেছিলেন, সেদিন আজকের কাগজের প্রথম পাতায় চার কলামজুড়ে আমি লিখি ‘মন্তব্য প্রতিবেদন’ আবার শুরু হলো ‘হরতাল সংস্কৃতি’ এই শিরোনামে। সংবাদপত্র গবেষক ড. মোহাম্মদ হান্নান ফোন করেন রাতে। বলেন, এটা ইতিহাসে লিখে রাখলাম। তবে এখন দেখবে সবাই শুরু করবে মন্তব্য প্রতিবেদন। কিন্তু তোমার কথা কেউ মনে রাখবে না।

আসলে অনেক কিছুই মনে রাখে না মানুষ। এখন যে কলামের শেষে ই-মেইল দেওয়া হয় সেটিও বাংলাদেশে প্রথম লিখি আমি। থাইল্যান্ড নিয়ে আজকের কাগজে আমার প্রকাশিত এক কলামে ২০০০ সালে। সবাই আমাকে ক্ষেপালো এই নিয়ে। ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন মজা করে বললেন, আনিস লেখার শেষে ই-মেইল দিয়েছে, যাতে ফিমেইলরা সহজে যোগাযোগ করে। এই সুযোগে বলে রাখি ‘সুপার এক্সক্লুসিভ’ রিপোর্টের সঙ্গে রিপোর্টারের ছবি দেওয়ার ব্যবস্থাও আমাকে দিয়ে শুরু করেছে আজকের কাগজ ২০০০ সালে। রিপোর্টারের ছবি দিয়ে বিশেষ কাভারেজ-এর প্রমো, দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার (ইরাক যুদ্ধকালে) সবই আজকের কাগজ এদেশে প্রথম করেছে এবং আমি তার সূচনার অংশীদার।

বাংলাদেশের মিডিয়ায় প্রথম সূচনার তালিকা অনেক দীর্ঘ হয়ে যাবে বলে নির্লজ্জ শোনাবে। তাই প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বলি যে, আমি দীর্ঘদিন কলাম লেখা থেকে বিরত ছিলাম। কারণটা বলি। আজকের কাগজ বন্ধ হওয়ার পর আমাদের সময়-এ কয়েকটি মন্তব্য প্রতিবেদন লিখেছি। তখন তারা কলাম ছাপতো না। এরপর কলাম লিখতে গিয়ে হোঁচট খেয়েছি। এক পর্যায়ে কলাম লেখা অনেকটা বন্ধ করে দিয়েছি। কারণ যারা পত্রিকার কলাম ছাপার দায়িত্বে আছেন তারা বেশিরভাগই মহাপণ্ডিত, অপদার্থ।

ওদের বেশিরভাগের ধারণা, কলাম লেখক হতে হলে তাকে বয়স্ক হতে হবে। সোজা কথায় কেশ পাকা। তাই ওরা নির্ধারণ করেছে- কেশ পাকার লেখাটা পাতার আপার ফোল্ডে থাকবে, কেশ কাঁচার লেখা যাবে নিচে। লেখার মান নয়, ওরা লেখককে ট্রিটমেন্ট করে। তথাকথিত ওইসব পাতা সম্পাদকরা মনে করে, কলামিস্ট মানে তথাকথিত বয়স্ক কোনও বুদ্ধিজীবী। ওরা যেমন কলাম আর রচনার পার্থক্য বুঝে না, পত্রিকার কলামিস্টরাও তেমনি।

এর মধ্যে ২০১৪ সালে আত্মপ্রকাশ ঘটে বাংলা ট্রিবিউনের। সবকিছু ফেলে সিদ্ধান্ত নিই, পত্রিকায় নয় কলাম লিখবো অনলাইনে। এর দুটো কারণ আছে। প্রথমত লেখকজটে পড়ে লেখা বাসি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। দ্বিতীয়ত তাৎক্ষণিক ও উন্মুক্ত সাইজে লেখা প্রকাশের সুযোগ আছে এতে। সঙ্গে সঙ্গে ফিডব্যাক পাওয়া যায়। আর না বলা কথাটি হচ্ছে কলামের জন্য নিয়মিত, যথাযথ সম্মানি পাওয়া।

বাংলা ট্রিবিউন পরিবার সেদিক থেকে অনেক কিছুর ট্রেন্ড সেটার। তাই সম্ভবত তাদের তৃতীয় কলামটি থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত মোটামুটি নিয়মিতই লিখে যাচ্ছি এখানে। এখানে লিখে আমি বেশ আনন্দ পাই। খবরের কাগজ আমাকে কম বয়সে কলাম লেখক বানিয়েছিল। বাংলা ট্রিবিউন আমাকে কলাম লেখক হিসেবে ফিরে আসতে বাধ্য করেছে।

জন্মদিনে শুভ কামনা বাংলা ট্রিবিউনের জন্য, ভালোবাসা ট্রিবিউন পরিবারের জন্য।

লেখক : সাংবাদিক ও শিক্ষক

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করছে পুলিশ: আইজিপি
জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করছে পুলিশ: আইজিপি
তামাকপণ্যের দাম বাড়ানোর দাবি
তামাকপণ্যের দাম বাড়ানোর দাবি
ভারত সফর স্থগিত করলেন ইলন মাস্ক
ভারত সফর স্থগিত করলেন ইলন মাস্ক
বাঘ ছাড়া হবে জঙ্গলে, তাই শেষবার ভোট দিলেন বাসিন্দারা!
বাঘ ছাড়া হবে জঙ্গলে, তাই শেষবার ভোট দিলেন বাসিন্দারা!
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ