X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিটি করপোরেশন নির্বাচন: কারও কোনও পরীক্ষা কি?

বিভুরঞ্জন সরকার
০৭ মে ২০১৮, ১৪:০৪আপডেট : ০৭ মে ২০১৮, ১৪:০৬

বিভুরঞ্জন সরকার আগামী ১৫ মে খুলনা এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। নির্বাচনি প্রচারণা পুরোদমে চলছিল। বিএনপিও এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু এমনই সময় ৬ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্থগিত করেছে উচ্চ আদালত। সীমানা জটিলতায় মাত্র নয়দিন আগে আটকে গেলো গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এখন শঙ্কা তৈরি হলো খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরিণত নিয়েও?
এই দুটি নির্বাচন ছিল অন্যরকম পরীক্ষা। দেখার বিষয় বিষয় ছিল নির্বাচনটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য হয় কিনা! অবাধ এই অর্থে যে, ভোটাররা ভীতিমুক্ত পরিবেশে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারেন কিনা। আর গ্রহণযোগ্য হবে পরাজিত পক্ষ ফলাফল মেনে নেওয়ার মানসিকতা দেখালে।
নির্বাচন মানেই আমাদের দেশে উৎসবের আমেজ। নির্বাচন মানেই উত্তেজনা। খুলনা এবং গাজীপুরে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছিল, উত্তেজনাও আছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি ছাড়াও আরো প্রার্থী থাকলেও সবার আগ্রহ এবং মনোযোগ বড় দুই দলের প্রার্থীদের দিকে।

আগে বলা হতো স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয় মূলত স্থানীয় ইস্যুর ওপর ভিত্তি করে। জাতীয় ইস্যু ও রাজনীতি স্থানীয় নির্বাচনে খুব একটা প্রভাব ফেলে না। মানুষ প্রার্থীর ব্যক্তিগত গুণাগুণ, জনপ্রিয়তা, আঞ্চলিকতা ইত্যাদি নানা বিষয় বিবেচনা করেই প্রতিনিধি নির্বাচিত করতেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে রাজনৈতিকভাবে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হতো না। দলীয় প্রতীকও ব্যবহার করা হতো না। যদিও প্রার্থীর রাজনৈতিক পরিচিতি বা আনুগত্য ভোটারদের অজানা থাকতো না। রাজনৈতিক দলগুলোও হাত গুটিয়ে ঘরে বসে থাকতো না। ‘ঘোমটার নিচে চলতো খেমটা নাচ’।

কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। আমরা আকণ্ঠ রাজনীতি নিমজ্জিত জাতি হিসেবে স্থানীয় নির্বাচনেরও রাজনীতিকরণ করেছি। এখন প্রার্থী মনোনয়ন দিচ্ছে রাজনৈতিক দল। দলীয় প্রতীক ব্যবহার হচ্ছে। কাজেই এখন আর বলা যাবে না সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রভাব জাতীয় নির্বাচন বা রাজনীতিতে পড়বে না। বরং এটাই এখন বলা হচ্ছে বা হিসাব-নিকাশ চলছিল গাজীপুর ও খুলনা আগামী জাতীয় নির্বাচনে কতটুকু প্রভাব ফেলবে। যদিও গাজীপুর সিটি নির্বাচন এখন স্থগিত। শুধু তাকিয়ে থাকতে হবে খুলনার দিকে। 

আমাদের অনেকের মধ্যেই এক ধরনের অতি সরলীকরণ প্রবণতা রয়েছে এবং সে কারণেই যেকোনও নির্বাচনের ফলাফলকেই আমরা অতি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। নির্বাচন হলেই আমরা তাকে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের জন্য ‘অগ্নিপরীক্ষা’ বলে প্রচার করে থাকি। রাজনৈতিক দলের জনপ্রিয়তা পরিমাপের জন্য নির্বাচন নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। তবে তার মানে এই নয় যে কোনও একটি নির্বাচনের জয়-পরাজয় দিয়ে একটি দলের জনপ্রিয়তার প্রকৃত পরিমাপ করা যেতে পারে।

এখন খুলনা সিটি নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আওয়ামী লীগও যেমন আশাবাদী, তেমনি বিএনপিও। গাজীপুরের ক্ষেত্রেও একই ছিল। দুই দলই আসলে জয়ের জন্য লড়াইয়ে নামে। দুই দলের জন্যই যেকোনও নির্বাচন হয়ে দাঁড়ায় ‘প্রেস্টিজ ইস্যু’। আদর্শিক অবস্থানের দিক থেকে আমরা এখন একটি ‘বিভ্রান্ত’ সময়ে বসবাস করছি। আমরা কখনও কখনও এটাও আমরা ভুলে যাই যে দুই দল একসঙ্গে নির্বাচনে জিততে পারবে না।

খুলনা সিটিতে যদি আওয়ামী লীগ জেতে কিংবা ভবিষ্যতে গাজীপুর সিটিতে নির্বাচন হলে যদি আওয়ামী লীগ জেতে তাহলে বলা হবে সরকার কারচুপি করেছে, মানুষ ভোট দিতে পারেনি ইত্যাদি। আবার যদি বিএনপি জেতে তাহলে বলা হবে, সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই। সরকারকে বিদায় নিতেই হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই দুই সিটিতে হারলেও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হবে না। আবার বিএনপি জিতলেও সরকার গঠন করতে পারবে না। এটা আসলে সরকার বদলের নির্বাচনই নয়।

বিএনপি সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে সম্ভবত সবার কাছে এই বার্তাটাই দিচ্ছে যে আগামী জাতীয় নির্বাচনেও তারা অংশ নেবে। চাপ দিয়ে সরকারের কাছ থেকে কিছুটা সুবিধা আদায়ের কৌশল হিসেবেই হয়তো নির্বাচনে অংশ নেওয়া, না-নেওয়ার বিষয়টি বিএনপি এখনই ফয়সালা করবে না। কিন্তু আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ না-নেওয়ার ফল কী হবে বিএনপি সেটা ভালো করেই বোঝে। কিন্তু তাদের তো এখন ‘উপায় হোসেন গোলাম নাই’ অবস্থা।

যেহেতু আর কয়েক মাস পর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেহেতু দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে রাজনৈতিক পন্ডিত-বিশ্লেষকরা অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে সামনে আনছেন। এই দুই সিটি নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে বলে তাদের অনেকেই মনে করছেন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বড় দুই দল কথার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার বলেছেন, সিটি নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে হলুদ কার্ড দেখাবে। আর জাতীয় নির্বাচনে দেখাবে লাল কার্ড।

আবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা জাহাঙ্গীর নানক বলেছেন, বিএনপি অনেক আগেই লাল কার্ড পেয়ে রাজনীতির মাঠ থেকে বিদায় নিয়েছে। উন্নয়নের ধারায় বিএনপির রাজনীতির প্রয়োজনীয়তাও ফুরিয়েছে বলে আওয়ামী লীগ মনে করছে। তবে আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে বিএনপির প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেছে বলে মনে হলেও ভোটাররা ঠিক তাই মনে করেন কিনা সেটা জানার জন্য আমাদের ১৫ মে ভোটের ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

তবে এটা ঠিক, খুলনার নির্বাচনের জয়-পরাজয় বিএনপির জন্য যেমন একটি শিক্ষণীয় বিষয় হবে, তেমনি সরকার তথা আওয়ামী লীগ নিজেদের অন্দর মহলে একটু চোখ ফিরিয়ে দেখতে পারবে।

কেউ কেউ মনে করছেন, এই সিটি করপোরেশন নির্বাচন কেমন হয় তার ওপর নির্বাচন কমিশনের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি নির্ধারিত হবে। নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতার প্রমাণ মিলবে নির্বাচনে। কিন্তু বিতর্ক করা যাদের অভ্যাস তারা দুই সিটিতেই বিএনপি জিতলেও নানা ধরনের খুঁত বের করে নিন্দা-সমালোচনা অব্যাহত রাখবে। আগের নির্বাচনেও খুলনা এবং গাজীপুরে বিএনপি জয়লাভ করেছিল। সরকারে আওয়ামী লীগ আর সিটিতে বিএনপি হলে ফলাফল কী হয় তা দুই সিটির মানুষই প্রত্যক্ষ করেছেন। আগের মেয়রদের পারফরম্যান্স যে আশাপ্রদ নয় সেটা বিএনপিও জানে। সে জন্যই হয়তো বিএনপি এবার আগের নির্বাচিত মেয়রদের বাদ দিয়ে নতুন মুখ বেছে নিয়েছে। রাজনৈতিকভাবে পরিচিত এবং অভিজ্ঞ প্রার্থী দিয়ে বিএনপি হয়তো ভোটারদের এই বার্তাই দিতে চেয়েছে, কর্মদক্ষতার সঙ্গে তারা কোনও আপস করে না।

গাজীপুর সিটি নির্বাচন স্থগিত হওয়ার পর শেষ ভরসা খুলনা দেশের রাজনীতির জন্য শুভ সংবাদ নাকি দুঃসংবাদ বয়ে আনে সেটাই এখন দেখার বিষয়। বাইরের উত্তেজনা ভেতরের অবস্থা বুঝতে দেয় না। ভোট শেষে ফলাফল ঘোষণা হলেই কেবল বলা যায়,হ্যাঁ! এই হলো নির্বাচনের আসল  চিত্র!

লেখক: কলামিস্ট

 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ১৩৭
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ১৩৭
কানে ডিভাইস নিয়োগ পরীক্ষার কেন্দ্রে বোন, বাইরে থেকে উত্তর বলার অপেক্ষায় ভাই
কানে ডিভাইস নিয়োগ পরীক্ষার কেন্দ্রে বোন, বাইরে থেকে উত্তর বলার অপেক্ষায় ভাই
কাভার্ডভ্যান-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই গাড়িতেই আগুন, প্রাণ গেলো একজনের
কাভার্ডভ্যান-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই গাড়িতেই আগুন, প্রাণ গেলো একজনের
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ