X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনীতিতে ‘সরি’!

নজরুল কবীর
১৯ জুলাই ২০১৭, ১৩:২৭আপডেট : ১৯ জুলাই ২০১৭, ১৩:৩০

নজরুল কবীর হঠাৎ রাস্তায় চলতে গিয়ে গায়ে ধাক্কা লাগলো, ‘সরি’। পেছন থেকে পরিচিত কেউ মনে করে, দেখা গেলো কাঙ্ক্ষিত জন নয়, বললেন ‘সরি’। এই শব্দটি আমরা প্রতিদিনকার যাপনযোগ্য জীবনে অহরহ প্রয়োগ করে থাকি। কিন্তু এই একটি শব্দ আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে প্রায় বিরল প্রসঙ্গ। তবে সম্প্রতি পরপর দুটি আশাব্যঞ্জক ঘটনা ঘটেছে। তাই এই লেখার সূত্রপাত।
সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক এক সংবাদ সম্মেলনে প্রসঙ্গক্রমে বলেছিলেন, তিনি নাগরিকদের বাড়িতে গিয়ে মশারি টাঙানোর দায়িত্ব নিতে পারবেন না। তার এ মন্তব্যে অনেকেই ক্ষুব্ধ হন। সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। দেশের বিশিষ্টজনরা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। এর ২৪ ঘণ্টা পরই ঘটে আসল ঘটনা। মশা মারার কর্মসূচি পালনের উদ্বোধন করেন মেয়র আনিসুল হক, সাংবাদিকদের মাধ্যমে তার মন্তব্যের জন্য ‘সরি’ হন বা দুঃখ প্রকাশ করেন। নগরবাসী কিছুটা চমকালেও খুশী হন। মুহূর্তেই ভুলে যান আগের ক্ষত।
আরেকটি ঘটনা। এটা সচিবালয়ে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের দাফতরিক কার্যালয়। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’(নিসচা) সংগঠনের পক্ষ থেকে মন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাতে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতুত্বে বিশিষ্টজনরা গেছেন। কারণ, সরকার ২২ অক্টোবরকে ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’ ঘোষণা করেছে সম্প্রতি। এই দাবিটি বাস্তবায়নে অনেকদিন থেকেই ‘নিসচা’ আন্দোলন করছিলো। মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তখন তাদেরকে বলেন, প্রায় প্রতিদিন কোনও না কোনও সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে। হতাহতের ঘটনা ঘটছে। মন্ত্রী হিসেবে আমি তা বন্ধ করতে পারছি না পুরোপুরি। এটা আমার জন্য লজ্জার, কষ্টের। এজন্য আমি ‘দুঃখিত’।
এই যে দুটো ঘটনার কথা উল্লেখ করলাম, এটা আমাদের রাজনীতিকদের জীবনে সহজ ঘটনা নয়। অথচ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সংস্কৃতিতে এটাই হওয়া স্বাভাবিক । দুটো উদাহরণই আসলো, সরকারি দল থেকে। এবার বর্তমান সংসদের বিরোধী দল থেকে দিই। হ্যাঁ, জাতীয় পার্টির কথা বলছি। এই দলটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ‘স্বৈরাচার” হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদও দুঃখ প্রকাশ করেছে সংসদে দাঁড়িয়ে শহীদ নুর হোসেনের জন্য। ওই হত্যার দায় স্বীকার না করলেও, দ্বিধা করেনি ঘটনার ২০ বছর পর ক্ষমা চাইতে নুর হোসেনের পরিবারের কাছে।

এবার আসি দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি’র কথায়। এই দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রথম ক্ষমতাসীন হওয়ার পর যখন ভারত সফরে যান, সেবার গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে কোনও আলোচনা করেননি। সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করলে তিনি অকপটে বলেন, ভুলে গিয়েছিলাম। প্রতিপক্ষরা এ নিয়ে নানা কথা বললেও, সাধারণ মানুষ তার ভুলকে ক্ষমা করে দেয় স্বীকারোক্তির কারণে। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপারসান সরকারবিরোধী অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে ৯৩ দিন নিজ অফিসে থেকে পরে বাড়িতে চলে গেলেন।  কয়েক’শ মানুষ বাসে আগুনে পুড়ে নিহত হলো। কারও জন্য কোথাও দুঃখ প্রকাশ করলেন না। এমন কী তার কথা অনুযায়ী ওই আন্দোলন এখনও চলমান। কারণ তিনি বা তার দল, ওই কর্মসূচি স্থগিত করেননি।

নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। বিএনপি বলছে, তাদের চেয়ারপারসন লন্ডন থেকে ফেরার পর নির্বাচন কালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা দিয়ে আন্দোলন করবে নতুন করে। তবে তা হবে শান্তিপূর্ণ। মানলাম, কিন্তু যে অশান্ত আন্দোলনে এত মানুষ মারা গেলো তার জন্য কি দেশের এই বড় দলটি একবারের জন্যও ‘সরি’ হবে না? সাধারণ মানুষের মনের চোট যদি না মুছে, তাহলে তো আগামী ভোটের রাজনীতিতে তারাও দলটিকে ‘সরি’ বলে দিলে, দলটির দশা কী হবে তা ভেবে দেখছেন, দলের বর্ষীয়ান ও তরুণ নেতারা?

প্লিজ, একবার ‘সরি’ হতে শিখুন। দেখবেন আখেরে লাভই হবে, ক্ষতি নয়।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
দুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টিদুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ