X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘ভালো মন্দ যাহাই আসুক, সত্যেরে লও সহজে’

প্রভাষ আমিন
০৮ মে ২০১৮, ১৭:১৯আপডেট : ০৮ মে ২০১৮, ১৭:৪৩

প্রভাষ আমিন বাংলাদেশে অবস্থান প্রশ্নে সাধারণ মানুষের ধারণাটা একটু গোলমেলে। আমরা সবাই চরমপন্থী। হয় আপনি আওয়ামী লীগ, নয় আপনি বিএনপি; হয় আপনি কোটার পক্ষে, নয় আপনি বিপক্ষে। ন্যায়ের পক্ষে কোনও অবস্থান মানেই আপনি সুবিধাবাদী। কোনও লেখা আওয়ামী লীগের পক্ষে গেলেই বলে দালাল, পেইড এজেন্ট। বিএনপির পক্ষে গেলে বলে, আগে থেকেই পক্ষ বদলের চেষ্টা। কিন্তু ঘটনার যৌক্তিকতা, ন্যায্যতা বিবেচনারও যে একটা অবস্থান থাকতে পারে, সেটা আমরা বুঝতেই চাই না। বহুবার আমাকে এই ‘সুবিধাবাদী’ গালি শুনতে হয়েছে। আমি তো লেখার আগে পক্ষ নির্ধারণ করে লেখা শুরু করবো না। আমি ঘটনার ন্যায্যতা-অন্যায্যতা বিবেচনা করবো। সেটা কার পক্ষে বা বিপক্ষে যাবে, সে সিদ্ধান্তের দায় তো লেখকের নয়। যেমন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন এবং পরের বছর নির্বাচনের বর্ষপূর্তির সময় আন্দোলনের নামে বিএনপির পেট্রোল সন্ত্রাসের তীব্র সমালোচক ছিলাম আমি। বিএনপির লোকজন দাবি করেন তারা পেট্রোল সন্ত্রাস চালাননি। বরং সরকারি দলের লোকেরা করে, তাদের ওপর দায় চাপিয়েছে। কিন্তু যেহেতু বিএনপির ঘোষিত কর্মসূচির সময় ঘটনাগুলো ঘটেছে, তাই দায় তাদের নিতেই হবে আমার মনে হয়েছে, নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি ভুল করেছে। আবার আমার ধারণা হয়েছে, সরকার বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য যথেষ্ট আন্তরিক চেষ্টা চালায়নি। এ অভিযোগের জবাবে সরকারি দলের নেতারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজে বেগম খালেদা জিয়াকে ফোন করেছিলেন। বিএনপিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল। এসবই সত্য। তারপরও আমার ধারণা জন্মেছে, জাতীয় পার্টি ও এরশাদকে নির্বাচনে আনতে সরকার যত কৌশল করেছে, বিএনপিকে আনার ব্যাপারে তা করেনি। ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন, প্রার্থীবিহীন নির্বাচন আইনগতভাবে বৈধ হলেও নৈতিকভাবে উচ্চমানসম্পন্ন ছিল না বলে আমি বিশ্বাস করি। বিএনপির ভাষায় সরকারকে অবৈধ না বললেও আমি মনে করি এ সরকার অবৈধ না হলেও যথেষ্ট জনরায়সম্পন্ন নয়। ১৫৪ জন এমপি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাওয়ায় আইনগত কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু নির্বাচনের আগেই সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যাওয়াটা কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক চেতনার সমান্তরাল নয়। বর্তমানে সংসদে জাতীয় পার্টির অবস্থানটাও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। একই সঙ্গে বিরোধী দল এবং সরকারে থাকার নজির কোথাও নেই।

বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতায় দেশে যে উন্নয়ন হয়েছে তাও নজিরবিহীন। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। তার আগেই উন্নীত হয়েছে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে। নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ আমাদের সক্ষমতার উজ্জ্বলতম উদাহরণ। বাংলাদেশের এখন সাবমেরিন আছে। উড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট। ২০১৪-১৫ সালে বিএনপির নজিরবিহীন সহিংস আন্দোলনের অংশটুকু বাদ দিলে বর্তমান সরকারের ৯ বছরের মেয়াদে দেশ বেশ স্থিতিশীল ছিল। আর এই স্থিতিশীলতাই গতি এনেছে উন্নয়নে। কিন্তু উন্নয়নে বিশ্বের রোল মডেল হলেও গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার প্রশ্নে বাংলাদেশের ব্যর্থতা আমাদের লজ্জিত করে। শেখ হাসিনা বিরোধী দলে থাকতে ক্রসফায়ারের ঘোরতর বিরুদ্ধে থাকলেও তাঁর আমলেই ঢালাও ক্রসফায়ার আর গুম দেশে এক শ্বাসরুদ্ধকর এবং বেদনাদায়ক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। আবার ‘অপারেশন ক্লিনহার্ট’-এর মাধ্যমে বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছিল বেগম খালেদা জিয়ার আমলেই। বেগম জিয়া এখন যে র‌্যাব-এর বিলুপ্তি চান, তার যাত্রা শুরু হয়েছিল তার হাত ধরেই। তাই বিচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের দায় দুই দলেরই।

দুর্বল হলেও বর্তমান সরকার নির্বাচিত। আর গণতন্ত্রের জন্য আওয়ামী লীগের দীর্ঘ লড়াইয়ের ইতিহাস আছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের আমলেই বিরোধী দলের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সমাবেশ করার অধিকার ভূলুণ্ঠিত হয়েছে বারবার। বিএনপি অনেকবার চেয়েও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি পাচ্ছে না। আগে যে দুয়েকবার পেয়েছিল, তাও নানা শর্তের বেড়াজালে বন্দি।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতাও হোঁচট খেয়েছে বারবার। ৫৭ ধারা বারবার গলা টিপে ধরেছে সাধারণ মানুষের মত প্রকাশের অধিকারকে। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বাতিল হলেও প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৯ ধারা নিয়ে শঙ্কা গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞদের।

গণতন্ত্র কিছুটা ছাড় দিয়ে উন্নয়নের পক্ষে অনেকে মত প্রকাশ করলেও আমার উন্নয়ন, গণতন্ত্র দুটোই চাই। উন্নয়ন চাই বটে, তবে প্রকৃতি ধ্বংস করে নয়। সুন্দরবনের সামান্য ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আছে, এটা জানার পর আমি রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিরুদ্ধে।

জনরায়ে ঘাটতি থাকলেও আমি মনে করি বর্তমান সরকার শেষ পর্যন্ত গণতান্ত্রিকই। হয়তো উন্নত গণতন্ত্র নয়, তবু গণতান্ত্রিকই। আর সবচেয়ে খারাপ গণতন্ত্রও অন্য যেকোনও ব্যবস্থার চেয়ে ভালো। আর গণতান্ত্রিক বলেই এই সরকার একাধিকবার জনরায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নিজেদের অবস্থান বদল করেছে। আরিয়লবিলে বিমানবন্দর স্থাপনের সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে এসেছে আন্দোলনের মুখে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভ্যাটবিরোধী আন্দোলনও সরকার মেনে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকার কোটার পক্ষে অবস্থানের কথা জানালেও আন্দোলনের মুখে কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন। আমি বারবার সংখ্যাগরিষ্ঠতার চেয়ে ন্যায্যতার গণতন্ত্রের কথা বলে এসেছি। আমি মনে করি, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ একটি ভুল কথা বললেই তা ঠিক হয়ে যায় না। কিন্তু অনেক মানুষের আবেগের প্রতি সম্মান দেখিয়ে বারবার নিজেদের অবস্থান বদল করে সরকার বুঝিয়ে দিয়েছে শেষ পর্যন্ত তারা গণতান্ত্রিক চেতনাই ধারণ করে। সামরিক শাসক থাকলে এই তিনটি ঘটনাই আরো অনেক বেশি সহিংস ও রক্তক্ষয়ী হতে পারতো। কিন্তু জোরদার গণআন্দোলন না থাকায় রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন থেকে এখনও সরকারকে পিছিয়ে আনা যায়নি। কিন্তু আমি সবসময়ই বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ থেকে আমি এই শিক্ষা পেয়েছি, ন্যায্য কথা সেটা একজনও যদি বলে, সেটা মানতে হয়।

বলছিলাম অবস্থানের কথা। রামপাল ইস্যুতে আমার অবস্থান যেমন সরকারের বিপক্ষে যায়, আবার কোটা ইস্যুতে পক্ষে যায়। পেট্রোল সন্ত্রাস প্রশ্নে আমার অবস্থান যেমন বিএনপির বিপক্ষে যায়, আবার ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপির পক্ষে যায়। বরাবরই আমার অবস্থান নির্ধারিত হয় ঘটনার ন্যায্যতা দিয়ে, নৈতিকতা দিয়ে; দল দিয়ে নয়। যারা আমার অবস্থানের নৈতিকতাটা বুঝতে পারেন না; তারা কখনও আমাকে সুবিধাবাদী, কখনও নিরপেক্ষ বলে গালি দেন। যারা হুট করে আমার লেখা ফলো করেন, তারা বিভ্রান্ত হয়ে যান। কিন্তু আমি কখনোই নিজেকে নিরপেক্ষ মনে করি না, দাবিও করিনি। আমি দলনিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করি, তবে আদর্শ নিরপেক্ষ নই। আমি সুস্পষ্টভাবে বাংলাদেশের পক্ষে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে;  আমি সবসময় উন্নত, উদার, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি। আমি সত্যের পক্ষে, ন্যায়ের পক্ষে। আমি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই, সাম্প্রদায়িকতামুক্ত বাংলাদেশ চাই।

সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় আমার অবস্থান আমার অনিয়মিত পাঠকদের বিভ্রান্ত করেছে। নৈতিকভাবে আমি কোটার পক্ষে। আমি মনে করি, একটি বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়তে যৌক্তিক কোটা থাকা দরকার। আর মুক্তিযোদ্ধা কোটা প্রসঙ্গে আমার অবস্থান, পর্যাপ্ত প্রার্থী পাওয়া যাক আর না যাক; মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানাতে তাদের জন্য সর্বোচ্চ কোটা বরাদ্দ রাখা হোক। নৈতিকভাবে কোটা আন্দোলনের বিরোধী হলেও যারা আন্দোলন করছেন, তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি আমার পূর্ণ শ্রদ্ধা ছিল এবং আছে। তাই পুলিশ যখন প্রায় বিনা উসকানিতে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালালো, আমি তীব্র প্রতিবাদ করেছি। তখন অনেকেই বলেছেন, আপনি এতদিন আন্দোলনের বিপক্ষে ছিলেন, আবার এখন গণজোয়ার দেখে পিঠ বাঁচাতে আন্দোলনের পক্ষে চলে এলেন। আমি তাদের বোঝাতে পারি না, কোটার পক্ষে থাকা আর নিরীহ ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশি হামলার নিন্দা জানানোতে কোনও বিরোধ নেই। ছাত্রদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদ যেমন করেছি, তেমনি মধ্যরাতে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ যখন উপাচার্যের বাসায় নারকীয় তাণ্ডব চালালো; আমি তারও তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছি। তখনও অনেকে বলেছেন, আপনি সন্ধ্যায় আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন, রাতেই আবার দালালি শুরু করলেন। নৈতিকভাবে আন্দোলনের বিরুদ্ধে থাকলেও আন্দোলনের সময় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের মহড়া, আন্দোলনে অংশ নেওয়ার অপরাধে সুফিয়া কামাল হলসহ বিভিন্ন হলে ছাত্রলীগের ‘মাস্তানি’র নিন্দা জানিয়েছি। আবার সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগ সভানেত্রী এশার ‘মাস্তানি’র প্রতিবাদ করলেও রগ কাটার গুজব রটিয়ে তার বিরুদ্ধে সাধারণ ছাত্রীদের উসকে দিয়ে তাকে জুতার মালা পরানোর তীব্র নিন্দা জানিয়েছি। আমি মনে করি, ছাত্রলীগ করলেও শেষ পর্যন্ত এশা একজন নারী। তাকে জুতার মালা পরিয়ে তার জামাকাপড় টানটানি করাটা কোনোভাবেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রুচির সঙ্গে যায় না। ছাত্রলীগ করলেও একজন নারী হিসেবে কিছু সুরক্ষা তার প্রাপ্য। কিন্তু আমাদের দেশের নারীবাদীরা এমনভাবে ইস্যুটাকে পাশ কাটালেন, যেন ছাত্রলীগ করাটাই এমন অপরাধ, একজন নারীকে জুতার মালা পরানোটা কোনোভাবেই মানবাধিকার বা নারীবাদের ইস্যু নয়। আবার আমার বন্ধুরা বিভ্রান্ত হয়ে যান, আপনি একবার এশার বিপক্ষে, একবার পক্ষে; বুঝলাম না। এশা যখন নির্যাতনকারী, আমি তার বিপক্ষে; এশা যখন নির্যাতিত, তখন আমি তার পক্ষে। ব্যক্তি আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। ঘটনার ন্যায্যতাই আমার বিবেচ্য। আন্দোলনে যাওয়ার অপরাধে ছাত্রীদের নির্যাতন করে এশা যেটুকু অপরাধ করেছে, তার বিচার হবে। আবার যারা তাকে নির্যাতন করেছে, তাদেরও বিচার করতে হবে। মধ্যরাতেই ছাত্রলীগ থেকে, হল থেকে, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এশাকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই যথাযথ ছিল না। আবার তদন্তের নামে মাত্র ২৪ ঘণ্টার আইওয়াশ শেষে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারও সুবিবেচনাপ্রসূত মনে হয়নি। যেকোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভালো করে ভেবে নেওয়া উচিত।

বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হলো, ভালো কথা; কিন্তু এশা যে সাধারণ ছাত্রীদের মারধর করলো, তার বিচারের কী হবে? সেই বিচার তো হলোই না। বরং আন্দোলনে অংশ নেওয়ার অপরাধে সুফিয়া কামাল হলের প্রভোস্ট মধ্যরাতে কয়েকজন ছাত্রীকে তাদের অভিভাবকের কাছে তুলে দিলেন, তখন আমি তীব্র নিন্দা জানিয়েছি। প্রতিবাদ জানিয়েছি, আন্দোলনের তিন সংগঠককে জোর করে গোয়েন্দা পুলিশের তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনারও। গোয়েন্দা অফিস থেকে ফিরে আন্দোলনকারীরা জানান, তাদের চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তখনও আমি নিন্দা জানাই। কিন্তু রাতেই যখন তাদের একজন টিভি টকশো’তে বললেন, তাদের চোখ বাঁধা হয়নি; তখন অবাক হয়েছি। কখনও মৃত্যু, কখনও রগ কাটা, কখনও চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়ার গুজব ছড়িয়ে আন্দোলনে উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা আমার ভালো লাগেনি। আবার আন্দোলনকারীদের মামলা প্রত্যাহারের দাবিও আমার কাছে মামাবাড়ির আবদার মনে হয়েছে। আন্দোলনের পক্ষে থাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাসির উদ্দিন আহমেদকে যখন ঠুনকো অজুহাতে চাকরিচ্যুত করা হয়, আমি তারও প্রতিবাদ করি। সব দেখে শুনে আমার পাঠকরা বারবার বিভ্রান্ত হয়ে যান। আমি কি আন্দোলনের পক্ষে না বিপক্ষে। আমি তাদের বোঝাতেই পারি না, আমি কোটার পক্ষে, তবে আন্দোলকারীদের আন্দোলন করার অধিকারের প্রতি আমার পূর্ণ শ্রদ্ধা ও সমর্থন আছে।

আপনারা যতই বিভ্রান্ত হন, আমার কিছুই করার নেই। যেটা ন্যায্য মনে হবে আমি সেটা লিখবো, সেটা আওয়ামী লীগের পক্ষে গেল না বিএনপির; সেটা আমার বিবেচ্য নয়। ছাত্রলীগ অন্যায় করলেও আমি লিখবো। আবার নুরল আজিম রনিকে চক্রান্তের শিকার মনে হলে তার পক্ষে লিখতেও আমার বিবেকে বাধে না। এশা নির্যাতনকারী হলেও আমি প্রতিবাদ করবো, এশা নির্যাতিত হলেও আমি লিখবো।

কিন্তু বাংলাদেশে অধিকাংশ মানুষ তীব্রভাবে পক্ষপাতদুষ্ট। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত। সাধারণ কর্মীরা তো বটেই; এমনকি পেশাজীবী, শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিকরাও পক্ষপাতে আবদ্ধ। যিনি আওয়ামী লীগের সমর্থক, তার চোখে আওয়ামী লীগের কোনও ভুলই ধরা পড়ে না। আবার বিএনপির সব ভালো, আওয়ামী লীগের সব খারাপ; এমন ভাবার লোকেরও অভাব নেই। আমরা নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থানের সাথে মিলিয়ে ঘটনার একদিকে আলো ফেলি। ভাবিই না একটি ঘটনার অনেক দিক থাকতে পারে। সবদিক থেকে আলো ফেললেই ঝলমল করে উঠবে সত্য।

আমি সবসময় ন্যায়ের পক্ষে, সত্যের পক্ষে থাকতে চাই। তবে এটা ঠিক, আমার কাছে যেটা ন্যায় বা সত্য মনে হয়; সেটা আপনার মনে নাও হতে পারে। পৃথিবীর সবকিছুই আপেক্ষিক। এই যেমন বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ মনে করে কোটা দিয়ে বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, কোটা প্রচলন করা হয়েছে বৈষম্য দূর করার জন্য। আমি লিখবো আমার কাছে যেটা সত্য মনে হবে সেটা। আমার বিবেচনায় ভুল হতে পারে, তবে আমার জবাবদিহি আমার বিবেকের কাছে। আমি সবসময় বিশ্বাস করি, ভিন্নমতেই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তাই আমি সবসময় ভিন্নমতকে স্বাগত জানাই। আপনার সঙ্গে আমার মতে নাও মিলতে পারে, কিন্তু আপনার মতের প্রতি আমার পূর্ণ শ্রদ্ধা থাকবে সবসময়।

আমাদের সকল অনুভূতির আশ্রয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই বিভ্রান্তি ঘোচাতেও আমি তাঁরই দ্বারস্থ হই, ‘মনের আজ কহ যে, ভালো মন্দ যাহাই আসুক; সত্যেরে লও সহজে।’

লেখক: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে নিজেকে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি, গ্রেফতার ১
প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে নিজেকে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি, গ্রেফতার ১
ইরান হামলা বন্ধ করলেও ছায়াশক্তিরা সক্রিয়
ইরান হামলা বন্ধ করলেও ছায়াশক্তিরা সক্রিয়
খিলগাঁওয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
খিলগাঁওয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
এই জন্মদিনে আরেক সিনেমার ঘোষণা
এই জন্মদিনে আরেক সিনেমার ঘোষণা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ