X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঈদের দিনে রাজনীতি

বিভুরঞ্জন সরকার
২৯ জুন ২০১৭, ১৭:৪৯আপডেট : ০১ জুলাই ২০১৭, ১৩:১৭



বিভুরঞ্জন সরকার বড় ধরনের কোনও অঘটন ছাড়াই এবার সারা দেশে ঈদ উদযাপন হয়েছে। হাওর অঞ্চল এবং রাঙামাটিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত কারণে মানুষ উৎসবের মুডে না থাকলেও সরকার তাদের পাশে দাঁড়ানোয় তারা ঈদ আয়োজনের বাইরে ছিলেন না। দেশগ্রামে যেতে কিছু পথকষ্ট হয়েছে, জট, ধীর গতির বিড়ম্বনায় ভোগান্তি পোহাতে হলেও মানুষ খুশী। আনন্দিত। ঈদের দিন দেশের প্রধান দুই নেত্রী জমকালো আয়োজনে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি বিদেশি কূটনীতিক, গণ্যমান্য অতিথি, দলের নেতৃবৃন্দ, মন্ত্রী, এমপি সমর্থকসহ বিপুল সংখ্যক মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন গণভবনে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন হাসিখুশি, প্রাণবন্ত, উচ্ছল,একেবারেই উৎসবের মেজাজে।
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া একইভাবে শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য উপস্থিত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। তিনি ছিলেন যথারীতি গম্ভীর এবং আড়ষ্ঠ। তিনি গাম্ভীর্য বজায় রাখতেই হয়তো বেশি পছন্দ করেন। খালেদা জিয়ার অনুষ্ঠানেও বিপুল জনসমাগম হয়েছিল। পরিবেশও ছিল উৎসব ও আনন্দ মুখর। কর্মীসমর্থকরা খালেদা জিয়াকে খুব একটা কাছে পায় না। ঈদের দিন নেত্রীকে কাছে পেয়ে তারাও ছিলেন উদ্বেলিত। শুভেচ্ছা বিনিময়কালে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি রাজনীতি করলেন এবং সেটা বিদ্বিষ্ট রাজনীতি। রাজনীতিতে অসত্য ভাষণ কোনও বিরল বিষয় না হলেও ঈদের দিন মানুষ খালেদা জিয়ার মতো বড় মাপের একজন নেত্রীর কাছে বিদ্বিষ্ট বক্তব্য আশা করেননি।
খালেদা জিয়া সরকারের সমালোচনা করে অনেক কথা বলেছেন। সেটা বিরোধী দলে থেকে তিনি বলতেই পারেন। মানুষ তাতে অস্বাভাবিকতা দেখে না। কিন্তু তিনি যখন বলেন দেশের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে ঈদ পালন করতে পারেননি বলে মন্তব্য করেন তখন তা কি মেনে নেওয়া যায়? মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে আনন্দঘন পরিবেশে ঈদ উদযাপন করেছে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উল্লেখ করেছিলেন বলেই কি খালেদা জিয়া উল্টো কথা বললেন? কিন্তু তার কেন মনে হলো মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে ঈদ পালন করতে পারেনি? কোথায় তিনি অশান্তি দেখলেন? মানুষ যদি কষ্টে থেকে থাকে তাহলে দেশ জুড়ে এতো আনন্দন উচ্ছাস হলো কিভাবে? অভাব অনটন যদি প্রবল হবে তাহলে মানুষ এতো কেনাকাটা করলো কিভাবে? হাজার হাজার কোটি টাকার ঈদবাণিজ্য হলো কিভাবে? এখন কেউ যদি বলে যে বিএনপি নেত্রীর নিজের মনে শান্তি নেই বলে কোথাও শান্তি দেখতে পারছেন না, তাহলে কি তাকে দোষ দেওয়া যাবে? পবিত্র ঈদের দিনেও মিথ্যাচারের রাজনীতি করাটা শোভন হয়েছে কি না, সে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। এবার ঈদের আগে চালসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় মানুষের মনে কিছু অসন্তোষ দেখা দিলেও ঈদ উৎসব তাতে ভাটা পড়েনি। খালেদা জিয়া শুধু মূল্য বৃদ্ধি দেখেন, মানুষের যে আয়ও বেড়েছে সেটা স্বীকার করতে চান না। সব কিছুতে না বলার রাজনীতি তিনি পরিহার না করলে তার সামনে থেকে কঠিন সময় দূর হবে না। তিনি ঈদ শুভেচ্ছা অনুষ্ঠানে বলেছেন, গত দশ বছরে সরকার অনেক দুর্নীতি লুটপাট গুমখুন করেছে। তিনি যদি সরকারকে শুধু অভিযুক্ত না করে এটাও বলতেন যে, বিএনপি পাওয়ারে গেলে দেশে কোনও দুর্নীতি হবে না, লুটপাট হবে না, কেউ গুম হবে না বিনা বিচারে অন্যায় ভাবে কাউকে খুন করা হবে না- তাহলে মানুষ বেশি খুশি হতো। কারণ মানুষ দুর্নীতি লুটপাট গুমখুন কিছুই পছন্দ করে না। খালেদা জিয়া এসব ব্যাপারে অঙ্গীকারমূলক কোনও বক্তব্য রাখেন না। কারণ তিনি গদিওয়ালা বদল চান, অবস্থা বদলানোর ইচ্ছা তার নেই। বর্তমান সরকারে থেকে অনেকে দুর্নীতি লুটপাট করছে, খালেদা মসনদ পেলে তখন তার বাহিনী ঝাপিয়ে পড়বে।
খালেদা জিয়াকে ‘না’ এর রাজনীতি থেকে ‘হা’ এর রাজনীতিতে ফিরতে হবে। দেশের মানুষ চোখে দেখবেন একটা আর খালেদা জিয়া দেখাবেন আরেকটা, তাহলে পালা বদলের ডাকে মানুষ সাড়া দেবে কেন? খালেদা জিয়াকে বুঝতে হবে তার আন্দোলন কেন বার বার ব্যর্থ হয়? আত্মজিজ্ঞাসার মুখোমুখি না অগ্রসর হওয়ার পথ খুঁজে পাওয়া যাবে না।
ঈদের দিনের রাজনীতিতে খালেদা জিয়া তার ব্যাংক ব্যালেন্স বাড়াতে পারেননি। তবে ব্যাংকের গচ্ছিত পুঁজি ভাঙিয়ে কত দিন তিনি চলতে পারবেন সে প্রশ্ন উঠতেই পারে। ঈদের দিন গত হয়েছে। ঈদের পরের রাজনীতি তাকে কোথায় পৌঁছায় সেটাই দেখার বিষয়। ঈদের পর সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কথা তিনি বলেছেন। আগেও বহুবার তিনি আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন। ফলাফল সবারই জানা। এবারের হুমকির পরিণতি কি হয়, দেখা যাক।
লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ