X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

কোচিং ফ্যাশন

তুষার আবদুল্লাহ
২০ মে ২০১৭, ১২:২৯আপডেট : ২০ মে ২০১৭, ১২:৩৩

তুষার আবদুল্লাহ কোচিং এখন এক ফ্যাশনের নাম। অভিভাবকরা এক দুষ্ট প্রতিযোগিতায় দৌড়াচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফলের জন্য কোচিং কোনও ফলদায়ক ওষুধ নয়। বগুড়ায় এসে কথা হচ্ছিল বিয়াম স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে। তার কথায় কেবল দীর্ঘশ্বাস। এই দীর্ঘশ্বাস শিক্ষার্থীদের নিয়ে নয়। অভিভাবকদের ঘিরে। তারা সন্তানদের অপ্রয়োজনেই কোচিংয়ে ঠেলেঠুলে নিয়ে যাচ্ছেন। অধ্যক্ষ বলছিলেন- স্কুল কলেজে সাংস্কৃতিক- সাহিত্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করেও শিক্ষার্থীদের পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও তাদের কোনোভাবে প্রতিযোগিতায় টেনে আনা গেলো, কিন্তু পুরস্কার দেওয়ার সময় দেখা গেলো শিক্ষার্থী নয়, সন্তানকে কোচিংয়ে দিয়ে অভিভাবক এসেছেন পুরস্কার নিতে। কেবল বগুড়ার এই অধ্যক্ষই নন, আমাকে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান বলেছেন - কোচিং, মডেল পরীক্ষার ক্ষতি হবে এই ছুঁতো তুলে অভিভাবকরা সৃজনশীল কোনও আয়োজনে সাড়া দিতে চান না। অভিভাবকদের উৎসাহ এখন ক্যারিয়ার মেলার দিকে।
ঢাকার একটি স্বনামধন্য স্কুল অ্যান্ড কলেজের এবারের মাধ্যমিকের ফল আগের বছরগুলোর চেয়ে খারাপ হয়েছে। তথ্যটি জানালেন ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। তারা বলছেন অভিভাবকরা ক্লাস রুমের লেখাপড়ার চেয়ে কোচিং এর প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। ক্লাসের আগে-পরে সন্তানদের কোচিংয়ে দিয়ে রাখাতে, তারা বাড়তি চাপ সইতে পারেনি। বিপর্যয় নেমে এসেছে ফলাফলে। শিক্ষকরা তাদের অভিজ্ঞতা থেকে বলছেন- যে শিক্ষার্থীরা কোচিং সেন্টারে বা অধিক গৃহশিক্ষকের কাছে যাচ্ছে না, তাদের ফলাফলের সঙ্গে কোচিং এ ব্যস্ত থাকা শিক্ষার্থীদের ফলাফলে প্রভাস সেরকম থাকছে না। অযথাই বাড়তি চাপ দিয়ে তাদের কৈশোরের আনন্দকে মাটি করে দেওয়া।
অভিভাবকদের দিকে শিক্ষকদের অনুযোগ- তারা সন্তানদের এখন স্কুলের পাঠ্য বইও পড়তে দিতে চান না। ভাবেন সময়ের অপচয় হবে। পাঠ্য বইয়ের ওপর নির্ভর করলে জিপিএ ফাইভ পাওয়া হবে না। তাই সন্তানের হাতে তুলে দেন, তাদের বাধ্য করা হয় গাইড বা নোট বই পড়তে। এর মধ্যদিয়ে সৃজনশীল বইয়ের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়। এই বিচ্ছিন্নতাই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বইয়ের দূরত্ব তৈরি হয়ে যায়। এই দূরত্ব তখন নিজ ভূমি ও পৃথিবীর সঙ্গেও বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়ে যাচ্ছে। অভিভাবকরা স্কুলে সন্তানদের প্রথম যেদিন দিতে যান, সেদিন থেকেই সন্তানের মগজে চাকরির স্বপ্নের বীজ বুনে দিয়ে আসেন।

শিক্ষকরা নিজে থেকেই বললেন- কোচিং মনস্কতার জন্য তারা নিজেরাও দায়ী। তারাও কোচিংয়ে সময় কাটান। স্কুলে কোচিং বাণিজ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। তাদের ধারণা- সরকারের কোচিংয়ে বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা এখনও দৃশ্যমান আনুষ্ঠানিকতা।

রমরমা বাণিজ্য চলছে কোচিংয়ের। কোচিংয়ের বাণিজ্যের কাছে অসহায় সরকার। এই বাণিজ্যের পেছনে যারা আছেন তারা সরকারের চেয়েও হয়তো প্রভাবশালী। শিক্ষামন্ত্রী নিজেও একাধিকবার সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। শিক্ষকদের দিক থেকে বলা হচ্ছে -কোচিং বাণিজ্যকে জিইয়ে রাখতেই পরীক্ষা নির্ভরতা বাড়ছে শিক্ষা ব্যবস্থায়। যতো পরীক্ষা ততো কোচিং। শিক্ষকরা বলছেন- কোচিংয়ের এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সরকারের দিক থেকে এককভাবে হলে ফলদায়ক হবে না। দরকার শিক্ষক ও অভিভাবকদের যৌথ প্রতিরোধ। অভিভাবকেরা কোচিং ফ্যাশন ত্যাগ না করলে, কোচিং চক্র থেকে আমাদের সন্তানদের মুক্তি ঘটবে না।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ১৩৭
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ১৩৭
কানে ডিভাইস নিয়োগ পরীক্ষার কেন্দ্রে বোন, বাইরে থেকে উত্তর বলার অপেক্ষায় ভাই
কানে ডিভাইস নিয়োগ পরীক্ষার কেন্দ্রে বোন, বাইরে থেকে উত্তর বলার অপেক্ষায় ভাই
কাভার্ডভ্যান-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই গাড়িতেই আগুন, প্রাণ গেলো একজনের
কাভার্ডভ্যান-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই গাড়িতেই আগুন, প্রাণ গেলো একজনের
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ