X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘মুকাভিনয়’ থেকে ‘চালাভিনয়’!

গোলাম মোর্তোজা
২১ জুন ২০১৭, ১৩:০৩আপডেট : ২১ জুন ২০১৭, ১৩:০৬

গোলাম মোর্তোজা মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট। পেঁয়াজের দাম জিজ্ঞেস করতেই পাশ থেকে একজন বলে উঠলেন, ‘রাতে টেলিভিশনে বলেছেন মোটা চালের কেজি ৫২ টাকা। আজ গিয়ে দেখেন (চালের মার্কেট দেখিয়ে) ৫৫ টাকা। এক কেজি মোটা চাল ৫৫ টাকা!’
যিনি কথাগুলো বলছিলেন, তিনি একজন চালের ব্যবসায়ী। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন কিনা জানি না। বিভিন্ন সময়ের কথায় মনে হয়েছে আওয়ামী রাজনীতির সমর্থক। চালের বাজারের ভেতর দিয়ে কাঁচা বাজারে যাওয়ার সময় মাঝেমধ্যে তার সঙ্গে দেখা হয়। টেলিভিশন অনুষ্ঠানের প্রতিক্রিয়া জানান। অধিকাংশ সময়ে হাসতে হাসতে বলেন, ‘আপনি একটু বেশি সমালোচনা করেন। সরকার তো চেষ্টা করছে...।’
সেই ব্যবসায়ী মোটা চালের দাম নিয়ে কথাগুলো বললেন। বোঝা গেলো তিনি নিজেও খুবই বিরক্ত।
চালের দাম নিয়ে প্রতিদিন কথা হচ্ছে। পরিসংখ্যান এখন মানুষের মুখস্ত। একদিকে চালের দাম বেড়েই চলেছে, অন্য দিকে চলছে ‘মুকাভিনয়ে’র রাজনীতি।
১. মোটা চালের কেজি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা। কোনও কোনও মন্ত্রী টেলিভিশনে এসে বলছেন কেজি ৪২ টাকা, কেউ বলছেন ৪৪ টাকা, আবার কেউ বলছেন ৩৮ টাকা। সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবি বলছে, কেজি ৪৬-৪৮ টাকা। খাদ্যমন্ত্রী দাম বৃদ্ধির জন্যে বিএনপি-জামায়াত ঘরানার ব্যবসায়ীদের দায়ী করার কয়েকদিন পর বলেছেন, ‘চাল সংগ্রহ করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি’।
২. বিএনপি কেন বন্যাক্রান্ত হাওরে দেরিতে গেলো, পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের দেখতে কেন গেলো না, আওয়ামী লীগের অনেক নেতা, অনেক কথা বলেছেন গত কয়েক দিনে। বিএনপির সমালোচনা করছিলাম আমরাও। মহাসচিবসহ বিএনপি নেতারা রাঙ্গামাটি যাওয়ার উদ্যোগ নিলেন কিছু সহায়তাসহ। রাঙ্গুনিয়ায় তাদের মারধর করে, গাড়ি ভাঙচুর করে ফেরত পাঠানো হলো। গেঞ্জি পরিহিত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ছবি পত্রিকায় প্রকাশিত হলো, টেলিভিশনে দেখানো হলো। আওয়ামী লীগ নেতা ড. হাছান মাহমুদ বললেন, ‘বিষয়টিকে নাটক মনে হচ্ছে’। হঠাৎ দেখা গেলো এই সাবেক প্রতিমন্ত্রী ‘মাটি কাটছেন, মাথায় মাটির ঝাঁকা ’। মাটির ঝাঁকা মাথায় গেঞ্জি পরিহিত ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লো। বিশেষজ্ঞরা ছবি পর্যবেক্ষণ করে বললেন, মাটি কাটতে গিয়ে তার শরিরের গেঞ্জিতে কাদা লাগেনি। ছবি তোলার জন্যে গেঞ্জিতে কাদা ছিটিয়ে নেওয়া হয়েছে।

জিয়াউর রহমানের খাল এবং মাটি কাটার কর্মসূচি সম্ভবত হাছান মাহমুদের নতুন করে পছন্দ হয়েছে। বিষয় সেটা নয়, বিষয় হলো এই ছবির সঙ্গে কমপক্ষে ৩ জনকে দেখা যাচ্ছে যারা মির্জা ফখরুলের গাড়িবহরে আক্রমণ করেছিল।

আক্রমণকারী কারা তাদের স্পষ্ট ছবি পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। তারা যে ছাত্রলীগ - যুবলীগের নেতা-কর্মী তাও জানা গেছে। তাদের কেউ কেউ আক্রমণের আগে - পরে ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সড়ক ও সেতু মন্ত্রী বলেছেন, ‘তদন্ত করে বের করা হবে কারা ঘটনা ঘটিয়েছে। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

যেখানে বিএনপি নেতাদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে, সেই রাঙ্গুনিয়া হাছান মাহমুদের নির্বাচনি এলাকা। এই সাবেক প্রতিমন্ত্রী হাছান মাহমুদের পুরনো দু’একটি তথ্য নতুন করে জানাই।

ড. হাছান মাহমুদের স্ত্রী গৃহিণী। নির্বাচনি হলফনামায় লেখা হয়েছিল। ২০০৮ সালে তার ব্যাংকে ছিল ৬০ হাজার টাকা। ২০১৪ সালে তা বেড়ে হয়েছিল ১৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা! ২০০৮ সালে হাছান মাহমুদের ব্যাংকে ছিল ৩৭ লাখ টাকা। ২০১৪ সালে হয়েছিল ১ কোটি ৭২ লাখ টাকা। ৫ বছরে স্বামী-স্ত্রীর সম্পদ বৃদ্ধির হার ছিল ২০৩৬ শতাংশ!
৩. পাহাড় ধস এবং তার প্রেক্ষিতে রাঙ্গামাটিতে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিল। নিত্য পণ্যের স্বল্পতা এবং মূল্য বৃদ্ধি পেল কয়েকগুণ। বলা হলো, রাঙ্গামাটি যাওয়ার রাস্তা অনেক জায়গায় ধসে গেছে, পণ্য পৌঁছানো যাচ্ছে না।

আসলে কি তাই, রাস্তা বন্ধ ছিল? 

হ্যাঁ, রাস্তা বন্ধ ছিল। আবার না, যাওয়ার সব পথ বন্ধ ছিল না।

বন্ধ ছিল শুধু সড়ক পথ। আকাশ এবং নদী পথে যেতে কোনও বাধা ছিল না। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কাপ্তাই পর্যন্ত সড়ক পথ খোলা ছিল। কাপ্তাই থেকে দুই আড়াই ঘণ্টায় নৌপথে রাঙ্গামাটি পৌঁছানো মোটেই কঠিন কোনও ব্যাপার ছিল না। মানুষের যাতায়াত এবং যে কোনও পণ্য যে কোনও পরিমাণ অতিদ্রুত রাঙ্গামাটিতে নৌপথে পৌঁছানোর সুযোগ সবসময় ছিল। ট্রলার বা লঞ্চ জোগাড় করা সরকারের জন্যে সামান্যতম কোনও কঠিন কাজ ছিল না। আরও দ্রুত পণ্য নেওয়ার জন্যে আকাশ পথ ছিল। দ্রুত পণ্য পৌঁছানোর দৃশ্যমান কোনও উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি সরকারকে। শুধু বলা হয়েছে ‘রাস্তা বন্ধ’ পণ্য পৌঁছানো যাচ্ছে না।

ইরাক থেকে হেলিকপ্টার চেয়ে এনে এদেশে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ পৌঁছানোর নজীর আছে। আর এখন বাংলাদেশের নিজেরই পর্যাপ্ত সংখ্যক হেলিকপ্টার আছে। অথচ পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের জন্যে তার ব্যবহার দেখা গেলো না।

রাস্তা মোটামুটি ঠিক হয়েছে। বলা হচ্ছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমে গেছে। বলা হচ্ছে পাহাড়ি ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের কথা। বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া লংগদুর প্রায় ২৫০ পরিবারের ক্ষতির পরিমাণ টাকার অঙ্কে ৬ থেকে ৭ কোটি। আশ্রয়হীন- খাদ্যহীন জঙ্গলে আশ্রয় নেওয়া এই মানুষগুলো কোথায় আছেন, কেমন আছেন, তাদের নিয়ে কোথাও কোনও কথা নেই। তদন্তে ৭ কোটি টাকার ক্ষতির কথা জানা গেলেও, জানা যায়নি এই অর্থ বরাদ্দের ঘোষণা। জানা গেছে শ্রীলংকার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্যে ৪ কোটি টাকা দেওয়ার ঘোষণা! নিজের দেশের পাহাড়- হাওরের মানুষের চেয়ে, শ্রীলংকার মানুষ কোন বিবেচনায় এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলেন?
৪. দাম স্বাভাবিক বা কমে এসেছে বলে কী বোঝানো হলো? দাম কমেছে বা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে মানে, মোটা চালের কেজি ৫৫ টাকা, তাই তো? সারা দেশে যে দাম, বিপর্যস্ত রাঙ্গামাটিতে দাম নিশ্চয়ই তার চেয়ে কম নয়। এটাকে স্বাভাবিক বা কমা বলে?

গত ২৭ মে দৈনিক প্রথম আলো শিরোনাম করেছিল ‘বিশ্বে মোটা চালের দাম বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি’। তখন মোটা চাল বাংলাদেশে বিক্রি হচ্ছিল ৪৮ টাকা কেজি। পাকিস্তানে ছিল ৩৮.৫৪ টাকা, ভারতে ৩৪.৪৩, থাইল্যান্ডে ৩৭.৮১, ভিয়েতনামে ৩৩.৬২ টাকা কেজি। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী এসব দেশ আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রির জন্যে চালের দাম বৃদ্ধি করেছে। নিজের দেশের বাজারে দাম বাড়ায়নি। আর বাংলাদেশে সেই ৪৮ টাকার চাল ৫৫ টাকা হয়েছে। যে চালের দাম ২০১৫ সালে ছিল ৩৩ থেকে ৩৫ টাকা। ২০১৬ সালে ছিল ৩৫-৩৭ টাকা কেজি। ২ বছরের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে ২০ থেকে ২২ টাকা।

হাওরের বন্যায় চাল উৎপাদন কম হয়েছে সত্যি। কিন্তু দাম শুধু সে কারণে বাড়েনি। অনিয়ম-দুর্নীতি এবং দায়িত্বহীনতা, অব্যবস্থাপনার কারণে দাম বেড়েছে।

৫. গত প্রায় এক মাস ধরে চালের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে হইচই হচ্ছে। দাম বাড়তে শুরু করেছে কয়েক মাস আগে থেকে। শুল্ক কমিয়ে বা শূন্য করে দিলে বেসরকারি ব্যবসায়ীরা হয়ত ভারত থেকে চাল আমদানি করে ৭ দিনের দামে একটা ভারসাম্য তৈরি করতে পারতেন। সরকারের মন্ত্রী বলেছেন, মজুদ-কারসাজি করছে বিএনপি-জামায়াতের ব্যবসায়ীরা। আমদানি উৎসাহিত করলেই তো, এই কারসাজি করা ব্যবসায়ীরা শায়েস্তা হয়ে যেত। তা করা হলো না কেন? 

সরকারি মজুদ থাকার কথা কমপক্ষে ৬ লাখ মেট্রিক টন। তা প্রায় দের লাখ টনে নামিয়ে আনলেন কোন ক্ষমতাবলে? কার স্বার্থ দেখার জন্যে? সরকারি গুদামে কত চাল মজুদ আছে, ব্যবসায়ীরা তা জানেন। ব্যাবসায়ীদের কাছে কত চাল মজুদ আছে, সরকার তার কিছুই জানেন না। অথচ প্রতিদিনের এসব হিসেব জানার কথা খাদ্য এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। তারা কিছুই জানেন না।

এখন বলছেন, ব্যাংকে টাকা না থাকলেও ব্যবসায়ীরা এলসি খুলে চাল আমদানি করতে পারবেন। 

চাল আমদানিতে মোট শুল্ক ২৮%। কৃষককে সুবিধা দেওয়ার জন্যেই এই শুল্ক, বিরোধিতা করার সুযোগ নেই। প্রশ্ন হলো আপনার কাছে যখন চাল নেই, দাম বেড়ে গেলো অবিশ্বাস্যভাবে, শুল্ক কমাতে এত টালবাহানা করলেন কেন? যে শুল্ক কমানোর দরকার ছিল কমপক্ষে দুই মাস আগে, তা দুই মাস পরে কমালেন কেন? ১৮% কমালেন, এখনও ১০% থেকে গেলো। বাণিজ্য মন্ত্রী বলছেন, চালের দাম কেজিতে ৬ টাকা কমবে। 

কত টাকা থেকে ৬ টাকা কমবে? ৫২ বা ৫৫ টাকা থেকে? তা যদি হয়, কমে দাম হবে ৪৬ থেকে ৪৯ টাকা কেজি। তা গরিব, নিম্ন মধ্যবিত্ত, এমন কী মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ?

শুল্ক তো সরকার আজ যেমন কমাতে পারে, কালই আবার আরোপও করতে পারে। এই সিদ্ধান্ত নিতে এত গড়িমসির নেপথ্যের কারণটা কী? তাও কমাতে হলো প্রধানমন্ত্রীকে। প্রধানমন্ত্রীই বা আরও আগে কমালেন না কেন? মন্ত্রীরা কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারলেন না কেন? তাদের জনদূর্ভোগ বোঝার অক্ষমতা, না সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই? সব সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী নেবেন, বিষয়টি কী এমন? সত্য কোনটা? অল্প সময়ের জন্যে শুল্ক পুরোপুরি উঠিয়ে দিলে কী এমন ক্ষতি হতো!

৬. চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ, শুনতে শুনতে মানুষের কান ব্যথা হয়ে গেছে। উৎপাদন করে কৃষক, কৃতিত্ব নেয় সরকার। হ্যাঁ, বিএনপি সরকারের তুলনায় কৃষকের কাছে বীজ- সার- কীটনাশক আপনারা ভালোমত পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন। সেটাই তো আপনাদের দায়িত্ব ছিল। আপনারা কৃষককে ধান- চালের ন্যায্য মূল্য দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে এত কৃতিত্ব দাবি করার কিছু নেই। এদেশের মূল শক্তি কৃষক, একমাত্র কৃতিত্ব কৃষকের। শুধু কৃষি পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে নয়, সব ক্ষেত্রে মূল অবদান কৃষকের। পোষাক শিল্পের মূল শক্তি স্বস্তা কর্মী। কৃষকের সন্তানই পোষাক শিল্পের কর্মী। কৃষক এবং কৃষকের সন্তানই প্রবাসী কর্মী। এই কৃষক, কৃষকের সন্তানদের ন্যায্যতার প্রশ্নে সরকার পাশে দাঁড়ায় না। শুধু কৃতিত্ব হাইজাক করতে চায়।

রাজনৈতিক কৃতিত্ব নেওয়ার জন্যে অসত্য তথ্য অনবরত প্রচার করা হয়। সরকারের মাথায় ভূত চাপলো, শুধু চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেখালে চলবে না। চাহিদা মিটিয়ে রফতানিও করতে পারি, সেই কৃতিত্বও নিতে হবে। ২০১৩ সালে চাল রফতানির উদ্যোগ নিল সরকার। কথা উঠল, রফতানি করার মতো চাল আমাদের নেই। তারপর সরকারি প্রতিষ্ঠান 'বিআইডিএস'কে দেওয়া হলো সমীক্ষার দায়িত্ব। সমীক্ষায় দেখানো হলো, আসলেই রফতানি করার মতো চাল বাংলাদেশে নেই। সরকারের করানো সরকারি প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের সেই সমীক্ষা উপেক্ষা করে, শ্রীলংকায় ৫০ হাজার টন চাল রফতানি করা হলো। তারপর কোরাস গান ‘আমরা এখন চাল রফতানিকারক দেশ’!

৭.  বৈষম্য নীতির অমানবিকতা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা বোঝা যায় রাঙ্গামাটির সাম্প্রতিক পরিস্থিতির দিকে তাকালে। পাহাড় ধসের পর আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৩৬টি। জেলা প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনী পরিচালনা করছে এসব আশ্রয় কেন্দ্র। এসব কেন্দ্রে আশ্রিত মানুষের সংখ্যা ২১০০। যার প্রায় সবাই বাঙালি। বলা হচ্ছে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের। অনুসন্ধানে জানা গেলো, সহায়তা দেওয়া হচ্ছে মানে আশ্রয় কেন্দ্রে যারা এসেছে তাদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়িরা আশ্রয় কেন্দ্রে আসেনি বললেই চলে। সেটেলার বাঙালিদের সঙ্গে একই আশ্রয় কেন্দ্রে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে একসঙ্গে থাকা তারা নিরাপদ বোধ করেন না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে সেই বিশ্বাসও তাদের নেই। আশ্রয় কেন্দ্রে খাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে, বাঙালিরা যা খায় সেরকম। পাহাড়িদের খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপন সবই আলাদা। আশ্রয় কেন্দ্রগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে পাহাড়িদের বিষয়টি মাথায়ই রাখা হয়নি। আশ্রয় কেন্দ্রে না আসা দুর্গত পাহাড়িদের কাছে সহায়তা পৌঁছানোর প্রায় কোনও উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ব্যক্তি বা বেসরকারি সংগঠন উদ্যোগ নেওয়ার পর তাদেরও নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, অর্থ-সহায়তা সব জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে দিতে হবে। সরাসরি দেওয়ার সুযোগ নেই। পাহাড়িদের প্রতি বৈষম্যমূলক নীতি অমানবিকতার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।

পাহাড় কেটে, গাছ কেটে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৈচিত্র্য ধ্বংস করা হয়েছে। পাহাড় কাটানো হয়েছে সেটেলার বাঙালিদের দিয়ে। পাহাড় কাটে সরকারি প্রশাসন, অবকাঠামো-রাস্তা তৈরির জন্যে। কাটার আগে কোনও গবেষণা হয়নি, ফলাফল কী হতে পারে তা নিয়ে। পাহাড় কাটে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং রাজনীতিবিদরা। কোনও পাহাড়ই কাটেনি পাহাড়িরা। গাছ কাটেনি পাহাড়িরা।

সারা দেশেই গরিব মানুষ, নিম্নমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত অসহায় অবস্থায় পড়েছে। দূর্বিষহ হয়ে উঠেছে পাহাড়িদের জীবন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও তারা বৈষম্যের শিকার! অথচ এই ক্ষতির কারণ তারা নয়। গরীব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নীতি থেকে সরে গেছে সরকার। পাহাড় - হাওর সব ক্ষেত্রেই তা দৃশ্যমান। রাজনীতি থেকে 'জনকল্যাণ' শব্দটি হারিয়ে গেছে, 'মুকাভিনয়' থেকে 'চালাভিনয়' এমন শব্দের সংখ্যা বাড়ছে।

লেখক: সম্পাদক, সাপ্তাহিক

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
কুমিল্লা মেডিক্যাল সেন্টার হাসপাতালকে ২ লাখ টাকা জরিমানা
কুমিল্লা মেডিক্যাল সেন্টার হাসপাতালকে ২ লাখ টাকা জরিমানা
ফটোকপি দোকানের কর্মচারী, জেলে, রাজমিস্ত্রি তৈরি করতো জাল টাকা
ফটোকপি দোকানের কর্মচারী, জেলে, রাজমিস্ত্রি তৈরি করতো জাল টাকা
রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর নিরাপত্তা জোরদার করছে কিয়েভ
রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর নিরাপত্তা জোরদার করছে কিয়েভ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ