X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

সুষমার সঙ্গে বৈঠক: হতাশ বিএনপি

স্বদেশ রায়
২৩ অক্টোবর ২০১৭, ১৩:০৩আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০১৭, ১৩:০৯

স্বদেশ রায় হোটেল সোনারগাঁওয়ে খালেদার নেতৃত্বে বিএনপি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সুষমা স্বরাজের বৈঠক শেষ হওয়ার পরে দশ মিনিটও পার হয়নি, বিএনপির এক নেতা ফোন করে বললেন, আপনার কথা তো ঠিক হলো, ম্যাডামের সঙ্গে তো সুষমা স্বরাজের একান্ত বৈঠক হলো না। তার মানে আমরা কি ধরে নেব এ বৈঠক ব্যর্থ। তাকে বলি, দেখুন এটা আপনাদের দলীয় বিষয়, বৈঠক সফল হয়েছে- কী ব্যর্থ হয়েছে তা আপনাদের দলীয় ফোরামে মূল্যায়ন হবে। একজন সাংবাদিক হিসেবে বর্তমানের আঞ্চলিক রাজনীতির বাস্তবতায় যা বুঝেছিলাম সেটাই আপনাকে বলি যে, খালেদা জিয়ার সঙ্গে একান্ত বৈঠক করে সুষমা স্বরাজ বাড়তি কোনও সিগন্যাল বিএনপিকে দেবেন না বা দিল্লিও দেবে না। তাছাড়া আপনারা উৎসাহিত হয়েছিলেন আনন্দবাজার পত্রিকা পড়ে। এই পত্রিকাটি বাস্তবে ভালো স্টোরি তৈরি করতে পারে। তাদের রিপোর্টাররা ‘গুড স্টোরি টেলার’। তবে সুষমা স্বরাজ আসার আগের দিন রাতেও দিল্লি ও কলকাতার বেশ কয়েকজন বিজেপি ঘনিষ্ট সিনিয়র সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছিলো ২০১৪ থেকেও এখন বিএনপির প্রতি আরও কঠোর অবস্থানে দিল্লি। তাই ২০১৪ সালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ১০ মিনিট একান্ত বৈঠক হলেও এবার হবে না।

বিএনপির ওই নেতা তখন জানতে চান, দিল্লির এই কঠোর অবস্থানের কারণ কী? তাকে বলি, দিল্লি কী কারণে কঠোর অবস্থানে গিয়েছে সেটা দিল্লির নীতি নির্ধারকরাই ভালো জানেন। তবে সাংবাদিক হিসেবে যা বুঝি তা  অতি সোজা-সাপ্টা। দিল্লিও আমেরিকার মতো– তারা কখনই তারেক রহমানকে মেনে নেবে না। অন্যদিকে বাংলাদেশে এই রোহিঙ্গা শরণার্থী আসার পরে দিল্লি বা আমেরিকার কোনও উপায় নেই বিএনপিকে মেনে নেওয়া বা বিএনপিকে বিন্দুমাত্র সুযোগ দেওয়া। বরং দিল্লি ও আমেরিকা তাদের সব শক্তি দিয়ে চেষ্টা করবে কিভাবে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখা যায়। অনেক আগেই লিখেছি, ২০০৭ সালে আমেরিকার এক কূটনীতিক ব্যক্তিগত আলোচনায় বলেছিলেন, তারেক রহমানকে তারা কখনও বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায় না। অন্যদিকে দিল্লির সিকিউরিটি এক্সপার্টদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে কথা বলার সময় বুঝেছি, তারা তারেক রহমান ও পরেশ বড়ুয়ার ভেতর খুব বেশি পার্থক্য দেখতে পায় না। বরং পরেশ বড়ুয়ার থেকে তারা তারেক রহমানকে নিয়ে আরও বেশি উদ্বিগ্ন। এবং তারা তাদের ইন্টারনাল সিকিউরিটি ক্ষেত্রে তারেক রহমানকে অনেক বড় হুমকি মনে করে।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে ২০১৪ সালে কেন সুষমা স্বরাজ বেগম জিয়ার সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেছিলেন আর এবার কেন করলেন না?  সেবার তুলনামূলক ভালো সিগন্যাল দিলেও এবার কেন দিলেন না? এ প্রশ্নের উত্তর দিল্লির নীতি নির্ধারকরা ভালো জানেন, সুষমা স্বরাজ জানেন। তবে সাংবাদিক হিসেবে বিভিন্ন সময়ে দিল্লি গিয়ে বা প্রায় সব সময় টেলিফোনে কিছু কথাবার্তা বলে যা জানতে পেরেছি, ২০০৭ থেকে এখনও অবধি বিএনপির পক্ষ হয়ে বেশ কিছু সাবেক কূটনীতিক, সাবেক সামরিক বাহিনীর সদস্য ও কয়েক সম্পাদক ও সাংবাদিক সেখানে নানান সময়ে কথা বলেছে। ২০০৭ , ২০০৮ বা  ২০০৯ এর দিকে তারা ধারণা দিয়েছিলেন, বেগম জিয়া আর তারেক রহমানকে রাজনীতিতে আনবেন না। তিনি ভিন্ন ভাবে বিএনপিকে সাজাবেন। এ ধারণা তারা কিছুদিন আগে অবধিও দিল্লিকে দিয়েছে। এমনকি গত এপ্রিলে যখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দিল্লিতে যাই তখন অনেকে প্রশ্ন করেছিলেন, এই সব সম্পাদক ও সাবেক কূটনীতিকরা যে কথা বলছেন তা কতটা সত্য। বিনয়ের সঙ্গে তাদের বলি, দেখুন তারা অনেক বড়। তাদের কাছে অনেক বেশি সংবাদ থাকে। তবে বাস্তবতা হলো এখনও বিএনপি চালাচ্ছেন তারেক রহমান লন্ডনে বসে। এবং তারেক রহমানকে চালায় পাকিস্তানি সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর লোকজন।

খালেদা জিয়া যদিও সুষমা স্বরাজের সঙ্গে এই বৈঠকের আশ্বাস পেয়ে দ্রুত লন্ডন থেকে ফিরেছেন। তবে তার লন্ডনে অবস্থান কালের যাবতীয় কাজ প্রমাণ করেছে তারেক রহমানই বিএনপির মূল নেতা এবং পাকিস্তানের বাইরে যাওয়ার কোনও সুযোগ তারেক রহমান ও বেগম জিয়ার নেই। তাই সুষমা স্বরাজ তার সঙ্গে দেখা করলেও এবার সিগন্যালটি ২০১৪ থেকে আরো নিচে নেমে গেছে। তাছাড়া দিল্লির নীতি নির্ধারকরা খুব ভালো ভাবে জানেন, বিএনপির কোনও ক্রমেই পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর হাত থেকে বের হয়ে আসার উপায় নেই। এ অবস্থায় বাংলাদেশে বিএনপি ক্ষমতায় আসার অর্থ হলো ভারতের জন্যে আরেকটি পাকিস্তান খাড়া হয়ে দাঁড়ানো। এমনিতে বাংলাদেশ সৃষ্টির পরে তৎকালীন পার্লামেন্টের বিরোধী দলীয় সদস্য, বিজেপি নেতা ও ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী পার্লামেন্টে ইন্দিরা গান্ধীকে বলেছিলেন, ইওর ফাদার ক্রিয়েটেড ওয়ান পাকিস্তান, ইউ ক্রিয়েটেড টু পাকিস্তানস। বিজেপি তখনও পার্টিগতভাবে বিশ্বাস করতো, মুসলিম প্রধান বাংলাদেশ মূলত পাকিস্তানের মতো একটা দেশ হবে।

একটি মুসলিম প্রধান দেশ যে আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হতে পারে এবং বর্তমানের জঙ্গি কবলিত বিশ্বে সে দেশটি যে জঙ্গি মুক্ত থাকতে পারে এই বিস্ময়কর কাজটি পৃথিবীতে করে দেখিয়েছেন শেখ হাসিনা। তাই বাংলাদেশের জন্যে শুধু নয়, একটি জঙ্গি মুক্ত সাউথ এশিয়ায় এখন শেখ হাসিনা এক অনিবার্য নেত্রী। এমনকি গোটা পৃথিবীতে তিনি এখন সব থেকে প্রয়োজনীয় এক রাজনৈতিক নেতৃত্ব। তার ওপরে বাংলাদেশে এ মুহূর্তে নতুন ও পুরাতন মিলে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী। রোহিঙ্গাদের একটি ক্ষুদ্র অংশের সঙ্গে পাকিস্তানি সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী আইএসআই এর যোগাযোগ আছে। অন্যদিকে রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মির নেতার সঙ্গে যোগাযোগ আছে ইসলামিক স্টেটের ( আই এস) এর নেতাদের। এমন অবস্থায় খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে যদি বাংলাদেশের মৌলবাদী গ্রুপ ক্ষমতায় আসে তাহলে আইএসআই সহজে এখানে ঘাটি গাড়বে। খালেদা জিয়ার কোনও ক্ষমতা নেই আইএসআইকে বাদ দিয়ে এক পা ফেলা। আর আইএসআই এলে তাদের পথ ধরে আইএস এখানে আসবে। এর অর্থ হলো এই দশ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর ক্যাম্প তখন আইএস এর একটি ডেন হবে। অন্যদিকে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে এই রোহিঙ্গারা কেবলমাত্র শরণার্থী হিসেবেই এখানে থাকবে। এবং যাবতীয় মানবিক সাহায্যের ভেতর দিয়ে তারা প্রতিপালিত হবে। সর্বোপরি তারা যাতে তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে সে চেষ্টা হবে। অন্যদিকে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় গেলে এই রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেই তখন আইএসআই ও আইএস মিলে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তার হুমকি স্থলে পরিণত করবে।

তাই বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায়, ভারত ও আমেরিকা কারো পক্ষে বেগম জিয়াকে কোনও ছাড় দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। বিশেষ করে প্রতিবেশী ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ভারতকে স্বাভাবিকভাবেই এখন আরো সজাগ হতে হবে বিএনপি সম্পর্কে। আর ভারত যে সেই সজাগই হয়েছে সে সিগন্যালটি দিয়ে গেলেন বিএনপিকে সুষমা স্বরাজ। বাংলাদেশের অনেক আর্ন্তজাতিক বিশ্লেষক ও কূটনীতিক বিশ্লেষক বলেন, ভারত কখনই বাংলাদেশে এক ঝুড়িতে তাদের সব ডিম রাখবে না। এটা অতি পুরনো দিনের কথা। এখন ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ কথা অচল। কারণ, শেখ হাসিনার মতো নেতা পাওয়ার পরে ভারতের জন্যে বিকল্প কোনও কিছু চিন্তা করার কোনও সুযোগ নেই। আর সেটা আবারও প্রমাণিত হলো সুষমা স্বরাজের সফরের ভেতর দিয়ে।

লেখক: সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার প্রাপ্ত সাংবাদিক

এসএএস

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
হাসপাতালের বদলে শিশুরা ঘুমাচ্ছে স্বজনের কোলে
হাসপাতালের বদলে শিশুরা ঘুমাচ্ছে স্বজনের কোলে
পারটেক্সের বিপক্ষে হেরে রূপগঞ্জ টাইগার্সের অবনমন
পারটেক্সের বিপক্ষে হেরে রূপগঞ্জ টাইগার্সের অবনমন
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
বিএনপির বিরুদ্ধে কোনও রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী
বিএনপির বিরুদ্ধে কোনও রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ