X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

পণ্যতন্ত্র

তুষার আবদুল্লাহ
২৮ এপ্রিল ২০১৮, ১২:৫১আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০১৮, ১৩:২৫

তুষার আবদুল্লাহ পৃথিবীতে মানুষের আগমন শ্রমিক পরিচয়ে। প্রকৃতির আর সব সহকর্মীর সঙ্গে মানুষেরও দায়িত্ব ছিল ধরিত্রীর সুন্দরকে রক্ষা করা। জীববৈচিত্র্য ও জীবনচক্রের ছন্দ অক্ষুণ্ন রাখার জন্য কাজ করা। এই কাজে প্রকৃতির সব প্রাণীর একযোগে কাজ করার কথা—একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়েই। এই নির্ভরশীলতার প্রাকৃতিক ভারসাম্য থাকার কথা ছিল। খাদ্যচক্রে ছন্দ থাকবে। জীবনচক্র চলবে আপন নিয়মে। মানুষ প্রকৃতির সন্তান হিসেবে তার প্রতিবেশ সুরক্ষায় শ্রম দেবে, প্রকৃতির সংবিধানে তাই ছিল। সেখানে প্রকৃতির সব সন্তানের জন্য ছিল প্রশ্রয়ের সাম্যতা। কিন্তু মানুষ সাম্যতায় তুষ্ট রইলো না। সমঅংশীদার বা বণ্টনের বিরুদ্ধে  বিদ্রোহ একমাত্র মানুষই করেছে। আর কোনও প্রাণীর সাম্যতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ইতিহাস নেই। মানুষ প্রকৃতি থেকে তার আহার জোগাড় করে গোষ্ঠীর সবাই মিলে একটা সময় পর্যন্ত ভোগ করতো। একসময় সেই আহার মানুষ সংরক্ষণ বা মজুদ করতে শিখে গেলো। মানুষ পেলো পুঁজির স্বাদ। ক্রমশ সেই পুঁজির ক্ষুধা বেড়েছে, বাড়ছেই। পুঁজির লোভে মানুষ কেবল প্রকৃতির অন্য উপকরণ বা প্রাণীদের শাসন করে পরিতৃপ্তি’র ঢেঁকুর তুলতে পারলো না। মানুষ মানুষকেই শাসন করতে চাইলো। মানুষ হলো মানুষেরই দাস।

মানুষকে দাস বানাতে পৃথিবীতে কত  মতবাদ উড়ে এলো, আবার উড়েও গেলো নতুন মতবাদের ঘূর্ণিতে। এক মতবাদ জয় করেছে অন্য মতবাদের জমিন। সেই লড়াই আজও  থামেনি। ধর্ম এসেছে সাম্যের বার্তা নিয়ে। তার প্রচারে ছিল সমতার কথা। গোষ্ঠীর সামন্ত প্রভুদের দ্বারা নিপীড়নের শিকার মানুষ, যারা নিজেদের ‘দাস’ ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছিল না, তারা একসময় সব ধর্মের সমতার বার্তার দিকে মন বাড়িয়ে দিয়েছিল। সাম্যতা রক্ষা করা যায়নি ধর্ম দিয়েও। না যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ পুঁজি। সাম্য পুঁজির প্রধান শত্রু। রাজনীতি তার দোসর।  এতে পুঁজির সুবিধা হয় শাসন ও শোষণের।  
পণ্যের সাম্রাজ্যবাদিতার মাধ্যমে নতুন ঔপনিবেশিকতার কাছে নতজানু আজ  মানুষ। এই ঔপনেবিশকতা পণ্যের। টুথপেস্টের মতো মানুষও আজ পণ্য। পণ্যের দাস। মানুষ এক সময় মানুষের দাস ছিল। নিলামে উঠতো মানুষ। কড়ির মতো মানুষও ছিল বিনিময় মুদ্রা। মানুষের অভিবাসনের ইতিহাস দাসত্বের ইতিহাস। দাস হয়েই তাকে সীমানা পেরোতে হয়েছে। তখন তার 'কর্তা' ছিল ব্যক্তি। এখন পুঁজির দাস হয়েই এক জমিন থেকে অন্য জমিনে পাড়ি জমাচ্ছে মানুষ। মানুষ সাম্যে এখন আর তার মুক্তি দেখতে পাচ্ছে না। পুঁজিতেই তার মুক্তি বা নির্বাণ। এই বিশ্বাস নিয়ে আজ তার দাসত্বের সুখ। মানুষ গোলকের এই বয়সে তো আর কম তন্ত্র দেখেনি। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র কিংবা ব্যক্তিনামে মতবাদের রকমারি রঙ। কোনোটিই থাকে ‘সমান’, ‘সাম্য’, ‘এক’ এই গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারেনি। পথে নামিয়েছিল, মানুষ নেমেছিল, কিন্তু সেই পথের রঙ ছিল মরিচীকার। পথ নিজেই সটকে পড়েছে। মানুষ হয়েছে দিকহারা। এই বয়সে এসে এখন মনিব পেয়ে গেছে যুৎসই। এই মনিব তাকে শক্তি জুগিয়েছে দখলের, কেড়ে নেওয়ার। পেশীতে শক্তি থাকলে পাত খালি পড়ে থাকবে না। নিজের পাত উপচে পড়ছে, পড়ুক না। অন্যের পাতের হাহাকার বরং ভোগকে আরও উপভোগ্য করে তোলে। তাই আজ গোলকজুড়ে বিজ্ঞাপন। সবাই বিক্রি হতে তৈরি। এই পৃথিবী আজ দাসের। এখানে সবাই সবাইকে এক নামে জানে–পণ্য।

পণ্যতন্ত্রকে প্রকৃতি কতদিন সইবে? ধরিত্রীর বিরাগ হওয়ার নানা উপসর্গ আসমান জমিনে স্পষ্ট। মানুষকে মানুষের কাছে ফিরতে হবে। লাখ বছরে পারেনি, তাই বলে পারবে না এই হতাশা সত্য নয়। মানুষ মানুষের কাছে ফিরবে দরদি হয়ে। সাম্যের সুর নিয়েই। আদি পৃথিবীর কাছে না ফিরলে মানুষের নির্বাণ লাভ হবে না। কেবল নিজেকে প্রবোধ দেওয়ার জন্য একথা নয়। প্রকৃতির নিজের পথচিত্র আছে। সেই পথচিত্রে তাকে ফিরতেই হবে। মানুষের শুধু জেনে রাখা দরকার পতঙ্গ এবং তার পরিচয়, অস্তিত্ব প্রকৃতির ভাবনার সমস্তরেই।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

/এসএএস/এমএনএইচ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো
এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো
বাংলাদেশকে ‘সিকিউরিটি প্রোভাইডার’ দেশ হিসেবে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশকে ‘সিকিউরিটি প্রোভাইডার’ দেশ হিসেবে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র
আরও কমলো সোনার দাম  
আরও কমলো সোনার দাম  
 ১ পদে ২৩৮ জনকে চাকরি দেবে ভূমি মন্ত্রণালয়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
 ১ পদে ২৩৮ জনকে চাকরি দেবে ভূমি মন্ত্রণালয়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ