X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদ ফিউশন

তুষার আবদুল্লাহ
২৪ জুন ২০১৭, ১৪:০৬আপডেট : ২৪ জুন ২০১৭, ১৪:০৯

তুষার আবদুল্লাহ ঈদ কাদের মতো করে উদযাপন করবো? প্রশ্নটি তৈরি হওয়ার একাধিক উপলক্ষ্য তৈরি হয়েছে। ঈদ মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব, তাই স্বাভাবিকভাবেই উদযাপন হওয়ার কথা ইসলামিক রীতি অনুসারে। রীতি অবশ্য রোজা, যাকাত, ফিতরা এবং ঈদের দিনের নামাজ আদায়কে অনুসরণ করে। তবে মুসলিম বিশ্বের প্রতিটি দেশের আবার ঈদ উদযাপনের সঙ্গে যুক্ত হয় নিজস্ব অভ্যাস বা যাপন। বাংলাদেশেও তেমনি ঈদ যাপন হয়ে আসছে।
ঈদের দিন কয়েক আগে থেকেই গ্রাম-মফস্বল শহরে উৎসবের আলো জ্বলে ওঠে। এই আলো মানুষের হৃদয়ের। সেই হৃদয়ে বাজে উৎসব সঙ্গীত। গ্রাম-শহরের বাইরে কাজের জন্য যারা বাইরে থাকেন, তারা ঘরে ফেরেন। বাড়িতে বাড়িতে চলে হাত সেমাই, চালের রুটি, পিঠে তৈরির আয়োজন। গ্রামের বাজার-হাটও সরগরম হয়ে ওঠে। চাঁদরাতে মেহেওদী বাটা এবং হাতে আকাঁর ধুম। ঈদের দিন ঈদগাহতে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে সেই আনন্দ এক প্রকার পূর্ণতা পায়। সেই পূর্ণতার আনন্দ ঘুরে বেড়ায় বাড়িতে বাড়িতে। নতুন কাপড়ে ধবধবে দিন। যাদের গায়ে নতুন কাপড় ওঠে না তাদের মুখেও থাকে খুশির ঝিলিক। অন্যের আনন্দ উপভোগ করেন তারাও।  ঈদ উদযাপনের এই দৃশ্য গ্রামে-মফস্বল শহরে এখনো আছে।
তবে সমাজের একটি শ্রেণি এই উদযাপনের অভ্যাস থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তাদের এখন আর ঘরে ফেরা হয় না। তারা আর ঘরে ফিরতে চান না। ঘরে ফিরলেই যে শ্রেণিতে লম্ফ দিয়ে উঠতে চান, সেখান থেকে লম্ফনে তাদের পতন হতে পারে। উৎসবে উড়াল দেওয়া ছাড়া তাদের জাত রক্ষা অসম্ভব প্রায়।
এই শ্রেণিটিরই আবার জাত রক্ষা বা বিশেষ জাতে ওঠোর জন্য দেশীয় পণ্যে অরুচি। উৎসবের ছুঁতোতে লন্ডন, ব্যাংকক, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং ভারতের বাজারে তারা হুমড়ি খেয়ে পড়েন। রমজানের চাঁদ দেখা দেওয়ার আগেই বিদেশের বাজার তাদের দখলে। উড়োজাহাজ ভর্তি থান কাপড়, শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, গাউন,পাঞ্জাবি, জুতো এবং অলঙ্কার নিয়ে দেশে ফেরেন তারা। আজকাল কেউ কেউ নিজের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আত্মীয়-প্রতিবেশির কাছে বেচা-বিক্রির জন্য কিছু বাড়তিও নিয়ে আসেন। গত এক-দুই বছরে আমরা অনলাইনে সেই বাণিজ্য দেখতে পাচ্ছি। যারা বিদেশ উড়ে যেতে পারেননি, সেই ক্রেতাদেরও একটি বড় অংশ বিদেশি ট্যাগ দেখে পণ্য কেনেন। দাম এবং গুন যাই হোক না কেন। বিশেষ করে পাকিস্তানি ও ভারতীয় কাপড়ের ভোক্তা বেশি। এখন শুনছি আতর, টুপি, জায়নামাজের বিদেশি ট্যাগেরই বেশি কদর।

গণমাধ্যমে শোনা যাচ্ছে দেশের লাখ তিনেক ক্রেতা বিদেশ থেকে বাজার করে নিয়ে আসায় ঢাকা-চট্টগ্রাম-খুলনা-রাজশাহী এবং সিলেটের অভিজাত দোকান প্রায় ক্রেতা শূন্য। ক্রেতাদের সাফাই- দেশীয় বিপণী বিতানে  কয়েক গুণ বেশি দাম নেওয়া হয়।ওই টাকায় বিদেশ ঘুরে দেখা এবং কেনাকাটা দুটোই নাকি হয়ে যায়। ক্রেতাদের এই অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়ার নয়। আমাদের ব্যবসায়ী শ্রেণি দুই ঈদ এবং পূঁজোকে পুঁজি করে সারা বছরের লাভ সিন্দুকে ভরে ফেলতে চান। ব্যবসায়ীদের এই মানসিকতা যেমন সত্য, তেমনি সত্য দেশে এখন অনেক উন্নতমানের পোশাক, জুতা তৈরি হচ্ছে। যা বিদেশি পণ্যের  সমতুল্য। কিন্তু একটি শ্রেণির দেশীয় পণ্যের প্রতি উন্নাসিকতা এবং বিদেশি পণ্য ব্যবহারই উঁচুতলায় উত্তরণের টিকেট, এই ভ্রান্ত ধারণটিই আমাদের উৎসবের বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আমাদের উৎসবের টাকা চলে যাচ্ছে ভিন্ন দেশের ব্যবসায়ীর ক্যাশবাক্সে।

উৎসবের খাবারেও ফিউশন এসে গেছে। মা-খালাদের তৈরি সেমাই ‘জদ্দার’ সঙ্গে মোঘল, পশ্চিম এবং পূবের রান্না পদ্ধতির মিশ্রণ ঘটেছে। অন্যান্য পদের বেলাতেও তাই। গ্রামে এখনও এই মিশ্রণ প্রবেশ করেনি। নিম্নবিত্ত তার খাবারের অভ্যাস পাল্টাতে পারেনি। তবে তার কাছে উচ্চ ও মধ্যবিত্তের একই রুচির বিনোদন সহজগম্য হয়েছে। সকল শ্রেণি টিভিতে ইচ্ছে করলেই একই ধরনের অনুষ্ঠান দেখতে পাচ্ছে। ঈদ উৎসবে দেশের চ্যানেলগুলো নানা প্রকারের অনুষ্ঠান তৈরি করছে প্রতিবার এবারও করছে। অনুষ্ঠানের গুণগতমান গড়পড়তা হলেও, ভালো মান এবং যত্নে তৈরি অনুষ্ঠানও রয়েছে বেশকিছু। তারপরও নির্মাতাদের বুক দুরু দুরু। দর্শকরা থাকবেন তো তাদের সঙ্গে। কারণ কোনও দেশীয় চ্যানেলের কোনও অনুষ্ঠানের সময়ে ভারতের কোন চ্যানেলে কী সিরিয়াল বা রিয়েলিটি শো পড়ে যায় বলা মুশকিল। তখন ভারতের চ্যানেলই দর্শক টেনে নিবে। বড় পদা’য় কোন ছবি মুক্তি পাবে? সেখানেও ভারতীয় নায়ক- নায়িকাদের মজবুত খুঁটি। দেশের নায়ক-নায়িকা সেখানে ‘ভাত’ নাই।

ঈদের ঘুরাঘুরিতেও বদল এসেছে। আগে আত্মিয় পরিজনের সঙ্গে সময় কাটানোটাই ছিল মূল আকর্ষণ। এখন সময় কাটে কফি শপে। সিনেপ্লেক্স-ফুডকোর্টে। কেউ কেউ চলে যান শহরের আশপাশের রিসোর্টে। পশ্চিমে নাকি লোকে এভাবেই উৎসবে সময় কাটায়। এমন করে সময় না কাটালে করপোরেট রাজ্যের প্রজা বা উজির হওয়া যায় না। তাই গত কয়েক বছর উৎসব উদযাপনের এই চর্চা চলছে। তবে সুখের কখা, আনন্দের কথা হলো কতিপয় সংশয়ে নিমজ্জিত মানুষই পূর্ব-পশ্চিমের অনুকরনে উৎসবের নতুন অভ্যাসে অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্টায়। বাকিরা কিন্তু গ্রাম-শহর, নগরে আগের মতোই মেতে উঠছে উৎসবে। প্রিয়জন, প্রিয়বন্ধুকে জড়িয়ে কাটে তাদের আনন্দ সময়। এবারের ঈদ আনন্দে যারা সেই সনাতন অভ্যাসের সঙ্গে আছেন তাদের অভিনন্দন। বাকিদের পুরাতনে ফিরে আসার অপেক্ষায় স্বাগতম।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ক্ষতচিহ্নিত হাড়মাংস অথবা নিছকই আত্মজনের কথা
ক্ষতচিহ্নিত হাড়মাংস অথবা নিছকই আত্মজনের কথা
পার্বত্য তিন উপজেলার ভোট স্থগিত
পার্বত্য তিন উপজেলার ভোট স্থগিত
কৃষিজমির উপরিভাগ কাটার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ
কৃষিজমির উপরিভাগ কাটার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ
রাজধানীর শ্যামবাজার ঘাটে লঞ্চে আগুন
রাজধানীর শ্যামবাজার ঘাটে লঞ্চে আগুন
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ