X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত?

বিভুরঞ্জন সরকার
২১ ডিসেম্বর ২০১৭, ১২:৪৯আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০১৭, ১২:৫১

বিভুরঞ্জন সরকার আগামী নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিত বলেই মনে হচ্ছে। ১৭  ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী দুর্নীতিবাজ, আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যাকারী এবং যুদ্ধাপরাধীদের মদদ দানকারী বিএনপিকে কখনও বাংলার মানুষ ভোট দেবে না, এরা আর কোনও দিন ক্ষমতায় আসতে পারবে না। জনগণই ক্ষমতায় আসতে দেবে না তাদের।’
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর ফ্রান্স সফরকালে গত ১২ডিসেম্বর প্যারিসে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সংবর্ধনা সভায় তিনি বেশ জোরের সঙ্গেই বলেছেন, ‘লোকজন যেহেতু আমাদের পক্ষে আছে, তাই আমরাই আগামী নির্বাচনে জিতব। মানুষ আমাদের ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে।‘ এর দুদিন আগে ঢাকায় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে এবং তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় তার পরিচালিত এক জরিপের তথ্য উল্লেখ করে বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অবশ্যই ক্ষমতায় আসবে। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের চেয়ে বেশি ভোট পাবে।‘
আগামী নির্বাচনের ফল সম্পর্কে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও তার ছেলে এবং উপদেষ্টা প্রায় অভিন্ন ভাষায় প্রবল আশাবাদ ব্যক্ত করায় রাজনৈতিক মহলে একই সঙ্গে বিস্ময় ও কিছুটা হতাশা দেখা দিয়েছে। বিস্ময় একারণে যে, আগামী নির্বাচনে মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে, এটা কীভাবে জানা গেল? সরকারের পক্ষে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনের কোনও লক্ষণ কি কোনও কারণে কোথাও দেখা গেছে? মানুষের কোনও জটলা, আড্ডা বা জমায়েতে কি এমন আলোচনা শোনা যায় যে, বিএনপিকে ভোট না দিয়ে মানুষ আওয়ামী লীগকেই ভোট দেবে? বিএনপি রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে দুর্বল অবস্থায় আছে, এটা ঠিক। কিন্তু বিএনপির সাধারণ সমর্থক ও ভোটাররা পক্ষ বদল করেছেন, এমন কোনও লক্ষণ কিন্তু দেখা যায়নি বা যাচ্ছে না। বরং এমন প্রচারণাই বেশি যে, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের ভোটযুদ্ধ জয় সহজ হবে না।

সজীব ওয়াজেদ জয় বিজ্ঞানভিত্তিক জরিপের কথা বলেছেন। কবে, কোথায়, কীভাবে, কতজন মানুষকে নিয়ে এই জরিপ পরিচালিত হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। সাধারণ যে জনমত দেখা যায়, তা থেকে কারোই এটা মনে হচ্ছে না যে ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় থেকে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। বরং টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় আওয়ামী লীগ এখন আগের মতো জনপ্রিয় নেই বলেই মনে করা হচ্ছে।

ক্ষমতায় থেকে কোনও রাজনৈতিক দলের পক্ষেই সব মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা-চাহিদা পূরণ করা যায় না। এমন কি নিজ দলের মধ্যে ও পাওয়া না-পাওয়ার বিরোধ প্রবল হয়ে ওঠে। আওয়ামী লীগের বেলায় এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কিছু ঘটেছে কি? বিএনপি সরকার বিরোধিতার নামে নাশকতামূলক কর্মসূচি দিয়ে, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে দোদুল্যমান নীতি নিয়ে অনেক মানুষের কাছে সমালোচিত হচ্ছে, এটা যেমন ঠিক, তেমনি এটাও ঠিক যে, এসব সত্ত্বেও বিএনপির প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখা মানুষের সংখ্যাও দেশে একেবারে কম নয়।

সাংগঠিক বিপর্যয় মোকাবেলা করে বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে পারছেনা। দলের মধ্যে মত বিরোধ, দ্বন্দ্ব, বিশ্বাসের সংকট সবই আছে। সবচেয়ে বেশি আছে মামলা-হামলার ভয়। কিন্তু ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগের মধ্যেও তো দ্বন্দ্ব-বিরোধ কম নেই। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা ও শক্ত কাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে আছে– এমন দাবি করা যাবে না। অনেক ধরনের প্রতিকূলতার মধ্যে থাকলে ও বিএনপির প্রতি জনসমর্থন যে বহাল আছে তার কিছু প্রমাণ সম্প্রতি পাওয়া গেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেখা ও ত্রাণ দেওয়ার জন্য কক্সবাজার গেলে তাকে দেখার জন্য জনসমাগম একেবারে কম হয়নি। সরকার ও সরকারিদল নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করে উল্টো সমালোচিত হয়েছে। প্রায় দুই বছর পর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শর্ত সাপেক্ষে জনসভা করার অনুমতি পেয়ে ও বিএনপি তাদের শক্তির পরিচয় দিতে পেরেছে বলেই রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা মনে করেন।

তাহলে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে আবারও ক্ষমতায় আসছে সেটা জোর দিয়ে বলার মতো পরিস্থিতি সত্যি দেশে আছে কি? যদি তা না থাকে তাহলে প্রধানমন্ত্রী এবং তার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা এত জোর দিয়ে ক্ষমতায় ফেরার কথা বলছেন কেন? এটা কি দলকে উৎসাহিত ও চাঙ্গা করার জন্য? নাকি বিএনপির মনোবল ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য? হয়তো একঢিলে দুই পাখি মারাই সরকারের লক্ষ্য। কিন্তু এতে সরকারের লাভের চেয়ে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।

বিএনপি নেতারা আগে থেকেই বলে আসছেন যে, সরকার চায়না বিএনপি নির্বাচনে  অংশগ্রহণ করুক। সরকার একটি প্রহসনের বা নীলনকশার নির্বাচন করতে চায়। এখন সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে নির্বাচনে জয়ের অবসম্ভ প্রায় বার্তা দেওয়ায় বিএনপির পক্ষে এটা প্রচার করা সহজ হবে যে, সরকার জয়ের ছক আগেই কষে রেখেছে। নির্বাচনটি হবে নামকাওয়াস্তে। তাছাড়া শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলে বিএনপির বক্তব্য অনেকের কাছেই আরও গ্রহণযোগ্য হবে। সরকারের জন্য একটি বিতর্কমুক্ত, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের চ্যালেঞ্জ থেকেই গেল।

আবার, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে কেউ হারাতে পারবেনা – এই আশ্বাস তৃণমূলে ভুল বার্তা দিতে পারে। এতে দলের মধ্যে একদিকে গা-ছাড়াভাব দেখা দিতে পারে, অন্যদিকে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার নামের তালিকাও দীর্ঘ হতে পারে।

তবে আশার কথা এটাই যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং তার উপদেষ্টা দুজনেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়টাকে শর্ত যুক্ত রেখেছেন। যারা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরবেই শুনে হতাশ হয়ে বলছেন, তাহলে আর নির্বাচনের প্রয়োজন কি তারা আশাবাদী হতে পারেন জয়লাভের শর্ত শুনে। সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ কাজ করলে কেউ হারাতে পারবেনা। ‘আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দলকে শক্তিশালী করতে ব্যক্তিগত ত্যাগ স্বীকারের মাধ্যমেই দলের সর্বস্তরে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নেতাদের মধ্যকার বিভক্তির কারণে ষড়যন্ত্রকারীরা সুযোগ পেয়ে যেতে পারে। ঐক্যবদ্ধ থাকলে তা কখনওই সম্ভব হবে না।‘

তাহলে কথাটা কি দাঁড়ালো? আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অবশ্যই ক্ষমতায় ফিরবে কিন্তু তার জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং ব্যক্তিগত ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে হবে। ঐক্য এবং ত্যাগের প্রশ্নেই সম্ভবত আওয়ামী লীগ বর্তমানে বড় সমস্যায় আছে।

লেখক: কলামিস্ট 

/এফএএন/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বৃষ্টির প্রার্থনায় বিভিন্ন জেলায় নামাজ আদায়
বৃষ্টির প্রার্থনায় বিভিন্ন জেলায় নামাজ আদায়
ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে শিশুসন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা
ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে শিশুসন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অ্যাম্বাসেডর বোল্ট
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অ্যাম্বাসেডর বোল্ট
রানার্সআপ হয়ে প্রিমিয়ার লিগে ওয়ান্ডারার্স 
রানার্সআপ হয়ে প্রিমিয়ার লিগে ওয়ান্ডারার্স 
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ