X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাইবার স্পেসের ভার্চুয়াল বিশ্ব

বাধন অধিকারী
১৭ মে ২০১৭, ১৬:৩০আপডেট : ১৭ মে ২০১৭, ১৬:৩৯

বাধন অধিকারী একটি বিশ্বগ্রামের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নব্য উদারবাদী যুগব্যবস্থার প্রবর্তকেরা। চলমান মুক্ত-অবাধ বাজারব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বিশ্বকে ছোট্ট একটি গ্রামে রূপান্তরের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তারা। আজ একটি ব্রডব্যান্ড কানেক্টেড সেলফোন কিংবা পিসি মানে সারাবিশ্ব। চোখ মেললেই শপিং মল, বিলবোর্ড, পিৎজা-কোকাকোলা-বেনসন-বিয়ার কিংবা প্লে-বয়, হলিউডি সিনেমার মতো সাংস্কৃতিক পণ্য। তাই কারও কারও মনে হতেই পারে যে, নব্য উদারবাদ কথা রেখেছে, সত্যিই আমরা যেন বিশ্বগ্রামে আছি। তবে অন্য দুনিয়াও রয়েছে। কথিত বিশ্বায়নের রাঙতায় মোড়ানো এই আলো-ঝলঝলে যুগপর্বেই জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থা (ঋঅঙ) গত ফেব্রুয়ারিতে জানিয়েছে, ইয়েমেন, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান ও নাইজেরিয়ায় ক্ষুধার কারণে মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছেন ২ কোটি মানুষ। আর বিশ্বজুড়ে অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি।
রিগ্যান-থ্যাচার যুগে নব্য উদারবাদী অর্থনীতির যে উত্থান হয়েছিল, তার মতাদর্শিক সঙ্গী হয়েছিল চুইয়ে পড়া অর্থনীতি (ট্রিকল ডাউন থিউরি)। বলা হয়েছিল, কর সংকোচন অথবা অবাধ বাজারের মাধ্যমে বড় পুঁজির ব্যবসাগুলো যে বিপুল পরিমাণ মুনাফা করবে, তা চুইয়ে পড়বে নিচু তলার মানুষদের কাছে। মানুষের ক্ষুধা-দারিদ্র্য দূর হবে, গতি আসবে সমাজ-অর্থনীতিতে। তবে এই ধারণা মিথ্যে প্রমাণিত হয়েছে। মুক্তবাজার ব্যবস্থার জনক অ্যাডাম স্মিথ যে অদৃশ্য হাতের কথা বলেছিলেন, বাজারব্যবস্থার সেই স্বয়ংক্রিয় হাত সমাজে বৈষম্য আরও বাড়িয়েছে। ওই অর্থনীতি ধনীকে আরও ধনী করেছে। গরিবের ঘরে তেমন কিছুই চুইয়ে পড়েনি, তারা আরও গরিব হয়েছে।
বিরাজমান যুগবাস্তবতা তাই বিরুদ্ধবাদের জন্ম দিয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো রক্ষণশীল জাতীয়তাবাদীদের উত্থান ঘটছে পাশ্চাত্যে। রক্ষণশীলতার বিভক্তিতে সৃষ্ট মুসলিমবিরোধী-বর্ণবাদী ঘৃণার বিপরীতে  জোরালো হচ্ছে সন্ত্রাসবাদ/জঙ্গিবাদ।  মধ্যপ্রাচ্যে আইএস-এর ভয়াবহ উত্থান ঘটেছে। নাইট ক্লাব-শপিং মল থেকে শুরু করে রেল স্টেশন, বিমানবন্দর কিংবা সামরিক স্থাপনা আক্রান্ত হয়েছে সন্ত্রাসী/জঙ্গিদের হাতে। 
মুনাফাবাজ একচেটিয়া বাজার আর সব পরিচয় মুছে ফেলে মানুষকে ক্রেতা-বিক্রেতা পরিচয়ে সীমাবদ্ধ করতে চায়। মুনাফাই যখন উৎপাদনের কেন্দ্রে থাকে, তখন সেই উৎপাদন মানুষের কথা মাথায় রাখে না। যুদ্ধও এই যুগে মুনাফাযোগ্য পণ্য। যুদ্ধ-অর্থনীতির (ওয়্যার ইকোনমি) এই যুগে যুদ্ধ কেবল সামরিক আধিপত্যের প্রশ্ন নয়, যুদ্ধাস্ত্র-যুদ্ধবাজ মতাদর্শ বেচাবিক্রিরও প্রশ্ন। এই যুগে যুদ্ধ মানে ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স-এর প্রশ্ন। সামরিক বাণিজ্যের জগৎটাকে চাঙ্গা রাখতে যুদ্ধ অপরিহার্য। এছাড়া ছায়া যুদ্ধ কিংবা যুদ্ধাবস্থা আধিপত্য কায়েমের সহায়ক হয়। দুনিয়াজুড়ে তাই যুদ্ধের দামামা।
যুদ্ধ এখন পারমাণবিক যুগে পৌঁছেছে। বিপরীতে দুর্ভিক্ষ কড়া নাড়ছে। তবু খাবারে নয়, একুশ শতকে বিশ্বব্যাপী ব্যয় বাড়ছে সামরিক খাতে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস ইনস্টিটিউট ২০১৬ সালের তথ্য নিয়ে প্রকাশিত রিপোর্টে দেখিয়েছে, ওই বছরে সামরিক খাতের বৈশ্বিক ব্যয় (১৬৮৬ বিলিয়ন ডলার) দিয়ে আফ্রিকার দুর্ভিক্ষপীড়িত ৩টি দেশের খাদ্য সংকট মেটানো সম্ভব ৩৮৩ বার।

যোগাযোগ আর সংবাদবিদ্যার ছাত্র হিসেবে শিখেছি,  উপস্থাপিত বাস্তব সবসময়ই প্রকৃত বাস্তব হতে পারে না। উপস্থাপিত তথ্য মাত্রই উপস্থাপনকারীর ব্যক্তিগত পরিসরে চলে যায়, রূপান্তরিত হয় খণ্ডিত বাস্তবে। তাই আমরা যখন কোনও একটি সংবাদ প্রকাশ করে বলি, এটি বাস্তব, তখন আমরা শতভাগ ঠিক বলি না। আমরা আসলে বাস্তবতার নিজস্ব বর্ণনা হাজির করি। এই যেমন ধরা যাক, আমরা হয়তো একটি জঙ্গি কার্যক্রমের হুবহু বর্ণনা হাজির করলাম। বস্তুনিষ্ঠভাবে তা করা হলেও এই বাস্তবতা খণ্ডিত হতে বাধ্য। কেননা এই জঙ্গিবাদী কার্যক্রমের নেপথ্যে থাকা ধনবৈষম্য, হতাশা, রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন, সমাজের স্বাধীনতার প্রশ্ন সেখানে বিবেচ্য হয় না।

এই যুগ অবাস্তবকে বাস্তব আকারে অনুভবের, ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি গেমের মতো। ইন্টারনেটের সেই ভার্চুয়াল দুনিয়ায় যুদ্ধ-হুমকি-ধমকি-পণ্যের  মোহনীয় বিজ্ঞাপন কিংবা অভিজাত পণ্যমোহাচ্ছন্ন বাস্তবতার হাতছানিই প্রবল। বঞ্চিত মানুষের ক্ষুধা-দারিদ্র্য-অধীনতার যন্ত্রণা প্রান্তিক। তবে ইন্টারনেটের অভাবনীয় গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য তাকে কেবল বড়লোকের সম্পত্তি হতে দেয়নি। অল্প কিছু টাকা ব্যয় করে সাইবার স্পেসে নিজের জন্য স্থান বরাদ্দ করা যায় বলে বিকল্প উদ্যোগের মধ্য দিয়ে ঠিকই ভিন্ন বাস্তবও হাজির হয়। বাংলা ট্রিবিউনের ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক তাই প্রধান ধারার সংবাদমাধ্যমের বাইরে সেইসব বিকল্প উদ্যোগের তথ্য পর্যালোচনা করে পাঠককে ভিন্ন খবর দেওয়ার চেষ্টা করে।

এই পত্রিকার সম্পাদক গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ইভেন্টে মাঝরাত পর্যন্ত সহকর্মীদের পরামর্শ দেন। হেড অব নিউজ  তৎপর থাকেন প্রয়োজনীয় সোর্স দিয়ে সহায়তা করার ক্ষেত্রে এবং গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক খবরটিকে যথাযথ ট্রিটমেন্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে। এই পত্রিকার চিফ রিপোর্টার ব্যক্তিগত ইনবক্সে মাঝে মাঝেই আমাকে বলেন, ‘ওই বানানটা ঠিক করো, ভুল আছে’।

ইংরেজ বুদ্ধিজীবী ও সাহিত্যিক জর্জ অরওয়েল মনে করতেন, সাংবাদিকতা হলো ক্ষমতাকেন্দ্রগুলোর উন্মোচন। এর বাইরের সবটাই জনসংযোগ। বাংলা ট্রিবিউনের ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক কথাটি মনে রাখার চেষ্টা করে।

লেখক : ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক ইনচার্জ

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
জনগণ এনডিএ জোটকে একচেটিয়া ভোট দিয়েছে: মোদি
জনগণ এনডিএ জোটকে একচেটিয়া ভোট দিয়েছে: মোদি
সোনার দাম কমেছে, আজ থেকেই কার্যকর
সোনার দাম কমেছে, আজ থেকেই কার্যকর
অতিরিক্ত মদপানে লেগুনাচালকের মৃত্যু
অতিরিক্ত মদপানে লেগুনাচালকের মৃত্যু
পূজা শেষে বাড়ি ফেরার পথে বাসচাপায় বাবা-ছেলে নিহত
পূজা শেষে বাড়ি ফেরার পথে বাসচাপায় বাবা-ছেলে নিহত
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ