X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

রিজার্ভ চুরি ‘চাপা’ দেওয়া হলো?

গোলাম মোর্তোজা
০২ আগস্ট ২০১৭, ১৫:০২আপডেট : ০২ আগস্ট ২০১৭, ১৫:০৪

গোলাম মোর্তোজা অন্য আর দশটি ঘটনার মতো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রিজার্ভ চুরির ঘটনাও ‘চাপা’ দিয়ে দেওয়া হলো? বলা হবে, তদন্ত চলাকালীন একথা বলা যায় না। হ্যাঁ, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত কবে শেষ হবে তা নিশ্চিত নয়। তবে আশা করতেই পারি যে, তদন্ত থেকে সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে। দেশের মানুষ প্রকৃত ঘটনা জানতে পারবেন। তারপরও চাপা দেওয়ার প্রসঙ্গ আসছে কেন? কারণ ড. ফরাসউদ্দিন এবং অধ্যাপক কায়কোবাদের নেতৃত্বে যে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল, তারা নির্দিষ্ট সময়ে রিপোর্ট দিয়েছেন। কয়েকবার ঘোষণা দিয়েও তা প্রকাশ করা হয়নি। সিআইডির তদন্তের সময় বাড়ানো হচ্ছে বারবার। পরিণতি নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত কিছুদিনে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গণমাধ্যম প্রকাশ করেছে। তার প্রেক্ষিতে ‘চাপা’ দেওয়ার প্রসঙ্গ নিয়ে কিছু কথা।
১.  বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার রিজার্ভ চুরি হয়েছিল। এক মাস পর মার্চ মাসের প্রথম দিকে ফিলিপাইনের একটি পত্রিকা বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির সংবাদটি প্রকাশ করে। সেই সূত্র ধরে দেশের পত্রিকায় রিজার্ভ চুরির বিস্তারিত সংবাদ প্রকাশিত হয় ৭ মার্চ। সংবাদ প্রকাশের পর বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ চুরির বিষয়টি স্বীকার করে। এক মাসেরও বেশি সময় বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ চুরির বিষয়টি গোপন রাখে। এসব তথ্য পাঠকের জানা। তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমানের একক সিদ্ধান্তে রিজার্ভ চুরির বিষয়টি গোপন রাখা হয়। গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে ফিলিপাইন এবং বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে কিছু তথ্য জানার সুযোগ হয়। ড. আতিউরের রিজার্ভ চুরি পরবর্তী তৎপরতা নিয়ে গুরুতর সন্দেহ তৈরি হয়। সেই তথ্যভিত্তিক সন্দেহ নিয়ে টেলিভিশনের টকশোতে বিস্তারিত কথা বলি। অত্যন্ত অ-গুরুত্বপূর্ণ একটি সেমিনারে যোগ দেওয়ার জন্যে ড. আতিউর রহমান দিল্লি চলে যান। দিল্লি যাওয়ার আগে ভোরবেলা, রাতের টকশো বিষয়ে চ্যানেল কর্তৃপক্ষের কাছে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে যান যে, ‘আমি অসত্য তথ্য দিয়ে কথা বলেছি। কিছুই না জেনে কথা বলেছি। বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্যে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উচিত’- ইত্যাদি অভিযোগ করে তিনি দিল্লি চলে যান। ক্ষমতার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে তখন তিনি ক্ষমতাবান। চ্যানেল কর্তৃপক্ষ জানতে চাইলেন, অসত্য বলেছি কি না? যেহেতু অসত্য বলিনি, তথ্যের ভিত্তিতে বলেছি, পরবর্তী কয়েকদিনে তার অনেক কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলো, ফলে ক্ষমতাবানের সুপারিশ অনুযায়ী বড় কোনও সমস্যায় পড়তে হয়নি।
২. রাকেশ আস্তানা নামক যে ব্যক্তিকে আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে ড. আতিউর রহমান এনেছিলেন, তাকে নিয়ে তার কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলাম। ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালিতে কর্মরত বাংলাদেশি প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের দু’একজন তথ্য দিয়ে বলেছিলেন, রাকেশ আস্তানা সন্দেহজনক ব্যক্তি। সেকথা টকশোতে বলেছিলাম। ঘটনার এতদিন পর এসে জানা গেলো, রিজার্ভ চুরির ৩  দিন পর ৪ কোটি টাকার চুক্তিতে আমেরিকা থেকে রাকেশ আস্তানাকে নিয়ে আসা হয়। সংবাদটি বিস্তারিত প্রকাশ করেছে বণিকবার্তা। রাকেশ আস্তানাকে আনা এবং চুরির পুরো বিষয়টি গোপন রাখা হয় ড. আতিউর রহমানের সিদ্ধান্তে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ৩১টি কম্পিউটার সুইফট সংশ্লিষ্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই কম্পিউটারগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা হস্তান্তর করতে হলে লিখিত আদেশের প্রয়োজন হয়। কোনও লিখিত আদেশ ছাড়া এই কম্পিউটারগুলো রাকেশ আস্তানার কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা হস্তান্তরের আগে লিখিত আদেশ চান। লিখিত আদেশ না দিয়ে তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান টেলিফোনে মৌখিক আদেশ দিয়ে কম্পিউটারগুলো হস্তান্তরে বাধ্য করেন।
কম্পিউটারগুলো নিজের হেফাজতে নিয়ে রাকেশ আস্তানা সমস্ত লগ মুছে ফেলেন। আগে ব্যবহার করার সকল তথ্য মুছে ফেলার তথ্য সিআইডির তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। কেন লিখিত আদেশ ছাড়া রাকেশ আস্তানার কাছে কম্পিউটারগুলো হস্তান্তর করা হলো? কেন আতিউর রহমান গোপনে তাকে বিশাল অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দিলেন? কেন রাকেশ আস্তানা লগ মুছে ফেললেন?
এই পর্যায়ে এসে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ধারণা হচ্ছে, রিজার্ভ চুরির পুরো বিষয়টি চাপা দেওয়ার জন্যে ড. আতিউর রহমানের ইচ্ছে অনুযায়ী রাকেশ আস্তানা লগ মুছে ফেলেছেন। যাতে চুরির প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করা না যায়।
৩. গভর্নর পদ থেকে ড. আতিউর রহমান পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু ‘চাপা’ দেওয়ার নীতি অব্যাহত আছে। ড. ফরাস উদ্দিনের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ করা না হলেও কিছু তথ্য জানা গেছে। তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৭ জন কর্মকর্তা এবং ৩টি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের নাম এসেছে। জানা গেছে এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ২ জন কর্মকর্তা সরাসরি রিজার্ভ চুরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর।
রাকেশ আস্তানার প্রতিষ্ঠান ‘ওয়ার্ল্ড ইনফরমেটিকস সাইবার সিকিউরিটি’র সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে তদন্তে।
শুরুতে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রীর সদিচ্ছা দৃশ্যমান ছিল। রিপোর্ট হাতে পেয়ে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রকাশ করা হবে। তারপর বলেছিলেন ঈদের পর প্রকাশ করা হবে। সুনির্দিষ্ট দিনও বলেছিলেন একবার। কিন্তু রিপোর্ট আর প্রকাশ করা হয়নি। প্রকাশ যে হবে, সেই সম্ভাবনাও এখন আর দেখা যাচ্ছে না।
৪. আমরা ‘উন্নয়ন’র কথা বলি। দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলি। বাস্তবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেই না। একটি ঘটনা দিয়ে আরেকটি ঘটনা ‘চাপা’ দেই। কে কাকে কেন বাঁচাতে চান, তা সুনির্দিষ্টভাবে পরিষ্কার হয় না। একটা বিভ্রান্তির ধূম্রজালে আটকে থাকেন জনগণ। এতে সন্দেহের পরিধি বৃদ্ধি পায়।

লেখক: সম্পাদক, সাপ্তাহিক

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
রেলের প্রতিটি টিকিটের জন্য গড়ে হিট পড়েছে ৫ শতাধিক
রেলের প্রতিটি টিকিটের জন্য গড়ে হিট পড়েছে ৫ শতাধিক
একসঙ্গে ইফতার করলেন ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা
একসঙ্গে ইফতার করলেন ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ