X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

সড়ক-মাদকের খুনে রক্তাক্ত বাংলাদেশ

তুষার আবদুল্লাহ
০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৩:৫৯আপডেট : ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৬:২০

তুষার আবদুল্লাহ সময় হলো আবার ঢাকার বাইরে যাওয়ার। যখনই ঢাকার বাইরে দেহ-মন যাত্রা করার কথা ভাবি, তখনই অঙ্ক কষতে বসতে হয়। কোন পথে যাত্রা করি? রেলপথে যাত্রা করবো বলে যখন বাক্সো পেটরা গোছাতে যাই, দেখি সকালের ট্রেন ছাড়তে বিকেল গড়িয়ে যায়। রাতের ট্রেন রওনা হয় ভোরের আলো পুরাতন হওয়ার পর। আছে টিকিট না পাওয়ার বিড়ম্বনাও। সড়ক পথ বেশ পছন্দের। যাত্রাবিরতি দিয়ে চা আড্ডা হয় পথের মানুষের সঙ্গে। ব্যক্তিগত বাহন থাকলে ইচ্ছেখুশি মতো নেমে পড়া যায় নদী দেখে, সবুজ দেখে। কিন্তু সড়ক পথে নেমে পড়ার কথা ভাবতেই বুক কাঁপে আতঙ্কে। শুধু আমারই নয়, পরিবার ও শুভাকাঙ্ক্ষীদেরও। মহাসড়কে উঠবো বলেই আতঙ্ক তা নয়। সড়ক থেকে গলিপথ, সর্বত্রই তো আমরা ঝুঁকিতে আছি। চোখ থেকে এখনও মায়ের কোল থেকে আকিফার ছিটকে যাওয়ার দৃশ্য মুছে যায়নি। যখন লিখছি, তখন দৃশ্যমাধ্যমে প্রচার হচ্ছে ভোরেই গাইবান্ধায় ৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন সড়ক দুর্ঘটনায়। বেলা বাড়তে বাড়তে এই সংখ্যা কত আতঙ্কজনক অঙ্কে গিয়ে যে পৌঁছায়, তা কে জানে? বাহনের সঙ্গে বাহনের সংঘর্ষ তো রইলোই। বাহন থেকে যাত্রীকে ছুড়ে ফেলার ঘটনাও এখন প্রায় নিয়মিতই হয়ে উঠছে। আমাদের কিশোররা পথে নেমে এসেছিল সড়কে হত্যার প্রতিবাদ করতে। তারা শিখিয়েও দিয়েছিল কীভাবে পথ চলতে হয়। সড়কের বাহন ব্যবস্থাপনা কেমন হবে। আমরা সেই শিক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা না জানিয়ে পথ থেকে তাদের বিতাড়িত করলাম। ফিরে গেলাম আগের হত্যাকাণ্ডে। রাষ্ট্র আইন করলো। পুলিশ বিভাগ, সড়ক বিভাগ কত হুঙ্কারই দিলো, সব হুঙ্কারের ফল এবারের ঈদ উল আজহার ছুটিতেও সড়কে হত্যার সংখ্যা তিনশ ছুঁয়ে গেছে। যে পরিবহন কোম্পানিগুলোর নামে বেপরোয়া চলার অভিযোগ ছিল, তারা রঙ পাল্টে নাম পাল্টে আবার পথে নেমেছে। কোনও কোনোটি রঙ নাম পাল্টে একইভাবে ছুটছে। রাষ্ট্রের দিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বলছে–করি না পরোয়া তোমার হুঙ্কার। সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে সন্দেহের বীজ তবে কি সেই সব হুঙ্কার ছিল কিশোর আন্দোলনকে সামাল দেওয়ার ক্ষণিকের সমাঝোতা?


একই নিস্ফল হুঙ্কার বা যুদ্ধের দামামা বেজেছিল মাদকের বিরুদ্ধে। নিষ্ফল বলতে হচ্ছে এই জন্য যে দেশের ভেতরে মাদক প্রবেশের কোনও রুট বন্ধ হয়নি। অভিযান চলার সময় বাহকদের বন্দুকযুদ্ধ বা গ্রেফতারে জালে ফেলা হয়েছে ঠিক, কিন্তু মাদকের মূল ব্যবসায়ীরা রয়েছে গেছে অভিযান থেকে নিরাপদ দূরত্বে। অভিযোগ আছে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান নিরাপত্তা বাহিনীর ঘুষ বাণিজ্যের সহায়ক হয়ে উঠেছিল। মাদক মামলা ও বন্দুকযুদ্ধের ভয় দেখিয়ে নিরাপরাধ মানুষ, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগও আছে। মূলত টেকনাফের কাউন্সিলর একরাম বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার ঘটনা রাষ্ট্র হওয়ার পর, মাদকবিরোধী অভিযান প্রশ্নের মুখে পড়ে। সেই সময় থেকেই ‘ঝিমুনিতে’যায় মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। অভিযান বন্ধ হয়ে গেছে বলা যাবে না। নিয়মিত আগে যেমন চলতো, তেমনই চলছে। বাহকেরা ধরা পড়ছে। কাউকে কাউকে জোর জবরদস্তি বানানো হচ্ছে মাদকব্যবসায়ী। কিন্তু মহল্লা থেকে পুরো দেশ আজ কিন্তু মাদকের বিক্রয় কেন্দ্র হিসেবে জমজমাট হয়ে উঠেছে। প্রকাশ্য মাদক সেবনেও ভয়-ডর উড়ে গেছে দেখছি। শনিবার সকালেই দেখতে পেলাম আফ্রিকা থেকে নতুন মাদক এসেছে। নাম আর না বলি। খামোখা প্রচার বাড়িয়ে লাভ কী?
সড়কে খুন, মাদকের নীরব হত্যার কাছে জীবন সঁপে দিয়ে বসে আছি আমরা। জানি না দয়াল কবে মুক্ত করবেন এই দুই মৃত্যু গহবর থেকে।
রাষ্ট্র যারা পরিচালনা করেন, তাদের ভোটমুদ্রার প্রয়োজন আছে। সেই মুদ্রার লোভে পড়ে তারা জীবনবাজি ধরতে পারেন না। ভোট আসুক না আসুক, রাষ্ট্রের কল্যাণে কোনও নির্মূল অভিযান কোনও রাজনৈতিক দলের পক্ষেই সম্পন্ন করতে দেখিনি। ক্ষমতার বলয়ে নানা আন্তঃস্বার্থের যোগাযোগ থাকে। সেই যোগাযোগ রক্ষার স্বার্থেই সড়ক নিরাপদ হলো না। মাদক রয়ে গেলো সুলভ।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

/এসএএস/এমএনএইচ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফার ভোট শেষেই বিজয় মিছিল
পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফার ভোট শেষেই বিজয় মিছিল
পোশাকশ্রমিককে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
পোশাকশ্রমিককে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ