X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

আইসিসিতে মিয়ানমারের বিচার সম্ভব?

আমীন আল রশীদ
২০ মে ২০১৮, ১৯:২৭আপডেট : ২০ মে ২০১৮, ১৯:২৮

আমীন আল রশীদ রোহিঙ্গা নির্যাতন ইস্যুতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা চালানোর অধিকার বাংলাদেশের আছে কিনা, সে বিষয়ে বাংলাদেশের অভিমত জানতে চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। নেদারল্যান্ডসের হেগভিত্তিক আইসিসির প্রি-ট্রায়াল চেম্বার এই সংক্রান্ত একটি চিঠি বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাঠিয়েছে। এ বিষয়ে ৮ জুনের মধ্যে প্রকাশ্যে বা গোপনীয়ভাবে অভিমত জানানোর অনুরোধ জানানো হয়। এখন প্রশ্ন হলো, রোহিঙ্গা নিধনের দায়ে মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট সেনা কর্মকর্তা/সদস্য বা সরকারের সংশ্লিষ্টদের বিচারের এখতিয়ার আদৌ এই আন্তর্জাতিক আদালতের রয়েছে কিনা বা তারা বিচার করলেও কীভাবে সেই বিচার কার্যকর হবে?
স্মরণ করা যেতে পারে, গত বছরের ১৮ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দি, বিভিন্ন প্রামাণ্য দলিল ও সাক্ষ্য গ্রহণের ভিত্তিতে ২২ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়ায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রায় দেন আন্তর্জাতিক গণ-আদালত। যেখানে মিয়ানমারের ওপর অবিলম্বে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ, মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মিয়ানমারের সরকারি পদে থাকা ব্যক্তিদের বিদেশে থাকা ব্যাংক হিসাব বাজেয়াপ্ত, মিয়ানমারের বাইরে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়। কথা হচ্ছে, এই আহ্বানগুলো কেউ কি কানে তুলেছে বা বাস্তবায়ন করেছে বা করতে পারবে? এই রায়ের ফলে মিয়ানমারের কী হয়েছে বা তারা কি এই রায়কে আদৌ ভয় পেয়েছে? এই রায়ের মধ্য দিয়ে কি রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান হয়ে গেছে বা সে পথে কোনও অগ্রগতি হয়েছে?
অনেকে এভাবে ভাবতে চান যে, প্রতীকী বিচার হলেও এর মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা ইস্যুতে যে জনমত, তা কিছুটা বেড়েছে এবং এতে দেশটির ওপরে আন্তর্জাতিক ও কূটনৈতিক চাপ বেড়েছে। বেড়েছে বলেই তাদের একজন মন্ত্রী সম্প্রতি বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন এবং বলেছেন, তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে চান। পক্ষান্তরে এটিও বাস্তবতা যে, মিয়ানমারের সেনাপ্রধান সম্প্রতি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদের বলেছেন, রোহিঙ্গারা তাদের জন্য নির্ধারিত এলাকার বাইরে যেতে পারবে না। মানে হলো, কিছু রোহিঙ্গাকে তারা নামকাওয়াস্তে ফেরত নিলেও তাদের রাখা হবে একরকম জেলখানায়। সর্বদা সশস্ত্র পাহারায়। সুতরাং এরকম একটি বিভীষিকার মধ্যে রোহিঙ্গারা কেন যাবে? তার চেয়ে বাংলাদেশের ক্যাম্পেই তো তারা নিরাপদ। খাদ্য পাচ্ছে, বিদেশিরা যাচ্ছে, তাদের জন্য সমবেদনা জানাচ্ছে—এসব কম কিসে? ফলে রোহিঙ্গা নিধনের অপরাধে আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমার দোষী সাব্যস্ত হলেও এই সংকটের কোনও সমাধান হবে না বলেই মনে করি। কেন হবে না, সেই ব্যাখ্যায় যাওয়ার আগে আমরা একটু দেখার চেষ্টা করি আইসিসি কী এবং তাদের কাজের ধরন ও এখতিয়ার কতটুকু?
২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত সাধারণত গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে দায়ীদের অভিযুক্ত করে থাকে। যদিও রাশিয়া, চীন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এই আদালতকে স্বীকৃতি দেয়নি। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন রোম নীতিমালায় স্বাক্ষর করলেও প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ তা প্রত্যাহার করে নেন।
আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিচার করা বেশ কঠিন এবং সম্ভবত অসম্ভবও। কারণ, বাংলাদেশ এই আদালতের সদস্য হলেও মিয়ানমার সদস্য নয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ‘রোম সনদ’, যা সংস্থাটির গঠনকালীন মূল দলিল, সেটিতে মিয়ানমার স্বাক্ষর করেনি। ফলে আইসিসিকে সহযোগিতা করতে তারা বাধ্য নয়।
দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা নিতে হলে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন) প্রত্যেকের অনুমতি প্রয়োজন। কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন ও রাশিয়া যেহেতু এখন পর্যন্ত মিয়ানমার সরকারের পক্ষে রয়েছে, তাতে এটি ভাবার কোনও কারণ নেই যে, তারা মিয়ানমারের বিচারে সম্মতি দেবে। ফলে মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক আদালতে নেওয়া কঠিন।
দেখা যাক আইসিসি কীভাবে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে? সংস্থার ওয়েবসাইটে (https://www.icc-cpi.int/)  দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তারা কোথাও গণহত্যা বা মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে বলে খবর পেলে সেটির প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। ফলে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর যে ধরনের জাতিগত নিধন হয়েছে, সেটি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচারের আওতায় পড়বে কিনা, সম্প্রতি তা জানতে চেয়েছেন আদালতের প্রধান কৌঁসুলি ফাতোও বেনসোউদা। এ বিষযে একটি রুল চেয়ে আদালতে আবেদন জানান তিনি। যেখানে বলা হয়, জোর করে কোনও দেশের বাসিন্দাকে আন্তর্জাতিক সীমানার বাইরে ঠেলে দেওয়া সব দিক থেকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের মধ্যে পড়ে।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রসিকিউটরকে এটি নিশ্চিত হতে হয় যে, যেখানে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, সেখানে অপরাধের ব্যাপারে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে এবং সেই অপরাধগুলোর তদন্ত আইসিসির এখতিয়ারভুক্ত। কেননা, আইসিসি সব ধরনের অপরাধ আমলে নেয় না। প্রাথমিকভাবে অপরাধের প্রমাণ মিললে প্রসিকিউশন অপরাধীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে আইসিসির বিচারকদের অনুরোধ করেন।
বিচারপূর্ব ধাপে তিনজন বিচারক সন্দেহভাজন বা অভিযুক্তদের পরিচয় নিশ্চিত করেন এবং তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পর্কে জানেন। এরপর অভিযোগের শুনানি হয়, প্রসিকিউটর, অভিযুক্ত ও ভিকটিমের আইনজীবীদের সঙ্গে শুনানি করে ৬০ দিনের মধ্যে বিচারক সিদ্ধান্ত দেন যে, এই মামলার বিচার চলবে কিনা? যদি সন্দেহভাজন গ্রেফতার না হয় অথবা সে দৃশ্যমান না হয়, তাহলে অভিযোগ জমা দেওয়া গেলেও শুনানি শুরু করা যায় না। বিচার পর্বে তিনজন বিচারককে এ ব্যাপারে সন্তুষ্ট করতে হয় যে, সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে যুক্তিসঙ্গত সন্দেহ বিদ্যমান।
তথ্যপ্রমাণ সাপেক্ষে বিচারক রায় দেন ও অপরাধের মাত্রা বিবেচনা করে একজন ব্যক্তিকে ৩০ বছরের কারাদণ্ড এমনকী ব্যতিক্রম হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও দিতে পারেন। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণেরও আদেশ দিতে পারেন আদালত। তবে যদি অপরাধের ব্যাপারে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ না থাকে তাহলে আদালত অভিযুক্তদের মুক্তি দিতে পারেন। আপিল গ্রহণ করেন পাঁচজন বিচারকের নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চ, যাদের কেউ মূল রায় প্রদানকারী বিচারক নন।
রোম স্ট্যাটু অব ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট ১৯৯৮ সালে বলা হয়েছে, ‘যেসব সদস্য দেশ রেকটিফাই করে আইসিসির পূর্ণাঙ্গ সদস্য হয়েছে, তারা যদি যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ করে, তাহলে আইসিসি তাদের বিচার করতে পারবে।’ সমস্যা হলো, মিয়ানমার এতে রেকটিফাই করেনি। কেউ কেউ মনে করেন, এক্ষেত্রে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ একটি রেজুলেশন পাস করে সরাসরি আইসিসিকে বিচারের জন্য বলতে পারে। আবার কোনও অভিযোগের ভিত্তিতে আইসিসি স্বতঃপ্রণোদিত হয়েও অনুসন্ধান করে মামলা নিতে পারে। এর বাইরে যেহেতু মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে, তাই ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) গিয়ে রোহিঙ্গাদের খাবার, আশ্রয়, ভরণপোষণ চেয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ক্ষতিপূরণ চাইতে পারে বলেও মত রয়েছে।
বলা হয়, রোহিঙ্গা ইস্যুটি যেহেতু এরইমধ্যে আন্তর্জাতিক রূপ পেয়েছে এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ চালাচ্ছে বলে খোদ জাতিসংঘও স্বীকার করেছে, সুতরাং আইসিসির পক্ষে স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই এর অনুসন্ধান করা সম্ভব। কেননা নিরাপত্তা পরিষদে এ বিষয়ে জুলেশন পাস হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
কেউ কেউ অবশ্য এমনও মনে করেন যে, বাংলাদেশের আইনেও মিয়ানমারের বিচার করা সম্ভব। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন অনুসারে কোনও ঘটনার বিচার করতে হলে অপরাধটি বাংলাদেশে সংঘটিত হতে হবে বলে বিধান থাকলেও আইনের সর্বজনীন এখতিয়ারও রয়েছে। সে অনুযায়ী, অন্য দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা যেহেতু বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, তাই বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনীর অভিযুক্ত সদস্যদের বিচার করা যায়। যদিও সেটি খুব সহজ নয়। বরং রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনীর অভিযুক্ত সদস্যদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক আদালতই ভরসা। সেক্ষেত্রে গত বছরের সেপ্টেম্বরে মালয়েশিয়ায় গণ-আদালতের রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স হতে পারে। আবার যেহেতু খোদ আইসিসির প্রসিকিউটর নিজেই আদালতের কাছে এটি জানতে চেয়েছেন যে, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর যে নির্যাতন হয়েছে, সেটি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচারের আওতায় পড়বে কিনা, ফলে ধরে নেওয়া যায় যে, রোহিঙ্গা ইস্যুটি আইসিসির সুনজরে রয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রেসিডেন্ট চিল ইবো ওসুজি (Chile Eboe-Osuji) সম্প্রতি এক টু্ইটে লিখেছেন, ‘বিশ্বের যেকোনও প্রান্তের নিপীড়িত মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে এবং আইসিসি সেই ন্যায়বিচার নিশ্চিত করছে।’ আইসিসি এ যাবৎ গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোতে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে মানবতাবিরোধী অপরাধ, সুদান ও উগান্ডায় যুদ্ধাপরাধ, কেনিয়ায় মানবতাবিরোধী অপরাধ, আইভরি কোস্টের যুদ্ধাপরাধ, লিবিয়ায় যুদ্ধপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত করেছে। আফগানিস্তান, কলম্বিয়া, জর্জিয়া, গিনি, হন্ডুরাস, ইরাক, নাইজেরিয়া, ফিলিস্তিন ও ইউক্রেনে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের বিষয়টিও প্রাথমিকভাবে তারা খতিয়ে দেখেছে। এই আদালত এ পর্যন্ত ৩৬ জনকে বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন উগান্ডার বিদ্রোহী নেতা জোশেফ কোনি, সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশির, কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াত্তা, লিবিয়ার প্রয়াত নেতা মুয়াম্মার আল-গাদ্দাফি ও আইভরি কোস্টের প্রেসিডেন্ট লরেন্ট জিবাগবো।
সমস্যা হলো, এ আদালত বিচারের মাধ্যমে যেকোনও ব্যক্তি বা সংগঠনকে দোষী সাব্যস্ত করতে পারেন। এমনকী গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করতে পারেন। তবে এর নিজস্ব কোনও বাহিনী না থাকায় অভিযুক্তদের ধরতে বা দণ্ড কার্যকর করতে পারেন না। এজন্য তারা সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্র ও অন্যান্য রাষ্ট্রের প্রতি অভিযুক্তকে গ্রেফতারের আহ্বান জানান। প্রশ্ন হলো, আইসিসি যদি শেষাবধি রোহিঙ্গা নিধনের দায়ে মিয়ানমারকে অভিযুক্ত করে এবং এই কর্মকাণ্ডের মূলহোতা তাদের সেনাপ্রধানসহ অন্যদের গ্রেফতারের আহ্বান জানান, মিয়ানমার সরকার কি সেই আহ্বান আমলে নেবে? কে না জানে যে, মিয়ানমারে কথিত গণতন্ত্রের নেত্রী অং সান সু চি'র দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি ক্ষমতায় থাকলেও আদতে দেশ চালায় সেনাবাহিনী এবং সু চি মূলত তাদের ক্রীড়নক? সুতরাং এরকম একটি সেনা নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রের সেনাপ্রধান বা সেনাবাহিনীর কোনও কর্মকর্তা বা সদস্যকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত দোষী সাব্যস্ত করবে আর মিয়ানমার সেই বিচারের রায় কার্যকর করবে, আপাতত এটি ভাবার কোনও কারণ নেই। মিয়ানমারে সরকার পরিবর্তন হয়ে পুরোদস্তুর গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় এলেও রোহিঙ্গা নিধনের দায়ে তাদের বিচার করা কঠিন হবে। কারণ সে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষই রোহিঙ্গা নিধনের পক্ষে। ‘রোহিঙ্গামুক্ত এলাকা’-এরকম সাম্প্রদায়িক সাইনবোর্ডও দেশটির বিভিন্ন স্থানে লাগানো আছে বলে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন জানিয়েছে। ফলে আফ্রিকার যেসব দেশে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে বিভিন্নজনকে আইসিসি দোষী সাব্যস্ত করেছে, তার সঙ্গে মিয়ানমারের মূল ফারাকটা এখানেই যে, আফ্রিকার ওইসব দেশের অপরাধে সাধারণ মানুষের কোনও সায় ছিল না। কিন্তু মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপরে যা হচ্ছে, সেখানে রাষ্ট্রের বৃহৎ অংশের সমর্থন আছে বলে জানা যায়। ফলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মিয়ানমারের বিচার হবে বা বিচার হলেও সেটি আখেরে কোনও ফল দেবে, সেই সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ।

লেখক: সাংবাদিক

/এসএএস/এমএনএইচ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
‘আশ্রয়ণ’: গ্রামীণ বসতি রূপান্তরের প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়
‘আশ্রয়ণ’: গ্রামীণ বসতি রূপান্তরের প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়
ছক্কা মেরেও আউট হলেন মুশফিক !
ছক্কা মেরেও আউট হলেন মুশফিক !
ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে কুড়িগ্রামে মানববন্ধন
ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে কুড়িগ্রামে মানববন্ধন
অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত করতে হবে
রামরুর কর্মশালায় বক্তারাঅভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত করতে হবে
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ