X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইয়াবা অভিযান নিয়ে একটি ‘অসুশীল’ লেখা

আনিস আলমগীর
২৯ মে ২০১৮, ১৩:০২আপডেট : ২৯ মে ২০১৮, ১৩:০৪

আনিস আলমগীর ফিলিপাইনের অবস্থা বাংলাদেশের চেয়েও খারাপ ছিল, এখন নাকি বাংলাদেশ ফিলিপাইনকে হার মানিয়েছে। একসময়ের চীনাদের মতো এখন বাঙালিও নেশায় বুঁদ হয়ে আছে। চীনারা বুঁদ হয়েছিল আফিমের নেশায়। এখন আফিম নেই, আফিমে স্থান নিয়েছে ইয়াবা। ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট নির্মম ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশে দিয়েছেন। কাজ যে কিছু হচ্ছে না তা নয়। ফিলিপাইন কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছে।
চীনা জাতিকে যদি আফিমের নেশা থেকে মুক্ত করা যায় তবে ইয়াবা থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করা যাবে না কেন? চীনের সর্বনাশ তো আরও ভয়াবহ ছিল। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী র‌্যাবকে ইয়াবার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। র‌্যাব কঠোর যতটুকু হওয়ার ততটুকু হয়েছে। কিন্তু অভিযান নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
কারণ, গত ১৫ মে থেকে মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের চলমান এই অভিযানের মধ্যে প্রতিদিন কেউ না কেউ কথিত ক্রসফায়ারের শিকার হচ্ছেন। সংখ্যায় সেটা নগণ্যও নয়। একদিকে সাধারণ মানুষ একে স্বাগত জানাচ্ছে, অন্যদিকে বিচার ছাড়া এ ধরনের হত্যার নিন্দা করছে দেশের সুধী সমাজ। অবশ্য, সুধী সমাজ টকশো আর পত্রিকার কলামে যে ভাষায় এই অভিযানের নিন্দা করছেন, মনে হচ্ছে তার চেয়ে বেশি আক্ষেপ তাদের, ইয়াবার গডফাদার বদিকে কেন ক্রসফায়ারে দেওয়া হচ্ছে না!

সুশীল সমাজের ভাষ্য, বদিকে না ধরে যদি কয়েক হাজার ছোট মাদক ব্যবসায়ীকেও ক্রসফায়ারে ‘হত্যা’ করা হয় তাতে মানুষ খুশি হবে না। মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের যে ‘জিরো টলারেন্স’-এর কথা বলা হচ্ছে, বদিকে ছাড় দিলে মানুষ তা বিশ্বাস করবে না।

যারা মানবতার কথা বলে ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে বলছেন, তাদের কাউকে আমি দেখিনি বিনা বিচারে টেকনাফে সরকার দলীয় এমপি বদিকেও যাতে হত্যা না করা হোক– এ কথা বলতে। সরকার দলীয় যুবলীগের টেকনাফের এক নেতাকেও এর মধ্যে ‘ক্রসফায়ারে’ দেওয়া হয়েছে। এটা নিয়ে আবার আরেক বিতর্ক চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সরকারি সমর্থকরা তাকে নির্দোষ দাবি করে এই ঘটনায় ‘ক্রসফায়ার’ কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে মত দিচ্ছে।

দেশ যখন জঙ্গি সন্ত্রাসে নিমজ্জিত হয়েছিল তখনও মানবতাবাদীদের কথা আমরা শুনেছি। তাদের কথা শুনে সন্ত্রাসীদের যদি তল্লাশি করে বিচারের আওতায় আনা হতো তবে সন্ত্রাস বন্ধ হতো না। মনে রাখতে হবে নেশা ছড়িয়ে গেছে তরুণ-যুব সমাজের মাঝে। একটি জাতির যুবক বয়সের ছেলেরা নেশাগ্রস্ত হয়ে বুঁদ হয়ে থাকলে জাতিটাকে নির্মম পরিণতি মোকাবিলা করতে হবে। যুবক বয়সের ছেলেরা জাতির আশা ভরসার স্থল আর তারাই যদি নেশার ছোবলে ধ্বংস হয়ে যায় তবে জাতি দাঁড়াবে কাদের ওপর ভিত্তি করে।

চীনা জাতির মাঝে আফিমের নেশা ছড়িয়েছিল ঔপনিবেশিক শক্তি। চীনা জাতিকে ধ্বংস করে বিশাল চীনকে টুকরা টুকরা করে বিভক্ত করে নিজেদের মাঝে ভাগবাটোয়ারা করে নেওয়া ছিল উদ্দেশ্য। ইয়াবার পেছনে সে রকম কোনও সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র না থাকলেও যেভাবে ইয়াবা সমগ্র জাতির যুবক বয়সের ছেলেদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে একটি জাতির সর্বনাশ হতে সময় লাগবে না। পত্রিকায় দেখেছি, একটি ছেলে তার পরিবারকে বলছে, হয় ইয়াবা দাও না হয় দেয়ালের সঙ্গে মাথা দিয়ে আঘাত করে এখনই মরে যাবো। কী ভয়াবহ অবস্থা।  

এমন পরিস্থিতিতে মিষ্টি মিষ্টি করে মানবতার কথা, আইনের কথা বলে যারা জাতিকে বিভ্রান্ত করতে চায় তারা আসলে জাতির করুণ পরিণতির কথা আমলে নিচ্ছেন না।

সমগ্র আকিয়াব বেল্টটাই হচ্ছে ইয়াবা বাণিজ্যের উৎস। আকিয়াব বেল্টে নাকি চল্লিশটা ইয়াবার কারখানা আছে। বার্মার সীমানা ক্রস করে বাংলাদেশ আকিয়াবে গিয়ে এসব কারখানা ধ্বংস করতে পারবে না। মিয়ানমার সরকারকে অনুরোধ করলেও তারা তা স্বীকার করবে না। রাখাইনরা খুবই দরিদ্র। তারাই এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। রাখাইনের বিস্তীর্ণ এলাকায় কোনও শিল্পকারখানা নেই। এখন চীনারা রাখাইনে শিল্পকারখানা গড়ার উদ্যোগ নিচ্ছে। হয়তোবা চীনারাই তাদের প্রয়োজনে রাখাইনের যুবকদের নেশা থেকে মুক্ত করার জন্য ভবিষ্যতে এসব কারখানা ধ্বংস করবে।

বান্দরবন জেলা থেকে মিয়ানমারের সীমানা শুরু করে একেবারে ইরাবতী নদী, যেখানে বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে মিশেছে সেখানে শেষ। এ দীর্ঘ জলে ও স্থলে সীমানা বরাবরে বাংলাদেশকে পাহারার ব্যবস্থা করতে হবে খুবই কঠিনভাবে। শুনেছি নৌপথে সরাসরি আকিয়াব থেকে ইয়াবা নাকি ঢাকা আসছে। আবার বরিশালেও নাকি আসছে। কোস্টগার্ড যদি সতর্ক পাহারা না বসায় তবে ইয়াবার ছোবল থেকে সমগ্র দেশের যুব সমাজকে রক্ষা করা কঠিন হবে।

স্থলে পথে আসতে হলে টেকনাফ হয়ে আসে। কাঁচা পয়সার লোভে টেকনাফে প্রতি ঘরই নাকি ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। আমরা চট্টগ্রামের মানুষ, অবশ্য এটা উপলব্ধি করতে পারি যে টেকনাফ উখিয়ার সাধারণ মানুষের হাতেও পয়সাকড়ি আছে।

শুনেছি এক দরিদ্র বাস কন্ডাক্টর তিন বছরে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। ব্যবসার সঙ্গে কাঁচা পয়সার সম্পর্ক, সুতরাং মানুষ জীবনপণ করে এ ব্যবসা করার চেষ্টা করবে। তাই বলি, ইয়াবা আসা বন্ধ করাটা খুবই কঠিন ব্যাপার হবে। কঠোর থেকে কঠোরতম পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে এ ব্যবসা বন্ধ করা কঠিন হবে। টেকনাফ উখিয়া এলাকায় চিরুনি অভিযান চালাতে হবে প্রতি সপ্তাহে।

রোহিঙ্গা সমস্যাটা উদ্ভব হওয়ার আগে শুনেছি ইয়াবা ব্যবসায়ীরা ইয়াবা পাচারের কাজে অনেক সময় রোহিঙ্গাদের নাকি ব্যবহার করতো। এখনও বিষয়টার প্রতি তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। বিষয়টা নিয়ে সরকারি পর্যায়ে রোহিঙ্গাদের সতর্ক করাও প্রয়োজন। এক লক্ষ রোহিঙ্গার চরাঞ্চলে বসতির ব্যবস্থা করতে যাচ্ছে সরকার। এ প্রসঙ্গে সরকারকে সতর্ক করবো রোহিঙ্গাদের যেন পার্বত্য জেলাগুলোতে বসতির কোনও ব্যবস্থা না করে। কারণ, দুর্গম পথ দিয়ে রোহিঙ্গাদের আসা-যাওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সে পথে ইয়াবা প্রবেশ করতে পারাটাও অসম্ভব নয়।

দুর্যোগ বাংলাদেশের পিছু ছাড়ছে না। জঙ্গি সন্ত্রাস কিছুটা থামার পর মিয়ানমার থেকে আসতে থাকলো লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা। এখন ইয়াবা বিপর্যয়। এই বিপর্যয়কে কোনোভাবে অবহেলা করার অবকাশ নেই। কারণ, ইয়াবা ধ্বংস করছে বাঙালিদের উত্তম অংশ যুব সমাজকে। চুনুপুঁটি হোক আর গডফাদার হোক কেউই যেন রক্ষা না পায়। শুধু এটুকু বলবো, অভিযান যাতে নিখুঁত হয়, একজন নিরপরাধীও যেন এর শিকার না হয়। যেন হয়রানিতে না পড়ে। আশা করি সরকার এ ক্ষয়রোগ থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করতে সফলকাম হবে।

লেখক: সাংবাদিক

[email protected]

 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
এবার ‘হুব্বা’ নামে হলো গানচিত্র
এবার ‘হুব্বা’ নামে হলো গানচিত্র
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ