X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

নিয়ম ভেঙে ইংরেজি শেখা

নাহিয়ান আসাদুল্লাহ
১২ জুলাই ২০১৭, ১৮:২১আপডেট : ১২ জুলাই ২০১৭, ১৮:২৪

নাহিয়ান আসাদুল্লাহ গত ৭ জুলাই ঢাকা ট্রিবিউনের মতামত পাতায় একটি দুর্দান্ত নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। এর শিরোনাম ছিল ‘বাংলাদেশ কি ইংরেজি ভাষা শিখতে ব্যর্থ?’ (ইজ ইংলিশ ফেইলড ল্যাংগুয়েজ ইন বাংলাদেশ?)
নিবন্ধের রচয়িতা একদিকে যেমন দক্ষতার সঙ্গে ইংরেজি ভাষার স্থানিক ও আন্তর্জাতিক গুরুত্ব তুলে ধরেছেন, অন্যদিকে তেমনি এই ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতাগুলো কী, তাও তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। তিনি  বলতে চেয়েছেন, বাংলাদেশে ইংরেজি ভাষার অবস্থা এতটাই দুর্বল যে বেশিরভাগ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী কলেজে ভর্তি হয়ে হিমশিম খাওয়া শুরু করেন এবং কলেজ পর্ব শেষ হওয়ার পর তাদের ইংরেজি শিক্ষায় ইতি টানেন।
জনাব কবির ঠিক কোন জায়গা থেকে কথাগুলো বলেছেন তা আমি পুরোপুরি বুঝতে পারছি এবং সহমত পোষণ করছি। তবে ওই নিবন্ধটিতে ইংরেজি শিক্ষা নিয়ে হিমশিম খাওয়া মানুষদের জন্য কোনও ধরনের প্রায়োগিক পরামর্শ দেওয়ার সুযোগ হয়নি লেখকের। আর তাই, স্থানীয় বড় একটি প্রতিষ্ঠানের ইংরেজি ভাষা এবং যোগাযোগের পেশাদার প্রশিক্ষক হিসেবে আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতাকে সঙ্গী করে আমি কিছু পরামর্শ দিতে চাই। আমি যেমন ব্যক্তিগতভাবে সেগুলোর মাধ্যমে উপকৃত হয়েছি, তেমনি কর্মক্ষেত্রে আমি যাদের সহযোগিতা করছি তারাও উপকৃত হচ্ছেন।

স্কুল ভুলে যান এবং নিজস্ব শিক্ষা শুরু করুন

আমি মনে করি বাংলাদেশে ইংরেজি শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যাগুলোর একটি মাধ্যমিকের শিক্ষা পদ্ধতি। আপনারা জানলে উদ্বিগ্ন হবেন, দেশের শীর্ষস্থানীয় স্কুলগুলো (বেশিরভাগ বাংলা মিডিয়াম স্কুল) অপেক্ষাকৃত কম নামীদামি স্কুলের চেয়ে ভিন্ন কিছু নয়।
আমি একবার ঢাকার একটি ভালো বাংলা মিডিয়াম স্কুলে গিয়েছিলাম। সত্যি কথা বলতে, ওই স্কুলের চলমান পদ্ধতির সঙ্গে আমার শিক্ষণ পদ্ধতি সঙ্গতি রচনা করতে পারেনি, আর তাই আমার ক্লাস শিক্ষার্থীদের খুব একটা কার্যকরও হয়নি।
প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে কলেজ পর্যন্ত আমি সবসময় দেখেছি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদেরকে ইংরেজি ব্যাকরণ শিখতে বাধ্য করার চেষ্টা করেন। আর যখনই আপনি কাউকে কিছু শিখতে বাধ্য করার চেষ্টা করবেন, তারা তখন শেখার মানসিকতা হারিয়ে ফেলবে। হয় তারা শেখাই বন্ধ করে দেবে অথবা ভালোভাবে শিখবে না। এমনটা করলে শিক্ষার্থীদের মনের গভীরে এই বিশ্বাস জন্মাবে যে, একঘেয়ে ব্যাকরণ শেখা ছাড়া ইংরেজি শেখার বিকল্প কোনও পথ নেই।

আপনাদের আশ্বস্ত করে বলছি, ইংরেজি ভাষা কঠিন কিংবা একঘেয়ে নয়।

প্রকৃতপক্ষে ইংরেজি শিক্ষা আপনার ধারণার চেয়ে অনেক বেশি সহজ। বলার ক্ষেত্রে এটি একটি সুন্দর ও সোজাসাপ্টা ভাষা। ইংরেজি ভাষার আন্তর্জাতিক যোগাযোগের হাতিয়ার হওয়ার যথার্থ কারণও এটি। প্রকৃতপক্ষে ছাত্রজীবনে স্কুল শিক্ষকদের ওপর নির্ভর করাটা ইংরেজি ভাষা শেখার ক্ষেত্রে কার্যকরী হয় না। আপনি মূলধারার শিক্ষা পদ্ধতিতে চেষ্টা করেছেন এবং আপনিই দেখতে পাচ্ছেন তা আদৌ কোনও কাজে এসেছে কিনা।

ভালোভাবে ইংরেজি শেখার সর্বোত্তম উপায় হলো নিয়ম ভাঙা। ব্যাকরণ ও পাঠ্যবইয়ের কথা ভুলে যান। আর ডুবে যান ইংরেজির মধ্যে। ভাষাটিকে হতে দিন আপনার সেরা বন্ধু।

শিশুর মতো শিখুন  

আপনারা সবসময় শুনে থাকবেন, শিশুরা কেবল ভালো শিক্ষার্থীই নয়, তারা দ্রুত শিখতেও সক্ষম। তো বেশ, এটা হতে পারে। কারণ, শিশুদের দৈনন্দিন কাজকর্মের ঝক্কি-ঝামেলা নিয়ে ভাবতে হয় না; সেকারণে তাদের মন সক্রিয় থাকে। হ্যাঁ, এটা সত্য। কারণ তারা শেখার প্রক্রিয়া উপভোগ করে এবং তারা ভুল করলে উপহাসের পাত্র হওয়ার ভয় করে না।

বড়রা অবশ্য সেই ভয় কাটাতে পারে না। কেন? কারণ তারা এমনভাবে ইংরেজি শেখার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে যা আনন্দের নয়। ওই পদ্ধতিতে ইংরেজি শেখার ক্ষেত্রে ভুলকে ক্ষমাহীন অপরাধ বিবেচনা করা হয়।

আমাদের মতো দুর্ভাগা প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে বদ অভ্যাস ভাঙাটা পুরোপুরি এক চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে শিশুদের ভাঙা কিংবা শুরু করার মতো এমন কোনও অভ্যাস থাকে না। তাহলে, শিশুরা কিভাবে ভাষা শিখতে পারে?  তারা মূলত দেখে ও শুনে শিখে থাকে। আপনার প্রাত্যহিক শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় প্রথমত যে পরিবর্তনটি আনতে হবে তা হলো চোখ দিয়ে শেখা বাদ দিতে হবে। আগে শুনতে হবে।
নিশ্চিতভাবে শোনার পাশাপাশি পড়ার ব্যাপারটাও থাকবে। তবে শোনার বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। শোনার পাশাপাশিও আপনি পড়তে পারেন। এভাবে দুই ধরনের শিক্ষা পদ্ধতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে আপনি আপনার শিক্ষা প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করতে পারছেন।

বার বার করা

এটি এই নিবন্ধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অবশ্যই আপনারা এর নোট নিয়ে রাখবেন। দেখুন, ভাষা শেখার ক্ষেত্রে পড়া ও শোনার গুরুত্ব আপনাদের অনেকের কাছে কোনও খবর নয়। তবে আমরা এ কাজে কত ঘণ্টা সময় খরচ করছি তার মধ্য দিয়ে পাঠ ও শ্রবণের বিষয়টি দৃঢ় হয়। মনের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভাষাকে সংরক্ষণ করে রাখার জন্য আপনাকে দুর্বোধ্য কোনও মন্ত্র পাঠ করতে হবে না। আপনি যদি সত্যিই ইংরেজি শিখতে চান এবং সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে কঠোর পরিশ্রমে আগ্রহী হোন তবে বলবো এটি খুবই সহজ বিষয়। ইংরেজি শেখার গোপন রহস্যই হোক কিংবা অন্য যেকোনও ভাষা শেখার প্রশ্নই হোক তা গভীরভাবে শিখতে হবে।

ইংরেজি শেখার ক্ষেত্রে অন্য কোনও নির্ভরযোগ্য বিকল্প নেই। তবে হ্যাঁ, নির্দিষ্ট ভাষায় সিনেমা ও টেলিভিশন অনুষ্ঠান দেখার মধ্য দিয়ে উপকৃত হওয়া যায়। সাহিত্য ও বই পাঠ এবং পডকাস্ট ও বিবিসি রেডিও শোনার মধ্য দিয়েও নিজেকে সমৃদ্ধ করা যায়।

তবে বার বার মনোযোগ না দিলে এগুলোও কোনও কাজে আসবে না। আপনি যদি মনে করেন, কেবল একবার পডকাস্ট শুনে কিংবা কিংবা ম্যুভি দেখেই সবকিছু একবারে আয়ত্ত্বে নিয়ে আসবেন তবে বলবো আপনি ভুল।

আপনি সবসময় সে উপকরণগুলো (ম্যুভি, বই, অডিও) বেছে নেবেন যেগুলোতে আপনার আগ্রহ আছে। আমেরিকান ভাষাতাত্ত্বিক স্টিফেন ক্রাশেনের আই প্লাস ওয়ান থিওরি অনুযায়ী, এখন আপনি যে পর্যায়ে আছেন তার চেয়ে সামান্য কঠিন করে আনাকে ভাষা শেখার উপকরণগুলোকে আয়ত্তে আনতে হবে।

সুতরাং, আপনি যদি একটি অডিও শোনেন, তবে আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যে এর শুরু থেকে ৮০-৮৫ ভাগ বিষয়বস্তু আপনি বুঝেছেন। এ প্রক্রিয়ায় আপনি সহজে ওই ভাষার নতুন নতুন শব্দ ও ব্যাকরণগুলো গ্রহণ করতে পারবেন। আপনার বিদ্যমান জ্ঞান দিয়েই আপনি বাকিটুকু ঠিক করে নিতে পারবেন।

ইংরেজিতে মগ্ন থাকা

সবশেষ কথা হলো, আপনি কিভাবে অনুপ্রাণিত থাকবেন?আমি মনে করি শেখার ক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে কঠিন অংশ। আপনার প্রতি আমার পরামর্শ হলো, একটু বেশি করে ইংরেজি নিয়েই ভাবুন। একে বড় কাজ মনে করবেন না। কেউ তো আপনাকে আজই ইংরেজির গুরু হয়ে যেতে বলছে না! তবে আপনি যা শিখছেন, তা নিয়ে তো আপনার  মগ্ন থাকাই উচিত।

কাজ চালানোর মতো করে চর্চা করুন, একসময়  দক্ষ হবেন

ইংরেজিতে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার পথ আপনি ভালোভাবে পাড়ি দিতে পারবেন। যতক্ষণ আপনি চেষ্টা চালিয়ে যাবেন ততক্ষণ পযর্ন্ত হতাশ হবেন না। সুতরাং, ইংরেজিতে পারদর্শিতা না আসলেও দক্ষদের মতো করেই আত্মবিশ্বাসের সুরে আপনি কথা বলুন।

লেখক: করপোরেট ট্রেইনার অব ইংলিশ অ্যান্ড বিজনেস কমিউনিকেশন

 

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
দুই জনপ্রতিনিধির নাম বলে সাভারে সাংবাদিকের ওপর কেমিক্যাল নিক্ষেপ
দুই জনপ্রতিনিধির নাম বলে সাভারে সাংবাদিকের ওপর কেমিক্যাল নিক্ষেপ
দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে যা বললেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ
দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে যা বললেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ
গরমে পুড়ছে খুলনা বিভাগ
গরমে পুড়ছে খুলনা বিভাগ
দোকান থেকেই বছরে ২ লাখ কোটি টাকার ভ্যাট আদায় সম্ভব
দোকান থেকেই বছরে ২ লাখ কোটি টাকার ভ্যাট আদায় সম্ভব
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ