X
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থমন্ত্রী পদত্যাগ করুন

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৩:০৭আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৩:০৯

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী বিকল্পধারা চেয়ারম্যান বদরুদ্দোজা চৌধুরী অর্থমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীকে তাদের স্ব-স্ব দফতর থেকে সরিয়ে নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিতে বলেছেন। সম্ভবত বি চৌধুরীর দৃষ্টিতে উভয় মন্ত্রী তাদের দায়িত্ব পালনে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, পদত্যাগের সময় এখনও আসেনি। অর্থমন্ত্রী অগ্রণী ব্যাংকের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আসছে ডিসেম্বরে তিনি অবসরে যাবেন।
ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন। তিনি নির্বাচিত না হলে তো অবসর অবধারিত। অবশ্য মানুষ এখন যথেষ্ট সচেতন। অর্থমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীর নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তারা এমন কোনও কাজ করে যাচ্ছেন না, যে কারণে তাদের মানুষ স্মরণ করবে। শিক্ষা ও অর্থ উভয়েই গুরুত্বপূর্ণ দফতর। উভয় দফতর ডুবেছে এই দুই অদূরদর্শী মন্ত্রীর কারণে।
অর্থমন্ত্রীর পারদর্শিতা আছে ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া আর লক্ষ কোটি টাকার বাজেট প্রণয়নের। অন্য এক অর্থমন্ত্রী ভ্যাট প্রথা চালু করে গিয়েছিলেন। তার কারণে লক্ষ কোটি টাকার বাজেট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। নিজের থেকে গত নয় বছরে নতুন কিছু উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়নি।

গতবার যখন নয়টি ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছিল, অনেকে দেশি-বিদেশি ৪৯টি ব্যাংক থাকার পরও আর ব্যাংকের অনুমোদন না দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু অর্থমন্ত্রী কারও কথা শুনেননি। তখন এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকও এই অনুমোদনের বিরোধিতা করেছে।

ফারমার্স ব্যাংক একটা নতুন ব্যাংক। তার কাছে সরকারের জলবায়ু পরিবর্তনের ৫০০ কোটি টাকার ফান্ড রাখার কোনও যুক্তি কেউ খুঁজে পাবে না। কোনও ব্যাংকের বয়স ৪/৫ বছর না হলে সবাই এমন ফান্ড রাখাকে রিস্ক ধরে নেয়। কোনও নিয়ম-কানুন না মেনে টাকাটা রাখা হয়েছিল ফারমার্স ব্যাংকে। এখন ব্যাংক সে টাকা দিতে পারছে না। আর অর্থমন্ত্রী সিলেটের এক অনুষ্ঠানে হাসতে হাসতে বলেছেন, বাংলাদেশের কোনও ব্যাংক দেউলিয়া হয় না। অর্থাৎ গৌরি সেনের টাকা ঢেলে তা আবার ঠিক করা হয়। ফারমার্স ব্যাংকের ব্যাপারেও একই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

সরকারি ব্যাংকগুলোতে পরিচালক নিয়োগ করে থাকে অর্থ দফতরের ব্যাংকিং ডিভিশন। ডিরেক্টর নিয়োগে অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা কিছুই বিবেচনা করা হচ্ছে না। নির্বিচারে নিয়োগ দিচ্ছে এবং ব্যাংকগুলো অকাতরে ঋণ মঞ্জুর করে খেলাপিতে ডুবে যাচ্ছে। ড. আবুল বারাকাতকে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়েছিল। তিনিও সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ প্রদান করে এসেছেন একটি কোম্পানিকে, যেগুলো খেলাপি অথবা মন্দ ঋণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অথচ সুন্দর সুন্দর কথা বলতে দিলে তার জুড়ি মেলা কঠিন। প্রধানমন্ত্রীও করবেন কী!

বেসিক ব্যাংকের শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকে দুদক প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায়নি। হাইকোর্টের নির্দেশে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর দেখা যাচ্ছে যে ব্যাংক থেকে দেওয়া ঋণের টাকা নানা হাত হয়ে তার অ্যাকাউন্টেও জমা পড়েছে। বেসিক ব্যাংকের পরিচালক পরিষদের অধিকাংশ সদস্য সরকারি কর্মকর্তা। ঋণ মঞ্জুরিতে তাদের ভূমিকা রয়েছে। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে তারা বিভিন্ন জায়গায় পোস্টিং পেয়েছে, প্রমোশনও পাচ্ছে। তারা কি বেসিক ব্যাংকের  কেলেঙ্কারির জন্য দায়ী হবেন না?

শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর নামের আগে শেখ পদবি রয়েছে। এই পদবিটা মানুষের কাছে ভুল বার্তা দিচ্ছে যে তিনি শেখ হাসিনার পরিবারের কেউ হয়তো। কিন্তু শেখ পরিবারের সঙ্গে তার কোনও সম্পর্কের কথা শুনিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের যে টাকা চুরি হয়েছে তার ৮০৮ কোটি টাকা এখনও আদায় হয়নি। এখন ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকিং করপোরেশন বলছে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করবে। প্রযুক্তির সুফল যেমন আছে, কুফলও বিশ্ববাসীকে ভোগ করতে হচ্ছে। ক’দিন আগে রাশিয়ার মোটা অংকের টাকাও হ্যাকাররা চুরি করে নিয়ে গেছে। আর এ সপ্তাহ দেখলাম ভারতের টাকাও চুরি করেছে হ্যাকাররা।

ফিলিপাইন সরকার, ফিলিপাইনের রাষ্ট্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা করেছিল। সম্ভবত মানি লন্ডারিংয়ের পর ফিলিপাইনের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় যে নাজুক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল তা থেকে উত্তরণের জন্য তারা সহযোগিতার ভনিতা করেছিল। অনেক দেশ ফিলিপাইনে টাকা পাঠাতেও চায়নি। এখন পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার পর তারা উল্টো বলছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করবে। অথচ টাকার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী মামলা করার কথা বলেছিলেন ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে।

অর্থমন্ত্রী তা না করে গভর্নরকে বিদায় করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলেন। বিষয়টাকেও রাষ্ট্র করে ছেড়েছিলেন। কিন্তু এমন বিষয়ে বিদেশি রাষ্ট্রকে গোপনীয়তার সঙ্গে কাজ করতে দেখেছি। এমন দুর্ঘটনায় বিভিন্ন দেশের টাকা উদ্ধারের বহু ঘটনা রয়েছে। গভর্নর ড. আতিউর রহমানও চুপিসারে সেই কাজ আরম্ভ করেছিলেন। কিন্তু গোলবাধে গভর্নর বিষয়টা অর্থমন্ত্রীকে বিলম্বে শুনিয়েছিলেন কেন এই নিয়ে। এই টাকা নিউ ইয়র্ক রিজার্ভ ব্যাংক থেকে ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকের মাধ্যমে প্রাপককে স্থানীয় মুদ্রায় প্রদান করা হয়েছিল।

বিষয়টি এত পরিষ্কার যে এই লেনদেন নিয়ে কারও কোনও সন্দেহ নেই। আমেরিকার মানি লন্ডারিং আইন খুবই শক্ত আইন। এই আইনের আশ্রয় নিয়ে বহু আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার উদ্ধারের চেষ্টা করেছে এবং সফল হয়েছে। লাইবর রেট  কেলেঙ্কারি, ফরেন কারেন্সি এক্সচেঞ্জ রেট কেলেঙ্কারি, সাব প্রাইম মর্টগেজ জালিয়াতিসহ বহু জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে মামলাও হয়েছে, বিলম্ব হলেও তারা তাদের টাকা জরিমানাসহ ফেরত পেয়েছে।

দুই বছর অতীত হয়ে গেলো বাংলাদেশ এখনও কোনও মামলা দায়ের করেনি। শুধু অভ্যন্তরীণভাবে কে কাকে ফাঁসাতে পারে তা নিয়ে অর্থ দফতর ব্যস্ত মনে হচ্ছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করবো এর প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার জন্য, না হয় রিজাল ব্যাংকিং করপোরেশন আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করলে বাংলাদেশের অবস্থান দুর্বল হবে।

সবশেষে একটা কথা বলবো, কোনও আবেগী লোক অর্থমন্ত্রী হলে সফলতা আসে না। অর্থমন্ত্রীকে আবেগহীন, রক্ষণশীল লোক হতে হয়। নতুন ব্যাংকগুলোর মধ্যে যাদের অবস্থা খারাপ তাদের পরস্পরকে একত্রীকরণ করা যায় কিনা সেটাও মাথায় রাখা দরকার।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক

[email protected]

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
‘সাংগ্রাই জলোৎসব’ যেন পাহাড়ে এক মিলন মেলা
‘সাংগ্রাই জলোৎসব’ যেন পাহাড়ে এক মিলন মেলা
পাঁচ উপায়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা
বাজেট ২০২৪-২৫পাঁচ উপায়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা
টাকা ভাগাভাগি নিয়ে কাউন্সিলর-যুবলীগ নেতার সংঘর্ষে যুবক নিহত
টাকা ভাগাভাগি নিয়ে কাউন্সিলর-যুবলীগ নেতার সংঘর্ষে যুবক নিহত
অনিবন্ধিত ও অবৈধ নিউজ পোর্টাল বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী
অনিবন্ধিত ও অবৈধ নিউজ পোর্টাল বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ