X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

সব আছে, নেই শুধু গণতন্ত্র

শামসুজ্জামান দুদু
০৬ আগস্ট ২০১৭, ১৩:৪৯আপডেট : ০৬ আগস্ট ২০১৭, ১৩:৫৬

শামসুজ্জামান দুদু আমাদের সংবিধান আছে। জাতীয় পতাকা আছে। সংসদ ভবন, সরকার, সচিবালয় আছে। আরও আছে ছোট বড় প্রায় শতাধিক রাজনৈতিক দল। শত বছরের সংগ্রামের সুমহান ইতিহাস আছে। আছে বীর গাঁথা ইতিহাস জয় করা ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ। খুঁজে পাওয়া যায় না শুধু গণতন্ত্র!
এই গণতন্ত্রের জন্য জাতি বার বার সংগ্রাম করেছে। রক্ত দিয়েছে। ত্যাগ স্বীকার করেছে। গত এক শতাব্দিতে অসংখ্য আন্দোলন সংগ্রামের কথা উল্লেখ করা যাবে। কিন্তু সব কিছুর শেষ কথা, সব পেয়েছি, পায়নি শুধু গণতন্ত্র।
সেই গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচন কমিশন আলোচনা শুরু করেছেন। এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন আলোচনা শুরু করেছেন। গণতন্ত্র তো দেশে বিদ্যমান! একটি মহল এই কথাটি বলবেন। তাদেরকে বলি, দেশে গণতন্ত্র থাকলে লম্বা সময় নিয়ে সুশীল সমাজ, পেশাজীবী, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার কোনও প্রয়োজন ছিল না। গণতন্ত্র থাকলে রীতি অনুযায়ী সরকারের মেয়াদ শেষ হলে, রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিতেন এবং সকল দল সরকারের পুরো মেয়াদ কালে সমান ভাবে সকল রাজনৈতিক কার্যকলাপ পরিচালনার সুযোগ পেতেন। কিন্তু সে কাজটি এদেশে হয়নি। আর হয়নি বলেই নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে শুধু নির্বাচন নিয়ে নয়, গণতন্ত্র থাকা না থাকার বিষয়টি  নিয়েও আলোচনা হতে হবে। গণতন্ত্র থাকলেই না অধিকারের প্রসঙ্গটি নিশ্চিত করা যায়। অধিকার থাকলেই তো বলা যায়, আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব।

দেশে সে অবস্থা কি আছে? যাকে মন চায়, তাকে ভোটটা দেব, এই অবস্থা দেশে নেই- এটা একটা পাগলেও জানে। শুধু মানতে চায় না আওয়ামী লীগ বা সরকার এবং সরকারের বন্ধুরা। এই অবস্থাটা পরিষ্কার হয়েছে ২০১৪’র ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে। এই নির্বাচন আমাদের পরিষ্কার করে দিয়েছে দেশে সংবিধান আছে কিন্তু গণতন্ত্র নেই। নেই কোনও অধিকার। ভোটাধিকার, সভা-সমাবেশ, মিছিল-সংগঠন, বাক স্বাধীনতা তথা মৌলিক অধিকার বলে কিছু নেই। আছে গণতন্ত্রের নামে দম্ভ, চোখ রাঙানি, গুম-খুন আর ধোঁকাবাজী। এই ভাবে তো একটা দেশ চলতে পারে না। সে জন্য নির্বাচন কমিশন যে আলোচনা শুরু করেছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পরে তা যদি সত্যিকারের অর্থপূর্ণ একটি নির্বাচনের লক্ষে করা হয়। তা না হলে প্রমাণ হবে এ আলোচনা কালক্ষেপণ ছাড়া আর কিছু না।

এ ক্ষেত্রে একটি প্রসঙ্গ উল্লেখ করতে চাই, তা হচ্ছে-প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিকট অতীতে বলেছেন, ১৫ ফেব্রুয়ারি বা ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন করতে চান না। তা হলে তিনি কোনও ধরনের নির্বাচন করতে চান? তিনি কি তা হলে দলীয় সরকারের বাইরে নির্বাচন করতে চাইছেন? কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাহেবের আচার আচরণে তা মনে হচ্ছে না। সপ্তাহ খানেক আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনা শেষে বলেছেন, সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে একটা সুন্দর নির্বাচন করবেন! সুশীল সমাজের অনেকেই দলীয় সরকারের অধীনে ভালো নির্বাচন হবে, সেটা তারা তাকে বলেননি। প্রত্যাশাও করেননি। তা হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ ভাবে বললেন কেন? তিনি আলোচনায় বসেছেন শুনবার জন্য। সবার কথা শুনবার পরে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার আরো চার জন সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন। অথচ শুধুমাত্র সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথাটা বলে দিলেন। সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে একটা সুন্দর নির্বাচন করবেন। এরপর প্রধান বিরোধী দলসহ অন্যান্য দলগুলোর কী আলোচনা করবেন অথবা আলোচনা শেষে নতুন কী বলবেন? বিরোধী দলগুলো তো সরকারের বিপরীতে অর্থাৎ একেবারে উত্তর মেরুতে আছে। বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করে কি নির্বাচন কমিশনার বলবেন, বিরোধী দলগুলো সংবিধান বিরোধী অবস্থানে আছে! নাকি অন্য কিছু বলবেন!

প্রধান নির্বাচন কমিশনার মনোনীত হওয়ার পর থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিজ থেকেই একটার পর একটা বিতর্ক সৃষ্টি করে চলেছেন। এই বিতর্কের উদ্বোধন তিনি নিজেই করেছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার মনোনীত হওয়ার এক সপ্তাহর মধ্যে তার নিজ জেলা পটুয়াখালীতে আওয়ামী যুব লীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মিষ্টি খাওয়া এবং সেই ছবি ফলাও করে সংবাদপত্রে প্রকাশ করা, প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে একটি পক্ষের মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এটা কি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইচ্ছাকৃত করেছেন নাকি অনিচ্ছাকৃত!

প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাহেব আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কতটা দলীয় প্রভাবমুক্ত করতে পারবেন, প্রশ্নটি এখানেই। সরকার কর্তৃক মনোনীত হলেও নির্বাচন কমিশন এই মুহূর্তে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান যদি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পদক্ষেপ নেয় তা হলে বিরোধী দলগুলোর বলার কিছু থাকবে না। অথচ সে ধরনের কোনও পদক্ষেপ নেয়। নির্বাচন কমিশনে পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা করা হলে নিরপেক্ষ নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এই সব কথাবার্তা রাজনৈতিক অঙ্গনে নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে হতাশার জন্ম দিচ্ছে। এই সব কথাবার্তা আলোচনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এতে আলোচনাকে লোক দেখানো মনে হবে। কাজের কাজ কিছুই হবে না।

নির্বাচন কমিশন যে ভাবে চলছে, এ ভাবে চললে সমস্যার সমাধানের চেয়ে জটিলতা আরো বাড়বে। জটিলতা কমানোর জন্য দেশে গণতন্ত্রে ফেরাবার জন্যে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।

গণতন্ত্রে যাত্রার জন্য প্রথম পদক্ষেপ, স্বচ্ছ স্বাভাবিক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন। সেটা কি আমরা  নিশ্চিত করতে পারেছি?

লেখক: ভাইস চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হলো সেনাসহ ২৮৫ বিজিপি সদস্যকে
মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হলো সেনাসহ ২৮৫ বিজিপি সদস্যকে
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে বাইডেনের সই
ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে বাইডেনের সই
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ