X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগে জাতি

আনিস আলমগীর
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:৫৬আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:৫৯

আনিস আলমগীর একাদশ সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ৯০ দিন বাকি। নির্বাচন কমিশন সচিব বলেছেন ডিসেম্বরেই নির্বাচন হবে। নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে সুস্পষ্টভাবে দৃঢ়তা নিয়েই বলেছেন, কোনও শক্তিই নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না। সরকারের দৃঢ়তা দেখে মনে হচ্ছে ডিসেম্বরেই একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন হবে।
জাতীয় পার্টিও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। গত ৭ সেপ্টেম্বর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার নির্বাচনি কেন্দ্রে (ঢাকা-১৭) মিছিলও করেছেন। সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ট্রেনযাত্রা করে প্রচারণার কাজ আরম্ভ করেছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু বিপরীতে আমরা কী দেখছি? বিএনপি বলছে- (১) নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি, (২) প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকার গঠন, (৩) নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, (৪) সংসদ ভেঙে দেওয়া, এবং (৫) নির্বাচনের সময় সামরিক বাহিনী নিয়োগ ও ম্যাজিস্ট্রেজি ক্ষমতা প্রদান ইত্যাদি দাবি পূরণ না হলে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। মনে হতে পারে বিএনপি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো নির্বাচন প্রতিহত করার উদ্যোগ নেবে।

আবার দেখছি তারা ভেতরে ভেতরে নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে। প্রার্থী তালিকা পত্রিকায় আসছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা কেন্দ্রে আসা যাওয়া শুরু করেছেন। খোলা চোখে বিএনপির অবস্থা পর্যালোচনা করলে মনে হয়, যে সংকটে বিএনপি পড়েছে তার থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার সম্ভাবনা শুধুমাত্র নির্বাচনে অংশগ্রহণের মধ্যে রয়েছে। কোনও দৈবশক্তি বিএনপিকে উদ্ধার করার জন্য আসবে না।

বিএনপি নেতারাও রাজনীতি করেন, তারাও রাজনীতির গতি প্রকাশ বুঝেন। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় না বিএনপি নির্বাচন বয়কট করবে বা নির্বাচন বানচালের কোনও প্রচেষ্টা চালাবে। তবে নির্বাচনি জৌলুস বাড়াবার জন্য আওয়ামী লীগ বিরোধী শক্তিকে সম্পূর্ণভাবে এক প্ল্যাটফর্মে আনার চেষ্টা করতে পারে।

বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট হয়েছে। তাদের সঙ্গে গণফোরাম যোগদান করেনি, তবে নাকি ঐক্যমত পোষণ করেছে। বি. চৌধুরীর বিকল্পধারার এবং ড. কামালের গণফোরাম বা ঐক্য প্রক্রিয়ার তেমন কোনও বাজার দর নেই, তবে ব্যক্তি হিসেবে তারা উভয়ে শ্রদ্ধেয়। শেষ পর্যন্ত তাদের সঙ্গে ঐক্য প্রক্রিয়া সফল করতে পারবে বলেও মনে হয় না। কারণ, কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বিএনপির এই ঐক্য প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।

কর্নেল অলি বিএনপির ২০ দলীয় জোটের শক্তিশালী নেতা। ড. কামাল ও যুক্তফ্রন্টের বি. চৌধুরী যে সব শর্ত দিচ্ছেন তাতে বিএনপির সর্বস্তরে নেতাকর্মীরা তা মেনে নেবে বলে মনে হচ্ছে না। কোন কারণে বিএনপি অর্ধেক নির্বাচনি আসন ছেড়ে দেবে? বি. চৌধুরী আর ড. কামাল ছাড়া তাদের অবশিষ্ট আর কী বা আছে! কঠোর পরিশ্রম করে তারা কোনও ধাক্কা সৃষ্টি করারও শারীরিক শক্তি সামর্থ্য রাখে না।

বিএনপি প্রমাণ করেছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তারাই একমাত্র শক্তি। গত ৭ মাস খালেদা জিয়া জেলে থাকার পরও বিএনপি ঘরে বসে নেই বা কোন্দলের কারণে দলটি স্থবির হয়নি। বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব প্রমাণ করেছে তারা খালেদা জিয়া এবং তারেক জিয়ার অবর্তমানে দল চালাতে, দল টিকিয়ে রাখতে এবং জনসমর্থন ধরে রাখতে সক্ষম। তাহলে সব শক্তি বিএনপির। ১৫০ সিট দিয়ে কাণ্ডারির পথটা তারা শুধু শুধু বি. চৌধুরী বা ড. কামালকে ছেড়ে দেবে কেন? এটা তো কোনও সুস্থ মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত হতে পারে না।

বি. চৌধুরী ও ড. কামালকে নিলে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত তেমনও কিছু নয় বা তারেক জিয়ার দেশে ফেরার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে তেমনও কিছু নয়। সুতরাং অহেতুক সিট ভাগাভাগির জন্য তাদের সঙ্গে ঐক্য কেন করবে বিএনপি? তাই মনে হয় না বিএনপি আর যুক্তফ্রন্টের মাঝে কোনও কার্যকর ঐক্য হবে। সর্বোপরি জামায়াতকে ছাড়ার ব্যাপারে বিএনপি একটি বাক্যও উচ্চারণ করেনি। তারেক জিয়া ছাত্রশিবিরের এক সম্মেলনে বলেছিলেন, ছাত্রশিবির আর ছাত্রদল এক মায়ের সন্তান। জামায়াতকে নিয়ে ড. কামাল হোসেন বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করবে বলে মনে হয় না। বি. চৌধুরীও জামায়াতের ব্যাপারে শর্তারোপ করেছেন।

বিএনপি হয়তো মনে করেছে ড. কামাল এবং ডা. বি. চৌধুরী সঙ্গে থাকলে তারা জোরদার একটা আন্দোলন সৃষ্টি করতে পারবে। সে আশাও কোনও সুদৃঢ় আশা নয়। বেকায়দা দেখলে উভয় নেতা চুপ করে বসে থাকবেন। বেকায়দা সৃষ্টি আওয়ামী লীগ করবে না তা তো নয়। কোনও কোনও মহল চাচ্ছে সবাই মিলে একটা অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে, যেন নির্বাচন বানচাল হয়ে যায়। সে পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে বিএনপির সক্রিয় ভূমিকার প্রয়োজন হবে। আমার মনে হয় না বিএনপি সে ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে। আর সামরিক বাহিনীর মাঝে পাকিস্তান ফেরত কোনও সামরিক অফিসার নেই। সুতরাং সামরিক বাহিনী থেকে বিএনপি কোনও সহায়তার আশা করতে পারে না। বেগম জিয়াকে সামরিক ছাউনির বাসা থেকে উচ্ছেদ করতে বর্তমান সেনাবাহিনী দ্বিধা করেনি। পাকিস্তান ফেরত সেনা অফিসাররা থাকলে বিষয়টা হয়তো সহজ হতো না।

তোফায়েল আহম্মদ ভোলার এক সভায় বলেছেন, আওয়ামী লীগ পরাজিত হলে এক লক্ষ লোকের প্রাণহানি হবে। কথাটা ফেলনা নয়। আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছে, জেল হত্যার বিচার করেছে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে। সুতরাং বিরাট এক প্রতিশোধ গ্রহণকারীচক্র ভেতরে ভেতরে প্রস্তুত হয়ে আছে। ১৯৬৫ সালে ইন্দোনেশিয়ায় জাতির পিতা সুকর্নের  পতনের পর যেমন নাহাদাতুল ওলামা ৭ লক্ষ মানুষ হত্যা করেছিলো, ঠিক অনুরূপ একটা হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশে হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে আওয়ামী লীগ সহজে দেবে না।

ভারতের প্রাক্তন হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী সম্প্রতি একটি প্রবন্ধে আওয়ামী লীগের মৃদুমন্দ সমালোচনা রয়েছে। তাকে ভিত্তি করে অনেক বিশ্লেষক বলছেন আওয়ামী লীগের প্রতি ভারতের সমর্থন নেই। সুতরাং আওয়ামী লীগ যা ইচ্ছে তা করতে পারবে না। ভারতের বন্ধু আওয়ামী লীগ ছাড়া কে হতে পারে তা আমার মাথায় আসে না। আর বাংলাদেশের নির্বাচনের পরপরই ভারতের নির্বাচন। সুতরাং মোদির সরকার যা ইচ্ছে তা করতে পারবে না।

সর্বোপরি বর্তমান হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বারবার বলেছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন সে দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। ভারত তাতে কখনও হস্তক্ষেপ করবে না। প্রেসক্লাবে গোলটেবিল বৈঠক, আলোচনা সভা করে কিছু সংখ্যক রাজনীতিবিদ প্রেসক্লাবকে পানিপথের যুদ্ধক্ষেত্র বানিয়েছে, যার কোনও প্রতিক্রিয়া সারাদেশের সাধারণ মানুষের মাঝে নেই।

একটা গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টির চেষ্টা করলে ন্যূনতম দেড় বছর আগে থেকে ময়দান তৈরি করতে হয়। কেউ তো সে ক্ষেত্র তৈরি করেননি। তবে দ্বৈরথ অবস্থা কোনদিকে মোড় নেয় বলা যায় না। সরকার ও আওয়ামী লীগকে বিপর্যয়ের কথা মাথায় রেখে এগুতে হবে এবং মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। দেশ যেন বিপর্যস্ত হওয়ার পথে না যায়। সবার প্রত্যাশা একটি সুন্দর নির্বাচন, এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ।

লেখক: সাংবাদিক, আন্তর্জাতিক বিষয়ে বিশ্লেষক

[email protected]

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
‘আশ্রয়ণ’: গ্রামীণ বসতি রূপান্তরের প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়
‘আশ্রয়ণ’: গ্রামীণ বসতি রূপান্তরের প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়
ছক্কা মেরেও আউট হলেন মুশফিক !
ছক্কা মেরেও আউট হলেন মুশফিক !
ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে কুড়িগ্রামে মানববন্ধন
ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে কুড়িগ্রামে মানববন্ধন
অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত করতে হবে
রামরুর কর্মশালায় বক্তারাঅভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত করতে হবে
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ