X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

এক ব্যর্থ ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’?

নাদীম কাদির
২৯ মে ২০১৭, ১৭:০৬আপডেট : ২৯ মে ২০১৭, ১৭:১৮

এক ব্যর্থ ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’? ম্যানচেস্টারে সাম্প্রতিক বোমা হামলা যুক্তরাজ্যের নির্বাচনী লড়াইয়ে যুক্ত করেছে ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ বিতর্ক। পাশাপাশি ওয়েস্টমিনস্টারসহ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন রয়েছে সেনা ও পুলিশ। কমিউটার ট্রেনগুলোর ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। সেগুলোতেও টহল দিচ্ছে সশস্ত্র রেলওয়ে পুলিশ। অথচ, ব্রিটেনে এ ধরনের দৃশ্য কল্পনাতীত।
৮ জুনের নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে তত জনপ্রিয়তা বাড়ছে লেবার নেতা জেরেমি করবিনের। ম্যানচেস্টার হামলার পর সেই করবিন অভিযোগ করেছেন, পশ্চিমা বিশ্বের ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ ব্যর্থ হয়েছে।
সম্প্রতি এক নির্বাচনি সমাবেশে তিনি বলেন, ‘ম্যানচেস্টারের আত্মঘাতী বোমা হামলার পর ব্রিটেনের রাস্তায় সেনাদের উপস্থিতি একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়। আর তাহলে-সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রনীতি কাজ করছে না।’
করবিন মনে করেন, বিভিন্ন দেশের যুদ্ধে ব্রিটেনের হস্তক্ষেপ দেশের মাটিতেও জঙ্গিবাদের উত্থানের ঝুঁকি তৈরি করেছে। আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর জন্য অবশ্যই আরও বেশি অর্থ বরাদ্দ লাগবে বলেও মত দিয়েছেন তিনি।
করবিন বলেছেন, ‘আমাদের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারাসহ অনেক বিশেষজ্ঞই বিদেশের মাটিতে আমাদের সরকারের লড়াই এবং দেশের মাটিতে সন্ত্রাসবাদের মধ্যে সংযোগ থাকার ইঙ্গিত দিয়েছেন।’
সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার একসময় ব্রিটেনকে ইরাক যুদ্ধে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন। সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছেন। ইরাক যুদ্ধে যুক্তরাজ্যের ওই ভূমিকার জন্য টনি ব্লেয়ার বেশ সমালোচিত। ব্রিটেনের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নয় এমন এক যুদ্ধে অংশ নিয়ে জীবন নষ্ট করার জন্য তাকে আদালতের মুখোমুখি করারও প্রস্তুতি নিচ্ছে নিহত সেনাদের পরিবারও।
ম্যানচেস্টারের হামলাটি চালিয়েছে লিবীয় বংশোদ্ভূত এক ব্রিটিশ নাগরিক। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে পুরো নেটওয়ার্কটি এ ধরনের লিবীয়দের নিয়ে গঠিত। তাদের ক্ষোভের কারণ একটাই: তাদের নেতাকে ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে হত্যা করা হয়নি এবং তাদের দেশকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
যদিও, ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ কাজ করছে বলেই প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দল কনজারভেটিভ পার্টি।
ম্যানচেস্টার হামলার প্রেক্ষাপট তৈরির জন্য খোদ ব্রিটেনই দায়ী বলে করবিন যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা মানতে নারাজ ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী মাইকেল ফ্যালন। তিনি দাবি করেছেন, করবিন ‘বিভ্রান্ত ও বিপজ্জনক’ চিন্তা-ভাবনা করছেন।

আরেক ধাপ এগিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, ‘করবিনের মন্তব্য পুরোপুরি অস্বাভাবিক।’

আমার চোখে এখন অন্য এক বাস্তবতা ধরা পড়েছে। ব্রিটিশ মিডিয়া কর্মীরা এখন বুঝে গেছেন, কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশের সমালোচনা না করে নিজেদের ব্যাপারে গভীর মনযোগ দেওয়া জরুরি। তারা এখন অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন যে, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা কোনও সহজ বিষয় নয় এবং বিশ্বের সব দেশের জন্যই তা সমান হুমকি বলে বিবেচ্য।

সম্প্রতি ব্রিটেনও এ হুমকিকে ‘সংকটপূর্ণ’ বলে ঘোষণা করেছিল। এর মানে হলো, অন্য আরেকটি সন্ত্রাসী হামলা প্রায় আসন্ন বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু দেশজুড়ে বড় বড় অভিযান চালানোর পর গত ২৭ মে এ হুমকির মাত্রাকে ‘সংকটপূর্ণ’ থেকে কমিয়ে আবারও ‘তীব্র’ তে নিয়ে আসা হয়।

সীমিত জনবল ও সীমিত কাজ করার পরও আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী কৃতিত্বের দাবিদার। এমনকি আমি যখন এ আর্টিক্যাল লিখছি, তখনও সাভারের জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চলছিল। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি সরকারেরও পূর্ণ সহযোগিতা রয়েছে।   

সম্প্রতি করবিন আরও বলেছেন, ‘আমাদের নিজস্ব রাস্তায় সেনাদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে যে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বর্তমান পদক্ষেপ ব্যর্থ হয়েছে’। দীর্ঘদিন শান্তির প্রচারণা চালিয়ে যাওয়া এবং ‘স্টপ দ্য ওয়ার’ জোটের সাবেক এ চেয়ারপার্সন সেনাদের কাছে অঙ্গীকার করেছেন। বলেছেন, ‘লেবার সরকারের অধীনে তাদেরকে যথাযথভাবে সমৃদ্ধ না করা পর্যন্ত বিদেশে যুদ্ধ করতে পাঠানো হবে না। এবং সেক্ষেত্রে সামরিক হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা এবং পরবর্তীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে’।

তার মতো লক্ষ্য রয়েছে এমন ব্যক্তিকে এখন বিশ্বের দরকার। সেই লক্ষ্য হলো, অন্যদের ওপর নিপীড়ন না চালিয়ে এবং জান-মালের ক্ষতিসাধন না করে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সন্ত্রাসবাদের অবসানই করা।

আমি আশা করি, ভবিষ্যতে অন্য কোথাও হস্তক্ষেপের আগে নতুন ব্রিটিশ সরকার দুইবার ভাববে এবং যে সংঘাতের কারণে সন্ত্রাসবাদের জন্ম হয়েছে তা নিরসনে কাজ করবে। 

লেখক: সাংবাদিকতায় জাতিসংঘের ড্যাগ হ্যামারসোল্ড স্কলার এবং লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
মস্কোতে কনসার্টে হামলা: ৯ সন্দেহভাজনকে আটক করলো তাজিকিস্তান
মস্কোতে কনসার্টে হামলা: ৯ সন্দেহভাজনকে আটক করলো তাজিকিস্তান
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ