X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচন হবে কিন্তু কেমন?

বিভুরঞ্জন সরকার
১৪ জুলাই ২০১৭, ১১:১৬আপডেট : ১৭ জুলাই ২০১৭, ১৬:১৬

বিভুরঞ্জন সরকার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়া না হওয়া নিয়ে দেশের মানুষের মনে নানা কারণে এক ধরনের সংশয় তৈরি হয়েছে। প্রধান দুই রাজনৈতিক দল – আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ অনেক সরাসরি। আর বিএনপি কৌশলের আশ্রয় নিয়ে। আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনে অংশ নেবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে এবং আরেক বার ক্ষমতায় যেতে চায়। দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটা স্পষ্ট করেই বলেছেন যে,  তিনি ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী এবং তারপরের বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করতে চান আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখে। তার মানে আগামী নির্বাচনে জয় ভিন্ন অন্য কিছু আওয়ামী লীগ ভাবছে না। আওয়ামী লীগ যদি জয় ভিন্ন অন্য কিছু না ভাবে তাহলে সে নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কেন? বিএনপি লম্বা সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে আছে। ক্ষমতাহীনতার জ্বালা দলটির নেতাকর্মীদের তীব্র ভাবে দহন করছে। তাই আগামী নির্বাচনে জয়লাভের সম্ভাবনা উজ্জ্বল না দেখলে তারা নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে অনীহা দেখাবে – এটাইতো স্বাভাবিক। সে জন্যই নির্বাচন নিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতারা নানা ধরনের কথা বলছেন। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। আওয়ামী লীগ কী যেনতেন উপায়ে জয় চায়, নাকি একটি মোটামুটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়া নিশ্চিত করতে চায়– দেখেবুঝেই নির্বাচনের সিদ্ধান্ত ফাইনাল করতে চায় বিএনপি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি এক সভায় বলেছেন, বিএনপি অবশ্যই নির্বাচন করবে। কিন্তু তা অবশ্যই নির্দলীয় সরকারের অধীনে হতে হবে। নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। বিএনপিকে কারাগারে রেখে এদেশে আর কোনও একদলীয় নির্বাচন হবে না। আমাদের আদালতের বারান্দায় ঘোরাঘুরি করাবেন, কারাগারে বন্দি রাখবেন, জনগণের ভোট লুট করে আবারো ক্ষমতায় আসবেন – সে স্বপ্ন ভুলে যান।
পাঠক, একটু মনোযোগ দিয়ে মির্জা সাহেবের বক্তব্য পাঠ করুন। বিএনপি নির্বাচন ‘অবশ্যই’ করবে। কিন্তু সেটা ‘অবশ্যই’ শর্ত পূরণসাপেক্ষে। মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন হলো, বিএনপির এসব শর্ত পূরণ হবে কি? নির্দলীয় বা সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়ার মিনিমাম কোনও সম্ভাবনা দেশে বিরাজ করছে না। সরকার তথা আওয়ামী লীগের এ বিষয়ে অবস্থান অত্যন্ত দৃঢ়। আগের নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের দাবিতে বিএনপি-জামায়াত জোট দেশে ভয়াবহ এক সহিংস আন্দোলন শুরু করছিল। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত যা করেছিল তা নজিরবিহীন। সরকারবিরোধী আন্দোলনে এত মানুষের জীবন ও সম্পদ ধ্বংস আগে কখনও হয়নি। সর্বশক্তি প্রয়োগ করেও আন্দোলনে সফল হয়নি বিএনপি-জামায়াত। তার প্রধান কারণ ওই আন্দোলনে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নামেনি। এমনকি ২০ দলীয় জোটের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও সবাই সমান সক্রিয় হয়নি। কিছু সন্ত্রাসী পেটোয়া বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে কখনও গণআন্দোলন করা যায় না। বিএনপি- জামায়াতের অবশ্য এটা জানারও কথা না।

গতবার যেখানে সরকারকে নত করতে পারেনি, বিদেশি মুরব্বিরা দৌড়ঝাপ করেও কোনও লাভ হয়নি, এবার সেখানে বিএনপি কিভাবে আশা করছে যে, তাদের দাবিমতো সহায়ক বা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে? পরবর্তী নির্বাচন যে শেখ হাসিনার সরকারের অধীনেই হবে – এটা নিয়ে সংশয় প্রকাশের কোনও যুক্তিগত কারণ এখনও দৃশ্যমান নয়। বিএনপি জোর করে শেখ হাসিনার কাছ থেকে কোনও দাবি আদায় করতে পারবে না। রাজনীতিতে পরাজিত পক্ষ কখনও সুবিধাজনক অবস্থায় থাকে না। বিএনপি রাজনীতির পরাজিত পক্ষ। এই কথাটা অনেকেই হয়তো মেনে নিতে চাইবেন না। কিন্তু এটাই বাস্তব, এটাই সত্য। বিএনপি ফেলনা দল নয়, বিএনপির জনসমর্থন আছে, বিএনপির বিশেষ ভোট ব্যাংক আছে – সব সত্য। কিন্তু রাজনীতিটা একটি কৌশলের খেলা। রাজনীতির এই কৌশলের খেলায় আওয়ামী লীগবিরোধী রাজনীতির নেত্রী খালেদা জিয়ার চেয়ে আওয়ামী ধারার রাজনীতির নেত্রী শেখ হাসিনা এগিয়ে আছেন। তিনি জয়ী হয়েছেন। খালেদা জিয়া হয়েছেন পরাজিত। এই বাস্তবতা বিবেচনার বাইরে রেখে রাজনীতির ময়দানে দৌড় শুরু করা অনর্থক নয় কি?

বিএনপি মহাসচিব এবং অন্য নেতারা গলাবাজি করে দলীয় কর্মীদের হয়তো কিছুটা চাঙ্গা করতে পারবেন কিন্তু সাধারণ মানুষ এসব ফাঁকা কথায় আস্থা রাখবে না। কারণ মানুষ বারবার দেখছে, খালেদা জিয়া যা বলেন তা করতে পারেন না। অন্য দিকে শেখ হাসিনা তার কথা রাখতে, অঙ্গীকার পূরণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বাংলাদেশের মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে- সেটা কয়জন বিশ্বাস করেছিলেন? ২০১৪ সালের নির্বাচন গণতান্ত্রিক নির্বাচনপদ্ধতির সংজ্ঞা অনুযায়ী হয়নি। এটা নিয়ে আমাদের অনেকেরই দুশ্চিন্তায় ঘুম হারাম হওয়ার জোগাড়। বিদেশিদেরও কারো কারো কান্নাকাটির শেষ নেই। কিন্তু ওই নির্বাচনটি কেন অমন ত্রুটিপূর্ণ হলো, একতরফা হলো এবং ওই নির্বাচনটি যদি আদৌ না হতো তাহলে কী হতো সেটা অনেকে বলেন না। গণতন্ত্রহীনতার চেয়ে মন্দ গণতন্ত্রও যে ভালো এটা মানতে আমাদের অনেকেরই কষ্ট হয়। আমাদের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর চিন্তার মধ্যে একটা বড় ধরনের গলদ আছে। আওয়ামী লীগের কাছে তারা শুধু ভালোটা আশা করেন। বিএনপির দোষত্রুটি ক্ষমারযোগ্য। আওয়ামী লীগেরটা নয়। এ নিয়ে প্রশ্ন তুললে রেডিমেড জবাব দেবেন, বিএনপির কাছেতো আমরা খুব বেশি কিছু আশা করি না। আওয়ামী লীগের কাছে আমাদের প্রত্যাশা বেশি আসলে এটা একটা ধাপ্পাবাজি। তারা ভুলে যান যে, আওয়ামী লীগও একটি রাজনৈতিক দল এবং বিএনপির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে হয়। যে কোনও ক্ষেত্রেই এটা সত্য যে ভালোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করলে ভালো হওয়ার প্রবণতা বাড়ে। আবার খারাপের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করলে খারাপ হওয়ার লক্ষ্মণ আড়ালে থাকে না। আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী যখন ছিল কমিউনিস্ট পার্টি তখন আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রগতিশীলতার ঝোঁক বেড়েছিল, কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী যখন বিএনপি তখন ডানের দিকে হেলে পড়াটাই স্বাভাবিক।

এসব আলোচনা অনেকের কাছেই ভালো না লাগতে পারে। আমরা হয় পক্ষে, নয়তো বিপক্ষে। মাঝামাঝি কিছু নেই। কিন্তু রাজনীনিতে টিকে থাকতে হলে বিএনপিক এবার কৌশল বদলাতে হবে। সরকার যদি সত্যি জনগণের ভোট লুট করে ক্ষমতায় থাকার পরিকল্পনা করে থাকে তাহলে তা বানচাল করার রাজনৈতিক উপায় হলো নির্বাচনে অংশ নেওয়া। নির্বাচন থেকে নানা অজুহাতে দূরে থাকলে সরকারের পরিকল্পনাকেই এগিয়ে নেওয়া হবে। সবাই মিলে নির্বাচনি লড়াইয়ে নামলে সরকার যে ভাবনাই ভাবুক না কেন তা ভাবনাই থেকে যাবে। এবারের নির্বাচনে জনগণ যদি বিএনপিকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনে তাহলে তো ভালোই, আর যদি তা নাও আনে তাহলেও ভালো। মানুষের সঙ্গে বিএনপির যে দূরত্ব তৈরি হয়েছ তা কাটিয়ে উঠতে পারাও কম রাজনৈতিক সাফল্য নয় কি? 

 

লেখক: কলামিস্ট

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায় চীন ও ইন্দোনেশিয়া
আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায় চীন ও ইন্দোনেশিয়া
প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
রিয়ালের মধুর প্রতিশোধে গর্বিত আনচেলত্তি 
রিয়ালের মধুর প্রতিশোধে গর্বিত আনচেলত্তি 
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ