X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন করে বেঁচে উঠি

ফাহমিদা নবী
১৭ মার্চ ২০১৮, ১৩:১৯আপডেট : ১৭ মার্চ ২০১৮, ১৩:২১

ফাহমিদা নবী সময়কে মূল্য না দিয়ে সময়ের মূল্যবোধকে কি আয়ত্ত্বে আনা যায়? বিশ্বাসের জায়গাগুলোকে কি অর্জন করা যায় সময়কে উপেক্ষা করে? কী ভুল, ভীষণ ভুল, সময়ের ভুল অথবা নির্ভুল যাই হোক না কেন তা প্রকৃতির নিয়মেরই অংশ। তাকে বাঁধতে চাইলেই কি তা নিজের মতো হয়ে যায়? তাহলে ভুল বা নির্ভুলতা কোন পথে হাঁটছে? আমরা নিজেদের সচেতনতার ব্যাপারে কতটুকু ভাবছি বা নিজেদেরকে বাঁধতে পারছি, তা কি ভাবছি? নাকি সময়ের নির্ধারিত কাঁটায় যে যার মতো করে মিলিয়ে নিচ্ছি জীবন!
একটা ভীষণ দুর্ঘটনা ঘটে গেলো বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে। শোকের ছায়া সময়কে এবং সকলকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে! বুকের ভেতরটা হাহাকার করে উঠছে। আমার মন পুড়ছে, জানি সবারই মন পুড়ছে। সেই মুহূর্তের সময়টুকু কী ভীষণ বিভীষিকাময় ছিল!সবার চোখে মুখে চিন্তার রেখা। এ কী হলো! চারিদিক অন্ধকার হয়ে গেলো, মুহূর্তেই হাহাকার...চলে যাচ্ছি, কে কোথায় আছো? চলে যাচ্ছি এ জগৎ সংসার সব ছেড়ে...! কী আসলে তোলপাড় করছিলো সেই সাংঘাতিক তীব্র বেগে আগুন ধরে যাওয়া উড়োজাহাজের যাত্রীদের মনের ভেতর? সেই নতুন দম্পতির পুড়ে যাওয়া আঁচে মনও কি পুড়ছিল নাকি সব শূন্য? পুড়তে থাকা সেই ছোট্ট বাচ্চাটি বাবা-মায়ের হাত ধরেই কি ছিল? কী হচ্ছিলো প্রত্যেকের মনের মধ্যে সেই সময়ের দুর্যোগে? যারা বেঁচে গেছেন তাদের মনের কী অবস্থা? তাদের বিশ্বাস ফিরে আসুক তারা বেঁচে আছেন। তারা ভুলে যাক সেই বিভীষিকাময় মুহূর্তের বেদনা,এটাই এখন একমাত্র চাওয়া। নতুন করে বাঁচতে তাদের সবাই সহযোগিতা করি,নতুন করে তারা বেঁচে উঠুক, এটাই এখন একমাত্র প্রার্থনা। দায়িত্ব এবং সময় একই সঙ্গে একই গতিতে চলে। জীবন এমনই! যতটাই কঠিন ততটাই বাস্তব এবং নির্মম সত্য। মূল্যবোধ তাই প্রতিদিনের চর্চা হওয়া উচিত। আমি কতটা শোকে একটা অনুধাবনের জায়গায় নিজেকে দাঁড় করিয়ে দৃশ্যগুলো চোখের মধ্যে, মনের মধ্যে আটকে নিজেকে সঠিক করতে চাই, তাই অনুভব করছি। আমি শিখতে চাই, চাই মানবিকতায় প্রতি মুহূর্তকে সুখের করে তুলতে, দুঃখকে জয় করতে। মানুষের কাজই তো তাই! সমালোচনা নয়, বিশ্লেষণ এবং কার্যকারিতাই একজন একজন করে দশের মূল্যবোধ তৈরি করে। আমরা যেন আরও সঠিক হই।বেদনাতুর পরিবারগুলোর সঙ্গে আমরাও আজ  সমব্যথিত। 

এমনি করে প্রতিদিনের অনেক ঘটনাই মনকে স্থির থাকতে দেয় না। এক ধরনের হাহাকার অস্থির করে রাখছে জীবন যাপনকে। ভুলে যাচ্ছি পারিবারিক মূল্যবোধ, জীবনের সাধারণ আলোচনা অথবা নিত্য দিনের স্বাভাবিক কথোপকথন,একটু সাধারণ নিত্যদিন ফিরে পেতে চাই অনেক ব্যস্ততার ভিড়েও। ভাবছি, আরও সাধারণ থাকার অভ্যাস নিজের মধ্যে তৈরি করবো। সন্তানদের আরও অল্পতে তুষ্ট থাকার পুরনো গল্পগুলো শোনাবো, জানাবো, জানবো। পুরো বিশ্বের এক অস্থিরতা আমাদের ঘিরে রেখেছে চারপাশ। ভালো কিছু শোনার আশায়, দেখার আশায় চোখ, মন প্রত্যাশায় ভরে থাকে। সময়ের কাছে শিক্ষা চাই, অভিজ্ঞতায় নিজেদের ভুলগুলোকে ঠিক করি। একেবারে নির্ভুল না হতে পারি কিন্তু ভুল যেন আর না হয়। অনাকাঙ্ক্ষিত কোনও বেদনা আর চাই না। ভালো অনেক কিছুই হচ্ছে। তার দিকে সময়ের দাবিতেই তাকাই। দেশ এগিয়ে যাক, সময়ের গতিকে ভালোবাসতে শিখি। আমি শিখলে শিখে যায় পাশের দশ জন। আমরা সময়ের কাঁটায় ভালোতেই করি বিচরণ। সবচেয়ে বড় সত্য অনেক ঝড়েও সাধারণ কোনও ফুলের পাপড়ি ঝরে পড়ে যায় না। প্রকৃতি তাকে বাঁচিয়ে রাখে। বাঁচে না তখনই যখন সেই ফুল কেউ ছিঁড়ে ফেলে। একটা পরিবার,একটা সমাজ,তথা একটা জাতি বেঁচে থাকে মুঠোর বিশ্বাসে, আশ্বাসে, ভালোবাসায়,অবিশ্বাসে নয়। পারিবারিক বাঁধন এবং মিলেমিশে থাকার মধ্যে দূরত্বের অবসান ঘটে, সবাই সবার জন্য মায়া মমতায় আবদ্ধ থাকে। তাতে করে স্বার্থের সঙ্গে হবে না সন্ধি, হবে ভালোবাসায় মানবিক রুচিশীল সন্ধি। তাই জেগে ভালো স্বপ্ন দেখি, ভালো কাজ করি। প্রত্যেকটা ছোট ছোট ভালো কাজ,প্রতিটি দিনকে করে আরও সুপরিকল্পিত,সুন্দর। বেঁচে থাকার চেষ্টাই আসলে সময়ের মূল্যবোধ। তাকে বাঁচাতেই নতুন করে প্রতিদিন চলো বেঁচে ওঠি। রাতে ভালো ঘুম হোক,একটা সুন্দর সকালের আশায়।

বেঁচে থাকার চেষ্টাই আসলে সময়ের মূল্যবোধ। তাকে বাঁচাতেই নতুন করে প্রতিদিন বাঁচতে হবে।

লেখক: সংগীত শিল্পী

 

/এসএএস/টিএ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
কান উৎসব ২০২৪জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফার ভোট শেষেই বিজয় মিছিল
পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফার ভোট শেষেই বিজয় মিছিল
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ