X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

সড়কপথে যেতে ‘মানা’

শান্তনু চৌধুরী
২৫ আগস্ট ২০১৭, ১৫:৩৪আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০১৭, ১৫:৫৯

শান্তনু চৌধুরী
প্রতিবছর দুই ঈদে একটি সাধারণ দৃশ্য চোখে পড়ে। বাস টার্মিনাল, ট্রেন স্টেশন ও লঞ্চ টার্মিনালে সাধারণ যাত্রী বা টিকিট প্রত্যাশীদের ভিড়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ১৮ আগস্ট থেকে শুরু হয়েছে বাস, ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি। আর ২০ আগস্ট থেকে শুরু লঞ্চের আগাম টিকিট বিক্রি। কিন্তু একটা বিষয় লক্ষ্যণীয়, এবারে বাস কাউন্টারগুলোতে টিকিট প্রত্যাশীদের ভিড় নেই বললেই চলে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ঈদের সম্ভাব্য ছুটি ১ থেকে ৩ সেপ্টেম্বর ধরে নিলে ৩০, ৩১ আগস্ট ও ১ সেপ্টেম্বরের বাসের টিকিটের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এইদিনগুলোর টিকিট আবার নেই বললেই চলে। কিন্তু উল্টো চিত্র রেলে। এবার ট্রেনের টিকিটের চাহিদা অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন ৩১টি ট্রেনের ২২ হাজার ৪৯৬টি টিকিট বিক্রি করা হবে। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ অনলাইনে, ৫ শতাংশ ভিআইপি, ৫ শতাংশ রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ। বাকি ৬৫ শতাংশ টিকিট কাউন্টার থেকে বিক্রি করা হবে। ২৯ আগস্ট থেকে সাত জোড়া বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এরই মধ্যে দেখা গেছে ট্রেনের টিকিটের জন্য যাত্রীদের ভিড় বেশি। সেটা হওয়াটা অবশ্য স্বাভাবিক। কারণ দেশের বিভিন্ন এলাকা এখনো ডুবে রয়েছে পানির নিচে। রাস্তা ভেঙে বন্ধ হয়ে রয়েছে যান চলাচল। অধিকাংশ রাস্তার পিচ ওঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে খানা-খন্দ।

বগুড়া, নওগাঁ, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও নীলফামারীসহ বেশ কয়েকটি জেলার রাস্তায় পানি জমে আছে। সেখান থেকে বাস যাতায়াত করতে পারছে না। ঈদের আগে পানি কমার কিছুটা সম্ভাবনা রয়েছে কিন্তু পানি বেড়ে গেলে যাতায়াত করাই হবে না। তবে পানি বাড়ুক বা কমুক বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাটের কারণেই কমিয়ে দেওয়া হয়েছে যান চলাচলের সংখ্যা। যে কারণে রয়েছে বাসের টিকিট সংকট। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে উত্তরাঞ্চলের ১৭টি জেলায় বাসের ট্রিপ কমিয়ে দিয়েছেন কয়েকটি পরিবহনের মালিকরা। বন্যা ও সড়কের দুরবস্থার কারণেই মূলত এই সংকট। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে উত্তরের বিভিন্ন জেলায় যেতে ছয় থেকে আট ঘণ্টা লাগলেও এখনকার পরিস্থিতিতে কখনও কখনও ১৫ ঘণ্টাও লেগে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ঈদের আগে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করছেন পরিবহন মালিকরা। সড়ক-মহাসড়কের বেশ কয়েকটি সেতুর অবস্থাও ভালো নয়। এগুলো দিয়ে বাস চলতে পারছে না। টানা বর্ষণে সিরাজগঞ্জের হাটিকমরুল এলাকার বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এই এলাকায় প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের অধিকাংশই ভরা খানাখন্দে। ঢাকা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার এলাকা বাদে পুরোটাই দুর্ভোগ। এমন দুর্ভোগের ফিরিস্তি হয়তো অনেক দেওয়া যাবে। গেলো ঈদুল ফিতরে যতোটা ভোগান্তির আশঙ্কা করা হয়েছিল ততোটা হয়নি। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। নৌপথে ঈদের আগে পরে বালু বোঝাই লঞ্চ বন্ধ করা গেলেও এবার সড়কপথে ট্রাক বন্ধ করা যাবে না। কারণ এই পথেই আসবে ট্রাকে করে আসবে অধিকাংশ কোরবানি পশু। এই ট্রাক চলাচল আরো বাড়িয়ে দেবে পথের দুর্ভোগ। 

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এরই মধ্যে জানিয়েছেন, ঈদের দশ দিন আগেই সব সড়কের সংস্কার কাজ শেষ হবে। সড়ক ও জনপদ বিভাগও বলছে, ২৬ আগস্টের মধ্যে সব সড়ক চলাচল উপযোগী হবে। কিন্তু ভরসা কোথায়? হাইওয়ে পুলিশ বলছে, মহাসড়কের কাজ দ্রুত শেষ করতে না পারলে ঈদ যাত্রায় ভোগান্তি হবে। তবে সবকিছু মিলিয়ে যেটা মনে হচ্ছে, এবার সড়কপথে যাত্রা হবে চরম ভোগান্তির। সেটা হয়তো মানুষ আগেই বুঝেছেন। সে কারণে বাসের টিকিট কেনার জন্য লাইন নেই আর মালিকরা কমিয়ে দিয়েছেন বাসের সংখ্যাও। কেন সড়কের এই বেহাল দশা। সরকারি কর্মকর্তারা দোষ চাপান বৃষ্টির ওপর। কিন্তু বাস্তবতা হলো প্রতিবছর রাস্তা মেরামত হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ও নিম্নমানের কাজের কারণে ঠেকসই হয় না রাস্তাগুলো। মেরামতের নামে ইট-বালি ফেলা হয়। এতে লাভ কিছুই হয় না। দুর্ভোগ থেকেই যায়। তাহলে এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? প্রথম কথা হলো সচেতনতা আর দুর্নীতি তাড়ানো। শেষ মুহূর্তে এসে কেন আমাদের সংস্কার কাজের কথা মনে হয়? আর সেটা এমন সময় হয় যখন আবহাওয়া থাকে প্রতিকূল। আমাদের দেশে টানা বৃষ্টি হয়। এটা জানা কথা। এর সমাধানে প্রথমেই নজর দিতে হবে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে। প্রয়োজনে পাম্প বসাতে হবে, যাতে দ্রুত সময়ে পানি নিষ্কাশন করা যায়। কারণ পানি জমে থাকায় রাস্তা ভেঙে খানা-খন্দ হয় দ্রুত। এরই মধ্যে রাস্তার অবস্থা দেখে আতঙ্ক জেগেছে জনমনে। আরও আতঙ্কের কথা হচ্ছে মেরামতের নামে সুরকির সঙ্গে মেশানো হচ্ছে বালির বদলে মাটি। এমন চিত্র দেখানো হয়েছে টেলিভিশনগুলোতে। প্রকৃতপক্ষে হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়ে সড়কপথে যেতে হবে তাই বাসের প্রতি অনীহা অনেকের। কিন্তু এরপরও যদি উপায় না থাকে তখন? সচেতন হওয়া ছাড়া উপায় নেই। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ হয়তো কম ভাড়ার কারণে ফিরবেন ফিটনেসবিহীন গাড়ি বা ট্রাকে করে। ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়বে বৈকি! এরপরও শেষ সময়ে এসে বলা যায়, রাস্তা দ্রুত সংস্কারের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে প্রশাসন বা সরকার সংশ্লিষ্টদের কাজে লাগানো যেতে পারে। পুলিশ প্রশাসন সহায়তা করতে পারে যানজট নিরসন বা উল্টোমুখে গাড়ি চালানো, বিকল গাড়ি দ্রুত সরিয়ে নেওয়া বা কোনও প্রয়োজনে বিপদাপন্ন মানুষের কাছে ছুটে যাওয়া। তবেই সড়কপথে যাত্রায় এবার যে আশঙ্কা করা হচ্ছে তা হয়তো কিছুটা স্বস্তির হবে। পরিবারের সবাইকে নিয়ে কোরবানি পালন করতে পারবে বা ফিরতে পারবে আপন কর্মস্থলে। 

লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক

[email protected]  

 

.

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
দুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টিদুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
লোকসভা নির্বাচন: প্রথম ধাপে পশ্চিমবঙ্গের ৩ আসনে ভোট আজ
লোকসভা নির্বাচন: প্রথম ধাপে পশ্চিমবঙ্গের ৩ আসনে ভোট আজ
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ