X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিপন্নদের জন্য চাই তারুণ্যের জোয়ার

তুষার আবদুল্লাহ
১৯ আগস্ট ২০১৭, ১৩:১৯আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০১৭, ১৩:৩১

তুষার আবদুল্লাহ বন্যা এখন মধ্যাঞ্চলে। উত্তরাঞ্চলকে বিধ্বস্ত করে দিয়ে প্লাবন মধ্যাঞ্চল হয়ে পশ্চিমমুখি হয়। বন্যার দাগ এখনও শুকোয়নি পূর্বাঞ্চলে। উজান থেকে নেমে আসা ঢলে এই ব-দ্বীপ প্লাবিত হবে, এটি প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম। এই অঞ্চলের মানুষেরা সেই প্লাবনের সঙ্গে লড়াই করেই চলে। তবে কখনও কখনও সেই ঢল, অস্বাভাবিক এবং প্রলয়ঙ্করী রূপ নেয়। এবার বন্যা সেই রূপ নিয়েছে। বন্যার প্রলয়ঙ্করী রূপের বড় কারণ- এবার একাধিকবার প্লাবিত হয়েছে বাংলাদেশ। যদি পূর্বাঞ্চলের কথাই বলি, তাহলে মে মাসের আগাম বন্যায় প্রথমবারের মতো ভেসে যায় সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চল। সেই প্লাবন নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জকেও আক্রান্ত করে। সুনামগঞ্জ নিকট অতীতে এমন প্লাবনের মুখোমুখি হয়নি। ধান, মাছ, বসত সবই হারাতে হয়েছিল তাদের। এই দুর্যোগ থেকে ওঠে না দাঁড়াতে আবারও ধেয়ে আসে বন্যা। পূর্বাঞ্চল দ্বিতীয় দফা আক্রান্ত হয়। উত্তরের অভিজ্ঞতা একই। কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা বন্যার কবলে পড়ে দুই দফা। দ্বিতীয় দফায় তিস্তা-ব্রহ্মপুত্র ভাসিয়ে নেয় লালমনিরহাট, নীলফামারী এবং দিনাজপুরকেও। বন্যা নওগাঁ, রাজশাহী হয়ে বন্যা এখন টাঙ্গাইলে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র দাবি করছে, ১৯৮৮’র মতো ঢাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করবে না। তাদের দাবি সত্য হলেও, নাকে তেল দিয়ে ঘুমানোর সুযোগ নেই। কারণ রাজধানী এরই মধ্যে বন্যার কবলে। জলে প্লাবিত না হলেও, উত্তর, পূর্ব-পশ্চিম আক্রান্ত হওয়ার প্রভাব রাজধানীতে পড়তে শুরু করেছে। ফসল নষ্ট হয়েছে সত্য, কিন্তু যতোটা না নষ্ট হয়েছে তারচেয়ে বেশি পণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে বন্যার অজুহাত তুলে।
রাজধানীর মানুষ না হয় একটু বেশি দামেই চাল-সবজি-মাছ কিনে খেলো। কিন্তু যার ঘর কেড়ে নিলো নদী, যার ফলন ভেসে গেলো বাঁধ ভাঙা জলে, যে খামারি হারালেন তার গরু-মুরগি-হাঁস, তার পেটে অন্ন জুটবে কী করে। এই বিপন্ন মানুষদের জন্য ত্রাণ প্রয়োজন। দরকার আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা। এই প্রকার দুর্যোগে সকল সরকারের বরাদ্দ থাকে। টাকা, খাবার, টিন সবই থাকে। কিন্তু কেন্দ্র থেকে বন্যার্ত মানুষের কাছে পৌঁছতে পৌঁছতে সেই ত্রাণের খুব সামান্যই অবশিষ্ট থাকে। কোনও কোনও দ্বীপচরের মানুষের পক্ষে ইউনিয়ন, উপজেলা শহরে এসে সেই ত্রাণ নেওয়ার সাধ্যটুকুও থাকে না। কারণ ত্রাণ নিতে আসার মতো নৌকা বা বাহনের ভাড়া জোগাবেন তিনি কী করে। আবার কোনোভাবে দলবদ্ধ ভাবে যদি এসে পৌঁছানোও যায়, তাহলে বরাদ্দ থেকে খানিকটা কেটে রাখা হয়। তারচেয়েও বড় ঝক্কি, বন্যার যে বড় দুর্ভোগ রাজনৈতিক দলের তালিকায় নাম ওঠানো। এসব সাত পাঁচ ভেবে বিপন্ন-নিরন্ন মানুষেরা ত্রাণ শিবিরের দিকে ছুটে যান না। অপেক্ষায় থাকেন কেউ তাদের ঘর অবধি পৌঁছে যদি একটু সাহায্য তুলে দেয়। এই সাহায্য নিয়ে যাওয়ার দলে আছে যে বেসরকারি সংস্থা বা এনজিও, তাদের আবার ত্রাণ দেওয়ার চেয়ে আয়োজন বেশি। এক প্যাকেট বিস্কুট দেওয়ার জন্য খরচ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়। ত্রাণের প্রচারের দিকেই তাদের নজর বেশি। বাস্তবে যে ত্রাণটি দুর্যোগ কবলিত মানুষের কাজে দেয়, সেটি ব্যক্তি মানুষের, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সংগঠনের। তারাই আসলে বিপন্ন মানুষের কাছে অনাড়ম্বর ভাবে ত্রাণ পৌঁছে দিতে পারে, পেরেছে। অতীত অভিজ্ঞতা তাই বলে। এখন যদিও ত্রাণ দেওয়ার সেলফি যুক্ত হয়েছে। তবুও আস্থা রাখি শিক্ষার্থী, সংগঠক এবং ব্যক্তির বিতরণ করা ত্রাণই সবচেয়ে কার্যকর। আজকাল বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানও ত্রাণ নিয়ে মাঠে নামে। তবে তাদেরও মূল লক্ষ্য মিডিয়া কভারেজ।

সুতরাং আসছে ঈদ ও পুজাতে আমরা যদি একটু সংযমী হই, তাহলে যার ঘর বিলীন হয়েছে নদীতে তার জন্য অন্তত একটি টিন, বিপন্ন পরিবারের শিশুদের খাবার, রোগীর পথ্যের জোগান আমরা দিতে পারবো। কোনও কোনও শিক্ষার্থীর হয়তো বই ভেসে গেছে বানের জলে। তার হাতে আবারও তুলে দিতে পারবো পাঠ্যবই। দুর্যোগ কবলিত এলাকার মানুষদের স্বাভাবিক জীবনে আবার ফিরিয়ে আনতে সাহসের জোগান দিতে, তারণ্যের শক্তির বিকল্প নেই। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন মহল্লায় দেখছিলাম তরুণরা ঘুরে ঘুরে ত্রাণ সংগ্রহ করছে। তাদের এই উদ্যোগ দেখেই ভরসাটা বাড়লো।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ