X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

থেমে গেলো সুমন জাহিদের লড়াই

প্রভাষ আমিন
২১ জুন ২০১৮, ১৫:৫৯আপডেট : ২১ জুন ২০১৮, ১৬:০২

প্রভাষ আমিন একাত্তরের পর থেকেই স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে ঈদ করতে হয় শহীদ সন্তানদের। তবে তাদের জীবনে এবারের ঈদটি এসেছে আরও গভীর বিষাদ নিয়ে। শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের একমাত্র সন্তান সুমন জাহিদের রহস্যজনক মৃত্যুর বেদনা নিয়েই তাদের ঈদ পালন করতে হয়েছে।
আদর্শিক নৈকট্যের কারণে শহীদ সন্তান তথা প্রজন্ম ’৭১-এর সদস্যদের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক গভীর ভালোবাসার। তাদের পিতা-মাতা জীবন দিয়ে এই দেশটা আমাদের জন্য স্বাধীন করে গেছেন। আমি সবসময় বিশ্বাস করি, এই দেশটার ওপর শহীদ সন্তান এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের দাবি এবং অধিকার আমার চেয়ে বেশি। আমি তাই সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কোটা বহাল রাখার পক্ষে। আদর্শিক ঐক্যের পাশাপাশি বয়সের নৈকট্যের কারণেও প্রজন্ম  ’৭১-এর অনেকের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক পারিবারিক পর্যায়ে গড়িয়েছে। কিন্তু কেন জানি না, সুমন জাহিদের সঙ্গে খুব একটা ঘনিষ্ঠতা হয়নি। তবে ফেসবুকে তার লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস দেখতাম।

ষাটের দশকের শেষ দিকে উত্তাল সময়ে এই ঢাকায় একজন নারী তার সন্তান নিয়ে একা একা লড়াই করছেন, সেটাই ছিল অবিশ্বাস্য। সেলিনা পারভীনের সে লড়াইটা নিছক টিকে থাকার লড়াই নয়, আদর্শেরও। তিনি সাপ্তাহিক বেগম, সাপ্তাহিক ললনায় কাজ করতেন। কাজের পাশাপাশি প্রগতিশীল সব আন্দোলন-সংগ্রামে থাকতেন। মিছিলে অংশ নিতেন শিশু সন্তানকে নিয়েই। অন্য পত্রিকায় কাজ করার পাশাপাশি সেলিনা পারভীন নিজেই শিলালিপি নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন। তার এই লেখালেখি ছিল মুক্তি সংগ্রামের পক্ষে, প্রগতির পক্ষে। সেলিনা পারভীনের সংগ্রামের কথা জানতো পাকিস্তানি হানাদারদের এ দেশীয় সহযোগী আলবদর রাজাকাররাও। পরাজয় যখন নিশ্চিত, তখন বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করতে তালিকা নিয়ে মাঠে নামে আলবদররা। সেই তালিকায় ছিল সেলিনা পারভীনের নামও। ১৩ ডিসেম্বর সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে ছেলের ধরা হাত ছুটিয়ে সেলিনা পারভীনকে হাত ও চোখ বেঁধে নিয়ে নিয়ে যায় আলবদররা। বিজয়ের পর তার মরদেহ পাওয়া যায় রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে। ৮ বছর বয়সী সুমন জাহিদ মাকে নিয়ে যাওয়ার সেই মর্মান্তিক স্মৃতি কখনও ভোলেননি। মায়ের অসমাপ্ত লড়াই সমাপ্ত করার জন্য লড়ে গেছেন। যুদ্ধাপরাধীমুক্ত, উদার, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সংগ্রাম করেছেন মাঠে নেমে। ১৯৯১ সালে শহীদ সন্তানদের সংগঠন প্রজন্ম ’৭১-এর গঠন প্রক্রিয়ায়ও সক্রিয় অংশ ছিলেন তিনি। প্রজন্ম ’৭১-এর সঙ্গে মিলে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গঠিত গণআদালতের সামনের সারির সৈনিক ছিলেন সুমন জাহিদ। সামষ্টিক লড়াইয়ের পাশাপাশি ব্যক্তিগত লড়াইটাও তিনি চালিয়েছেন অব্যাহতভাবে। মায়ের লেখালেখি সংগ্রহ, মায়ের স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ, মায়ের পুরনো ছবি খুঁজে বের করা, মায়ের নামে ঢাকায় একটি সড়কের নামকরণ করা– তার লড়াই ছিল ক্লান্তিহীন। মাকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া সুমন জাহিদের টিকে থাকার সংগ্রামটাও কম নয়। পেটের দায়ে এই ঢাকায় শহীদ সন্তান সুমন জাহিদ বেবিট্যাক্সিও চালিয়েছেন। শেষ জীবনে পেশায় ছিলেন ব্যাংকার।

হাত থেকে ছাড়িয়ে মাকে নিয়ে যাওয়ার স্মৃতি তাকে আরও সাহসী করেছে। তাই তো ১৯৯২ সালে গণআদালতে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে ভয় পাননি। বর্তমান সরকার যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে, তখনও সামনে এগিয়ে আসেন সাহস নিয়ে। অনেকে যখন অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন বা ভয় পেয়েছেন; তখন সুমন জাহিদ পলাতক যুদ্ধাপরাধী এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্বদানকারী চৌধুরী মঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এই সাক্ষ্য দিতে গিয়েই সুমন জাহিদ স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির টার্গেটে পরিণত হয়েছেন। অনেকবার তাকে ফোনে হুমকি দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য থানায় জিডিও করেছিলেন। পুলিশ তাকে নিরাপত্তা দিচ্ছিলও। সুমন নিজেও খুব সাবধানে দেখেশুনে চলাফেরা করতেন। কিন্তু ঈদের একদিন আগে কী থেকে কী হলো, তা এখনও পরিষ্কার নয়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাক্ষীদের জন্য সরকার পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। কিন্তু এই নিরাপত্তাই এখন তাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। ক’দিন আগে মুক্তিযোদ্ধা ও সুরকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ফেসবুকে নিরাপত্তার কারণে তার দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করেছিলেন। গোলাম আযমের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার পর থেকে তিনি প্রায় বন্দি জীবনযাপন করছেন। তার ভাইয়েরও রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষী দিয়েও যেন বিপাকে পড়েছেন পাড়েরহাটের কয়েকজন মানুষ। একজন হামলায় প্রাণ দিয়েছেন। আরেকজনের বাড়িতে হামলা হয়েছে। যারা টুকটাক ব্যবসা করে জীবনযাপন করতেন, তাদের ব্যবসায় ধস নেমেছে। তাই যারা ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি নতুন করে ভাবতে হবে সরকারকে। শুধু পুলিশ দিয়ে শারীরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করলেই হবে না, হুমকি মোকাবিলার মতো মানসিক দৃঢ়তা আছে কিনা, তাও নজরে রাখতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে তাদের আর্থিক নিরাপত্তাও।

সুমন জাহিদের মৃত্যুরহস্য এখনও উদঘাটিত হয়নি। তার মৃত্যুর সঙ্গে তাকে দেওয়া হুমকির কোনও সম্পর্ক আছে কিনা আমরা জানি না। কেউ কেউ সন্দেহ করছেন, তাকে ধাক্কা দিয়ে রেললাইনে ফেলে দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, তাকে মেরে মরদেহ রেললাইনে ফেলে দেওয়া হয়ে থাকতে পারে। এমনকি দুর্ঘটনাও হতে পারে। কেউ কেউ বলছেন তিনি আত্মহত্যা করছেন। মাকে হারানোর পরের ৪৭ বছর এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে একা একা সংগ্রাম করে আসা লড়াকু মানুষটি রেললাইনে মাথা পেতে দেবেন, এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। তবু আমি আত্মহত্যার ধারণাটিকেও যদি সত্য বলে ধরে নেই, তাহলেও অনেক প্রশ্ন সামনে চলে আসে। এমন লড়াকু একটি মানুষ, যিনি বারবার হেরে যেতে যেতে জিতে এসেছেন; তিনি কেন এভাবে লড়াইয়ের মাঠ ছেড়ে পালাবেন? কোন পরিস্থিতি তাকে আত্মহত্যার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে প্ররোচিত করলো, তাও জানা দরকার। সুমন জাহিদ ফারমার্স ব্যাংকে চাকরি করতেন। কয়েকটি অনলাইনে দেখেছি, ৫ মাস ধরে তার চাকরি ছিল না। তিনি তার স্বজনদের অনেকের অর্থ ফারমার্স ব্যাংকে জমা রেখেছিলেন। ব্যাংকের সমস্যার কারণে তা নিয়েও নাকি জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল। তার মানে আদর্শের লড়াইয়ে বারবার জিতে আসা সুমন জাহিদ কি হেরে গেলেন আর্থিক জটিলতায়? এটা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। যদি এটা সত্যিও হয়, তাহলে সেটাও তদন্ত করতে হবে। কারা দায়ী তাদেরও খুঁজে বের করতে হবে।

কয়েকটি গণমাধ্যম সুমন জাহিদের মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যা’ হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে তার স্বজন এবং বন্ধুরা ‘আত্মহত্যা’র গল্পকে অবিশ্বাস্য বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তারা বলছেন, সুমন জাহিদ যে দৃঢ় মানসিকতার অধিকারী তাতে আর যাই হোক আত্মহত্যা করার আশঙ্কা শূন্য। যারা ‘আত্মহত্যা’র গল্প বলছেন, তারা বলেছেন ঘটনার আগে তিনি ঘটনাস্থলের পাশের চায়ের দোকানে বসে চা খেয়েছেন। অথচ সুমন জাহিদ কখনও চা খেতেন না। তার মরদেহ দেখেছেন, প্রজন্ম ’৭১-এর এমন একজন বলেছেন, তার মাথাটি ধারালো কিছু দিয়ে শরীর থেকে আলাদা করা। শরীরের আর কোথাও কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই। অথচ ট্রেনে কাটা পড়লে তার মরদেহ থেঁতলে যাওয়ার কথা। ফারমার্স ব্যাংকের জটিলতাকে যারা ‘আত্মহত্যা’র কারণ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন, সেটিকেও বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে দাবি করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। তারা বলছেন, সুমন জাহিদ স্বজন-বন্ধুদের অনেকের কাছ থেকে ফারমার্স ব্যাংকের জন্য আমানত সংগ্রহ করেছিলেন বটে, তবে সেটা পেশার কারণে, ব্যক্তিগত স্বার্থে নয়। আর তিনি যাদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করছিলেন তারা সবাই তার ঘনিষ্ঠ, যারা সুমন জাহিদকে ভালো করেই চেনেন। তার স্ত্রী কাজী রাফিয়া জাবিন দাবি করেছেন, কেউই অর্থের জন্য তাকে চাপ দিচ্ছিল না। এ নিয়ে সুমন জাহিদের মধ্যে কোনও হতাশাও দেখা যায়নি। কারণ, তারা কেউই ব্যক্তিগতভাবে সুমনকে অর্থ দেননি, ফারমার্স ব্যাংককে দিয়েছেন। আর ফারমার্স ব্যাংক সমস্যায় পড়েছে বটে, তবে এখনও দেউলিয়া হয়ে যায়নি যে টাকা মার যাবে। আগে আর পরে ফারমার্স ব্যাংকের সকল আমানতকারী টাকা ফেরত পাবেন। এই দায়িত্ব ব্যাংকের তো বটেই, সরকারেরও। যিনি ঢাকা শহরে ট্যাক্সি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেছেন, তিনি নিছক আর্থিক সঙ্কটে আত্মহত্যার মতো চরম সিদ্ধান্ত নেবেন, এটা অবিশ্বাস্য। তাছাড়া নতুন একটি প্রতিষ্ঠানে তার চাকরি ঠিক হয়ে গিয়েছিল। তাই চাকরি নিয়ে যে অনিশ্চয়তা, তাও কেটে গিয়েছিল। পারিবারিকভাবেও সুমন জাহিদ দুই ছেলে এবং স্ত্রী নিয়ে সুখী জীবনযাপন করছিলেন। আর এমন পরিকল্পিত আত্মহত্যার ঘটনায় নোট রেখে যাওয়ার কথা। তেমন কিছুও পাওয়া যায়নি। তাই আত্মহত্যার গল্পকে আষাঢ়ে গল্প বলে উড়িয়ে দেওয়াই সঙ্গত। সুমন জাহিদ খুবই সাবধানী। তাই দুর্ঘটনার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায়। বাকি থাকে পরিকল্পিত হত্যার আশঙ্কা। তার স্বজন এবং বন্ধুরা এই আশঙ্কাটি নিয়েই এগুতে চান এবং সুষ্ঠু তদন্ত চান। জীবনভর নানা তৎপরতায় সুমন জাহিদ স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছেন। সুযোগ বুঝে সেই অপশক্তিটিই শোধ নিয়ে নিয়েছে এবং গল্প সাজিয়েছে আত্মহত্যার। এ প্রসঙ্গে তারা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের ভাইয়ের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনাটিকেও সামনে এনেছেন। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল গোলাম আযমের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেওয়ার সাত মাসের মাথায় ২০১৩ সালের মার্চে তার ভাই মিরাজ আহমেদের লাশ পাওয়া যায় কুড়িল ফ্লাইওভারের পাশে। সে হত্যারহস্য উদঘাটিত হয়নি আজও । সুমন জাহিদের স্ত্রী দাবি করেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেওয়ার পর থেকেই তারা হুমকির মুখে গভীর উৎকণ্ঠা ও নিরাপত্তাহীনতার সাথে শ্বাসরুদ্ধকর জীবনযাপন করছিলেন। তার ধারণা, সুমন জাহিদের মৃত্যুর সাথে সাক্ষ্য দেওয়ার সম্পর্ক থাকতে পারে। তাদের সঙ্গে আমরাও সুমন জাহিদের মৃত্যু রহস্যের সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি। আত্মহত্যার সাজানো গল্প বিশ্বাস করে যেন আমরা হাত পা গুটিয়ে বসে না থাকি।

সুমন জাহিদের মতো এমন লড়াকু মানুষের এমন অকাল বিদায় আমাদের বেদনার্ত করে। আমাদের সংগ্রামকে দুর্বল করে দেয়। 

লেখক: সাংবাদিক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
নড়াইলে ‘সুলতান মেলা’ উপলক্ষে আর্ট ক্যাম্প
নড়াইলে ‘সুলতান মেলা’ উপলক্ষে আর্ট ক্যাম্প
লোকসভা নির্বাচন: রাস্তার দাবিতে ভোট বয়কট করলেন গ্রামবাসী
লোকসভা নির্বাচন: রাস্তার দাবিতে ভোট বয়কট করলেন গ্রামবাসী
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্মরণে কাল নাগরিক সভা
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্মরণে কাল নাগরিক সভা
শেষ ম্যাচে জিতে সুপার লিগে গাজী গ্রুপ
শেষ ম্যাচে জিতে সুপার লিগে গাজী গ্রুপ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ