X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

সমাজ দীর্ঘজীবী হোক

তুষার আবদুল্লাহ
১০ মার্চ ২০১৮, ১৮:৩৭আপডেট : ১০ মার্চ ২০১৮, ১৮:৩৯

তুষার আবদুল্লাহ যতই বলি নিজের মতো আছি, চলছি নিজের মতো করেই; আসলে কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন থাকতে পারছি না। সমাজের সঙ্গে নিজেকে ভাসিয়ে না দিলেও, সামাজিক অস্থিরতার খড়কুটো এসে মনের ঘাটে ভিড়বেই। বিতর্ক আছে, সমাজ বা সামাজিকতা অক্ষুণ্ন আছে কিনা। সবই তো সামাজিক না হয়ে ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। পরিবার ও রাষ্ট্রের মাঝে সমাজের অস্তিত্ব পাওয়া এখন মুশকিল। ব্যক্তির সমাবেশে সমাজ। এখন ব্যক্তি নিজেকে নিয়েই থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। একা চলাতেই তার অহং ও আনন্দ। ব্যক্তি তার অর্জন ও আনন্দ কারও সঙ্গে বাটোয়ারা করতে চায় না। তাই ব্যক্তির সমাবেশ নেই, তৈরি হচ্ছে না সমাজ। এখন সমাজ এক ক্ষয়িষ্ণু সংগঠনের নাম। সমাজ ছিল পাড়া, মহল্লা, গ্রামে। নগরের ধুলোয় অন্ধকার গ্রাম। সেখানে শহরের সংকট পৌঁছে গেছে। রাজনৈতিক গোত্রই এখন গ্রামে সত্য। একে অন্যকে চেনে গ্রামের পরিচয়ে। পারিবারিক পরিচয় অচল। ফলে গ্রামের পারিবারিক ও মহল্লার মুরব্বিদের দিন ফুরিয়ে গেছে। কতিপয় ব্যক্তি রাজনৈতিক মুরব্বিতে রূপান্তরিত হয়েছেন। বাকিরা উপেক্ষিত। সমাজ যখন রাজনীতির ব্যানারে আচ্ছাদিত হয়ে গেলো, তখন সেখানে ক্ষমতানীতি ও তন্ত্র সরব হয়ে উঠলো। যার প্রভাবে ব্যক্তি, পরিবার দখলতন্ত্রে যোগ দিতে শুরু করে বড় বড় কাফেলা নিয়েই। এই কাফেলায় শৃঙ্খলা নেই। আছে শক্তি প্রয়োগের মহড়া। যে যার শক্তি দিয়ে দখল করে নিচ্ছে। কেবল সম্পদ নয়, মানুষের কণ্ঠও। সমাজে সমবেত কণ্ঠ ছিল। সেখানে কোনও একটি অস্থির ঘূর্ণি বা বিশৃঙ্খল হুঙ্কার থেমে যেত সমবেত কণ্ঠের উপস্থিতিতে। এখন একটি বিশৃঙ্খল হুঙ্কারই ঘুম পাড়িয়ে রাখতে পারে পুরো গ্রাম, গোটা অঞ্চল। যারা সেই হুঙ্কারের দাসত্ব নিতে পেরেছে, তারাই যোগ দিতে পেরেছে অস্থিরতার মিছিলে। সেই মিছিলেই আমরা দেখতে পাই—এক শিশু ধর্ষণ করছে অন্য শিশুকে। শিক্ষক ধর্ষণ করছে ছাত্রীকে। দখলের লোভে হচ্ছে হত্যা, ধর্ষণ, গুম। পরিবারের সদস্যরাই কত সস্তায় খুন করছে একে অন্যকে। সমাজ জানতে পারছে না। জানতে পারলেও এগিয়ে যেতে পারছে না। জোরে কণ্ঠ ছেড়ে পারছে না প্রতিবাদ করতে। কারণ সমাজ এখন বিপন্ন। গ্রামীণ সমাজের রোগ বালাই  আরও  দূরারোগ্য হচ্ছে।

শহুরে সমাজ দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছে আরও আগে। সমাজের নানা শ্রেণিতে এখন এর বিস্তার ঘটছে। সমাজ বলছি যে, এটা বলাও মনে হয় ভুল হচ্ছে। কারণ গ্রামে যতটুকু সমাজ অবশিষ্ট আছে, শহরে সেটুকুও নেই। কংক্রিটের বাক্সে বাক্সে এখানে বিচ্ছিন্ন মানুষ। সমাজের ইংরেজি রূপের আধিক্য ঘটেছে নগরে—‘সোসাইটি’ হয়ে। এর সঙ্গে সাংস্কৃতিক ও মনের অনুশীলনের যোগাযোগ নেই। কতিপয় দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোর স্বার্থ জড়িত কেবল। পানি, বিদ্যুৎ ও নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় না ভুগতে হয় এই সোসাইটিকে। সোসাইটির মানুষেরা একই দ্রুতযানে ওপরে ওঠে যান বা নেমে আসেন, কিন্তু কেউই কারও মনজগতে প্রবেশ করতে পারেন না, বছরের পর বছর পাশাপাশি কংক্রিট বাক্সে থাকার পরেও। ফলে পাশের বাড়ির গৃহকর্তা-গৃহবধূকে কেউ এসে হত্যা করে গেলে, নির্বাক প্রতিবেশী। যা খুশি তাই করছি বলে কেউ এসে আপত্তি করলে, তাকে হত্যা করতেও তৈরি নগরের মানুষ। সমাজ ছিল যেই কালে মহল্লাতে, পাড়াতে। তখন শুধু বিপদের খবরই নয়, একে অন্যের পাতের খবরের কথাও জানা থাকতো।

সমাজ হারিয়ে গেছে নাকি রূপান্তরিত হয়েছে—এই বিতর্ক চলতেই পারে। যদি নতুন রূপ ধারণ করে থাকে সমাজ, তবে সেই রূপকে মানুষ এখনও হজম করে উঠতে পারেনি। তার হজমে সমস্যা হচ্ছে বলেই তৈরি হয়েছে অস্থিরতা। এই অস্থিরতা অবনমিত হয়েছে মানবিক মূল্যবোধ। নৈতিকতা  নিখোঁজ। ভালোবাসা, প্রেম, শ্রদ্ধা, স্নেহ যেন দূরকালের কোনও অভ্যাস। প্রেমিকাকে ভালোবাসতে ভুলে গেছে প্রেমিক। প্রেমিককে ক্ষণিকের জন্য দখল করতে না পেরে হত্যার নকশা আঁকছে প্রেমিকা। ব্যবহারিক সমাজ যেহেতু বিলুপ্ত, তখন বিচ্ছিন্ন মানুষ, পরিবার যন্ত্রকে শিক্ষক মেনে বসে আছে। এই যন্ত্র তাকে ভোগাতুর করে তুলতে পারছে ঠিকই, কিন্তু মানবিক গুণগুলো কী করে বুনে দেবে মানুষের মনজমিনে? প্রযুক্তি যেমন অস্থিরভাবে বদলে যাচ্ছে, তেমনি মানুষও। নিত্য তার রূপের বদল ঘটছে। বিচ্ছিন্ন মানুষের পক্ষে দ্রুত তার রূপ বদলে ফেলা সহজ। সমাজবদ্ধ মানুষের পক্ষে তা সহজ নয়। কারণ তখন তাকে সমবেতভাবে বদলে যেতে হয়। তাই ব্যক্তির কোনও রূপই টেকসই নয়। কিন্তু সামাজিক মানুষের রূপের স্থিরতা আছে। সমবেত যেকোনও অবস্থান যেমন টেকসই, তেমনি গুণগত মানও থাকে অটুট। ফলে সমাজবদ্ধ মানুষের যেকোনও ঘূর্ণির পাঁকে পড়ার শঙ্কা থাকে না। ভয় থাকে না উড়ে যাওয়ারও। তাই অস্থিরতার রোগ থেকে রেহাই পেতে সমাজের স্বাস্থ্যের যত্ন নিতেই হবে। সমাজ এখন রুগ্‌ণ। তাকে সারিয়ে তোলা ছাড়া, রাষ্ট্রের কোনও কল্যাণই আয়ু পাবে না।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

/এসএএস/এমএনএইচ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ