X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়ার লন্ডন সফর নিয়ে শোরগোল কেন!

আনিস আলমগীর
২৫ জুলাই ২০১৭, ১৪:০২আপডেট : ২৫ জুলাই ২০১৭, ১৪:০৫

আনিস আলমগীর চিকিৎসার কথা বলে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া লন্ডন গিয়েছেন। দীর্ঘদিনব্যাপী তিনি পায়ের রোগে, চোখের রোগে ভুগছেন। যেসব সাংবাদিকরা ওনাকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পান তারা জানেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের মতো নেই। ওনার কাছের লোকেরা বলেন, মুঠো করে ওষুধ খাওয়া দেখলে অনেক সময় মনে হয় তিনি ওষুধের ওপর বেঁচে আছেন। সাম্প্রতিক সময়ে দেখি কারও সাহায্য ছাড়া তার পক্ষে চলাই সম্ভব হচ্ছে না। অনেকে অভিযোগ করেন- তিনি গুলশান ছেড়ে বেরই হন না তাকে দিয়ে কী হবে!
আমার পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, ক্ষমতায় না থাকলে রাজনীতিবিদদের রোগ বেশি থাকে। আবার ক্ষমতায় ফিরে এলে সুস্থ হয়ে যান তারা। রাষ্ট্রের টাকায় হাঁচি কাশির জন্যও তারা বিদেশে চিকিৎসা নেন। বেগম জিয়া এখনও যে সচল আছেন তাও রাষ্ট্র ক্ষমতার মোহে পড়ে। এ নেশা ছুটে গেলে হয়ত তিনি শয্যাশায়ী হয়ে পড়বেন। আবার ক্ষমতায় আসলে সব ঠিক হয়ে যাবে। সুতরাং তার স্বাস্থ্য নিয়ে কথা না বলাই ভালো।
তারপরও খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য সম্পর্কে এতো কথা লিখলাম তার সমালোচকদের জন্যই। উনি লন্ডন যাওয়ার পর থেকে বিএনপি বিরোধীরা যে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন তা খুবই নিম্নমানের সমালোচনা। আওয়ামী লীগের প্রথমসারীর নেতাদের এই সফর নিয়ে নিম্নমানের সমালোচনার দরকার ছিল না। খালেদা জিয়া একজন জনপ্রিয় নেত্রী। তার দল বিএনপি দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। এতো ঝড়ের পরও তার জনপ্রিয়তা কমেনি। সুতরাং তিনি পালাবেন কেন! এ কথাটা আওয়ামী লীগ নেতারা তাকে ছোট করার জন্য বার বার বলতে গিয়ে নিজেদেরকে ছোট করছেন কিনা তা তাদের চিন্তা করা উচিৎ।

বিচারাধীন মামলা সম্পর্কে সাধারণত কেউ কথা বলার চেষ্টা করেন না। আইনের ভাষ্য অনুসারে এটি সাব-জুডিস। খালেদা জিয়ার মামলা হচ্ছে রাষ্ট্র বনাম খালেদা। সুতরাং রায়ের আগে রাষ্ট্রীয় কর্তা ব্যক্তিদের কোনও কিছু বলা সম্পূর্ণ আইনের গতিধারার বিপরীত। আদালত এতে প্রভাবিত হতে পারে। আইন-আদালত, রাজনীতি সব কিছুর বাজার দর এক হওয়া উচিৎ নয়। বেগম জিয়া ১৫০ বার সময়ের প্রার্থনা করে তিনবার বিচারিক আদালতের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে নিজেকে কঠিন মামলাবাজ হিসেবে প্রকাশ করেছেন- এটি অনিস্বীকার্য। এটি আইনকে স্বাভাবিক গতিতে চলার পথে বাঁধা প্রদানের মতো অপকর্ম। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে মামলা পরিসমাপ্ত হওয়ার আগে সরকারের নির্বাক থাকা উচিৎ।

খালেদা জিয়া রাজনীতি করেন এবং রাজনীতিতে সরকারি দলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। সরকার বেশি কথা বললে জনসাধারণ মনে করবে হয়তোবা সরকার জোর করে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। বিএনপি মামলাগুলো মিথ্যা বলছে। তখন মানুষের কাছে তাদের কথা চিন্তা করার অবকাশ সৃষ্টি হবে।

খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরের সঙ্গে চিকিৎসা, পারিবারিক, কূটনৈতিক, দলীয় দ্বিতীয় ব্যক্তির সঙ্গে পরামর্শ- সব কিছুই জড়িত। তার দলে তার উত্তরাধীকারী হচ্ছেন তারেক জিয়া। সুতরাং তার সঙ্গে কোনও ব্যাপক আলোচনা ছাড়া কোনও নিশ্চিত সিদ্ধান্ত নেওয়া তো তার পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ দলের মাঝে এমন কোনও নেতা নেই যাকে বেগম জিয়া পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস করেন। সুতরাং চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছার আগে তার আস্থা ও ভরসাস্থল তারেক জিয়ার সঙ্গে নিশ্চয়ই ব্যাপক আলোচনার প্রয়োজন। সম্ভবতো সে কারণে তার লন্ডন সফর।

চিকিৎসাও কোনও গৌণ ব্যাপার নয়। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে তার ব্যাপক সফরের প্রয়োজন। তার বর্তমান শারীরিক অবস্থা নিয়ে সে সফর সম্ভব নয় বলে মনে হয়। সুতরাং উন্নত চিকিৎসা তো নির্বাচনের আগে খুবই জরুরি। আর আদালতে দু’টি মামলা রায়ের পর্যায়ে এসে উপস্থিত হয়েছে। বেগম জিয়া ১৫০ বার সময় নিয়ে তিন বার আদালতের বিরুদ্ধে অনাস্থা দিয়ে দীর্ঘ ৮ বছর কাটিয়েছেন। এখন তো আর সম্ভব হচ্ছে না।

বেগম জিয়া দুই দুই বার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি তার অভিজ্ঞতা দিয়ে নিশ্চয়ই বুঝেছেন যে মামলার রায় কী হবে। এতিমখানার জন্য টাকা এসেছে বিদেশ থেকে। তিনি সে টাকা এতিমখানার খাতে খরচ করেননি। আবার এতিমখানার একাউন্টেও টাকাটা নেই। টাকাটা ছিল তার জিম্মায়। সুতরাং আইনি দৃষ্টিতে টাকাটা তিনি নিজে আত্মসাৎ করেছেন এ কথা আদালত নয়- গ্রাম্য সালিশ বসালেও বলবে। এখন হয়তোবা তিনি নিশ্চিত হয়েছেন যে বিচারের রায়ে তার শাস্তি হবে। রায়ের পরে তার জেল হলে দল যে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে সে সম্পর্কেও মা-ছেলের পরামর্শ ও সিদ্ধান্তের প্রয়োজন আছে।

তারেক জিয়ার পক্ষে দেশে আসা সম্ভব হচ্ছে না। তার মানি লন্ডারিং মামলায় সাড়ে সাত বছর জেল হয়েছে। এক কোটি টাকা জরিমানা হয়েছে। একুশে আগস্টের গ্রেনেড হত্যা মামলায় তিনি আসামী। এ মামলার বিচারও শেষ পর্যায়ে এসেছে। রায়ে অনেক লোকের ফাঁসি হবে। তারেক জিয়ার সম্পৃক্ততা মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিতে রয়েছে। ভক্তদের খারাপ লাগলেও বলতে হচ্ছে যে রায়ে তারেক জিয়ার ফাঁসির আদেশ অথবা দীর্ঘমেয়াদী কারাদণ্ড হওয়ার সম্ভাবনা তো এড়ানো সম্ভব না। এমন পরিস্থিতিতে তিনি এতো ঝুঁকি মাথায় নিয়ে নিশ্চয়ই দেশে আসবেন না। সুতরাং তখন দলের নেতৃত্ব দেবেন কোন নেতা!

আসলে দেশে বর্তমানে বেগম জিয়া, তারেক জিয়া আর বিএনপির মতো এতো অসহায় অবস্থা কোনও রাজনৈতিক নেতা বা দলের সম্মুখীন হতে হচ্ছে না। জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট থাকার সময় ক্ষুদ্র বিষয় নিয়েও খেলতেন। প্রতিপক্ষকে বিদায় করার জন্য ফাঁসি দিতেও দ্বিধা করতেন না। শেষ পর্যন্ত তার জীবনাবসান হয়েছে খুবই করুণভাবে। বেগম জিয়া দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হলে তারেক জিয়া হাওয়া ভবন প্রতিষ্ঠা করে বাবার পথেই হেঁটেছিলেন। এখন বেগম জিয়া, তারেক জিয়া এবং বিএনপি যেসব দুর্যোগের মোকাবিলা করছেন তা তাদের পূর্বের কর্মকাণ্ডের ফলাফল। এখন তাদের হাতে অসংগঠিত জনসমর্থন ছাড়া আর কোনও পুঁজি নেই।

এই পুঁজি ক্যাশ করাও বড় কঠিন। এতো ঝামেলা নিয়ে কোনও লোক সুস্থ থাকতে পারে না। মা ও ছেলে ক্ষমতার নেশায় এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আর তারা এবং তাদের কিছু লোক যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন তা থেকে নিস্কৃতি পেতে হলে সরকারি আনুকূল্য প্রয়োজন। সুতরাং যে কোনও মূল্যে তাদেরকে ক্ষমতায় যেতে হবে। ক্ষমতায় যেতে তারা যে কোনও শক্তির সঙ্গে যে কোনও শর্তে রাজী হবেন।

বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসা যাওয়ার খেলায় ভারত বৃহত্তম প্রতিবেশী হিসেবে প্রভাব ফেলতে পারে। শুনেছি দীর্ঘদিনব্যাপী তারেক জিয়া লন্ডনে বসে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে যোগাযোগ রেখেছেন। সম্ভবতো কিছু সফলতাও থাকতে পারে। কারণ বেগম খালেদা জিয়া গত রমজানে ঢাকা সিটি দক্ষিণের ইফতার পার্টিতে এমন একটা বার্তা তার কর্মীদের দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। বেগম জিয়া নাকি লন্ডন থেকে ঢাকা ফেরার পথে দিল্লি যাবেন। আর জাতীয় পার্টির এরশাদও ভারত সফর করে এক সপ্তাহ পর ফিরে এসেছেন। হেফাজতের প্রধান আল্লামা আহমদ শফিও চিকিৎসার নামে দিল্লি গেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে। দেশের মানুষ ভালুক মারার আগে চামড়া বিক্রির মহড়া দেখছেন।

লেখক: সাংবাদিক ও শিক্ষক

[email protected]

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
টাঙ্গাইল শাড়িসহ ১৪ পণ্যকে জিআই স্বীকৃতি
টাঙ্গাইল শাড়িসহ ১৪ পণ্যকে জিআই স্বীকৃতি
১৮ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন বিসমাহ মারুফ 
১৮ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন বিসমাহ মারুফ 
মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে পিতার মৃত্যুদণ্ড
মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে পিতার মৃত্যুদণ্ড
উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কা সিইসির
উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কা সিইসির
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ