X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

বেপরোয়া ছাত্রলীগ, নির্বিকার সরকার!

চিররঞ্জন সরকার
২৯ জানুয়ারি ২০১৮, ১৬:৫০আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০১৮, ১৭:০৫

চিররঞ্জন সরকার সুখবরহীন ছাত্ররাজনীতিতে ছাত্রলীগ প্রায়ই অঘটন ঘটিয়ে খবরের শিরোনাম হচ্ছে। এবার তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বেধড়ক পিটিয়ে নতুন সংবাদের জন্ম দিয়েছে। সরকার-সমর্থক ছাত্রসংগঠন বিরোধীদের পেটাবে, এটাই ‘স্বাভাবিক’ খবর বাংলাদেশে। কিন্তু সন্ত্রাস-দস্যুবৃত্তি আর দখলদারি চলতে থাকার এই ‘স্বাভাবিকতা’ এখন ভীতিকর পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। ছাত্রলীগ ক্রমেই ভয়াবহ হয়ে উঠছে। এবার যেভাবে কয়েকজন নারী শিক্ষার্থীর ওপর হামলা চালানো হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছিল, এ যেন কেয়ামতের আলামত!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের কেন এই আন্দোলন? পূর্বপ্রস্তুতি ও পরিকল্পনা ছাড়াই গত বছর (২০১৭) ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয় রাজধানীর সরকারি সাত কলেজ। এসব কলেজে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষার্থী রয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৬৭ হাজার ২৩৬ জন। কোনও প্রস্তুতি ছাড়াই পরীক্ষার তারিখ ও ফল ঘোষণা এবং সিলেবাস প্রণয়নে বিপত্তিতে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষা, ফল প্রকাশ ও ক্লাস শুরুর দাবিতে একের পর এক আন্দোলন করছেন অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে নানা সমস্যায় জর্জরিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনের ডাক দেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতেই হিমশিম খেতে হয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। এর মধ্যে সাত কলেজের অধিভুক্তিতে সৃষ্টি হয়েছে বাড়তি চাপ। এতে দ্রুত ফল প্রকাশ করতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাই বিশ্ববিদ্যালয়কে চাপমুক্ত করতে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারই ধারাবাহিকতায় তারা ভিসির কার্যালয় ঘেরাও করে। সেখানেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ‘ভিসিকে উদ্ধার’ করতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পিটিয়ে ‘তক্তা’ বানানোর মহান দায়িত্ব পালন করেছে!

প্রশ্ন হলো এই আন্দোলন নিয়ে কি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলা যেতো না? প্রক্টর, ভিসি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন–কেন আড়ালে রইলেন? আর ভিসিই বা কেন গেটে তালা লাগিয়ে অফিস কক্ষে অবস্থান করলেন? আর আন্দোলনকারীদের ‘দমন’ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের না ডেকে ছাত্রলীগকে কেন ডাকলেন? ভিসি কি ছাত্রলীগ করেন? ছাত্রলীগ কি ভিসির রক্ষক? আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ‘রক্ষা’র দায়িত্ব কি ছাত্রলীগের?

ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের সচিত্র বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে প্রতিটি গণমাধ্যমে। অথচ ভিসি-প্রক্টোররা বলছেন, ওখানে ছাত্রলীগ যায়নি। ছাত্রলীগও ঘটনার দায় চাপিয়েছে ‘বাম-সন্ত্রাসী’ ও ছাত্রদল-শিবিরের ওপর। চমৎকার সব বয়ান! সত্যকে মিথ্যে, মিথ্যেকে সত্য বললে এ যুগে রেহাই পাওয়া যায় না–এটা সংশ্লিষ্টদের কে বোঝাবে? এত এত ছবি, ভিডিও, এগুলোকেই বা কিভাবে মিথ্যে প্রমাণ করা যাবে?   

গত বিএনপি সরকারের আমলেও অনুরূপ ঘটনার অনুরূপ চিত্র সংবাদমাধ্যমকে ধন্য করেছিল। অবশ্য ছাত্রলীগের জায়গায় তখন ছিল ছাত্রদলের দাপট। আমাদের দেশে সরকার-সমর্থিত ছাত্রসংগঠন মার দেবে, অন্যরা মার খাবে–এটাই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি দলের মার-দাতারা তাদের ‘বীরত্বের’ জন্য প্রায়ই পুরস্কৃত হন। অন্যদিকে বিরোধী দলের ‘মার-খাওয়ারা’ সংগ্রামী ও ত্যাগী ভাবমূর্তি গড়ে তুলে অপেক্ষায় থাকেন, কখন দল ক্ষমতাসীন হবে এবং তাদের মার-খাওয়ার বিনিয়োগের লাভ জুটবে। বলা বাহুল্য, এসব ঘটনার অধিকাংশই বিচারহীন থেকে যায়। সমস্যাটা তাই কেবল ছাত্রলীগ বা ছাত্রদলের মধ্যে নয়, সমস্যাটা ক্ষমতার চরিত্রের মধ্যে।

আমাদের দেশে শিক্ষার বারোটা বাজাতে বৃহৎ ছাত্র সংগঠনগুলো অপরিমেয় ভূমিকা পালন করছে। একদিক থেকে তারা অবশ্য ভালো কাজই করছে। কারণ আমাদের শিক্ষার সঙ্গে ‘আনন্দ’ নেই। আর মনীষীরা বলেছেন, যে শিক্ষার সঙ্গে আনন্দ নেই, তার সঙ্গে যত তাড়াতাড়ি সম্পর্কচ্ছেদ হয়, ততই মঙ্গল। ‘আনন্দহীন’ শিক্ষার সঙ্গে ‘সম্পর্কচ্ছেদ’ ঘটাতে গত প্রায় নয় বছর ধরে ছাত্রলীগ এককভাবে প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ‘ক্ষমতার কাবাব-পরোটা’ আর জোর-জুলুম-ভয় দেখানো ছাড়া বর্তমানে ছাত্র-রাজনীতিতে সমর্থন বাড়ানো যায় না। সুবিধাবাদিতা ও নগদনারায়ণের প্রতি আসক্তি বর্তমানে ছাত্র-যুবসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে প্রকট আকার ধারণ করেছে। স্বাধীনতার পর দীর্ঘ চারদশক ধরে আমাদের সমাজে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এই আদর্শেরই তালিম দেওয়া হয়েছে। ‘মার-কাট-খাও, গুণ্ডামি কর, প্রয়োজনে খুন কর’–এই হচ্ছে বর্তমান বাংলাদেশের অঘোষিত ‘রাষ্ট্রীয় আদর্শ’। এই ‘আদর্শ’ বৃহৎ রাজনৈতিক দলের সমর্থক ছাত্র সংগঠনগুলো অত্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে অনুসরণ করছে। মূল রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকলে তার অঙ্গ সংগঠনগুলো হাইব্রিড জন্তু-জানোয়ারের মতো বাড়তে থাকে। সঙ্গত কারণেই এখন শিক্ষাঙ্গনগুলোতে ছাত্রলীগের একক আধিপত্য।

আমাদের দেশে যখন যে দল ক্ষমতাসীন হয়, তার বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন, শাখা-প্রশাখার বিস্ফোরণ ঘটে। বিচিত্র নামে ও রূপে তাদের অসুরিক আবির্ভাব লক্ষ করা যায়। সবচেয়ে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে শিক্ষাঙ্গনে। শিক্ষাঙ্গনগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন পুরোপুরি ‘ন্যাটো-বাহিনী’ হিসেবে আবির্ভূত হয়। নিজেদের একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করতে প্রতিপক্ষ কিংবা তাদের ‘বশ্যতা স্বীকারে অনিচ্ছুক’ সবাইকে উচিত শিক্ষা দিয়ে শিক্ষাঙ্গন থেকে ‘শিক্ষা’-কে মোটামুটি ঝেঁটিয়ে বিদায় করার আয়োজন চলতে থাকে। গত তিন দশকে বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে ছাত্রদল-শিবিরের বাড়াবাড়ি এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে ছাত্রলীগের তাণ্ডব আমরা দেখে এসেছি।
আমাদের অর্থনীতিতে পিপিপি (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ) তেমন সফল না হলেও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল অঙ্গসংগঠন পরিচালনার ক্ষেত্রে এই কৌশলের সফল প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে। প্রতিপক্ষ দমন, নিজেদের মধ্যে ‘বীরত্ব চর্চা’, নিজেদের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা নিজেরা করা, অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ ও প্রশাসনকে ‘সহায়তা’ করা ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে বেসরকারি পর্যায়ে ছাত্রলীগ দুর্দান্ত ভূমিকা পালন করছে। তারা এখন দেশব্যাপী চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজি, হত্যা, দখলদারীসহ নানারকম বীরত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে। আর তাদের দোসর হিসেবে ভূমিকা পালন করছে প্রশাসন ও পুলিশ। সরকার, পুলিশ, প্রশাসন, সরকারি দল, ছাত্রলীগ—সব এখন মিলেমিশে একাকার!

এখন অনেক ছাত্রের মূল ধান্দা হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকার সমর্থক ছাত্রসংগঠনের লাঠিয়াল বা ক্যাডার হওয়া। কারণ সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনে নাম লেখাতে পারলে জীবন একেবারে ফকফকা। তাদের কোনও অভাব থাকে না। পাওয়া যায় যা খুশি তাই করার অবাধ স্বাধীনতা। যেভাবে খুশি টাকা উপার্জনের সুযোগ। অস্ত্রবাজি, খুন, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ডাকাতি করার লাইসেন্স। এ দুর্বৃত্তরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জিম্মি করে রাখবে আর অন্য সবাই তাদের দয়া বা মর্জির দিকে তাকিয়ে থাকবে। এটাই অঘোষিত নিয়মে পরিণত হয়েছে।

সরকারি দলের অনুগত ক্যাডার বাহিনী শিক্ষাকে লাটে ওঠানোর চূড়ান্ত আয়োজনে ব্যস্ত। অথচ এ ব্যাপারে আমাদের অনেক ‘সাধের’ আওয়ামী লীগ সরকারের তেমন কোনও ভাবনা-চিন্তা-অনুশোচনা নেই, নেই কোনও বিকার। তারা বসে বসে যেন মজা দেখছেন। আর মাঝে মাঝে বায়োবীয় হুঙ্কার ছাড়ছেন। কিন্তু এই গুণ্ডাদের বিষদাঁত ভেঙে দেওয়ার ব্যাপারে কঠোর কোনও উদ্যোগ বা সংকল্প এখনও দেখা যাচ্ছে না। তবে কি শিক্ষাকে ধ্বংস করে, শিক্ষাঙ্গনকে অচল করে বর্তমান সরকারের কর্তাব্যক্তিরা ক্ষমতায় থাকতে চান? দেশ-জাতির কল্যাণ করতে চান? এটাই কি বর্তমান সরকারের ‘উন্নয়নের রাজনীতি’র নমুনা?

সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে যারা আছেন, তারাও যেন ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারে পরিণত হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি-প্রক্টোরের ভূমিকা দেখলে মনে হয়, তারা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক! ক্ষমতাসীন দলের নির্লজ্জ দালালি করা ছাড়া তাদের কোনও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় না। ক্ষমতাসীন দলের অশিক্ষিত কিছু দুর্বৃত্তের পায়ের নিচে বসে, তাদের ইচ্ছের দাস হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্ব নিতে এসব শ্রদ্ধেয় ‘শিক্ষাবিদ’ ও সম্মানিত ভিসিদের কোনও আপত্তি দেখা যায় না। এটাকে আমরা কী বলব, দায়িত্ব গ্রহণের, দায়িত্ব পালনের অসীম আগ্রহ? নাকি পদ ও ক্ষমতার প্রতি অসীম লোভ? দুর্দমনীয় আকাঙ্ক্ষা?

আমাদের শিক্ষাঙ্গনে এখন আর শিক্ষা আছে বলে মনে হয় না। এক পাল দুর্বৃত্তকবলিত স্বেচ্ছাচারীদের পীঠস্থানে পরিণত হয়েছে। ‘ছাত্রছাত্রী’ নেই, আছে মেরুদণ্ডহীন কিছু জড়ের অস্তিত্ব। ‘শিক্ষক’ও নেই, লাজ-লজ্জা, আদর্শ, শক্তি, সাহসহীন ক্লীবদের অক্ষম পদচারণা আছে শুধু। তা না হলে প্রতিবাদ-প্রতিরোধহীনভাবে অপশক্তির দখলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো চলে যাচ্ছে কিভাবে? এত ক্ষতি, এত ক্ষত, এত সমালোচনার পরও কেন ছাত্রলীগ নামধারী গুণ্ডাদের দমন করা হচ্ছে না? তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ বা নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না?

মাঝে মাঝে নিজের গালে নিজেই থাপ্পড় মারতে ইচ্ছে করে! কেনই বা আমরা খামোখা চিৎকার-চেঁচামেচি করছি? আপাতত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ছাত্রলীগ নামধারী গুণ্ডাদের জন্য অবাধ এবং উন্মুক্ত করে দেওয়াই তো ভালো। ওরা লড়ুক। মরুক। ওরা শক্তি দিয়ে সবকিছু দখল করে নিক। বাকি সবাই পালিয়ে যাক, গুলি খেয়ে মরুক, জাহান্নামে যাক। সব কিছু ছারখার হোক। তাতে কার কী?

নিদান যেখানে অনুপস্থিত, প্রতিবিধানের সম্ভাবনা যেখানে তিরোহিত, সেখানে উপহাস কিংবা বিলাপ করেই বা কী লাভ?

লেখক: কলামিস্ট

 

/এসএএস/এমএনএইচ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
তীব্র গরমে যেসব অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়ে
তীব্র গরমে যেসব অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়ে
চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যানসহ ২৬ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত
উপজেলা নির্বাচনচেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যানসহ ২৬ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন অপহরণের শিকার সেই প্রার্থী
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন অপহরণের শিকার সেই প্রার্থী
‘হোম অব ক্রিকেটে’ বাংলাদেশের স্পিন কোচ মুশতাক
‘হোম অব ক্রিকেটে’ বাংলাদেশের স্পিন কোচ মুশতাক
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ