X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাজেট বাস্তবায়নে প্রয়োজন দিকনির্দেশনা

তৌফিকুল ইসলাম খান
০১ জুন ২০১৭, ২৩:০০আপডেট : ০১ জুন ২০১৭, ২৩:০১

 

তৌফিকুল ইসলাম খান নতুন অর্থবছরের (২০১৭-১৮) বাজেট কেমন হবে, তার একটা প্রাথমিক ধারণা আগে থেকেই পাওয়া যাচ্ছিল। প্রস্তাবিত বাজেটে দেখা গেলো, এর অর্থায়নের জন্য প্রয়োজনীয় রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য বৃদ্ধির ধারা গতানুগতিকই রাখা হয়েছে। এ বছর বাজেট পূর্ববর্তী রাজস্বনীতির আলোচনা আবর্তিত হয়েছে মূলত নতুন ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আইনের ধরন নিয়ে। এসব বিষয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে, বাজেট ঘোষণার পরও হয়তো চলতে থাকবে। তবে এর ফলে  আয়-ব্যয়ের লক্ষ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। রাজস্বনীতির কিছু পরিবর্তন হওয়া সম্ভব। আজ আমার মূল আগ্রহ ছিল অর্থমন্ত্রী বর্তমান সময়ের বাজেটের জন্য প্রধান দুই চ্যালেঞ্জ কিভাবে মোকাবিলা করবেন, সে দিকে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব বলছে, সম্প্রতি জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি বেশ ভালো ছিল। কিন্তু এ সময়ের ভেতরে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ জিডিপি’র অংশ হিসেবে বাড়েনি। এরচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এ সময়ে কর্মসংস্থান খুব সামান্যই বেড়েছে। বাংলাদেশের মতো শ্রমবহুল দেশে প্রবৃদ্ধি যখন কর্মসংস্থানমুখী না হয়, তখন দেশের সার্বিক উন্নয়নে এর কার্যকারিতাও সীমিত হয়ে পড়ে। এ প্রেক্ষাপটে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনীতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল কর্মসংস্থান সৃষ্টি, যা মোকাবিলায় কার্যকর কৌশলের অন্তর্ভুক্তি আশা করা স্বাভাবিক ছিল। তবে প্রস্তাবিত বাজেট, সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি।

অর্থমন্ত্রীর টানা নবম বাজেট ঘোষণায় সরকারি আয়-ব্যয়ের লক্ষ্য আগের ধারাবাহিকতায় বেড়েছে। কিন্তু ঘোষিত এই বড় বাজেট কোনও বছরই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। ঘোষিত বাজেটের আয়-ব্যয়ের লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে বছর শেষে প্রকৃত দেশজ সম্পদ সংগ্রহ বা সরকারি ব্যয়ের মধ্যকার ব্যবধান দিন-দিন বাড়ছে। এর কারণ হলো প্রতি বছর ঘোষিত বাজেট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কৌশলপত্রের অনুপস্থিতি। এ বছরও তার ব্যতিক্রম নয়। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যের সঙ্গে রাজস্বনীতির কৌশলপত্রের অনুপস্থিতি বাংলাদেশের বাজেটের একটি বড় দুর্বলতা। করের হার হ্রাস- বৃদ্ধির ফলে রাজস্ব আদায় কতটুকু হ্রাস-বৃদ্ধি পাবে, সেই প্রাক্কলন না থাকায় একদিকে যেমন রাজস্ব নীতির যথোপযুক্ততা বিচার করা যায় না, তেমনি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জনে রাজস্বনীতি পদক্ষেপের (হ্রাস বা বৃদ্ধির) নিট প্রভাব কী, তাও প্রাক্কলন করা যায় না। বিশ্বের অধিকাংশ উন্নত রাষ্ট্রব্যবস্থার বাজেট আলোচনায় এ ধরনের পর্যালোচনাই অধিকতর গুরুত্ব পায়। বাংলাদেশেও অতীতে আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে প্রয়াত শাহ এএমএস কিবরিয়া এ ধরনের হিসাব দিতেন। এ ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কতখানি রাজস্ব আদায় বাড়বে বলে বাজেটে অনুমান করা হয়েছে, তারও প্রাক্কলন থাকা উচিত।

কর ফাঁকি প্রতিরোধ এবারের বাজেটেও যথেষ্ট গুরুত্ব পায়নি। এ বছর প্রকাশিত বিশ্বপর্যায়ের একটি গবেষণায় এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর অবৈধ অর্থ স্থানান্তর বাড়ছে। এর মূল কারণ হলো কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা। এ বিষয়টি সব পর্যায়েই বিশেষভাবে আলোচিত ছিল, কিন্তু বাজেটে এ বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

অন্যদিকে, ব্যয় পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দকৃত অর্থ যথোপযুক্ত ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে নীতি পদক্ষেপ ও সংস্কার জরুরি ছিল, সে সম্পর্কেও আমরা বাজেট থেকে স্পষ্ট কোনও ধারণা পাইনি। এবারের বাজেট থেকে আমাদের বড় প্রত্যাশা ছিল যেন এর মাধ্যমে উৎপাদন ও জীবনযাত্রার ব্যয় না বাড়ে। ভোক্তাদের কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে করের বোঝা লাঘব করার সুযোগ এ বাজেটে রাখা হয়নি।

বিদেশি সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পের বাস্তবায়নে বিশেষ পরিকল্পনা দরকার। মেগা প্রকল্পের ক্ষেত্রেও এ কথা সত্যি। ‘মেগা প্রকল্প’ বাস্তবায়নে বিশেষ নজরদারি খুব একটা কার্যকর নয় বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। এরই গতানুগতিকতার জাল থেকে বের হয়ে কিভাবে সামনের অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়ন গতি পাবে তার পথনির্দেশনাও প্রয়োজন।

সর্বোপরি, নতুন ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আইনের প্রায়োগিক বাস্তবায়নের একটি পথনির্দেশনা প্রণয়ন করে এ সম্পর্কে সবাইকে স্পষ্ট ধারণা দেওয়া উচিত। এর ফলে এ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া পরিবীক্ষণ করাও সহজ হবে।

বাজেট বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অনুপস্থিতি এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। এ প্রক্রিয়া তখন আর জবাবদিহিতার আওতায় থাকে না। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ অর্থবছরে জাতীয় সংসদে বাজেটের পর্যালোচনা আরও গুণগতভাবে বাড়বে বলে আশা করি। বিশেষত জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটি এতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।

যদিও এ বছর জুন মাসের ১ তারিখেই বাজেট পেশ করা হয়েছে, তবু আসছে ঈদকে মাথায় রেখে হয়তো এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা আগেই বাজেট পাস হয়ে যাবে। ফলে এ নিয়ে আলোচনার সময়ও কম থাকবে। তাই এ সময়ের মধ্যে বাজেটের রাজস্বনীতির আলোচনার পাশাপাশি এ বাজেট বাস্তবায়নের কৌশল প্রণয়ন, প্রাক্কলন, বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে আগামী মাস থেকেই এর বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে হবে।

লেখক: গবেষণা ফেলো, সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
নাটোরে উপজেলা নির্বাচনরুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ