X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা সমীকরণ মিয়ানমারে সরল হলেও বাংলাদেশে জটিল

শেখ শাহরিয়ার জামান
২৪ আগস্ট ২০১৭, ২২:৪৬আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০১৭, ২২:৫৬

শেখ শাহরিয়ার জামান মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতি দেয় না এবং সেখানে তাদের কোনও নাগরিক অধিকার নেই। কিন্তু বৈধ বা অবৈধ পথে এই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ পর্যন্ত চলে এলেই যেন বেশ কিছু সুবিধার আওতাভুক্ত হয়ে যায় তারা। নিজ দেশ তাদের জন্য যতটাই প্রতিকূল, এই দেশ যেন তাদের জন্য যেন ততটাই অনুকূল।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জন্য শিক্ষার সুযোগ নেই, আয়-উপার্জন ও স্বাস্থ্য সুবিধা অত্যন্ত সীমিত, এবং তাদের চলাচল একটি নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ। তারা প্রতিনিয়ত সামরিক বাহিনীর সদস্যের হাতে নিগৃহীত হয় এবং রাখাইন সমাজের অন্য ধর্মের ও শ্রেণির মানুষের কাছেও তারা গ্রহণযোগ্য নয়।
এই রোহিঙ্গারা বৈধ পথে বাংলাদেশে এলে চিকিৎসার সুবিধা পায়। এছাড়া পালিয়ে এসে এদেশের ক্যাম্পে অবস্থান করলেও রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যসেবাসহ শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা সরকারি বাহিনীর সদস্যের হামলার শিকার হয় না এবং এখানকার লোকজন তাদের ঘৃণার দৃষ্টিতেও দেখে না।
এর ফলাফল কী?
বাংলাদেশে এর ফলে পরিবেশ সমস্যা তৈরি হচ্ছে, নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও রোহিঙ্গারা হুমকি স্বরূপ এবং সর্বোপরি তাদের সামগ্রিক গতিবিধির ওপর সরকারের নজরদারি করা সম্ভব হয় না।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়
গত অক্টোবর মাসেও উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী গ্রামে কোনও রোহিঙ্গা বাস করতো না। বর্তমানে সেখানে বন বিভাগের জমির ওপর চার হাজার রোহিঙ্গা পরিবার বাস করছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বন বিভাগের গাছপালা কেটে তারা সেখানে বসতি স্থাপন করেছে এবং প্রতিদিন বিভিন্ন কাজে বনজঙ্গল নষ্ট করছে।
এটি শুধু বালুখালীর চিত্র নয়, একই চিত্র দেখা গেছে কুতুপালং, লেদা নয়াপাড়া গ্রামসহ আশেপাশের এলাকায়।
নিরাপত্তা সংকট
ধারণা করা হয় বাংলাদেশে প্রায় তিন লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাস করছে এবং এর অর্ধেক বাস করে মাত্র দুটি উপজেলায়। এ দুটি হচ্ছে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া।
এই বিপুল পরিমাণ রোহিঙ্গা কোথায় কী করছে তার সামগ্রিক চিত্র সরকারের পক্ষে নজরদারি করা সম্ভব নয়।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, একজন রোহিঙ্গা বৈধপথে ট্রাভেল পাস নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের পর সে টেকনাফে অবস্থান করছে নাকি চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকায় চলে যাচ্ছে, এই তথ্য সরকারের পক্ষে রাখা সম্ভব হয় না।
এই অশিক্ষিত ও দরিদ্র মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনকে কোনও সন্ত্রাসী সংগঠন ব্যবহার করতে পারে বলে অনেকেও সন্দেহ পোষণ করেন। আবার ইয়াবার মতো মারাত্মক মাদকদ্রব্য চোরাচালানে এই রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করা হয়ে থাকে বলেও জনমত প্রচলিত আছে।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অবস্থান এখন পর্যন্ত দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তার সংকট সৃষ্টি না করলেও একটি আবহ তৈরি করেছে।
সামাজিক সংকট
মিয়ানমারে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের অনেক আত্মীয়-স্বজন কক্সবাজার ও এর আশেপাশের অঞ্চলে বাস করে। বাংলাদেশে তাদের অবস্থানকে সমাজের সবাই ভালো চোখে দেখে, বিষয়টি সেরকম নয়।
উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, একজন বাংলাদেশি মজুর দিনে ৫শ’ টাকা মজুরি দাবি করলেও একজন রোহিঙ্গা ২শ’ বা ৩শ’ টাকা পেলেই খুশি। এ কারণে অনেকে তাদের অসহায়ত্বের সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে কম মজুরিতে কাজ করায়। এর ফলে বাংলাদেশি শ্রমিকরা বঞ্চিত হয়।
ভূ-রাজনৈতিক সংকট
রোহিঙ্গা সমস্যা একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। এ কারণে এর সঙ্গে মিয়ানমারের পাশ্ববর্তী দেশগুলোসহ এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থারা জড়িয়ে পড়েছে।
সরকারের পক্ষে রোহিঙ্গা সমস্যা উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। এজন্য মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ও দেন-দরবার করা হয়ে থাকে। রোহিঙ্গা বিষয়ে জাতিসংঘ এবং ওআইসিসহ বিভিন্ন সংস্থায় আলোচনা হয়, এসব আলোচনায় বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করে। বিষয়টি সমাধানের জন্য দ্বিপাক্ষিক ভাবেও অনেক দেশের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। রোহিঙ্গা ইস্যুর জন্য সরকারের একটি অংশের প্রচুর সময়ও ব্যয় হয়।
বাংলাদেশ মানব পাচারের একটি ট্রানজিট দেশ হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পাচার হয়ে আসে এবং বাংলাদেশ থেকে জলপথে তারা বিভিন্ন দেশে পালিয়েও যায়। সামগ্রিক প্রক্রিয়াটি বাংলাদেশের ভাবমূর্তির জন্য নেতিবাচক।
মিয়ানমার সরকারের নীতি হচ্ছে, ওই দেশ থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়ন করা। সেজন্য তারা সময় ও সুযোগ বুঝে সামরিক বাহিনী ব্যবহার করে থাকে। সেই অর্থে তাদের হিসাব অনেকটা সোজা ও সরল।
কিন্তু বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের জন্য এদেশে বহুমুখী সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তাই রোহিঙ্গাদের সমীকরণটি মিয়ানমারের জন্য সরল অঙ্ক হলেও বাংলাদেশের জন্য বিষয়টি অনেক বেশি জটিল।

লেখক: সাংবাদিক

/এএইচ/টিএন/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার মিললো ২৭ বস্তা টাকা
পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার মিললো ২৭ বস্তা টাকা
বিকল্প অর্থনীতি ও গ্রাম্য কায়কারবার
উপন্যাসবিকল্প অর্থনীতি ও গ্রাম্য কায়কারবার
ইরান-সমর্থিত ইরাকি সেনা ঘাঁটিতে বিস্ফোরণ, নিহত ১
ইরান-সমর্থিত ইরাকি সেনা ঘাঁটিতে বিস্ফোরণ, নিহত ১
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি বন্ধ
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি বন্ধ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ