X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার সংস্কার জরুরি

মো.জাকির হোসেন
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৭:২০আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৭:২২

মো. জাকির হোসেন সময়টা আশির দশকের মাঝামাঝি। বুকের বাম দিকে মাঝে-মধ্যেই ব্যথা অনুভব করতাম। অবশেষে রোগ নিরাময়ে দেশের ওই সময়ের  শ্রেষ্ঠ হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানতে পারি, আমার হৃদয়ে বেশ বড় ধরনের গণ্ডগোল রয়েছে। গণ্ডগোল মেরামত করার একমাত্র উপায় কাটাছেঁড়া করা। শুনে খুব ভয় পেয়ে যাই। ৩২ বছর আগে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিশেষ করে হৃদয়ের শল্য চিকিৎসার ক্ষেত্রে আজকের মতো এত অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ছিল না। হৃদয়ের কাটাছেঁড়ায় সাফল্যের হারও খুব বেশি ছিল না। এতটাই ভয় পেয়ে যাই যে, স্কুল-কলেজ জীবনে পঠিত ভাব-সম্প্রসারণ মনের মধ্যে ফিরে ফিরে আসে—‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে,/ মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই।’ পরিবারের লোকজনও খুব বিমর্ষ হয়ে পড়ে। স্কুল-কলেজজীবনে ভালো ছাত্র হিসেবে পরিচিত হওয়ায় সহপাঠী-শিক্ষকরাও ব্যথিত হন একটি সম্ভাবনাময় প্রাণের অকাল প্রয়াণের আশঙ্কায়। পরিবার সিদ্ধান্ত নেয় হৃদয়ে ছুরি চালিয়ে হলেও অসুখ সারিয়ে তুলতে হবে। আমি ঢাকায় অবস্থিত শ্রেষ্ঠ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যাই। অপেক্ষায় থাকি ছুরি চালানোর দিনক্ষণ নির্ধারণের। হৃদয়ে ছুরি চালানোর তারিখ নির্ধারিত হয়ে যায়। এরই মাঝে খবর আসে আমার প্রথম বর্ষ আইন সম্মান পরীক্ষার তারিখ নির্ধারিত হয়েছে। আমি সিদ্ধান্ত নেই, পরীক্ষা শেষ করে এসে তবেই ছুরি চালানোর জন্য শুয়ে পড়বো। মনে একটা ক্ষীণ আশা উঁকি মারতে থাকতে, যদি শল্যচিকিৎসার পর বেঁচে যাই, তাহলে শিক্ষাজীবন থেকে একটি বছর কেন হারাতে দেবো? কথায় বলে, যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী  হাসপাতাল থেকে ছুটি নিয়ে পরীক্ষা দিতে চলে আসি। সেই যে আসা আর হাসপাতালে ফিরে যাইনি। ৩২ বছর ধরে হৃদয়ে ছুরি না চালিয়েই সৃষ্টিকর্তার অপার দয়ায় দিব্যি বেঁচে রয়েছি। আমি এ কথা দাবি করি না যে, আমার হৃদয়ে কোনও গণ্ডগোল নেই। সত্যিটা হলো, বত্রিশ বছর যদি হৃদপিণ্ডে ছুরি চালানো ছাড়াই বেঁচে থাকা যায়, তাহলে তিন দশক আগে ছুরি চালানোর সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল না। যদি শল্যচিকিৎসার জন্য সেদিন শুয়ে পড়তাম, তাহলে হৃদয়ে ছুরির দাগের পাশাপাশি বিরাট অঙ্কের অর্থও খরচা হতো। এসবের দায় কার?

গত বত্রিশ বছরে জ্ঞান-বিজ্ঞানের নজিরবিহীন আগ্রগতি হয়েছে। চিকিৎসাশাস্ত্রেরও প্রভূত উন্নতি হয়েছে। চিকিৎসাক্ষেত্রে সাফল্য বিশ্বাবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। আমাদের দেশেও অনেক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু কতিপয় চিকিৎসক ও চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট মানুষের অদক্ষতা, লোভ, প্রতারণা, অমানবিক ও অনৈতিক কিছু ঘটনা সব অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে। পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থাকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি গণমানুষের ভয়ঙ্কর আস্থার সংকট সৃষ্টি করছে। কিন্তু কেন এমন হলো? এ বিষয়ে একজন ডাক্তারের মূল্যায়ন হলো ‘চিকিৎসকদের বড় একটা অংশের ভেতর শুধু যে প্রফেশনালিজমের অভাব, তা-ই নয়; চিকিৎসক হিসেবে যাত্রা শুরুর কিছুদিনের মধ্যে তারা নিজেদের শপথবাক্যের কথা ভুলে যান! রোগীকে একটা পণ্য ছাড়া আর কিছুই ভাবেন না!’ চিকিৎসা ব্যবস্থা ও ডাক্তারদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠছে, তা হলো চিকিৎসার নামে বাণিজ্য, প্রতারণা, রোগ নির্ণয়ে যথেষ্ট সময় দিয়ে ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করায় সঠিক রোগ নির্ণয়ে ব্যর্থতা ও ভুল চিকিৎসার সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে যাওয়া, রোগীর প্রতি অবহেলা, ডাক্তারের ফি নিয়ে যথেচ্ছাচার, সেবার চেয়ে অর্থপ্রাপ্তি মুখ্য হয়ে ওঠা, রোগী ও তাদের স্বজনের প্রতি দুর্ব্যবহার, অপ্রয়োজনীয় প্যাথলজিক্যাল ও ডায়াগনস্টিক টেস্ট দেওয়া, প্রাইভেট ক্লিনিক থেকে নানা পরীক্ষার জন্য ডাক্তারদের কমিশন নেওয়া ও বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি থেকে নানা উপহার-উপঢৌকন নেওয়ায় চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি ইত্যাদি। এসব অভিযোগের পক্ষে জোরালো প্রমাণ রয়েছে কি? কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করলে বিষয়টি খোলাসা হবে। সম্প্রতি কিছু শারীরিক জটিলতার কারণে আমি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে তিনি বেশকিছু টেস্ট করাতে বলেন। এর মধ্যে একটি ছিল হার্ট সংক্রান্ত। টেস্টের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় ক্রনিক হার্ট ডিজিজ। রিপোর্ট দেখে আমার পরিচিত এক ডাক্তার বললেন, এটি যদি সত্যি হয়, তাহলে আপনার তো শয্যাশায়ী থাকার কথা। বাস্তবে আমি তো গড়ে ১৭-১৮ ঘণ্টা কাজ করছি প্রতিনিয়ত। অনেকেই পরামর্শ দিচ্ছেন আমি যেন আরেক জায়গায় টেস্ট করাই। ভরসা পাচ্ছি না। আরেক জায়গায় হার্টের টেস্ট করালে রিপোর্ট যদি আসে কিডনি ড্যামেজ! তখন কী হবে? দিন কয়েক আগে চট্টগ্রামের এক অভিজাত ক্লিনিকে এক রোগীর মেরুদণ্ডের পরীক্ষার পর ব্রেইন ক্যানসারের রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। রিপোর্টে স্বাক্ষরটি একটি স্ক্যানিং স্বাক্ষর। অর্থাৎ কম্পিউটারে কপি পেস্ট করেই ওই স্বাক্ষরটি দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার এক সহকর্মী জানালেন, তার স্ত্রীর রক্ত পরীক্ষায় এক ক্লিনিকের রিপোর্টে ম্যালেরিয়া আর অন্য ক্লিনিকের রিপোর্টে টাইফয়েড ধরা পড়েছে। কেবল প্যাথলজিক্যাল ও ডায়াগনস্টিক রিপোর্ট নিয়ে হঠকারিতার কারণেই নয়, বরং রোগ নির্ণয়ে ডাক্তারদের অবহেলা-অদক্ষতা আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি মারাত্মক আস্থাহীনতা সৃষ্টি করেছে। আস্থা বিনষ্টকারী অসংখ্য ঘটনার মধ্যে কয়েকটি নমুনা উল্লেখ করছি–

এক.

এক ছাত্রীর হাত-পা ফুলে গেলে তেঁতুলিয়া থেকে তার মা-বাবা রংপুর ছুটে আসেন চিকিৎসার জন্য। চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে! ছয় মাসের মধ্যে সে এক্সপায়ার করবে! মা-বাবা তাকে ঢাকায় নিয়ে যান। সেখানে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করালে একই কথা বলা হয়। এরপর তারা বাংলাদেশি চিকিৎসকদের রিপোর্ট নিয়ে ভারতে চলে যান। সেখানে চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বাংলাদেশি রিপোর্টগুলো দেখে অবাক হয়ে বলেন, ব্লাড ক্যান্সারট্যান্সার কিছুই হয়নি! দীর্ঘদিন অ্যাজমাটিক ওষুধ গ্রহণের ফলে তার রক্তে অ্যালার্জেন বেড়ে গেছে! ইনহেলারের মাধ্যমে যে ওষুধগুলো সে গ্রহণ করে, তা কিছুদিন বন্ধ রাখলে রোগী ঠিক হয়ে যাবে। তারা তাকে কোনও ওষুধ দেননি। সেই ছাত্রী ভালোভাবে বেঁচে আছে।

দুই.

হবিগঞ্জের বাবুল দেব পেশায় একজন ফার্মাসিস্ট। বুকে ব্যথা বাড়তে থাকায় ডাক্তারের কাছে যান। কিন্তু ভালো হওয়ার কোনও লক্ষণ নেই। দুই বছর সিলেট, ঢাকার নামকরা হাসপাতালের নামকরা কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখান। সব ডাক্তারই জানান, তার হার্টের সমস্যা। নিয়মিত ওষুধ খেয়েও বুকের ব্যথা না কমে উল্টো তার শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। পরে কলকাতায় একটি কার্ডিয়াক হাসপাতালে গেলে সেখানকার ডাক্তার কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেন। প্রতিবেদন দেখে তিনি জানান, হার্টের কোনও সমস্যা নেই। তবে বুকে অন্য সমস্যা আছে। সেই সমস্যার জন্য তিনি ১৩০ রুপির ওষুধ দেন। ওই ওষুধ খেয়েই তিনি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। অথচ এর আগে তিনি লাখ লাখ টাকা খরচ করেছেন।

তিন.

সিলেট পুলিশ লাইনে কর্মরত ছিলেন বিরেন্দ্র দে। একদিন অফিসে হঠাৎ বমি করতে করতে পড়ে যান। সহকর্মীরা মিলে নিয়ে যান সিলেটের সরকারি হাসপাতালে। সেখানে বলা হয় গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা। বাসায় নিয়ে আসা হলে আবারও বমি হয়। স্বজনরা আবারও নিয়ে যান হাসপাতালে। সেখানে আবারও বলা হয় গ্যাসের সমস্যা। এরপর নিয়ে যাওয়া হয় সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। এরপর আরও কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। একবছর ধরে কেউ গ্যাস্ট্রিক, কেউ ডায়াবেটিকসের চিকিৎসা করতে থাকে। অবশেষে ব্রেইনে বেশকিছু টিউমার ধরা পড়ে। টিউমার ততদিনে ক্যান্সারে পরিণত হয়েছে। অনেক দেরি হয়ে গেছে। এর কিছুদিন পরই তিনি মারা যান।

মূলত স্থানীয় ডাক্তারদের প্রতি আস্থাহীনতা ও ত্রুটিপূর্ণ রোগ নির্ণয় ব্যবস্থার কারণে বাংলাদেশের রোগীদের একটি বড় অংশ উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে চলে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর যে বিপুলসংখ্যক মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাচ্ছেন, তা শুধু বিশেষায়িত চিকিৎসার জন্য নয়, বরং ডায়াবেটিসের মতো মামুলি স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্যও দেশের রোগ নির্ণয়কেন্দ্রের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না দেশের মানুষ। অনেকেরই অভিযোগ, দেশে তারা যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলেই বিদেশে ছুটতে বাধ্য হচ্ছেন। পরিসংখ্যান মতে, বিদেশগামী রোগীদের ৮০ শতাংশই যান ভারতে। অন্যরা যান—থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশে। তাদের মধ্যে অনেকেই ভ্রমণ ভিসা নিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান। ভারতের বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিদেশিদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে দেশটি যে ৮৮ কোটি ৯৩ লাখ ডলার আয় করেছে, তার মধ্যে বাংলাদেশি রোগীর কাছ থেকেই আয় করেছে ৩৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার অর্থাৎ প্রায় ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। প্রতিবেদনে প্রকাশ, গত অর্থবছরে ৪ লাখ ৬০ হাজার বিদেশি রোগী ভারতে চিকিৎসা নিয়েছেন, যাদের মধ্যে ১ লাখ ৬৫ হাজার বাংলাদেশি। যার মানে চিকিৎসা নেওয়া বিদেশিদের প্রতি তিনজনের একজনই ছিলেন বাংলাদেশি। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এক হিসাব মতে, বিদেশে চিকিৎসা করাতে বাংলাদেশিরা বছরে ২ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেন। যা বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ। ইমিগ্রেশন পুলিশের মতে, শুধু বেনাপোল সীমান্ত দিয়েই প্রতিদিন যত মানুষ চিকিৎসার জন্য যাচ্ছে, তার পরিমাণ বছর শেষে দাঁড়াবে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ। ভারতের কমার্শিয়াল ইনটেলিজেন্স অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিকসের মহাপরিচালকের নেতৃত্বে স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে পরিচালিত এক জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশটির মেডিক্যাল ট্যুরিজম খাতের অর্ধেক আয় (৫০ শতাংশ) আসে বাংলাদেশি রোগীদের কাছ থেকে, যা ভারতের মেডিক্যাল অ্যান্ড হেলথ ট্যুরিজম খাতের সবচেয়ে বড় অবদানকারী।

অস্ট্রেলিয়ার Central Queensland University-র Anita Medhekar ও বাংলাদেশের Muhammad Mahboob Ali চিকিৎসা সেবা নিতে বাংলাদেশের মানুষের অধিক হারে ভারত যাওয়ার ওপর একটি মাঠ পর্যায়ের গবেষণা করেছেন। তাদের গবেষণা প্রবন্ধের শিরোনাম হলো—Key Reasons for Medical Travel from Bangladesh to India। রোগীদের বাংলাদেশে ছেড়ে ভারতে চিকিৎসা সেবা নেওয়ার পেছনে দায়ী কতিপয় পুশ ও পুল ফ্যাক্টর চিহ্নিত করেছেন এই দুই গবেষক। যেসব পুশ ফ্যাকটরের কারণে রোগীরা বাংলাদেশ ছেড়ে যায়, তার মধ্যে অন্যতম হলো—ক্রমাবনতিশীল স্বাস্থ্যসেবা, উচ্চমূল্য, দুর্নীতি ইত্যাদি। অন্যদিকে যেসব পুল ফ্যাক্টর রোগীকে ভারতে চিকিৎসা নিতে আকৃষ্ট করে তা হলো—অভিজ্ঞ ও ভালো মানের ডাক্তার, মানবিক ও মানসম্মত নার্সিং, কম খরচ, সহজলভ্যতা ও চিকিৎসায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম ব্যবহার। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী উত্তরদাতারা বাংলাদেশের নিম্নমানের স্বাস্থ্যসেবার জন্য যোগ্য ও দক্ষ ডাক্তার ও নার্সের অভাব, ডাক্তার-নার্স-এর পেশাদারিত্বের অভাব, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, সেকেলে চিকিৎসা সরঞ্জাম ও মেডিক্যাল টেকনোলজি, দুর্নীতি, স্বাস্থ্য সেক্টরে জবাবদিহিতা ও দায়িত্বশীলতার অভাব, হাসপাতালের নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ইত্যাদিকে দায়ী করেছেন। স্বাস্থ্যখাতের বিরাজমান অব্যবস্থাপনা ও দুর্দশার জন্য ১২৮২ জন উত্তরদাতার ৩২৯ জন উত্তরদাতা ডাক্তারের অদক্ষতা ও পর্যাপ্ত যোগ্য ডাক্তারের অভাবকে ও ৩২৯ জন উত্তরদাতা অসন্তোষজনক নার্সিং সেবাকে চিহ্নিত করেছেন। গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে উচ্চবিত্তের পাশাপশি নিম্নবিত্ত তথা ১৫ হাজার টাকা আয়ের শ্রেণিভুক্তরাও ভারতে চিকিৎসা সেবা নিতে যাচ্ছেন। গবেষণায় উঠে এসেছে ভারতে চিকিৎসাসেবা গ্রহণকারী নিম্নবিত্তের হার ১৬ শতাংশ। ঢাকা ও চট্টগ্রামের কয়েকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, যে ডাক্তার টেস্ট করতে পাঠান, তাকে ২৫-৪৫ শতাংশ কমিশন পরিশোধ করতে হয়।

আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় যে রোগ বাসা বেঁধেছে, তার জন্য ডাক্তাররা এককভাবে দায়ী নয়। স্বাস্থ্য খাতে অর্থ বরাদ্দে অপ্রতুলতা, অবকাঠামো, সরঞ্জাম ও জনবলের ঘাটতি এই সমস্যাকে প্রকট করে তুলছে। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী স্বাস্থ্যখাতে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির বরাদ্দ কমপক্ষে ৫ শতাংশ থাকা প্রয়োজন হলেও, বাংলাদেশে তা শূন্য দশমিক ৯২ শতাংশ মাত্র। আমাদের দেশে রোগীর সংখ্যা বেশি, চিকিৎসার সরঞ্জাম ও ওষুধপত্র সীমিত, ডাক্তারসহ অন্যান্য লোকবলও সীমিত। ফলে সত্যিকারের সেবাদান আসলেই সম্ভব হচ্ছে না। পরিসংখ্যান বলছে, জনসংখ্যা বিবেচনায় আমাদের ৬০ হাজার ডাক্তার, ২ লাখ ৮০ হাজার নার্স ও ৪ লাখ ৮৩ হাজার হেলথ টেকনোলজিস্টের ঘাটতি রয়েছে।

নিজ দেশে অভিজাত হাসপাতাল ও গুণী চিকিৎসক থাকার পরও মানুষ লক্ষ-কোটি টাকা খরচ করে বিদেশ ছুটছে। এতে আমাদের স্বাস্থ্য অর্থনীতির মারাত্মক রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ব্যাপকহারে বিদেশগামী প্রবণতা রোধ করতেই হবে। সে জন্য চাই আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার খোল-নলচে পাল্টে ফেলা। এ কথা ভুলে গেলে চলবে না, জনসাধারণের স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে রাষ্ট্র, গণতন্ত্র, অর্থনীতির স্বাস্থ্য ভালো থাকতে পারে না।

লেখক: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

ই-মেইল: [email protected]

 

/এসএএস/এমএনএইচ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বিজিএপিএমইএ’র নির্বাচনের প্যানেল ঘোষণা, শাহরিয়ার নতুন প্যানেল নেতা
বিজিএপিএমইএ’র নির্বাচনের প্যানেল ঘোষণা, শাহরিয়ার নতুন প্যানেল নেতা
রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত
রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অসন্তোষ জানালেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অসন্তোষ জানালেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ