X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

আন্দোলন-সরকার-বাংলাদেশ: সমীকরণটি সহজ নয়

মাসুদা ভাট্টি
১১ আগস্ট ২০১৮, ১৫:৫৫আপডেট : ১১ আগস্ট ২০১৮, ১৬:২৫

মাসুদা ভাট্টি খুব কম সময়ের ব্যবধানে বাংলাদেশে ভয়ঙ্কর সব দুঃসময় ফিরে ফিরে আসছে। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে  পিলখানা হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু। তারপর একে একে বাংলাদেশের ওপর আঘাতের তালিকা দীর্ঘ। প্রথমে একটা নিরীহ চেহারা নিয়ে কোনও ঘটনা শুরু হলেও শেষপর্যন্ত তা সরকার পতনের দিকে ঠেলে নিয়ে যায়। তারপর অন্তে সেটা হয়ে দাঁড়ায় দেশের বিরুদ্ধে প্রচার-প্রচারণা।  পিলখানা হত্যাকাণ্ডে পর থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার, হেফাজতের ঢাকা দখল কর্মসূচি, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে এবং পরবর্তী সময়ে ২০১৫ সালের মাসাধিক কালব্যাপী আগুনসন্ত্রাস, কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং সর্বশেষ শিশু-কিশোরদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন– এর মধ্যে কোনটিকে শেষপর্যন্ত মিথ্যাচার মুক্ত রেখে সফল একটি আন্দোলনে পরিণত করা গেছে বলুন তো? একটিকেও যায়নি, যাচ্ছে না। অন্যদিকে গণজাগরণ মঞ্চ শুরু থেকেই একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগিয়েছে এবং লক্ষ্যপূরণ শেষে আন্দোলনকারীদের গরিষ্ঠ অংশ ঘরে ফিরে গেছে। বাকি অংশ রাস্তায় থেকে যে সব দাবি আদায়ের চেষ্টা চালিয়েছে, তাকে সরকারবিরোধী বলা গেলেও বাংলাদেশবিরোধী বলা যাবে না। তার মানে, ২০০৯ সালের পর থেকে যেকোনও ঘটনাকেই সরকারবিরোধী রূপ দিতে গিয়ে বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে পরিণত করায় যারা অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছেন, তারা এখনও সক্রিয়। তাদের রাজনীতিই মূলত সেটা। অন্যদিকে সরকার প্রথম থেকেই এসব আন্দোলনকে দমানোর চেষ্টার করেছে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে সফলতা লাভ করলেও যে সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে, সেসব ঘটনা থেকে কিছু শিক্ষাগ্রহণ করেছে বলে কিছু বোঝা যায় না। বোঝা গেলে, আজকে বাংলাদেশকে ঘিরে দেশে-বিদেশে যে অপপ্রচারের ঢল নেমেছে তার উত্তরে সরকারকে এত ‘বেকায়দায়’ পড়তে হতো না। তার মানে যেকোনও আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকার ও দেশের মধ্যে যে সমীকরণ তৈরি হয়, তা খুব সহজ নয়, বরং অত্যন্ত জটিলই। এর থেকে সরকার হয়তো আপাতভাবে বেঁচে যায়। কিন্তু দেশকে বাঁচানো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না।

সর্বশেষ শিশু-কিশোরদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন দিয়েই শুরু করি। এই আন্দোলনে শিশু-কিশোরদের দাবির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সব পক্ষই একমত হলো। তারপরও কেন এই আন্দোলন এতদিন টিকিয়ে রাখা হলো? কারা ও কীভাবে টিকিয়ে রাখলো এবং সরকারের পক্ষ থেকে কেন কোনও মন্ত্রী বা নেতা এসে শিশুদের সঙ্গে রাস্তায় নেমে একাত্মতা প্রকাশ করে তাদের রাস্তা থেকে নিরাপদে শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করলো না–এসব নিয়ে প্রশ্ন তোলার সময় এসেছে। সরকার এখন এই আন্দোলন চলাকালে গুজব ছড়িয়ে উসকানি দিয়ে শিশু-কিশোরদের জীবনকে বিপন্ন করে তোলার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে এবং একাধিক ব্যক্তিকে আটক করেছে, বিচারের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। কিন্তু সরকারের তো জানাই ছিল, বাংলাদেশে যেকোনও ঘটনাকেই সরকার-পতনের আন্দোলনে টেনে নেওয়ার জন্য একপক্ষ সবসময় তৈরিই আছে। এমনকি এখন যারা সরকারে রয়েছেন ,তারাও যখন বিরোধী দলে থাকেন, তখন তারাও যেকোনও আন্দোলনকে সরকারের বিপক্ষে নিয়ে গিয়ে তা থেকে ফায়দা লাভের চেষ্টা করেন। কিন্তু আমরা লক্ষ করি, আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে ছিল তখন পুলিশ হেফাজতে ইয়াসমিন হত্যাকাণ্ড কিংবা বড় পুকুরিয়া কয়লা খনির আন্দোলনকে সফলভাবে সরকারের বিরুদ্ধে নিয়ে যেতে আওয়ামী লীগ মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল। কিন্তু তখন এই আন্দোলনকে কি আওয়ামী লীগ গুজব বা মিথ্যা প্রচারণা দিয়ে মানুষকে উসকেছিল? কিংবা দেশে-বিদেশে মিথ্যা প্রচারণা দিয়ে বাংলাদেশের তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে চালানো প্রচারণাকে কি দেশবিরোধী প্রচারণায় নামিয়েছিল? না, তখন এরকম কিছুই ঘটেনি। অথচ গত দশ বছর যাবৎ আমরা লক্ষ করছি, পিলখানা হত্যাকাণ্ড যেমন বাংলাদেশকে প্রতিবেশী দেশের মুখোমুখি করে তোলার প্রচারণা হিসেবে সর্বত্র গুজব রটানো হয়েছে, তেমনই এই শিশু-কিশোরদের আন্দোলনকেও মিথ্যা প্রচারণা দিয়ে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রযন্ত্রের হাতে শিশু-কিশোরের রক্ত লাগানোর মাধ্যমে দেশটাকেই একটি ভয়ঙ্কর অবস্থানের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

প্রশ্ন তোলা যাক (যে প্রশ্ন আমি আগেও তুলেছি), শিশু-কিশোরদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে পুলিশ বাহিনীর হাতে কোথাও শিশু-কিশোরদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে কি? আন্দোলনের প্রথম দিনে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে পুলিশ একটু মারমুখী হলেও তারপর থেকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কড়া নির্দেশে পুলিশ কোনও শিশু-কিশোরের ওপর হাত তুলেছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। যদিও দেশের একাধিক বয়োবৃদ্ধ বিশেষজ্ঞ পুলিশ ও শিশু-কিশোরদের মুখোমুখি দাঁড় করানোর জন্য এবং পিতা-মাতা-অভিভাবক তথা বড়দের এই আন্দোলনে সামিল করার অজুহাত হিসেবে পুলিশের হাতে শিশু-কিশোরদের নির্যাতনের মনগড়া চিত্র তুলে ধরেছেন টেলিভিশন টক-শো’য় কিংবা তাদের নিজস্ব ফেসবুক পাতায়। অবাক করার বিষয় হলো, কেউই এসব আহত শিশু-কিশোরের কোনও ছবি প্রকাশ করতে পারেননি। মিরপুরে ছাত্রদের ওপর অছাত্রদের আক্রমণ এবং তার জের ধরে কাফরুল থানা আক্রমণের ঘটনায় কোনও পুলিশের হাতে ছাত্র-ছাত্রীদের নির্যাতিত হওয়ার খবর কেউ দিতে না পারলেও এই বিজ্ঞজনেরা সেটি দিয়েছেন আমাদের এবং তাতে উসকানিই বেড়েছে কেবল। কাজের কাজ কিছু হয়নি। মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠার জন্য অনেক বেশি মিথ্যার প্রয়োজন হয়। আর সত্যের ক্ষেত্রে আরেকটি সত্যের প্রয়োজন পড়ে না। পুলিশের হাতে শিশু-কিশোররা কোনও প্রকার আঘাতপ্রাপ্ত হয়নি, এটা যেমন সত্য তেমনই এর চেয়েও বড় সত্য হচ্ছে হেলমেটধারী অ-ছাত্ররা মাঠে নেমে প্রথমে শিশু-কিশোরদের ভয় দেখাতে চেয়েছিল। তারপর যখন বড়রা এই আন্দোলনে নেমেছে তখন তাদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এখন প্রশ্ন  হলো, সরকারের পক্ষ থেকে এই হেলমেটধারীদের যেমন শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন তেমনই এই শিশু-কিশোরদের আন্দোলনে মাঠে নামা বড়দের কাছ থেকে এই প্রশ্নের উত্তরটিই খোঁজা প্রয়োজন যে, তারা আসলে কী চেয়েছিলেন?

শিশু-কিশোররা নিরাপদ সড়ক চেয়ে নয়টি দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছিল। সরকার সেগুলো মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। ধরে নিচ্ছি সরকারকে বিশ্বাস করার কোনোই কারণ নেই। কিন্তু তারপরও যারা বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় জনপরিমণ্ডল শিশুদেরকে রাস্তায় রেখে দেওয়ার পক্ষে দিন/রাত এক করে পোস্ট দিয়েছেন, ভিডিও আপলোড করেছেন তারা কী চেয়েছিলেন বলুন তো? আমার কাছে এই প্রশ্নটি এখনও বিস্ময়ের জন্ম দেয় যে, তারা কেবল শিশু/কিশোরদের রাস্তাতেই রেখে দিতে চেয়েছিলেন নাকি তাদের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন? আমরা কোথাও এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাই না। তারা সরকারের কাছে প্রকাশ্যে কোনও দাবি জানিয়েছেন বলেও শোনা যায় না। কিন্তু তারা অনবরত গুজব রটিয়েছে যে, শিশুরা আক্রান্ত, তাদের সরকারের পুলিশ ও ‘গুণ্ডরা’ আক্রমণ করেছে। আওয়ামী লীগের অফিসের ভেতর ঢুকিয়ে শিশুদের হত্যা করা কিংবা ছাত্রীদের ধর্ষণ করার মতো গুজব ছড়ানোর ফলে শিশু-কিশোরদের জীবনকে বিপন্ন করার সঙ্গে সঙ্গে যে ভয়ঙ্কর উসকানি সর্বত্র দেওয়া হয়েছে তা যদি বিচারযোগ্য অপরাধ না হয়ে থাকে তাহলে এর চেয়ে বড় অপরাধ আর কী হতে পারে সে প্রশ্ন পাঠকের কাছেই রাখছি।

এখন এই আন্দোলন এবং বিগত বিডিআর বিদ্রোহ থেকে কোটা আন্দোলন পর্যন্ত সব ঘটনা থেকে আমরা কী দেখতে পাই? দেখি যে, প্রথমে আন্দোলন থাকে আন্দোলনকারীদের হাতে তারপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সরকার পতনের আন্দোলনে। সরকার যখনই কঠোর হাতে সেটা দমন করতে যায়, তখনই সেটা হয়ে যায় দেশবিরোধী প্রচারণার হাতিয়ার। এরমধ্যে সরকারের রাজনৈতিক বাহিনীর হাতে ঘটে যাওয়া বেশ কিছু দুর্ঘটনা যেগুলো অপপ্রচারের আগুনের খাঁটি ঘি-এর কাজ দেয় এবং আগুন জ্বল জ্বল করে জ্বলতে থাকে। আন্তর্জাতিকভাবে শেখ হাসিনা নেতা হিসেবে যে অর্জন সারাবছর ধরে অর্জন করেন, তা নিমিষেই শেষ হয়ে যায় এ রকম ঘটনাকে কেন্দ্র করে। আন্তর্জাতিক বিবেকগুলো সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, যদিও এসব বিবেকের ঘুম অন্য কোনও সরকারের আমলে ভাঙতে দেখা যায় না। কিন্তু এই সত্য তো আওয়ামী লীগের অজানা নয়। একাত্তরেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অনেক বিশ্ববিবেকের ঘুম ভাঙেনি, এরপর যখনই আওয়ামী লীগ কোনও ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করেছে, নির্যাতন-নীপিড়ন সহ্য করেছে, একের পর এক নেতাকে হারিয়েছে, গ্রেনেড হামলার শিকার হয়েছে কিংবা আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ার কারণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ভয়ানক নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হয়েছে–কখনোই বিশ্ববিবেক আওয়ামী লীগের পক্ষে দাঁড়ায়নি। ২০০১ সাল থেকে ২০০৮ সালে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সরকারি নির্যাতনে বিশ্ববিবেক কতবার নাড়া দিয়েছে, তার একটি তালিকা দেখলেই বোঝা যাবে, আওয়ামী লীগের পক্ষে এ বিষয়ে তেমন সাড়া আসলে পাওয়া যাবে না। অথচ আজকে দেখুন, একজন ব্যক্তি নিজের অপপ্রচার দ্বারা রাস্তায় থাকা শিশু-কিশোরদের জীবনকে বিপন্ন করে তুললে তাকে আইনের আওতায় আনা হলেও বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিবেক কীভাবে জেগে উঠেছে এবং বিবৃতির বন্যা বয়ে যাচ্ছে চারদিকে।

এখানেই আওয়ামী লীগ তথা বর্তমান সরকারের শিক্ষা নেওয়ার বিষয় রয়ে গেছে। বাংলাদেশের পক্ষে, বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে কাজ করতে গিয়ে কাউকে সঙ্গে পাওয়া যাবে না। গেলেও তার বিনিময় মূল্য চুকিয়ে তবেই সেটা পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে যে সব ঘটনা-দুর্ঘটনা ঘটবে, তাতে আজকে যে বিরূপ প্রচারণা তা নিঃসন্দেহে সরকার তথা আওয়ামী লীগের বিপক্ষে যাবে। ফলে এই মুহূর্তে এই বিরূপ প্রচারণার জবাব দেওয়া এবং বহুবিধ পথে সেগুলোকে ‘ভুল’ প্রমাণের চেষ্টা হাতে নিতে হবে। আর সবার আগে প্রয়োজন হবে ওই সব হেলমেটধারী দুর্বৃত্তকে বিচারের আওতায় এনে বিশ্ব তথা বাংলাদেশকে দেখানো যে, সরকার কোনোভাবেই তাদের পক্ষের নয়। তাদের রাজনৈতিক পরিচয়ও প্রকাশ করাটা জরুরি। যদি নিজেদের দলীয়ও হয়, তাহলেও তাদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিশ্ববাসীর সামনে নিজেদের অপরাধকে স্বীকার করাটাও এখন সময়ের দাবি।

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক আমাদের অর্থনীতি

[email protected]

 

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত পরিদর্শনে বিজিবির মহাপরিচালক
নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত পরিদর্শনে বিজিবির মহাপরিচালক
‘সামরিক বাহিনীতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আইন কর্মকর্তাদের পেশাগত মানোন্নয়ন জরুরি’
সামরিক বিচার ব্যবস্থা নিয়ে সেমিনারে বিমান বাহিনী প্রধান‘সামরিক বাহিনীতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আইন কর্মকর্তাদের পেশাগত মানোন্নয়ন জরুরি’
ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা, ২৮ কর্মীকে বহিষ্কার করলো গুগল
ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা, ২৮ কর্মীকে বহিষ্কার করলো গুগল
বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির জন্য বাড়ছে হাহাকার
বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির জন্য বাড়ছে হাহাকার
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ