X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খেলারামরা মাঠে নেমে পড়েছে

আবদুল মান্নান
২৫ এপ্রিল ২০১৮, ১২:৪৬আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০১৮, ১৩:১২

আবদুল মান্নান সত্তরের দশকে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের উপন্যাস ‘খেলারাম খেলে যা’ যখন প্রথম প্রকাশিত হলো তখন তা উঠতি বয়সী পাঠকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। উপন্যাসটি কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী। এটি নিছক উঠতি বয়সের প্রেমিক প্রেমিকার বিষয় ছিল না। মূল চরিত্র টেলিভিশনের জনপ্রিয় উপস্থাপক বাবর আলী খান। উপন্যাসে বাবর আলীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পড়ে উঠতি বয়সের পাঠকদের মনে হতে পারে বাবরের মতো একজন লম্পট বুঝি ত্রিভুবনে নেই। বাবর আলীর অনেক কীর্তি বেশ রগরগে এবং উত্তেজক। সৈয়দ হক এই বাবর আলীর উদ্দেশেই বললেন ‘খেলারাম খেলে যা’। মানে লাম্পট্য চলতে থাকুক। আমি সৈয়দ হকের এই উপন্যাস নিয়ে আলোচনা লিখতে বসিনি আর সেই সক্ষমতাও আমার নেই। প্রায় চার দশক আগে পড়া এই উপন্যাসের কথা এতদিন পর মনে পড়লো। কারণ, বাংলাদেশে রাজনৈতিক মঞ্চে এখন আর এক ধরনের খেলারামদের পদচারণা শুরু হয়েছে, যাদের উদ্দেশ্য ঠিক লাম্পট্য নয় তবে রাজনৈতিক চালবাজি যা রাজনৈতিক লাম্পট্য হিসেবে দেখা যেতে পারে আর এই কীর্তি শুরু হয়েছে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে। উদ্দেশ্য একটাই, যেকোনও উপায়ে আওয়ামী লীগ আর শেখ হাসিনাকে ফেলে দিতে হবে। এই খেলারামদের মূল গুরু সুদূর লন্ডনে থাকেন আর তার ইশারায় বাংলাদেশের খেলারামরা খেলার ছক কষে ফেলেছে এবং তাদের খেলা ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এই খেলারামদের দল বেশি ভারি। এতে আছে দেশের একশ্রেণির সুশীল ব্যক্তি, যারা নিজেদের পদ-পদবি দিয়ে দেশের সরল প্রাণের মানুষদের বিভ্রান্ত করতে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। জামায়াত বিএনপি নামক দু’টি দলই এখন অস্তিত্ব রক্ষায় মরিয়া। শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগকে যেকোনও উপায়ে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারলে তারা মনে করে কেল্লা ফতে। তাদের পছন্দসই জামায়াত-বিএনপি ঘরানার কেউ একজন ক্ষমতায় বসবে আর শেখ হাসিনা রাজনৈতিক নির্বাসনে যাবেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু জামায়াতসহ অন্যান্য ধর্মাশ্রিত রাজনৈতিক দলগুলোকে সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ করেছিলেন। কারণ, এসব দল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে এ দেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্বিচার গণহত্যাতে সার্বিকভাবে সহায়তা করেছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর জেনারেল জিয়া ক্ষমতা দখল করে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার নামে এই নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলগুলোকে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশে শুধু রাজনীতি করার লাইসেন্স দেননি, তিনি ও তার স্ত্রী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অংশীদারও করেছেন। সেই থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের যাত্রা শুরু। নব্য খেলারামদের তালিকায় আছে কয়েকজন বড়মাপের সাবেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যাদের রাজনৈতিক পরিচয় বঙ্গবন্ধুর ছায়াতলে শুরু হয়েছিল। মাইনাস বঙ্গবন্ধু এদের রাজনৈতিক পরিচয় বা অর্জন শূন্য। আছে বহুল প্রচারিত দু-একটি প্রিন্ট মিডিয়া যারা কখনও বর্তমান সরকারের কোনও ভালো কাজ হয় দেখে না অথবা দেখলেও তা ভেতরের পৃষ্ঠায় দায়সারাভাবে যৎসামান্য উল্লেখ করে। পদ্মা সেতুর অর্থায়ন হতে বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ার পেছনে এই প্রিন্ট মিডিয়ারগুলোর বেশ জোরালো ভূমিকা ছিল। অবশ্য তখন দু-একটি ইলেকট্রনিক্স মিডিয়াও একই ভূমিকা রেখেছিল। বর্তমানে একটি বাংলা দৈনিক অনেকটা নীরবেই ‘দৈনিক আমার দেশ’-এ পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে কোটা সংস্কার বিষয়ে আন্দোলনের নামে গুজবের ভিত্তিতে যে সহিংসতা চালানো হয়েছে, যেভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাড়ির প্রতিটি কক্ষ এবং তার সকল ধরনের আসবাবপত্র ধ্বংস করা হয়েছে তাতে এই দৈনিকটির অবদান ছিল উল্লেখ করার মতো। বেগম সুফিয়া কামাল হলের কয়েকজন ছাত্রীকে মোবাইল ফোনে গুজব ছড়ানোর দায়ে তাদের অভিভাবকদের হাতে রাতে তুলে দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে যেভাবে নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হয়েছে, উপাচার্যের বাড়িতে তাণ্ডব চালানোর ঘটনার দিন যে কয়েক শত ছাত্রী বিভিন্ন হলের গেট ভেঙে মধ্যরাতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়লো সেই ঘটনা নিয়ে কোনও মিডিয়া বা ‘সুশীল’ ব্যক্তিদের তেমন কোনও উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায়নি। অবশ্য যে মেয়েগুলোকে রাতের বেলায় তাদের অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া। গুজব ছড়ানো হলো বেগম সুফিয়া কামাল হলে এক ছাত্রলীগ নেত্রী একজন ছাত্রীর পায়ের রগ কেটে দিয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেই অভিযুক্ত ছাত্রীকে যে নজিরবিহীনভাবে অপদস্থ করা হয়েছে তা নিয়ে কোনও ‘সুশীল’ বা মিডিয়াকে তেমন কোনও প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। কোটা পদ্ধতির সংস্কার প্রয়োজন তা সমর্থন করেও পরবর্তী ঘটনাগুলো কি সমর্থনযোগ্য– তেমন প্রশ্নতো করাই যেতে পারে। আসলে এসব ঘটনা দুর্ঘটনার মূল লক্ষ্য হচ্ছে সরকারকে কোণঠাসা করে সামনের নির্বাচনে ফায়দা লোটা এবং এই অপকর্মে ব্যবহার করা হয়েছে এমন একটা ইস্যু যেটি সম্পর্কে সাধারণ শিক্ষার্থীদের তেমন পরিষ্কার কোনও ধারণা নেই এবং যারা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে এখন সকলে অবহিত। আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এমন ঘটনা যে নিয়মিত ঘটবে তা প্রায় নিশ্চিত।

তবে নতুন খেলারামদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনসমূহে অনুপ্রবেশকারী সকল প্রকারের ‘হাইব্রিড’, যাদের ঠেলায় অতিষ্ঠ আজীবন আত্মত্যাগী তৃণমূল নেতাকর্মীরা। এই ‘হাইব্রিড’রা শুধু যে দলে বা অঙ্গসংগঠনে প্রবেশ করেছে তাই নয়, প্রবেশ করেছে প্রশাসনের প্রত্যেকটি স্তরে এবং প্রতিটি পেশায়। এই ‘হাইব্রিড’রাই এখন অনেক ক্ষেত্রে চালকের আসনে। প্রশাসন বা বিভিন্ন পেশায় যেসব খেলারাম আছেন তারা হচ্ছেন উইপোকার মতো। সকলের অলক্ষে তারা আওয়ামী লীগকে ভেতর হতে কুরে কুরে খেয়ে ফেলছেন। অবস্থা এমন হয়েছে পাঁচ বছর বা দশ বছর আগে যে ব্যক্তি ঘোষণা দিয়ে জামায়াত বিএনপি’র রাজনৈতিক ভাবধারা লালন করতো তারা বর্তমান সরকারের শেষ মুহূর্তে এসে যত ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে তা বাগিয়ে নিতে ব্যস্ত। দ্রুত পেছনে পড়ে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করেন তেমন কর্মকর্তারা। এতে প্রশাসনে বাড়ছে হতাশা।

সংবাদপত্র খুললেই চোখে পড়ে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘাত, সংঘর্ষ আর খুনখারাবির ঘটনা। কারা এর সঙ্গে জড়িত? যারা সত্যিকার অর্থে মুজিব আদর্শে বিশ্বাস করে তাদের খুব কম সংখ্যকই এসব আত্মঘাতী কর্মের সঙ্গে জড়িত থাকে, তবে নতুন খেলারামরা এদের কারো কারো কাছ হতে প্রয়োজনে সকল প্রকারের সহায়তা পেয়ে থাকে। একটি ছোট উদাহরণ। চট্টগ্রামের একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার কয়েকজন পরিচিত বাসিন্দার সঙ্গে আলাপ করে মনে হলো তারা এসব খেলারামদের উৎপাতে অতিষ্ঠ। তারা ঠিক করেছে আগামী নির্বাচনে তারা ভোটকেন্দ্রেই যাবে না। অথচ যেহেতু এদের সকলকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি, নির্দ্বিধায় বলতে পারি এরা কেউই জামায়াত বা বিএনপি’র সমর্থক নন। এমন পরিস্থিতি বাংলাদেশের অনেক এলাকার বেলায় সত্য এবং সংখ্যালঘু এলাকার বেলায় আরও সত্য, কারণ এটি এখন সকলের কাছে পরিষ্কার যে একশ্রেণির এই ‘হাইব্রিড’রা নানাভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জায়াগা জমির ওপর অযাচিত দাবি বসাচ্ছে এবং তা দখলে নেওয়ার জন্য সকল প্রকারের চেষ্টা করে যাচ্ছে। এর ফলে এই ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা সবসময় এক প্রকারের ভীতির মধ্যে বাস করছে। এটি মোটেও সুখের নয়। বড় প্রশ্ন এই ‘হাইব্রিড’দের কর্মকাণ্ডের জবাব দেওয়ার জন্য সামনের নির্বাচনে এসব অসহায় ও ভীতসন্ত্রস্ত মানুষ যদি ভোটকেন্দ্রে না যায় তা হলে তা কী কোনোভাবে আওয়ামী লীগের জন্য মঙ্গল হবে? দলের অন্তঃকোন্দল এখন দলের বাইরেই দৃশ্যমান। এর ফলে গতবার অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে দলের পরাজয় অবধারিত হয়ে উঠেছিল। সামনে বেশ কয়েকটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন আসন্ন। অনেকের প্রশ্ন গতবারের সমস্যা কি মিটেছে? দিন দুয়েক আগে একটি সিটি করপোরেশনের সার্বিক অবস্থা নিয়ে এলাকার কয়েকজন ভোটারদের সঙ্গে আলাপ হচ্ছিল। তারা সকলে একবাক্যে স্বীকার করলেন, যাকে আওয়ামী লীগ হতে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তিনি সব দিক হতেই যোগ্য। তবে তার সামনে বড় প্রতিপক্ষ দলের মনোনয়ন বঞ্চিতরা। সময় থাকতে এদের দমন করা না গেলে বিপর্যয় তো হতেই পারে।

এই খেলারামদের খেলার জন্য অর্থের প্রয়োজন। তা কোনও সমস্যা নয়। মূল খেলারাম যিনি লন্ডনে থাকেন তার অর্থের যে অভাব নেই তা গত প্রায় দশ বছর তার লন্ডনের অত্যন্ত ব্যয়বহুল আবাসিক এলাকায় সপরিবারে বিলাসী জীবনযাপন, আইনের দৃষ্টিতে একজন ফেরারি আসামি হয়েও পাঁচতারকা হোটেলে নানা রাজনৈতিক কর্মসূচির আয়োজন এবং সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লন্ডন সফরকালে মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের নামে দলীয় গুণ্ডামি আর প্রচারের আয়োজন তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। আর এই অর্থ যে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই জোগান দিচ্ছে তাও পরিষ্কার। কারণ, নানা সময় এই খেলারাম ও তার মা লন্ডনে আইএসআইর সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন, যা বাংলাদেশের মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে।

নতুন খেলারামদের আবির্ভাব, তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আর সার্বিক কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়তো সম্পূর্ণভাবে অবহিত নন। কারণ, প্রশাসনের ভেতর লুকিয়ে থাকা খেলারামরা সব সংবাদ তার কাছে পৌঁছাবেন তেমনটি আশা করা যায় না। আর যেসব তথ্য তারা পৌঁছান তা হবে কিছু সত্য আর বেশিরভাগই অর্ধসত্য অথবা সম্পূর্ণ অসত্য, অনেকটা প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করার জন্য। এই খেলারামদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে না পারলে শুধু উন্নয়নের কথা বলে আগামী নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল ঘরে তোলা সহজ নাও হতে পারে। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসবে ততই নতুন খেলারামদের আবির্ভাব ঘটবে। আওয়ামী লীগ প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী আর দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রায়ই বলে থাকেন, দলে ও অঙ্গসংগঠনসমূহে শুদ্ধি অভিযান চালানো হবে। এটি করার সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। যা করার তা এখনই করতে হবে। খেলারামদের দমন করার একমাত্র অস্ত্র দলের নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা। ভাড়া করা খেলোয়াড় দিয়ে খেলায় জেতা সহজ নয়। সময় শেষ হয়ে গেলে আফসোস করে কোনও লাভ নেই।

লেখক: বিশ্লেষক ও গবেষক

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ