X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

উত্তপ্ত পৃথিবী ধ্বংসের মুখে

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী
১০ আগস্ট ২০১৭, ১৫:১৯আপডেট : ১০ আগস্ট ২০১৭, ১৫:৩০

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক স্টিফেন হকিং এ বছর গত কয়েক মাসের মধ্যে বার বার হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেছেন এই গ্রহ এক শতাব্দীর মাঝে ধ্বংস হয়ে যাবে। অন্য গ্রহের বসবাসের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দিয়েছেন হকিং। ৭০০ কোটি মানুষ এক গ্রহ থেকে অন্য গ্রহে উদ্বাস্তু হয়ে যাওয়া কি সহজ কথা। এটা কি পাশের দেশ যে সারিবদ্ধ হয়ে লাইন করে চলে গেলাম। ৭ শত কোটি মানুষের পুনর্বাসন কি সহজ ব্যাপার! আবার এক গ্রহ থেকে অন্য গ্রহে যাওয়ারই বা ব্যবস্থা কী? অর্থাৎ এগুলো সবই নিস্ফল কল্পনা।
হকিং কিন্তু বিস্তারিত কিছু বলেননি- কেন পৃথিবী নামক এ গ্রহটি ধ্বংস হবে। তার প্রতিরোধের কোনও ব্যবস্থা আছে কিনা। ধর্ম বিশ্বাসী হিসেবে আমরা তো বিশ্বাস করি যে পৃথিবী একদিন ধ্বংস হবেই। মুসলমানেরা সে দিনটাকে কেয়ামতের দিন বলেছে। হযরত মুহাম্মদ (স.) কেয়ামত তার জামানা থেকে বেশি দূরে নয় একথা আলাপ চারিতায় বহুবার উল্লেখ করেছেন। তাকে আখেরি নবীও বলা হয়। ইহুদি খ্রিস্টানরাও মুসলমানদের মতো এই দিনটিকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে।
আবার জলবায়ু নিয়েও সমগ্র বিশ্ব উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে। ১৯৯৭ সালে কিয়োটো প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছিলো। ২০১৬ সালে প্যারিসে পৃথিবীর প্রতিটি রাষ্ট্র জলবায়ু নিয়ে সম্মেলন করেছিলো। কিয়োটোর স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী কার্বন ডাই অক্সাইড বা মিথেন এর মতো গ্যাসের উৎপাদ কমানোর কথা পৃথিবীর সব দেশের। এগুলোকে বলে গ্রিন হাউস গ্যাস। গ্রিন হাউস গ্যাস পৃথিবীর আবহাওয়ায় তৈরি করে একটা আস্তরণ। ফলে পৃথিবীর তাপ বিকীর্ণ হতে পারে না দুরাকাশে। ওসব গ্যাসের পরিমাণ বায়ুমণ্ডলে যত বাড়ে পৃথিবীর উত্তাপও ততই বাড়ে। পরিণতিতে আবহাওয়া বদলাতে থাকে।

কিয়োটো এবং প্যারিসে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা যা বলেছেন তাতে আমরা ধারণা করে নিয়েছি যে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে পৃথিবীর নামক গ্রহটির ধ্বংস প্রক্রিয়া খুব দ্রুত আরম্ভ হবে। গত সপ্তাহে এক রিপোর্টে দেখা গেছে গ্রিনল্যান্ড এর বরফ খুব দ্রুত গলে যাচ্ছে। গ্রিনল্যান্ড প্রায় সর্বত্রই বরফ। কোনও কোনও অংশে এ বরফ সাড়ে তিন কিলোমিটার পুরু। বরফ গলার কারণ হচ্ছে তাপমাত্রা বেশি হলে বরফে শেওলা পড়ে। বরফ শেওলা সহ্য করতে পারে না তখন বরফ গলে যায়। পুরো গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলে গেলে সমুদ্রে ২০ ফিট উচু হয়ে যাবে। তখন লন্ডন, নিউইয়র্ক, আমাস্টাডাম, ফ্লোরিডা, ক্যালিফোর্নিয়া, ইকুয়েডর, ব্রাজিল, নেদারল্যান্ডস আর বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, বরিশাল, খুলনা জলমগ্ন হয়ে যাবে।

দ্বীপ রাষ্ট্র মালদ্বীপ এবং টুভ্যালু সম্পূর্ণ পানিতে বিলিন হয়ে যাবে। জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন শিল্প বিপ্লবের পর থেকেই দ্রুত বায়ুমণ্ডলে গ্যাসের বিস্তার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যা দ্রুত আস্তরণ সৃষ্টি করছে এবং তাপ ঊর্ধ্বাকাশে উঠতে পারছে না। কিয়োটর সম্মেলনে ১১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মাঝে তাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার একটা সিদ্ধান্ত হয়েছিলো কিন্তু আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বুশ সে সিদ্ধান্ত মানেননি। ২০১৬ সালের প্যারিস সম্মেলনে যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিলো তাতে আমেরিকাও উপস্থিত ছিল এবং চুক্তিতে তারাও স্বাক্ষর করেছিলো।

গত ৫ আগস্ট আমেরিকা প্যারিস চুক্তি থেকে তার নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে। অথচ বায়ুমণ্ডলে বেশি গ্যাস ছড়াচ্ছে, আমেরিকা, চীন, ভারত। আমেরিকায় দৈনিক ৮০ কোটি ডলারের ডিজেল পুড়ানো হয়। এখন যে দেশে দেশে ঘন ঘন দাবদাহ হচ্ছে তাও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে। বিজ্ঞানীরা বলছেন ২১ শতকের পর দাবদাহ আরও বাড়বে এবং শস্য ক্ষেত্র জ্বালিয়ে ফেলবে তখন বিশ্বে খাদ্য সংকটও মাথা ছাড়া দেবে।

বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা পুড়ে টারবাইন চালিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হয় তাতে বায়ুমণ্ডলে গ্যাস যায় বেশি। কোয়েল টারবাইনে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সুরক্ষার কিছু কিছু প্রযুক্তি বের হলেও বায়ুমণ্ডলের নিরাপত্তার জন্য কয়লা নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ তুলে দিতে হবে। এতোদিন ধরে মানুষের মাঝে একটা ধারণা ছিল যে আনবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কয়লার চেয়েও ক্ষতিকর এ ধারণার কারণ হলো ১৯৭৭ সালে আমেরিকার পেনসেনভেনিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দুর্ঘটনা এবং সোভিয়েতের চেরনোবিলের দুর্ঘটনা। মানুষ মনে করে এক একটা বিদ্যুৎকেন্দ্র এক একটা অ্যাটোমিক বোমা। এখন প্রমাণিত হয়েছে যে সব চেয়ে বায়ুমণ্ডলে গ্যাস কম যায় আনবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে।

দুর্ঘটনা হচ্ছে অসতর্কতার ফল। কয়লাতেও দুর্ঘটনা কম হয় না প্রতি বছর চীনে কয়লা খনিতে ৫ হাজারের মতো লোক মারা যায়। চীন এরই মধ্যে তার ৭০টা কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রকে আনবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র রূপান্তরিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের এক মহা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। এখন অধিকাংশ রাজ্যে  সৌর-বিদ্যুৎতের কেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলছে। কোনও কোনও রাজ্যে তাদের প্রয়োজনের ৬০/৭০ শতাংশ বিদ্যুৎ সৌর ব্যবস্থা থেকে পাওয়ার ব্যবস্থা করে ফেলেছে।

কয়েল টারবাইন, অয়েল টারবাইন, গ্যাস টারবাইন দ্বারা বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা নিরাপদ নয়। বায়ু স্তরে তা আস্তরণ সৃষ্টি করে যার ফলে গ্যাস ঊর্ধ্বাকাশে উঠতে পারে না এবং পৃথিবী উত্তপ্ত হয়ে যায়। জলবায়ুর কারণে যে সব দেশে উচ্চ পর্যায়ের ঝুঁকিতে আছে তারমধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশের সমুদ্রউপকূলবর্তী এলাকা সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়লেই ধীরে ধীরে ডুবে যাবে। তখন ৩/৪ কোটি লোক উদ্বাস্তু হয়ে যাবে। শুধু বাংলাদেশ নয় সমগ্র পৃথিবীতে উদ্বাস্তু সমস্যা দেখা দেবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে বজ্রপাত বেড়েছে আর বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ায় পাহাড় ধ্বংস হচ্ছে। সুতরাং বাংলাদেশের উচিৎ হবে খুব জরুরি ভিত্তিতে জলবায়ু পরিবর্তনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় অবলম্বন করা এবং তার বৈজ্ঞানিক উপায় স্থির করার জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক

[email protected]

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বিরল সূর্যগ্রহণ দেখতে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে জড়ো হবেন ১০ লাখ দর্শনার্থী
বিরল সূর্যগ্রহণ দেখতে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে জড়ো হবেন ১০ লাখ দর্শনার্থী
নামাজ চলাকালে মসজিদের এসি বিস্ফোরণ, মুসল্লিদের মধ্যে আতঙ্ক
নামাজ চলাকালে মসজিদের এসি বিস্ফোরণ, মুসল্লিদের মধ্যে আতঙ্ক
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ