X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমারের সঙ্গে শক্ত অবস্থানে থাকতে হবে বাংলাদেশকে

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী
১২ অক্টোবর ২০১৭, ১৪:১১আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০১৭, ১৪:২১

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী বাংলাদেশ উন্নয়নের ‘ট্রানজিশনাল’ স্তরে রয়েছে। লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা ‘শরণার্থীর’ আগমন বাংলাদেশকে অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলেছে। প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফর থেকে ফিরে বললেন, মিয়ানমার নাকি বাংলাদেশের সঙ্গে যুদ্ধ লাগানোর পাঁয়তারাও করেছিলো। বিশ্বের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানোর জন্য অনুরূপ পদক্ষেপ অস্বাভাবিক ছিল না।
আসলে মিয়ানমার একটা অস্বাভাবিক দেশ। যে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় কুয়েতের সমান থাকার কথা ছিল, সে দেশের মানুষের পানের জন্য স্বচ্ছ পানি, স্বাস্থ্যসেবার কোনও ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সরবরাহসহ কোনও কিছুরই নিশ্চয়তা নেই। প্রচুর ধান উৎপাদন হয়। বিরাট দেশ শুধু ৫.৫ কোটি মানুষের বাস। তাই ভাতের অভাব হয় না। অথচ দেশটাতে প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদে ভরপুর।
১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর থেকে শুধু বিদেশে চাল বিক্রি করে চলার ব্যবস্থাটা করেছে মাত্র। খনিজ সম্পদ আহরণের কোনও চেষ্টা করেনি। করবে কিভাবে ১৩৫টি জাতিগোষ্ঠী রয়েছে মিয়ানমারে– তারা সবাই স্বাধীনতা চায়। উনু যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে একটা শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছিলেন। কিন্তু ১৯৬২ সালে যখন জেনারেল নে উন রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেন তখন তিনি আলাপ-আলোচনার পথ ত্যাগ করে দমন-পীড়নের পথ বেছে নেন। সামরিক জান্তা এখনও সে পন্থা অব্যাহত রেখেছে।

বর্তমানে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ৫ লাখ লোক আছে যারা সামরিক বাহিনীর অত্যাচারে ভিটে মাটি ছাড়া। তারাও শরণার্থীর মতো। ২০টি খুবই শক্তিশালী বিদ্রোহী জাতিগোষ্ঠী রয়েছে যারা সারা বছরব্যাপী মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। কচিন গোষ্ঠীর গেরিলার সংখ্যা ২০ হাজার। অনুরূপ প্রত্যেক শক্তিশালী জনগোষ্ঠীর গেরিলা বাহিনী রয়েছে। এ গেরিলা গোষ্ঠীর কারণে কখনও মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় শাসন দেশের সর্বত্র প্রতিষ্ঠা লাভ করেনি। সামরিক জান্তার কায়েমী স্বার্থ সর্বত্র সুপ্রতিষ্ঠিত। দেশটাকে লুটে খাচ্ছে তারা। এশিয়ান রিভিউ বলেছে দেশটার ব্যাংকিং ব্যবস্থা নাকি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের ১৩৫ নৃ-তত্ত্ব জনগোষ্ঠীর মাঝে নেই। তারা আরাকানের মুসলমান। উনুর সময়ে তাদের ৪ জন প্রতিনিধি ছিল মিয়ানমারের পার্লামেন্টে। কিন্তু সামরিক জান্তা তাদের নাগরিকত্ব রহিত করে দেয় এবং তারা বাংলাদেশি লোক এ অজুহাতে তাদের উচ্ছেদ করা আরম্ভ করে।

গত ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গার বস্তিতে আগুন দেওয়া। নারীদের শ্লীলতাহানী, হত্যা ইত্যাদি আরম্ভ করলে প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এখনও নির্বিচারে ঘর-বাড়িতে আগুন দিচ্ছে, হত্যা করছে। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা বলছে ২/১ মাসের মাঝে উদ্বাস্তু ১০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। মিয়ানমারের সরকার বলছে রোহিঙ্গা সামরিক উইং আরাকান সেলভেশন আর্মি নাকি ৩০ টি সীমান্ত চৌকি আক্রমণ করে মিয়ানমারের পুলিশ ও সেনাবাহিনী হত্যা করেছে। এ কথাটার সত্যতা কেউ যাচাই করেনি। আর আরাকান সেলভেশান আর্মি সত্যিই যদি ৩০টি চৌকি এক সঙ্গে আক্রমণ করে, তবে তো বলতে হয় সেলভেশান আর্মিও শক্তিশালী।

নির্বিচারে রোহিঙ্গা নিধনে সমগ্র বিশ্ব সোচ্চার হয়ে ওঠে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন এবং সমস্যাটা সমাধানের জন্য পাঁচ দফা প্রস্তাবও উত্থাপন করেন। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট প্যারিসে অধিবেশনে বসে ২২ দফা প্রস্তাব গ্রহণ করে এবং মিয়ানমারের ওপর বাণিজ্য অবরোধের প্রস্তাব করে জার্মান সরকার মিয়ানমারের সঙ্গে তার বাণিজ্য শীতল করে ফেলে।

যুক্তরাজ্য মিয়ানমারের সেনা বাহিনীর প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর এ হত্যাকে জাতিগত নিপীড়ন বলে অখ্যায়িত করে তাদের বিচার দাবি করে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টও রোহিঙ্গা হত্যাকাণ্ডকে জাতিগত নিপীড়ন ও গণহত্যা বলে উল্লেখ করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিচার দাবি করেছেন।

জাতিসংঘের মহাসচিব গুদরেচ তো খুবই সোচ্চার ছিলেন রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে। তিনিও এটাকে জাতিগত নিপীড়ন বলেছেন। সমগ্র বিশ্বজনমত রোহিঙ্গাদের পক্ষে থাকার পরও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বা সাধারণ পরিষদ কেউই মিয়ানমারের রোহিঙ্গা হত্যা ও বিতাড়ন বন্ধের জন্য কোনও কার্যকরী প্রস্তাব চীন/রাশিয়ার ভেটোর হুমকিতে গ্রহণ করতে পারেনি। মানবতা দেখানো শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর অন্যতম গুণ হওয়া প্রয়োজন। না হয় বিশ্ব শৃঙ্খলা বিপর্যস্ত হবে। ভূ-রাজনীতির স্বার্থে চীন, রাশিয়া, ভারত আজ মানবতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

চীন ভারত বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় বন্ধু। সাধারণ পরিষদে তাদের প্রতিনিধিরা যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে রোহিঙ্গার কথা একবারও বলেনি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ জাতিসংঘের চত্বরে সাক্ষাৎ করে উভয় দেশের দৃঢ় বন্ধুত্বের কথা বলেছেন। কিন্তু তার বক্তৃতার সময় একটি বাক্যও রোহিঙ্গা নিয়ে ব্যয় করলেন না।

অং সান সু চি তার দফতরের একজন মন্ত্রী পাঠিয়েছিলেন ঢাকায়। মন্ত্রী বলেছেন তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে তবে উভয় রাষ্ট্রের মাঝে ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। বিশ্ব জনমত উপেক্ষা করতে না পেরে মিয়ানমার মন্ত্রী পাঠিয়েছেন আসলে রোহিঙ্গা ফেরত নেওয়ার কোনও সৎ উদ্দেশ্য তাদের নেই। কারণ মন্ত্রী সফর শেষ করে মিয়ানমার ফিরে গেছেন কিন্তু এখনও নিধন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়নি রাখাইনে– সৈন্যবাহিনী নাকি এখনও মাইকিং করে বলছে বাংলাদেশ সীমান্ত খোলা রাখা হয়েছে ‘তোমরা বাংলাদেশ চলে যাও’।

সম্ভবতো রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নিঃশেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা বিতাড়ন অব্যাহত রাখবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে মিয়ানমারের মন্ত্রী বৈঠক করার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ৭/৮ মিনিটের একটা প্রেস ব্রিফিং করেছিলেন তাতে কিন্তু মিয়ানমারের মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন না। তাকে উপস্থিত করতে না পারা আমাদের একটা ব্যর্থতা। মনে হচ্ছে যে বিশ্ব জনমতের যে চাপ সৃষ্টি হয়েছিলো তা হয়ত বা ধীরে ধীরে মিয়ানমার উপেক্ষা করছে এবং শেষ পর্যন্ত সব কিছুর ব্যাপার মিয়ানমার পুনরায় নির্বাক হয়ে থাকবে। মিয়ানমার নির্বাক হলে সহজে মুখ খোলানো যায় না।

কোনও কূটনৈতিক শিষ্টাচারও মিয়ানমার মেনে চলে না। রোহিঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশ তিন বৃহৎ রাষ্ট্রের বৈরিতার মুখে পড়েছে। সুতরাং বিশ্বজনমত রোহিঙ্গাদের পক্ষে থাকার পরও বাংলাদেশকে সংযত আচরণ করতে হচ্ছে কিন্তু মনে রাখতে হবে ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা যদি শেষ পর্যন্ত ১০ লাখ ছাড়িয়ে যায় তাহলে পূর্বের আসা রোহিঙ্গা সহ তখন বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া সর্বমোট রোহিঙ্গার সংখ্যা হবে ১৪/১৫ লক্ষ অর্থাৎ ছোটখাট একটা দেশ।

বাংলাদেশের অর্থনীতি এ ধাক্কা কী পরিমাণ সামাল দিতে পারে তা বিশেষজ্ঞদের চিন্তা করার বিষয়। আমরা খেলে তারাও খাবে- এটা মানবতার কথা। কূটনীতির কথা এটা নয়। কূটনীতির পথে চলে এ সমস্যার আশু সমাধান করতে হবে। ১৯৯২ সালের চুক্তিকে ভিত্তি ধরে কোনও আলোচনা হতেই পারে না। ১৯৯২ সালের চুক্তি মিয়ানমার বারবার ভঙ্গ করেছে। কফি আনান কমিশন গঠনের প্রস্তাব বাংলাদেশ দেয়নি।

কফি আনান কমিশন গঠন করেছে মিয়ানমার সরকার। আনান কমিশনের রিপোর্ট পেশ এবং ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে নির্বিচারে রোহিঙ্গা হত্যা, মেয়ে লোকের শ্লীলতাহানী, রোহিঙ্গা বিতাড়ন এবং বাংলাদেশ আজ পর্যন্ত নতুনভাবে ৫/৬ লাখ রোহিঙ্গার আগমন সম্পূর্ণ প্রেক্ষাপটই পরিবর্তন হয়ে গেছে। সুতরাং কোনোভাবেই ১৯৯২ সালের চুক্তির প্রসঙ্গই এখন আসতেই পারবে না রোহিঙ্গাদের নিয়ে নতুন চুক্তিই হতে হবে এবং ১৯৯২ সালের চুক্তি ছিল দ্বিপাক্ষিক চুক্তি। দ্বিপাক্ষিক চুক্তি কার্যকরী করার ব্যাপারে মিয়ানমার বারবার চালাকির আশ্রয় নিয়ে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। সুতরাং এখন রোহিঙ্গাদের বিষয়ে যে কোনও চুক্তি জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় হতে হবে। এবং চুক্তির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হবে কফি আনানের সুপারিশ বাস্তবায়ন।

রোহিঙ্গার পরিচয়পত্র নিয়ে কোনও প্রসঙ্গই আলোচনায় আসতে পারে না কারণ রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব রহিত করায় তাদের কাছে কোনও কাগজপত্রই নেই আর রোহিঙ্গারা এসেছে এক কাপড়ে তাদের বাড়িঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সুতরাং তাদের কাছে কাগজপত্র থাকার কোনও প্রশ্নই আসে না। বাংলাদেশকে এসব বিষয়ে পরিষ্কার কথা বলতে হবে। এবার সমস্যা সমাধানের জন্য যদি মিয়ানমার বসে তবে স্থায়ী সমাধানে পৌঁছতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজন মনে করলে রাশিয়া-চীন সফর করে তাদের কাছে রোহিঙ্গা বিষয়ে সাহায্য চাইতে পারেন। সরকার গণহত্যার বিষয়টা কেন খোলামেলাভাবে বলছে না বুঝে আসছে না, যেহেতু জাতিসংঘের মহাসচিব জাতিগত নিধন বলেছেন, আমেরিকা গণহত্যার কথা বলছে, সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্টভাবে ফ্রান্স গণহত্যা বলছে। সুতরাং বাংলাদেশও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার বিচার দাবি করতে পারে। এ দাবি ছাড়া মিয়ানমারকে চাপে ফেলা যাবে না।

মিয়ানমার রোহিঙ্গা সমস্যার কোনও গঠনমূলক সমাধানে আসবে না। সৌদি বাদশা রাশিয়া সফরে গিয়ে রোহিঙ্গাদের প্রশ্ন পুতিনের কাছে তুলেছেন। তুরস্কের এরদোয়ানও ইরানের প্রেসিডেন্ট রুহানীকে দিয়েও প্রসঙ্গটি পুতিনের কাছে তুলতে হবে। আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত না থাকলে মিয়ানমার কখনও এ সমস্যা সমাধান করবে না।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মিয়ানমারের মন্ত্রীর বৈঠকের সময় নাকি বলা হয়েছে আরাকান সেলভেশন আর্মিকে উভয় দেশ-উভয় দেশের শত্রু মনে করবে। অনুরূপ প্রতিশ্রুতি দেওয়া আপাতত কোনোভাবে সঠিক পদক্ষেপ বলে বিবেচিত হতে পারে না এবং জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়েও কোনও পৃথক চুক্তি হতে পারে না। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর মিয়ানমার সফরের সময় যেন অনুরূপ কোনও কিছু না হয়। সবকিছুর সঙ্গে রোহিঙ্গার ফেরৎ নেওয়ার বিষয় জড়িত। সম্পূর্ণ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ফেরত নিতে সম্মত হয়ে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার প্রশ্ন আসলেই অন্যসব চুক্তি সম্পাদনের প্রশ্ন শুধু উত্থাপিত হবে। এর আগে নয়। বাংলাদেশ যেন তা বিস্মৃত না হয়।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক

[email protected]

এসএএস

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
কান উৎসব ২০২৪জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ