X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

লড়াই করতে জানে বাংলাদেশ

তুষার আবদুল্লাহ
১০ জুন ২০১৭, ১৪:৫৫আপডেট : ১০ জুন ২০১৭, ২৩:৪৪

তুষার আবদুল্লাহ কবিতা হরদম লেখা হয়। কিন্তু মহাকাব্য রচিত হয় এক বা দুটি। শুক্রবার কার্ডিফে বাংলাদেশ কবিতা লেখেনি, লিখেছে মহাকাব্য। রচনাকার দুই কবি সাকিব এবং মাহমুদউল্লাহ। বাংলাদেশ দলের সংগ্রহ একসময় ৩৩/৪, এ অবস্থায় যারা কার্ডিফ থেকে মন সরিয়ে নিয়েছিলেন তারা এখন আফসোসের অনলে পুড়ছেন। এই অনলের দগ্ধতা বড় তীব্র। কারণ বাংলাদেশ খুব শিগগিরই হয়তো আরেকটি ম্যাচ জিতবে, কিন্তু সেই ম্যাচটি কি এমন মহাকাব্যিক হয়ে উঠবে? তামিম, সৌম্য, সাব্বির এবং মুশফিক বিদায় নেওয়ার পর বাংলাদেশ রেকর্ডের এমন প্রাচীর গড়বে এমন স্বপ্ন সত্যি কেউ দেখেনি। বেতার, টিভি, অনলাইন থেকে সরে গেছেন অনেকে। যারা ছিলেন তারা দেখতে চেয়েছিলেন কত অঙ্কে গিয়ে শেষ পর্যন্ত গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। জয়ের তীরে গিয়ে কতবারইতো বাংলাদেশ তরী ডুবিয়ে দিয়েছে, আর কার্ডিফে অতল গহ্বর থেকে ভেসে উঠলো বাংলাদেশ। সাকিব - মাহমুদউল্লাহর জুটি মুহূর্তে ইতিহাস গড়ে যাচ্ছিল। দুজনার চোখ এবং শারীরিক ভাষা দেখে মনে হচ্ছিল বাঘের মতো কেউ নয়, দুই বাঘই সুন্দরবনের মান বাঁচাতে লড়ে যাচ্ছে। আর সুন্দরবন মানেইতো বাংলাদেশ। আজ অস্ট্রেলিয়া - ইংল্যান্ডের মধ্যে কে জিতবে কে হারবে সেদিকে আমার নজর থাকছে না। কারণ এবারের আইসিসি চ্যাম্পিয়ানশিপের ফাইনাল ম্যাচটি আমি গতকাল দেখে ফেলেছি, দেখেছে বিশ্ব। কথাটা আবেগের নয়, কার্ডিফে রচিত মহাকাব্যের প্রতি পঙতিতে বাংলাদেশ এর প্রমাণ রেখে দিয়েছে ।
বরাবরই আমি ব্যক্তি জীবন এবং রাষ্ট্রকে ক্রিকেট থেকে প্রণোদনা ও মন চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেই। কারণ ক্রিকেটের ইনিংসে যেমন জোয়ার -ভাটা আছে, ব্যক্তি জীবন, রাষ্ট্র জীবনও একই নিয়মে আবর্তিত। হাল ছেড়ে দেওয়া কোনও সমাধান নয়। লড়াইটা চালিয়ে যেতে হয়। খাদের কিনার থেকেও জীবনের কাছে ফিরে আসা যায়। বিধ্বস্ত জনপদকে মাতানো যায় জয়ের উল্লাসে। কার্ডিফে সেই উদাহরণ রচনা করে দেখিয়েছেন সাকিব- মাহমুদুল্লাহ। আমরা অনেকটা সময় ধরে সংকটের মধ্যে আছি। রাষ্ট্র এবং সমাজে বিভক্তি বাড়ছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রায় আধা শতাব্দী পরে এসে সংশয় দেখা দিয়েছে- মুক্তিযুদ্ধে যে আদর্শের বিরুদ্ধে ছিল আমাদের লড়াইটা, আজ ভোটের জন্য বুঝি তাদের সঙ্গেই আপসের করমদন! রাজনীতির ক্ষমতানীতিতে রূপান্তর ঘটেছে যেমন, তেমনি সমাজ জীবন, ব্যক্তি জীবন এখন সমুদ্রে ভাসমান। ষোল কোটি মানুষ বিবেচনায় সম্পদ গুটিকয়েক মানুষের মুঠোতে। বাড়ছে শ্রেণির সঙ্গে শ্রেণির দূরত্ব। শিক্ষার কাঠামো ভেঙে তছনছ।
অসাম্প্রদায়িক প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সাম্প্রদায়িক সাজাতে ব্যস্ত একটি পক্ষ। ধর্মকে ভোট কেনার মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। গণমাধ্যম হয়ে পড়েছে পুঁজির পাহারাদার। সবকিছুর যোগফল হলো অবিশ্বাস এবং অনিশ্চয়তার বাংলাদেশ। প্রশ্ন কোথায় যাচ্ছে বাংলাদেশ?

বাংলাদেশ হারিয়ে যায়নি। বাংলাদেশ হেরে যায়নি। তার গন্তব্য বিজয়ে পথে। বিশ্বাস - অবিশ্বাসে বিভক্ত, ক্ষমতা- ভোগের বিস্কুট দৌড়ে ক্লান্ত প্রতিটি বাঙালির সবশেষ গন্তব্য বাংলাদেশ। এই একটি নাম, একটি উচ্চারণে একাট্টা বাঙালি। যোগ্য নেতৃত্ব যে কোনও অচলায়তন থেকে বাংলাদেশেকে তুলে আনতে পারে, যে কোনও শক্তির কাছ থেকে বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারে, একাত্তর তা দেখিয়েছে। ২০১৭ তে দেখানো সাকিব- মাহমুদউল্লাহ। হারবে না বাংলাদেশ। এ শুধু কোনও আবেগী উচ্চারণ নয়, প্রায়োগিক বিশ্বাস ।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
প্রীতি উরাংয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু: ‘অপরাধ আড়ালের চেষ্টা হচ্ছে’
প্রীতি উরাংয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু: ‘অপরাধ আড়ালের চেষ্টা হচ্ছে’
মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হলো সেনাসহ ২৮৫ বিজিপি সদস্যকে
মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হলো সেনাসহ ২৮৫ বিজিপি সদস্যকে
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে বাইডেনের সই
ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে বাইডেনের সই
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ