X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

সহজ মানুষের সরল কথা

তুষার আবদুল্লাহ
০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৫:৫২আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৬:০৪

তুষার আবদুল্লাহ যখন যে শহরে যাই, সেখানের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলি। ঢাকা ছাড়ার পর থেকে গন্তব্যে পৌঁছাপর্যন্ত কথোপকথন চলতে থাকে। বাহন রেলগাড়ি হলে এই আলাপ আরও জমাট বাঁধে। কত মন ও রঙের মানুষ। অপলক চেয়ে থাকার মতো একেকটি স্টেশন। সব স্টেশনেই নেমে পড়তে ইচ্ছে করে। যদি কারও সঙ্গে গল্প জমে যায়, আর মানুষটির নেমে পড়ার তাড়া থাকে, তখন তার সঙ্গ নেওয়ার ইচ্ছে হয়। কিন্তু নেমে পড়া হয় না গন্তব্যের টানে। সান্তাহার স্টেশনে যেমন সংবাদপত্র হকার বেলাল হোসেনের কাছ থেকে পত্রিকার বেচা-বিক্রি নিয়ে আরও কিছু জানার ইচ্ছে ছিল, হলো না। ট্রেন চলতে শুরু করলে তিনি নেমে যান। ৪০ বছর সান্তাহার স্টেশনে পত্রিকা ফেরি করে বেড়ান। রেলের জানালা থেকে জানালেন, কামরা থেকে কামরায় ছুটে দেখেছেন খবরের জন্য বুভুক্ষ, তৃষ্ণার্ত মানুষকে। এখন জানালা থেকে, কামরা থেকে পত্রিকার হাঁক কিংবা হাত খুব কমই বেরিয়ে আসে। বেলাল হোসেন দেখতে পান যাত্রীরা বুঁদ হয়ে আছেন মোবাইলে। পত্রিকা বিক্রির ধসে বিধ্বস্ত তিনিও।
দেখা হলো চরফ্যাশনের ইয়াসিনের সঙ্গে।  হৃদয় দিয়ে কফি তৈরি করে এই কিশোর। এত নান্দনিক কফি রেলে কখনোই পাইনি। আট বছর আছে রংপুর এক্সপ্রেসে। রেলই তার বাসা-বাড়ি। চরফ্যাশনের সঙ্গে বছর তিন হলো যোগাযোগ নেই। মোবাইলের সঙ্গে হারিয়ে গেছে বাড়ির নম্বরটিও। বাড়ি ফেরার ইচ্ছে নেই মোটেও। রোজগারের জমানো টাকা ম্যানেজার নিয়ে পালিয়েছে। আগামী দিন কী হবে, জানেন না। তবু কফির কাগজের মগ থেকে হৃদয় সরিয়ে নেননি।

গাইবান্ধায় ট্রেন থেকে নামতেই এসে কত তরুণ, বয়স পৌঢ়ত্বের পথে তবু তারুণ্য এখনও ঝকঝকে এমন অসংখ্য মানুষের সঙ্গে দেখা হলো। এ শহরের কিশোর-কিশোরীরা যেন পদ্ম ফুল হয়ে ফুটে আছে। নাটক, কবিতা, গানের মালি-মালিনী তারা। গাইবান্ধা শহরকে জাগিয়ে রাখছেন তারা আনন্দ-রাগে। আমরা এসেছি কৈশোর তারুণ্যের ক্লাস রুমের পাশের বইমেলা করতে। আসতে আসতে আয়োজন নিয়ে কত ভাবনা ছিল। আমাদের চমকে দিয়েছে গাইবান্ধা। সত্যিই দেখে মনে হচ্ছে, এমন বইমেলার স্বপ্নের স্রষ্টা তারাই। আমরা সেই স্বপ্নে ভাসিয়ে দিয়েছি আপন ভেলা।

এখানে উদ্যমী তারুণ্য ও কৈশোর দেখলাম গণমাধ্যম নিয়ে মেতে আছে। তথাকথিত মূলধারার গণমাধ্যমগুলো কৃষক, জেলে, মাঝি, দলিত শ্রেণির পাশে দাঁড়াতে পারেনি আজও। এক রকমের অস্বস্তি আছে মূলের। কিন্তু কমিউনিটি রেডিও ঠিক তাদের কাছে পৌঁছে গেছে। কমিউনিটি টেলিভিশনেরও প্রস্তুতি আছে। ওরা থাকতে চায় মাঠের মানুষের সঙ্গেই। মাঠে জ্ঞান খুব দিতে হচ্ছে বলে মনে হলো না। ওখানের জন্য প্রয়োজন তথ্য। আবহাওয়া, আইন ও স্বাস্থ্যের তথ্য। বিনিময়ে আসছে জ্ঞান। যেমন আমাকেও জানালো ওরা,  গ্রামে, চরে, এমনি জেলা শহরেও শ্রেণি বিভেদ নেই। নেই সাম্প্রদায়িকতা। মিলে মিশেই থাকতে চায় তারা। রাজনীতি তাদের বিভক্ত করার উসকানি দেয়। নগর থেকে আসা বাতাসে আছে নষ্টামী। কিন্তু এই গ্রাম ও চরের মানুষেরা সহজ মানুষই থাকতে চান। তাদের হৃদয় শরতের রোদ্দুরের মতোই সরল।

সকালে তিনটি স্কুল ও কলেজে যাওয়ার সুযোগ হলো। সেখানে গিয়ে যেন ফিরে পেলাম হারিয়ে যাওয়া বা লুকিয়ে রাখা শিক্ষকদের। আলো জ্বালিয়ে বসে আছেন তারা। কেমন যতন করে আগামীকে তৈরি করতে হয় সেই বিদ্যায়তন খুলে বসে আছেন একেক জন বাতিঘর। শুদ্ধ সংস্কৃতি, বাংলাদেশকে নিয়ে বিশুদ্ধ স্বপ্ন দেখানোর কারিগর তারা। বিস্মিত হয়েছি এখানকার কৈশোর তারুণ্যকে দেখে। ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, তিস্তা’র মতো দুরন্ত তারা। বহুমাত্রিকতা নিয়ে ছোট্ট জেলা শহরকে মাতিয়ে এই কৈশোর তারুণ্য। তাদের দিকে হাতছানি আছে অন্ধকারের। কিন্তু ওরা যে রোদ্দুর আর শুভ্র কাশফুল ভালোবেসে বসে আছে। অন্ধকারের কোনও কালো ওদের ঢেকে দিতে পারবে না। ওরা যে রোদে গড়া সহজ মানুষ। সেই সহজকে ভালোবাসতে শেখাই এখন অনিবার্যতা।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

/এসএএস/এমএনএইচ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
‘আশ্রয়ণ’: গ্রামীণ বসতি রূপান্তরের প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়
‘আশ্রয়ণ’: গ্রামীণ বসতি রূপান্তরের প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়
ছক্কা মেরেও আউট হলেন মুশফিক !
ছক্কা মেরেও আউট হলেন মুশফিক !
ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে কুড়িগ্রামে মানববন্ধন
ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে কুড়িগ্রামে মানববন্ধন
অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত করতে হবে
রামরুর কর্মশালায় বক্তারাঅভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত করতে হবে
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ