X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

একাত্তরের এক কিশোরের ডায়েরিতে স্বাধীনতার ঘোষণা

মোস্তফা হোসেইন
২৭ মার্চ ২০১৮, ১৪:৩৯আপডেট : ২৭ মার্চ ২০১৮, ১৪:৫০

মোস্তফা হোসেইন এখনও বলতে শুনি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক। হোক না তারা সংখ্যায় সামান্য। তাই আমাকে এখনো বলতে হবে, যাও একাত্তরে ফিরে। একজন সেক্টর কমান্ডার জিয়ার একমাত্র প্রকাশিত লেখার প্রসঙ্গ নাইবা বললাম, নাইবা বললাম পৃথিবীর প্রায় অর্ধশত পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের কথা, নাইবা বললাম আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে প্রচারিত টেলিভিশন সংবাদের কথা, যেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার কথা বারবার এসেছে। সেই সংবাদপত্রগুলো কিন্তু আজও বিলীন হয়ে যায়নি। আর্কাইভেই শুধু নয়, ইন্টারনেটে ইচ্ছামতো পাওয়া যায়। সেগুলো কি আমাকে অস্বীকার করতে হবে? নাকি আমাকে দিয়ে জোর করে বলিয়ে নেওয়া হবে, জিয়াই স্বাধীনতার প্রকৃত ঘোষক। 

এতদিন স্বাধীনতার ঘোষণা বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য খুঁজে বেরিয়েছি। স্বাধীনতা লাভের ৪৫ বছর পর একটি তথ্য পেয়ে অবাক হয়ে যাই। একাত্তরে লেখা একটি ডায়েরি। নিভৃতপল্লীর স্কুলে পড়ুয়া এক কিশোরের লেখা ডায়েরি। যার পক্ষে চিন্তা করাও সম্ভব ছিল না, বাংলাদেশে কোনও দিনও স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে জিয়া নামের একজন সৈনিকের নাম যুক্ত হবে। তার কেন, কারও পক্ষেই চিন্তা করার সুযোগ ছিল না সেই সৈনিকের একটি রাজনৈতিক দল হবে, যে দলটি তার মৃত্যুর পর তাকে ঘোষক হিসেবে ঘোষণা করবে? বাস্তবতা হচ্ছে, একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর সৈনিককে উঁচিয়ে তোলার পরিবর্তে তাকে পদতলে পিষ্ট করার চেষ্টাইকরা হলো।
বলছিলাম একাত্তরের এক কিশোরের ডায়েরির কথা। স্কুলে পড়ি তখন। গ্রামে। শহর থেকে যেখানে যেতে গেলে রেলস্টেশন থেকে ১০ কিলোমিটার পথ হেঁটে যাওয়া লাগতো। সেই গ্রামেই আমার বাড়ি। ছয় বর্গ কিলোমিটারেরওই গ্রামে শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা ছিল সাকুল্যে ১৩-১৪%। সেই পরিবেশে আমার লেখাপড়ার মান স্বাভাবিকভাবেই ছিল ওরকমই। ইংরেজি জানার জন্য দৌড়ঝাঁপ ছিল। লিখতে গেলে ভুল হতো। যার প্রমাণ পাওয়া যাবে ডায়েরির ভাষা দেখে। সুতরাং ডায়েরির ভাষার শুদ্ধতা নয়, এর অর্থই হতে পারে বিবেচ্য। ভুল বাক্য আর ভুল বানানে লেখাগুলোর অর্থ বুঝতে বোধ করি অসুবিধা হবে না। দেখা যাক- স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে ওই সময় কী লেখা হয়েছে ডায়েরিতে।
১২ এপ্রিল মঙ্গলবার লেখা হয়- I read the novel `Rat jakhan Barota’, series of Zamdut. It is cats and dogs for all the day. Today Shaikh Mujibur Rahman diclare the Shadhinbangla by the shadhin Bangla Betarcandra. At 10/45 pm I heir the lecture of Mujibur Rahman from India Radio. Abba left house today at noon. I came to know that Dulabhai left NGFF.’
কিছু স্মৃতি মিশিয়ে যদি ভুক্তিটির ওই অংশের অর্থ করি তাহলে বলতে হবে, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় রেডিও থেকে প্রচার হয়েছিল,শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন।

একাত্তরের এক কিশোরের ডায়েরির পাতা
ওই সময় নির্মোহ ভাবনা ছিল। রং ছড়ানোর বিষয় ছিল না। প্রত্যন্ত গ্রামের সাধারণ মানুষ হওয়ার পরও সাধারণ মানুষের মতোই প্রত্যক্ষ করেছি অবস্থা। একটু ব্যতিক্রম হলো, ডায়েরি লেখা। এটা পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণে হয়েছে। যা বুঝেছি, যা শুনেছি এবং দাগ কেটেছে তাই লেখা হয়েছে। সুতরাং পক্ষপাতিত্ব কিংবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে সেগুলো লেখা হয়নি। ফলে আর যাই হোক, স্বাধীনতা লাভের প্রায় ১ দশককাল পর জন্ম নেওয়া একটি দলের বিরুদ্ধে যায় এমন চিন্তা করে লেখা হয়নি।
যেহেতু একাত্তরে রেডিওতে প্রচারিত সংবাদ কিংবা অনুষ্ঠানের সামান্যই আমাদের মনে আছে। এবং বঙ্গবন্ধু খুন হওয়ার পর প্রায় দুই যুগ মুক্তিযুদ্ধ শক্তির বিরোধীরা ক্ষমতাসীন থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করেছে, তাই অহেতুক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। যারা বিতর্ক তৈরি করেছে তাদের উদ্দেশেই একাত্তরের এক কিশোরের লেখা ডায়েরির একটি ভুক্তি এখানে তুলে ধরা হলো।
লেখক : সাংবাদিক, শিশুসাহিত্যিক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক

/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
সড়ক আইনে শাস্তি ও জরিমানা কমানোয় টিআইবির উদ্বেগ
সড়ক আইনে শাস্তি ও জরিমানা কমানোয় টিআইবির উদ্বেগ
পিসিবি প্রধানের আস্থা হারালেও শ্বশুরকে পাশে পাচ্ছেন শাহীন
পিসিবি প্রধানের আস্থা হারালেও শ্বশুরকে পাশে পাচ্ছেন শাহীন
ইভ্যালির রাসেল-শামীমার বিচার শুরু
ইভ্যালির রাসেল-শামীমার বিচার শুরু
কুড়িয়ে পাওয়া সাড়ে চার লাখ টাকা ফিরিয়ে দিলেন ইজিবাইকচালক
কুড়িয়ে পাওয়া সাড়ে চার লাখ টাকা ফিরিয়ে দিলেন ইজিবাইকচালক
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ