X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আমার দুর্গা

তুষার আবদুল্লাহ
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৩:৩০আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৩:৩৬

তুষার আবদুল্লাহ আশ্বিনের শুভ্রকাশ, মেঘ রঙ নদীতে আকাশ নীল আঁচল দেখে আমার বোধন হয় না। নবপত্রিকা কোন তিথি ধরে করতে পারি না। জীবন চক্রে যখনই রোদ কমে আসে। ছায়ায় শীতলতার চেয়ে অন্ধকারের আলো থাকে তীব্র তখনই আমার অকালবোধন। আমার দুর্গা কন্যার কাছে গিয়ে আলোর বর নেই। সবুজ পাতা থেকে যেমন করে শুয়ো পোকা প্রজাপতি হয়ে উড়াল দেয়, তেমন করেই আমার দুর্গার কাছে প্রণীত আমি পেয়ে যাই জীবনকে উড়িয়ে দেওয়ার শক্তি। কফি পেয়ালার মতো তিতে স্বাদ নিয়ে কখনও কখনও যাপনের জীভে এসে জমে যায় জীবন। দশদিকের বাতি কী করে আঁধার নামাতে পারে, তারই কুজকাওয়াজ প্রাত্যহিকে। সেখান থেকে আবার জীবনকে অভিবাদন জানাতে প্রণীত আমি প্রিয়তমার কাছে। যৌথ মন্ত্র পাঠে কাঁচের ঝালর ভেঙে প্রকাশিত হয় মাটিরং আঁচল, সেখানে স্বরলিপি লিখি জীবনানন্দের। দ্বিধা-দ্বন্দ্ব-ধিক্কারে দেয়ালগুলো একের পর এক ভেঙে যাওয়াতো প্রয়াত জননী, সেই দুর্গার প্রণোদনাতেই। মনঠাকুরের ঘরে অনির্বাণ ভগ্নি দুর্গার সৌরভ।
আমার দুর্গারা কেউ দশহাতের নন। তারা মানবী, দুই হাত তাদের সম্বল। সেই দুই হাত যেনো সাত মহাদেশ এবং পাঁচ মহাসাগর। তাদের কাছে প্রত্যাশা মহাদেশ, মহাসাগর তুল্য। মায়ের কাছে অসীম চাওয়া। আশ্রয়-প্রশয়, সংসারের ভেতর-বাহির সবই সামলাতে হবে তাঁকে। তিনি দুর্গা, কোনও কিছুতেই তাঁর না বলতে নেই। মা বলেই নিজেকে নিঃস্ব করে মহাসাগরের মতো নিজেকে কেবল নিবেদিতই করবেন তিনি। তাঁর চোখে জল জমতে নেই। ক্লান্ত হয়ে শুস্ক হতেও তার বারন। যিনি প্রিয়তমা, সতের-আঠার-উনিশ-বিশ কিংবা একুশ শতকে তার কাছে দাবির ফাইল কমেনি বরং বেড়েই চলছে। সেই ফাইল এখন আর তিনি দশ হাতে সামাল দিতে পারছেন না। প্রিয়তমা ঘরের প্রতি বর্গফুটের জন্য জবাবদিহিতে বাধ্য, চৌকাঠ পেরিয়ে পুরো পৃথিবীর ব্যাকরণ তাঁর জানা থাকতে হবে। নাহলে পৃথিবীর ভুল ঘাড়ে চেপে বসবে যে তারই। এই দুর্গার যে কোনও ঘর, তাঁর নিজের মনঠাকুর ঘর আছে কিনা? পৃথিবী সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি আজও। এই এক প্রশ্নে গোলক বিব্রত। উত্তর মিলুক কিংবা নাই মিলুক আমার প্রিয়তমা দুর্গাকেও নিবেদনের রঙিন আঁচল বিছিয়েই রাখতে হয়। চোখের কাজল, কপালের টিপে বিষন্নতার মেঘ ঢলে পড়তে বাধ সাধে ‘দায়িত্ব’ নামক প্রশস্ত দেয়াল। ভগ্নি দুর্গাও সেই দেয়ালে মাথা কুটে মরে।

আমার কন্যা দুর্গতনাশিনী। মর্তে আগমনের আগেই যেন তাকে সহস্র হাতে প্রতিমা কল্পনা করে বসে আছি। দুর্গাকে আমার বাংলা, ইংরেজির স্বরস্বতী হতে হবে।

জীবনের সকল সিঁড়িতে পেতে হবে জিপিএ-৫ বা আরও বেশি কিছু। বাজারে তাকে প্রবেশ করতে হবে লক্ষী প্রতিমা হয়ে। শুধু বিদ্যাপাঠ করলেই হচ্ছে না, জলে-স্থলে, পথে-মঞ্চে-বোকাবাক্সে হতে হবে তাকে চিরবিরাজমান। দুর্গার কাছে আমার আবদারই শেষ আবদার নয়। অসুরের সহস্র বেসুর রিপুর রষানলে আমার দুর্গা। পণ্যের উপনিবেশে বসত করে নিত্য বিশ্বায়নের যে মন্ত্র পাঠ করে যাচ্ছি, সেখানে আমার দুর্গা হাজার হাতে কুলিয়ে উঠতে পারবে কিনা বলা মুশকিল।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

এসএএস

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ