X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

বড় দলগুলোর জোট কেন লাগে?

আমীন আল রশীদ
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:৫১আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৬:৩২

আমীন আল রশীদ দেশের প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এককভাবে নির্বাচন করলেই জয়ী হওয়ার কথা। কিন্তু তারপরও তাদের ১৪ দলীয় জোট, মহাজোট, ১৮ দল বা বিশ দলীয় জোট কেন করতে হয়? কেন তাদের এমনও অনেক দলের সঙ্গে জোট করতে হয়, যেসব দলের প্রার্থীরা এককভাবে নির্বাচন করলে জামানত হারাবেন? বড় দলগুলোর এই জোট গঠনের পেছনে কি এক ধরনের ভীতি কাজ করে যে যদি একটি দল তাদের সমমনা অন্য ছোট বা মাঝারি দলগুলোর সঙ্গে জোট না করে তাহলে তারা প্রতিদ্বন্দ্বী দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হবে কিংবা ছোট ছোট দলগুলো মিলে একটি বড় শক্তি গড়ে তুলবে, যা বড় দলগুলোকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে? বাংলাদেশের রাজনীতিতে জোট গঠনের সূচনা জিয়াউর রহমানের আমলে। ১৯৭৬ সালে জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম, খেলাফতে রব্বানিসহ কয়েকটি মৌলবাদী দল ইসলামি ডেমোক্রেটিক লীগ বা আইডিএল নামে একটি জোট গঠন করে। ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা স্বাধীনতাবিরোধী মুসলিম লীগের সঙ্গে জোট গঠন করে ২০টি আসন লাভ করে। বস্তুত এই ঘটনার পরেই জামায়াত দেশের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়। এরশাদ পতনের আন্দোলনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বে বৃহত্তর ঐক্য হয়। তবে সেটি কোনও নির্বাচনি জোট ছিল না। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় যে ১৫ দলের ঐক্য গঠিত হয়, জাসদও তার অংশ ছিল। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যই এরশাদকে সমর্থনের প্রশ্নে দলটি দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে এবং আ স ম আব্দুর রবের নেতৃত্বে একটি অংশ এরশাদকে সমর্থন দেয়। জাসদ রব ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে ৪টি আসনে জয়ী হয় এবং এই দলের একজন সদস্য এরশাদ সরকারের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে বড় দুই দলের জোট গঠনের সমীকরণ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ১৪০টি আসন পায়। তাদের ভোটের শতকরা হার ছিল ৩০.৮১। অথচ ৩০.০৮ শতাংশ ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ আসন পায় ৮৮টি। এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৩৫টি এবং জামায়াতে ইসলামী ১৮টি আসন পায়। জামায়াতে ইসলামী বিএনপিকে সমর্থন দেয়। এই নির্বাচনে বিএনপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় তাদের সরকার গঠনের অধিকার নেই বলে ওই সময়ে দাবি তোলে আওয়ামী লীগ। যদিও অবশেষে বিএনপিই সরকার গঠন করে। ওই সময়ে আওয়ামী লীগ তার নিজের ৮৮টি আসন নিয়ে জাতীয় পার্টি (৩৫), সিপিবি (৫), বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (৫) এবং অন্য ছোট দলগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে পারলে বিএনপির পক্ষে সরকার গঠন কঠিন হতো। ফলে দেখা যাচ্ছে কোনও দল এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে সরকার গঠন কঠিন হয়ে যায়। সম্প্রতি পাকিস্তানে যা হয়েছে।

১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪৬টি, বিএনপি ১১৬টি, জাতীয় পার্টি ৩২টি এবং জামায়াত ৩টি আসন পায়। জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের ঐকমত্যের সরকারে যোগ দেয়। ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি যদি বিএনপির সঙ্গে যেত এবং জামায়াত ও অন্যান্য ছোট দলগুলো বিএনপির সঙ্গে জোট গঠন করতো, তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য সরকার গঠন কঠিন হতো। দেখা যাচ্ছে পঞ্চম ও সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলের জন্যই বেশ বড় পরীক্ষা ছিল।

তবে এ দুই দলের আসনের ব্যবধান অনেক বেড়ে যায় ২০০১ সালের নির্বাচনে। এই নির্বাচনে বিএনপি ৪১.৪০ শতাংশ ভোট পেয়ে ১৯৩টি আসনে জয়ী হয়। অথচ ৪০.০২ শতাংশ ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ আসন পায় ৬২টি। অর্থাৎ বড় দুই দলের ভোটের পার্থক্য মাত্র ১.৩৮ শতাংশ হলেও আসনের ব্যবধান ১৩১টি। দিন শেষে নির্বাচন যেহেতু আসন পাওয়ার খেলা—সুতরাং ভোটের শতকরা হার এখানে গৌণ হয়ে যায়। এ কারণে অনেকে নির্বাচনে ভোট প্রাপ্তির হার অনুযায়ী সংসদে আসন বণ্টনের পক্ষে। বিশ্বের অনেক দেশে এই পদ্ধতি চালু আছে। যদি বাংলাদেশেও এই আনুপাতিক হারে আসন বণ্টন চালু করা যায়, তাহলে দেখা যাবে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে কোনও দলই সংসদে যা খুশি তাই করতে পারবে না। সংসদে ও সরকারে ভারসাম্য বা চেক অ্যান্ড ব্যালান্স থাকবে।

যাই হোক, ২০০১ সালের এই নির্বাচনে জামায়াত ১৭টি এবং জাতীয় পার্টি পায় ৪টি আসন। এই প্রথম বড় কোনও দল (বিএনপি) জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করে এবং তার শরিক জামায়াতকে ৩১টি আসন ছেড়ে দেয়। আওয়ামী লীগ এককভাবে নির্বাচন করে এবং জাতীয় পার্টি যেহেতু খুব বেশি আসন পায়নি এবং আওয়ামী লীগ নিজেও আসন পেয়েছে কম—ফলে ২০০১ সালে বিএনপির সরকার গঠন আগের দুটি নির্বাচনের মতো চ্যালেঞ্জিং হয়নি।

২০০৭ সালে বাতিল হওয়া সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যোগ দেয় এরশাদের জাতীয় পার্টি। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি হয়। এবারও তারা জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করে এবং জামায়াতকে ৩৯টি আসন ছেড়ে দেয়। কিন্তু বিএনপি নিজে পায় মাত্র ৩০টি এবং জামায়াত ২টি। আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করলেও এককভাবেই তারা ২৩০টি আসনে জয়লাভ করে। ফলে দেখা যাচ্ছে, এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কারো সঙ্গে জোট না করেই বিজয়ী হতে পারতো। কিন্তু তারপরও কেন জোট করতে হলো?

২.

গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার প্রয়োজনে জোট গঠন দোষের কিছু নয়। অনেক সময় এটি অপরিহার্যও হয়ে পড়ে। তবে অগণতান্ত্রিকভাবে কোনও দল ক্ষমতায় থাকতে বিভিন্ন দলকে প্রলোভন দেখিয়ে বা চাপ সৃষ্টি করে জোট গঠন করে—এমন উদাহরণও আছে। এসব জোট করতে গিয়ে দলগুলোর মধ্যে এক ধরনের আদর্শিক ঐক্য থাকতে হয়। যেমন জামায়াতের সঙ্গে সিপিবি বা এরকম বামপন্থী দলগুলোর জোট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ৮টি দল মিলে সম্প্রতি যে বাম গণতান্ত্রিক জোট করেছে—তারা বিএনপির সঙ্গেও ঐক্যে যাবে বলে মনে হয় না।

এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় বাস্তবতা যাই থাকুক—এই সময়ে এসে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামায়াতের ঐক্য এখন একেবারেই অসম্ভব এবং যদি কখনও এটি হয়, তা হবে আওয়ামী লীগের আদর্শিক ও নৈতিক পরাজয়।

আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ আরও কয়েকটি ছোট দল জোটবদ্ধ থাকবে এবং শরিকদের ৬০ থেকে ৭০টি আসন ছেড়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তার মানে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে নয়, বরং জোটবদ্ধভাবেই নির্বাচনে যাচ্ছে।

বিএনপি এবারও নির্বাচন বর্জন করবে নাকি খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখেই ভোটযুদ্ধে অংশ নেবে—তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে নির্বাচনে গেলে তারা এককভাবে নয়, বরং জোটবদ্ধভাবে যাবে বলেই আন্দাজ করা যায়। যদিও বি. চৌধুরীর নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে শেষমেশ বিএনপির গাঁটছড়া বাঁধা হবে কিনা, তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি।

গণমাধ্যমের খবর বলছে, নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ‘বৃহত্তর জোট’ গঠনের চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে বিএনপি। ইতোমধ্যে ২২ সেপ্টেম্বর ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য জোটের সমাবেশেও যোগ দিয়েছিল বিএনপি। যুক্তফ্রন্ট, গণফোরাম ও কয়েকটি বাম দলের সঙ্গে বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনে যাবে—এমন বিষয়টিও কিছু দৃশ্যমান হয়েছে।

দেশের রাজনীতিতে, বিশেষ করে ভোটের মাঠে ইসলামি দলগুলোর খুব বেশি গুরুত্ব না থাকলেও জনমতের ওপর ইসলাম, মুসলমান, চেতনা, অনুভূতি ইত্যাদি শব্দ যেহেতু বেশ প্রভাব বিস্তার করে, ফলে সব বড় দলেরই একটা টার্গেট থাকে ইসলাম নামধারী দলগুলোকে নিজেদের বলয়ে রাখা। অনেক দিন ধরেই হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সরকারের সখ্য বা সমঝোতা তার বড় প্রমাণ। এরইমধ্যে কোনও কোনও ইসলামি দলের নেতা গণমাধ্যমে বলেছেন, বড় সব দল থেকেই তারা জোটে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব পাচ্ছেন। ইসলামি ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামীর ভাষ্যমতে, ভোটের রাজনীতিতে ইসলামি দলগুলো একটা বড় ফ্যাক্টর। কারণ, ইসলামি দলগুলোর আলেম-ওলামাদের নিয়ে সারাদেশেই একটা ভোট ব্যাংক আছে। চরমোনাই পীরের ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ, আটরশি পীরের জাকের পার্টি এবং খেলাফত আন্দোলনের মতো ইসলামি দলগুলো এখনও কোনও জোটে না থাকলেও আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এই দলগুলোর তৎপরতা কী হবে—সেদিকে দেশবাসীর নজর থাকবে।

৩.

জোট হলে কার লাভ কার ক্ষতি? বিএনপির বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ তারা স্বাধীনতবিরোধীদের দল জামায়াতের সঙ্গে জোট করে এবং আওয়ামী লীগ বরাবরই বিএনপিকে যুদ্ধাপরাধীদের দোসর বলে উল্লেখ করে। এ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভাষ্য, ‘জামায়াতের সঙ্গে একসময় আওয়ামী লীগেরও সখ্য ছিল। অথচ বিএনপির সঙ্গে জোট হওয়ার পরেই তারা জামায়াতের সমালোচনা করছে।’ বিএনপি যদি জামায়াতকে সঙ্গে না রাখে তাহলে তারা অন্য কোনও বড় দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপির বিকল্প শক্তি গড়ে তুলতে পারে—বিএনপির মধ্যে এরকম আশঙ্কা রয়েছে বলেও ধারণা করা হয়।

আওয়ামী লীগ যখন জামায়াতের সঙ্গে সখ্যের কারণে বিএনপির সমালোচনা করে, তখন বিএনপিও ‘স্বৈরাচার’ এরশাদের সঙ্গে সখ্যের কারণে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে। সম্প্রতি এইচ এম এরশাদ এক অনুষ্ঠান বলেছেন, জাতীয় পার্টি থাকলে মহাজোটকে কেউ হারাতে পারবে না। যদিও এরশাদ সাহেব মাঝেমধ্যেই বলেন জাতীয় পার্টি এবার এককভাবে নির্বাচন করবে এবং ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে।

হাইকোর্টের নির্দেশে নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় জামায়াত এবার স্বনামে নির্বাচন করতে পারবে না। কিন্তু তারপরও নির্বাচনি জোট প্রসঙ্গে তারা আলোচনায় আছে। যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে বিএনপির ঐক্য প্রসঙ্গেও বাধা হয়ে আছে জামায়াত। কারণ, বিএনপির সঙ্গে জামায়াত থাকলে যুক্তফ্রন্ট ঐক্য গড়তে রাজি নয়। আবার বিএনপি বরাবরই বলে আসছে যে জামায়াতের সঙ্গে তাদের কোনও আদর্শিক ঐক্য নেই—বরং এটি নির্বাচনি ঐক্য। কিন্তু নিবন্ধন না থাকার পরও দেখা যাচ্ছে বিএনপি কোনোভাবেই জামায়াত ছাড়তে পারছে না। এর একটি বড় কারণ জামায়াতের পেশিশক্তি বা তাদের ক্যাডার বাহিনী—যাদের সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি ব্যবহার করে। কিন্তু নির্বাচনি জোটে জামায়াতকে ছাড়াই যে বিএনপি জিততে পারে, তার অনেক উদাহরণ আছে। সবশেষ সিলেট সিটি নির্বাচনেও এটি প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু তারপরও মাঠের রাজনীতিতে বিএনপি যেহেতু নিজেদের দুর্বলতা জানে—তাই তারা জামায়াতনির্ভরতা কমাতে পারে না।

বলা হয়, নির্বাচনি মাঠ দখলের চেয়েও বেশি প্রয়োজন আন্দোলনের মাঠ দখল। অতীতে দেখা গেছে, ভোটের আগে যেসব দল ও জোট আন্দোলনের মাঠ দখল করতে পেরেছিল, তারাই আন্দোলন পরবর্তী নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় গেছে। যেমন এরশাদবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি-আওয়ামী লীগ-জামায়াতসহ ১৫ দল ছিল। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হয়েছে। আওয়ামী লীগও অনেক আসন পেয়েছে। অর্থাৎ এই বড় দুদলের ভোটের পার্থক্য ছিল মাত্র ০.৭৩ অর্থাৎ এক শতাংশেরও কম।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনের আগে আন্দোলনের মাঠ ছিল আওয়ামী লীগের দখলে। তারা ওই নির্বাচনে জিতেছে। ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে রাজপথ বিএনপির দখলে ছিল এবং ওই নির্বাচনে তারা জয়ী হয়। ২০০৭ সালের নির্বাচনের আগে দেশের রাজনীতিতে টালমাটাল অবস্থা সৃষ্টি হয় এবং তখন আন্দোলনের মাঠ ছিল আওয়ামী লীগের দখলে। দুই বছর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পালনের পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয় আওয়ামী লীগ। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি আন্দোলনের মাঠে থাকলেও তারা সুবিধা করতে পারেনি। তাদের ব্যাপক প্রাণহানি হয়েছে ঠিকই—সরকার সেই আন্দোলন দমনও করেছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পরেও বিএনপি কোনও ইস্যুতেই সরকারকে নড়াতে পারেনি। বরং তাদের দলের চেয়ারপারসন দুর্নীতি মামলায় এখন কারাগারে। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়েও যে তারা শেষমেশ সফল হবে না—তা মোটামুটি নিশ্চিত। ফলে আগামী নির্বাচনের ফলাফল কী হবে—তাও আন্দাজ করা কঠিন নয়।

তারপরও আওয়ামী লীগকে কেন জাতীয় পার্টির মতো দলের সাথে জোট করতে হয়? অস্বীকার করার উপায় নেই, উত্তরবঙ্গে জাতীয় পার্টির একটি বড় ভোট ব্যাংক রয়েছে। নানা সমালোচনার পরও ওই অঞ্চলের মানুষ ব্যক্তি এরশাদকে পছন্দ করে এবং জাতীয় পার্টিকে ভোট দেয়।

গণআন্দোলনের মুখে এরশাদের পতনের পরের বছর অর্থাৎ ১৯৯১ সালের নির্বাচনেও জাতীয় পার্টি ৩৫টি আসন পায় (ভোটের শতকরা হার ১১.৯২)—যা ছিল তৃতীয় সর্বোচ্চ। ১৯৯৬ সালে ৩২টি (ভোট ১৬.৪০ শতাংশ), ২০০১ সালে ইসলামি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে জোটবদ্ধভাবে ১৪টি (ভোট ৭.২২ শতাংশ), ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের সাথে জোট করে ২৭টি (ভোট ৭.০ শতাংশ) এবং ২০১৪ সাথে একইভাবে আওয়ামী লীগের সাথে ঐক্য গড়ে ৩৪টি (ভোট ৭.০ শতাংশ) আসন পায়। দেখা যাচ্ছে, বড় কোনও দলের সাথে ঐক্য না করেও ১৯৯১ সালে জাতীয় পার্টি ৩৫টি আসন পায়।

বাস্তবতা হলো, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যাদের সঙ্গে জোট গঠন করে বা আগামী নির্বাচনে যাদের যুক্ত রাখতে চায়, তাদের মধ্যে জাতীয় পার্টি ছাড়া অন্য কোনও দলের ভোট ব্যাংক নেই। এসব দলের শীর্ষ দুয়েকজন বাদে অন্য প্রার্থীরা এককভাবে নির্বাচন করলে জামানাত হারানোর আশঙ্কাই বেশি। কিন্তু তারপরও ছোট ছোট দলগুলোকে বড় দলগুলো কাছে রাখতে চায় যাতে তারা প্রতিদ্বন্দ্বী বড় দলের সঙ্গে জোট করতে না পারে। এখানে ভোটের চেয়েও দল ভারি দেখানো এবং প্রতিপক্ষের ওপর নৈতিক ও মানসিক চাপ সৃষ্টি করাও একটি লক্ষ্য।

(নির্বাচনি ফলাফলের তথ্যসূত্র: ইয়াসমিন আহমেদ ও রাখী বর্মন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক উন্নয়ন এবং নেসার আমিন, বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ও ফলাফল ১৯২০-২০১৬।)

লেখক: সাংবাদিক।

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
প্রথম ধাপে ভোটের হার ৬০ শতাংশ, সর্বোচ্চ পশ্চিমবঙ্গে
লোকসভা নির্বাচনপ্রথম ধাপে ভোটের হার ৬০ শতাংশ, সর্বোচ্চ পশ্চিমবঙ্গে
ইসরায়েলি বিমান কীভাবে এল বাংলাদেশে, প্রশ্ন নুরের
ইসরায়েলি বিমান কীভাবে এল বাংলাদেশে, প্রশ্ন নুরের
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
কান উৎসব ২০২৪১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ