X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

গরিবের কেউ নেই

তুষার আবদুল্লাহ
০৭ অক্টোবর ২০১৭, ১২:২৪আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০১৭, ১৪:১২

তুষার আবদুল্লাহ গ্রীষ্মের দাবদাহে বগুড়া শহরে ছিলাম তিনদিন। শহরে ঘুরে বেড়াতে ব্যবহার করেছি ব্যাটারি চালিত রিকশা এবং অটো। যখন যেটি সামনে পেয়েছি উঠে বসেছি। শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে, চোখ পড়তো বিভিন্ন মোড়ে লাঠি হাতে দাঁড়ানো মানুষগুলো বেধড়ক পেটাচ্ছে রিকশা এবং অটোচালকদের। দুই-একবার ভেবেছি আইন অমান্য করার জন্য হয়তো প্রকাশ্যে এমন শাস্তি দিচ্ছে। যাদের হাতে লাঠি তারা কখনও কখনও ট্রাফিক এবং পুলিশের পোশাকেও ছিলেন। আবার স্রেফ লুঙ্গিপড়া মানুষও দেখেছি। ক্ষোভ এবং কৌতুহল নিয়েই জানতে চেয়েছিলাম অটোচালকের কাছে, ঘটনা কী? জানা গেলো- বগুড়া শহরে প্রকাশ্যেই অটো এবং ব্যাটারি চালিত রিকশা থেকে চাঁদা নেওয়া হয়। কোনও কোনও রাস্তা দিয়ে যতোবার যাওয়া ততবার দশ টাকা। না দিলেই প্রকাশ্য বেত্রাঘাত।
রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে পুলিশ নাকি এর অংশীদার। বৈধ এবং অবৈধ অটো এবং রিকশা নাকি প্রায় সমান। এই স্বীকারোক্তি বাহক চালকদেরই। বৈধ-অবৈধ উভয়েই টাকার বিনিময়ে পথে টিকে আছে। এই টিকে থাকা সকল জেলা এবং বিভাগীয় শহরেই। কেবল যে অবৈধ অটো এবং রিকশা টিকে আছে তা নয়। বাস-মিনিবাস থেকে শুরু করে দালানও অবৈধ স্বীকৃতি নিয়েই টিকে আছে। তবে এই টিকে থাকার মধ্যে তফাৎ আছে। নিয়মিতভাবেই ঢাকাসহ সারাদেশে দেখা যাবে ব্যাটারি চালিত রিকশা এবং অটোর বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। ট্রাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, রিকশা অটো, আবার কখনও কখনও দৃশ্যমান বাহবা পেতে প্রশাসন, পৌরসভা বা সিটি করপোরেশন ওই অবৈধ বাহনগুলোকে বুলডোজারের নিচে ফেলে পিষে দিচ্ছে। ওই বাহনগুলোই বুলডোজারের নিচে নিক্ষিপ্ত হয়, হচ্ছে যাদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠনের তকমা নেই বা কোনও রাজনৈতিক নেতার মালিকানার বাইরের বাহন। কেউ কেউ এনজিও বা সমিতির ঋণের টাকা দিয়ে আয়ের পথ বের করতেই এই বাহন হয়তো কিনেছিল। সঙ্গে ক্ষমতার জোর না থাকাতে তার বাহনটিই হয়তো কেড়ে নেওয়া সহজ হয়েছে।

আমরা সম্প্রতি ফেসবুকে বগুড়ার এমন কয়েকজন নিঃস্ব, গরিব মানুষের অসহায় মুখ দেখতে পেয়েছি। যদিও প্রায় নিয়মিত ঢাকার বিভিন্ন ট্রাফিক সিগনালে এমন বেশ কিছু অসহায় মানুষের কান্না দেখতে পাই।

নব্য নগর এবং বড় শহরের নাগরিকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে বলতে পারেন- যানজট তৈরি করে শহরটাকে নষ্ট করে দিয়েছে এসব ব্যাটারি চালিত রিকশা, অটো এবং সেই আদি রিকশার ভিড়। তাদের সঙ্গে দ্বিমত করবো না। সহমত আমার। সঙ্গে দুটি জিজ্ঞাসা। এক. সাধারণ নগরবাসীর জন্য আজো কেউ গণপরিবহনের ব্যবস্থা করতে পেরেছে? বক্তৃতা, সেমিনার এবং ফর্মুলা কম হয়নি। ঢাকা এবং চট্টগ্রামের কথা তুলে রাখলাম। এ দুটো পুরনো শহর। নতুন যারা সিটি করপোরেশন হলো, সেখানে শুরুতেই কেন পরিকল্পিত গণপরিবহন ব্যবস্থা করা গেলো না? দুই. শহরে যে অবৈধ, মেয়াদ উত্তীর্ণ, বিবর্ণ বাসা-মিনিবাস চলাচল করছে বছরের পর বছর ধরে, আস্তাকুঁড়ে ফেলে দেওয়ার মতো লেগুনা, টেম্পু ও ভাড়ার মাইক্রোবাস চলছে সেগুলোকে কি বুলডোজারে নিক্ষেপ করা গেলো? ব্যস্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা কভার্ডভ্যান, মিনি-ট্রাককে কখনও বুলডোজারের সামনে পড়তে হয়েছে? হয়নি। কারণ এই বাহনগুলোর পেছনে আছে বড় পুঁজি। বড় মানুষ, ক্ষমতাবান মানুষ অর্থাৎ বড়লোক। আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র যেভাবে ফুলে ফেঁপে বড় হচ্ছে সেখানে বড়লোকের কোনও ঝুঁকি, ভয় নেই। তারা বেপরোয়া হয়েছে, আরো হবে। কিন্তু গরিব? ওরা টিকে থাকতে পারবে না। তাকে আরও গরিব হতে হতে অন্ধকারে মিশে যেতে হবে। তাদের পিষ্ট হতে হবে বড়লোকের ক্ষমতার কাছে। গরিবকে কখনও বড়লোক রক্ষা করেনি। বগুড়ার যে তরুণ ব্যাটারি চালিত রিকশা চালকের সর্বস্বহারা মুখচিত্র দেখেছি, বড়লোকেরা সেই মুখচিত্র দেখবে তামাশা দেখার মতোই গরিবকে কোনও বড়লোক বাঁচায়নি। বাঁচিয়েছে এমন ইতিহাস শুনিনি। গরিবের হাত এসে ধরে আরেকটি গরিব হাত। সেই হাতগুলোর সম্মিলিত ঐক্যই গরিবকে টিকিয়ে রাখতে পারে, দিতে পারে তিনবেলা অন্নের ইশতেহার। যা কখনও মিথ্যে হয় না।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

এসএএস/টিএন

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
দেশে তিনদিনের হিট এলার্ট জারি, সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান
দেশে তিনদিনের হিট এলার্ট জারি, সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
তিন লাল কার্ডের ম্যাচে মোহামেডানের খেলতে অস্বীকৃতি, আবাহনীকে জয়ী ঘোষণা
তিন লাল কার্ডের ম্যাচে মোহামেডানের খেলতে অস্বীকৃতি, আবাহনীকে জয়ী ঘোষণা
প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে নিজেকে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি, গ্রেফতার ১
প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে নিজেকে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি, গ্রেফতার ১
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ